somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা - আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ

০৪ ঠা জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা ১:প্যারিস থেকে এয়ার ফ্রান্স এর ফ্লাইট যোগে দুবাই যাচ্ছি। সাথে আমার একজন সহকর্মী। দুই জনের সাথেই প্রচুর লাগেজ, এক এক জনের সাথে ৫০ কেজির উপর। তাই দুজনই চিন্তিত কত টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে তা নিয়ে। চেক ইনের সময় তাই আমাদের উভয়েরই প্রচেষ্টা কিভাবে একটু ডিসকাউন্ট নেয়া যায়। ইউরোপের এয়ার লাইন্সগুলোর কাছথেকে লাগেজ ডিসকাউন্ট পাওয়াটা খুবই কঠিন। এর আগে এদের কাছ থেকে কখনোই ৩ কেজির বেশি পাইনি, তাই অনেক কথা বলার পর যখন ৮ কেজি ডিসকাউন্ট পেলাম তখন যথেষ্ট পরিমানেই খুশি হলাম। পাশের কাউন্টারে সহকর্মী ততক্ষনে ১৩ কেজি ডিসকাউন্ট আদায় করে ফেলেছে। মনে মনে চিন্তা করতে থাকলাম, সে কিভাবে আমার চেয়ে ভালো নেগোসিয়েশান করতে পারলো।

ঘটনা ২:বছর দুই আগে দেশে আমার এক স্কুল জীবনের বন্ধুর সাথে একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছিলাম। প্রচন্ড রকম আত্মবিশ্বাসি আমার এই বন্ধুটি অবশ্য তেমন একটা পড়শুনা করতে পারেনি, কোনো রকমে ডিগ্রি পাশ করে তখনও তেমন কিছু করতে পারছে না। তাই কৃষি বিষয়ক একটা প্রজেক্ট নিয়ে বিস্তারিত বিজনেস প্লান করছিলাম। প্রজেক্ট টা খুবই লাভজনক মনে হলেও, নিজের বিদেশে ভালো কাজের সুজোগ থাকায় দেশে থেকে যাওয়ার ইচ্ছাটা আপাতত দমন করলাম। তবে ওকে বললাম ও একা একা কাজটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুক। তার এ প্রজেক্ট এখন অনেক সফল, যতটা আমি চিন্তাও করিনি। এখন বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক তার প্রজেক্ট এ চাকরী করে। তার এই সাফল্যের পিছনেই বা কারন কি?

এক জন মানুষের জীবনের সফল্যের পিছনে যে জিনিসটা সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করে তা হচ্ছে তার আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ভুলগুলো তুলে এনে বিগত দুই দশকের গবেষনায় এটাই আজ প্রতিষ্ঠিত। একজন মানুষের রেজাল্ট খুব ভালো হলেই যে সে জীবনে খুব ভালো কিছু করতে পারেনা এর উদাহরণ তো অনেক। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীদের মতে মানুষের সাফল্যের পিছনে IQ এর ভূমিকা ২০%-২৫%। বাকি ৮০%-৭৫% ভূমিকা পালন করে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বা EQ.

IQ এবং EQ কিন্তু পরস্পরের প্রতিযোগী নয় বরং সহযোগী। খারাপ IQ নিয়েও যদি EQ ভালো থাকে তবে একজন মানুষ অনেক ভালো কিছু করতে পারে। আবার EQ ভালো না হলে অনেক ভালো IQ নিয়েও তমন কিছু করা যায় না। আর এদুটোই যদি কারও ভালো হয় তবে তার সাফল্য অনিবার্য। সমস্যা হচ্ছে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বা EQ বিষয়ে বাংলাদেশে আমাদের খুব একটা ভালো ধারনা নাই। আমাদের দেশের ছত্রদের IQ যথেষ্ট ভালো, তারা বিদেশে গিয়েও পড়লেখায় ভালোই করে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের গড়পরতা EQ কোন পর্যায়ে আছে তার কোন পরিমাপ জানা নাই। আমাদের দেশে মানুষ আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা শিখে মুলত পরিবার বা পরিবেশ থেকে, শিক্ষব্যবস্থার অবদান এ ক্ষেত্রে বেশ কম।

আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বা EQ কি?বিস্তারিত বলতে গেলে পোষ্টা অনেক বড় হয়ে যাবে, তাই চেষ্টা করবো অল্প কথায় হালকা ধারনা দিবার জন্য। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বা Emotional Intelligence হচ্ছে, বুদ্ধিমত্তার সাথে আবেগ নিয়ন্ত্রন করা এবং আবেগকে প্রয়োগ করা। আবেগ কি তা নিয়ে আমার একটা লিখা আছে, পড়তে পারেন Click This Link


মনোবিজ্ঞানী ডেনিয়েল গোলেমান এর ভাষায় "Emotional Intelligence refers to the capacity for recognising our own
feelings and those of others, for motivating ourselves, and for managing emotions well in ourselves and in our
relationships.”

আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি মৌলিক দিক হচ্ছে:
১. নিজেকে জানা: এর মধ্যে পরে নিজের মানসিক অবস্থা, পছন্দ অপছন্দ, নিজের দক্ষতা-অদক্ষতা এগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকা। জানতে হবে নিজের আবেগকে, জানতে হবে নিজের এবং পারিপার্শিক অবস্থার উপর তার প্রভাব কি। সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করতে হবে নিজের দক্ষতা এবং অদক্ষতাকে। সেই সাথে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে নিজের দক্ষতার উপর।

২. আত্মনিয়ন্ত্রন: এর মধ্যে পরে নিজের আবেগ, উত্তেজনা এবং দক্ষতাকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা। এর পাশাপাশি যে গুনগুলো প্রয়োজন তা হলো, বিশ্বাসযোগ্যতা, সততা, আত্মসচেতনতা, পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা এবং নতুন কিছু স্বষ্টি করার ক্ষমতা।

৩. উদ্যম বা উৎসাহ: লক্ষ্যপূরনের জন্য থাকতে হবে উদ্যম এবং কিমিটমেন্ট। সেই সাথে উদ্দোগ নিয়ার ক্ষমতা এবং ইতিবাচক ভাবনা।

৪. অন্যকে বুঝার ক্ষমতা: এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। অন্যের আবেগ, অনুভুতি, চাহিদা এবং চিন্তা ভাবনা বুঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। বুঝতে হবে নিজের সম্পর্ক অন্যের ধারনা।

৫. সামাজিক দক্ষতা: আমার মতে সবচেয়ে দুর্লভ গুন এটি। এর মধ্যে আছে, অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা, সঠিক উপায়ে যোগাযোগ বা নিজের চিন্তা ভাবনা সঠিক ভাবে অন্যের নিকট গ্রহনযোগ্য করে উপস্থাপন করার ক্ষমতা, দ্বন্দ্ব পরিহার করার ক্ষমতা, সহযোগিতার মনভাব এবং সর্বপরি নেতৃত্ব দিবার ক্ষমতা।

উপরের দুইটি উদাহরনে প্রথম সহকর্মীর অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা এবং বন্ধুর উদ্যম ও আত্মবিশ্বাস তাদের সাফল্যের পিছনে সবছেয়ে বড় ভুমিকা পালন করেছে।

কি ভাবে অর্জন করা যায়:এই গুনগুলো কি শিখা সম্ভব? উত্তর হচ্ছে অবশ্যই শিখা সম্ভব। বেশির ভাগ মানুষ এই গুন গুলো ছোট বেলায় পরিবেশ থেকে রপ্ত করে। তবে যে কোন বয়সেই তা শিখা সম্ভব। এ জন্য জানতে হবে এই গুনগুলোর বিস্তারিত মানে এবং অর্জন করার পদ্ধতি। ব্লগের পাতায় বিস্তারিত লিখা কঠিন। হয়তো পরবর্তিতে কখনো আলোচনা করবো। মনোবিজ্ঞানীদের মতে প্রার্থনা এবং ধ্যান এই গুনাবলী অর্জনের জন্য খুবই সহায়ক।

শেষ করার আগে বলতে চাই, ইতিবাচক ভাবনা এবং আত্মবিশ্বাস সফল্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। আর সবচেয়ে কার্যকরীগুন হচ্ছে সবসময় সঠিক উপায়ে হাসতে পারার ক্ষমতা। হাসি দিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করা যায় সবচেয়ে বেশি। চেষ্টা করেই দেখুন না।

যদি কেউ এই বিষয়ে পড়াশুনা করতে চান তবে Daniel Goleman এর Imotional Intellingence and Working With Emotional Intelligence বই দুটো পড়তে পারেন। আমিও পড়ছি।

আবেগীয় শিক্ষা - সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন জীবনের প্রথম পাঁচটি বছর Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:৪০
৩৩টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×