"জরীর হাত ধরে শুভ্র চাঁদের আলোয় সমুদ্র দেখছে। হঠাৎ সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসে। শুভ্র অন্ধ হয়ে যাচ্ছে।" এমন একটা দৃশ্যে প্রায়ই ভেসে উঠতো মনে হুমায়ুন আহমেদের দারুচিনি দ্বীপ আর রুপালী দ্বীপ বই দু'টি পড়ার পর থেকে। সেই থেকে মনে মনে ভাবতাম আমিও আমার জরীকে পেলে একদিন এভাবেই সমুদ্র দেখবো দারুচিনি দ্বীপে গিয়ে। সে সুযোগ হলো অনেকদিন পর। তাই এই পূর্ণিমায় ঘুরে এলাম দ্বারুচিনি দ্বীপ-সেন্টমার্টিন। আমাদের দেশটা যে কত কত সুন্দর তা আবারো বুঝলাম। সমুদ্র আর প্রবাল দ্বীপ দেখতে মানুষ ব্যাংকক-মালয়শিয়া যায়। অথচ তার চেয়ে অনেক সুন্দর প্রবাল দ্বীপ আছে ঘর হতে দুই পা বাড়ালেই। দ্বারুচিনি দ্বীপ ঘুরে এসে যারা এখনো সেখানে যান নি তাদের জন্য নিজের তোলা কিছু ছবি শেয়ার করলাম।
সেন্টমার্টিন যেতে হয় জাহাজে করে। কেয়ারী সিন্দবাদ আর কুতুবদিয়া নামে দু'টি জাহাজ প্রতিদিন সকাল ১০ টায় টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায় দ্বারুচিনি দ্বীপের উদ্দেশ্যে। আবার বিকেল চারটায় ছেড়ে আসে।
মালবাহী নৌকা।এই ছবিটা নাফ নদী থেকে তোলা। তখন আমি কেয়ারী সিন্দবাদের যাত্রী।
নাফ নদীর আর একটা ছবি। দূরে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে মায়ানমারের পাহাড়। এই নদীর অর্ধেকটা বাংলাদেশের আর বাকিটা মায়ানমারের।নদীর তীরে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া মায়ানমার বর্ডার ও দেখা যায়।
সেন্টমার্টিনের কাছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিয়মিত টহলযান। সব সময়ই নাকি একটা না একটা নৌবাহিনীর জাহাজ এখানে নোঙর করা থাকে।
দারুচিনি দ্বীপে পৌঁছে গেছি আমরা। বিস্তৃর্ণ সৈকত। কেবল ছবি দিয়ে যার সৌন্দর্য বর্ণনা করা যাবে না।
সেন্টমার্টিনের দীর্ঘ জেটির নীচ থেকে তোলা ছবি এটা।
মাঝ দুপুরে সেন্টমার্টিনের সমুদ্রতট। প্রচন্ড রোদ ছিলো সে ক'দিন। আমি এমনিতেই কালো, এখন আরো কালো হয়ে গেছি
ভর দুপুরে তিন বোরখাওয়ালীর সানবাথ
ছেঁড়া দ্বীপের পথে।সেন্টমার্টিন ছেড়ে একটু পাশেই ছেঁড়া দ্বীপেও ঘুরে এসেছি। ছোট্ট এই দ্বীপটা যেন আরো সুন্দর।
ছেঁড়া দ্বীপ। সেন্টমার্টিনের মায়া ছাড়িয়ে একটা প্রায় সতন্ত্র একটা দ্বীপ। এখানে কোন জন মানুষ নেই। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য তাই এখনো মানুষের হাতে নষ্ট হবার সুযোগ পায় নি।
একটুকু ছনের ঘর। মাথার উপর সূয্যি মামা তখন প্রবল প্রতাপে হাসছেন। তাই পুরো দ্বীপে মাথা গোজার এই একটাই ঠাঁই।
ম্যাক্রো ফটোগ্রাফীর একটুখানি শখ জাগছিলো মনে। মানুষ কি জিনিস এখনো মনে হয় এই ফড়িংটা বুঝে উঠে নাই। একদম সামনে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়ার পরও নড়াচড়ার নাম নাই। তাই এই গাধা ফড়িংটার কল্যাণে আমিও গ্রেট ফটোগ্রাফার হয়ে গেলাম।
জেলেদের কাছ থেকে মাত্র তুলে আনা চিংড়ী। বড়টার সাইজ ছিলো একফুটের চাইতে লম্বা।
আটকে পড়া কাঁকড়া।দ্বীপের ছোট ছোট গর্তে জোয়ারের সময় আটকে পড়া মাছ আর কাঁকড়ার দল। মনে হয় বুঝি মাছ আর কাঁকড়ার আবাদ চলছে।
এমনি সব ট্রলারে করে যেতে হয় ছেঁড়া দ্বীপে। ছবিটা স্পীড বোট থেকে তোলা।
ছেঁড়া দ্বীপের আর একটা ছবি। সমুদ্রের মাঝে এই পাথরটা দেখে মনে হয় কেউ একটা টেবিল উল্টিয়ে রেখেছে!
দিনের শেষে। সূর্য ডুবে দ্বারুচিনি দ্বীপের সৈকতে। নেমে আসে অন্ধকার। কারন, সেন্ট মার্টিনে এখনো বিদ্যুত পৌঁছায় নি।
পূর্ণিমা ছিলো সেদিন। চাঁদ উঠছে। এরপর পূর্ণিমার আলোয় আমিও শুভ্রর মতো আমার জরী রে নিয়া সমুদ্রে নেমেছিলাম। ছবি তোলা হয় নি আর। কিছু কিছু সময়ের ছবি তুলতে হয় না। এমনিতেই তা স্মরণীয় হয়ে থাকে চিরকাল।
শেষকথা: বাংলাদেশ বলতেই পৃথিবীর মানুষকে বোঝানো হয় বন্যা,ঘুর্ণিঝড় আর সাইক্লোনের দেশ হিসেবে। এটা কিন্তু বোঝায় আমাদের সকরকাররাই। কারন তাতে বিদেশী সাহায্য পাওয়া যায়। যা দিয়ে নিজেদের উদরপূর্তি করা যায়। অথচ আমার দেশেই আছে অসাধারন সুন্দর সব জায়গা। আমরা চাইলেই আমাদের দেশটা পরিচিত হতে পারে আর একটা ভুস্বর্গ হিসেবে। আমরা চাইলেই কি বিবিসি,সিএনএন এ ইন্ক্রেডিবল ইন্ডিয়া, ন্যাচারাল নেপাল, ট্রুলি এশিয়া মালয়শিয়া বা এক্সেলেন্ট কম্বোডিয়ার মতো বিউটিফুল বাংলাদেশকে দেখতে পারি না?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩৯