somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঠান্ডা শব্দটাই বড্ড ঠান্ডা

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাপা পিঠার মৌসুম চলছে:
সন্ধ্যা নামার আগে আগেই প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে এই ভাপা পিঠা। নারকেল, গুড় চালের গুঁড়ার এই পিঠা খুব জনপ্রিয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তমালের এই পিঠার প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। খুব ছোটবেলা থেকেই এই পিঠার প্রতি আকর্ষণ জন্মেছে। তখন দুই টাকা করে ছোট সাইজের পিঠা পাওয়া যেত আর পাঁচ টাকায় কেনা একটা ভাপা খেলে আধাবেলা আর কিছু না খেলেও চলতো। গ্রামের খালাদের বানানো সেই পিঠা অন্যরকম স্বাদের ছিল। এখন পিঠা ঠিকই আছে কিন্তু স্বাদের মানে ধ্বস হয়েছে। তারপরও তো ভাপা বলে কথা।

প্রতিদিন অফিস সেরে ফেরার পথে দুই বা তিনটা পিঠা গলধঃকরণ করা চাই তমালের। এই সাথে যুক্ত হয়েছে তমালের মেয়ের এই পিঠার প্রতি আগ্রহ। বর্তমানে পিঠার যা অবস্থা। ভাবলে কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। দাম যা-ই হোক পিঠার ভেতরের অংশ এমনভাবে সরু আর পাতলা করা হয় যে শুধু বাটির চারকোনার রিং এর মতো অংশটুকুই খাওয়া যায়। বাকিটা শুধু একটা গোলাকার আদল আনার জন্য যেন তৈরী করা হয়। তমাল যতবার এই পিঠা খেতে গেছে ততবারই বলেছে কারিগরদের কিন্তু কোন কাজ হয়নি। বরং দু’একজন যা-ও ঠিকমতো বানাতো তারাও অন্যদের মতো ভেতরের অংশ পাতলা করতে থাকলো। কি করে যে এই বানানোর পদ্ধতিটা ইউনিভার্সাল হয়ে গেল বোঝাই গেল না। আর সাবর্জনীন হলে যা হয়। তাই হলো, মেনে নিতে হলো। তবু এই শীতে এই পিঠাই যেন একমাত্র জনপ্রিয় পিঠা প্রতিনিধি।

ঠান্ডা শব্দটাই বড্ড ঠান্ডা:
তমালের একবন্ধু একবার তার প্রেমিকার প্রেমের অনিশ্চয়তার কথাটা এভাবে ব্যক্ত করেছিল- স্বর্ণা, তোমার প্রেমটা ঠিক ঢাকা শহরের শীতের মতো আসি আসি করেও আসে না। সত্যি শীত আর ঠিক মতো আসছে না। শীতের কাপড় বের করে পরা শুরু করবে কি করবে না এই নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়তে হয়েছে এই শহরের মানুষদের। এখন অবশ্য তা নেই, স্বর্ণার কাছ থেকে প্রেমের স্বীকারোক্তিটাও এসেছে আর ডিসেম্বরের শেষের এই ঝাক্কাস শীতটাও বেশ পাকা হয়েছে। শীত না বলে ‘ঠান্ডা’ শব্দটি উচ্চারণ করলে মনে হয় বেশি যথাযথ হবে। তাই তমালের প্রেম ফিরে পাওয়া সেই বন্ধুটি হঠাৎ করেই ফোন করে বলল- দোস্ত, ঠান্ডা শব্দটাই বড্ড ঠান্ডা, তাই বাস্তবের ঠান্ডাটা তাহলে কত্তো ঠান্ডা! এখন ঠান্ডায় মরছি আমরা।

কারো কারো কাছে ঠান্ডাটা উপভোগ্য আবার কারো কারো কাছে তা নিয়ম করে সব মানার একটা সেন্সেটিভ সিজন। এভাবে সব মেনে, নিয়ম করে চলে দিনপাত করাটা বেশ মুশকিল। ঠান্ডাজনিত রোগ যেমন- কফ, কাশি, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, টনসিল বেড়ে যাওয়া, গলা বসা, স্বরভঙ্গ, কাঁধ-পিঠ-গলা শক্ত হয়ে আসা ইত্যাদিতে ভুগতে হয়। এই সাথে কাপড় কাচার সমস্যা, গরম পানি করে গোসল করা, শীতবস্ত্রের ব্যবহার ও সংরক্ষণ, অতিরিক্ত কাপড় সঙ্গে রাখা, কাপড় ও ওষুধপত্রের জন্য বড় ব্যাগ সঙ্গে রাখা, ভেসলিন, স্কীন লোশন ইত্যাদিও মনে করে সাথে নেয়া আরও কত কি যে মাথায় রেখে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে হয়, তা তো একটু ভাবলেই আপনারাও বলতে পারবেন। এই ঠান্ডার সময়ে ঠান্ডাটাকে যেন নিজের মতো করে বুঝতে পারেন সবাই। খুব কাছে থেকে। ধরেন, বাসের বা কারের হ্যান্ডেল বা ডোর স্পর্শ করলেন সাথে সাথেই ঠান্ডা কি তা অনুভব করতে পারবেন। সীটে বসতে যেয়েও তা আবার স্মরণে পড়বে। শীতের এই সময়ে লিলুয়া বা জোরসে গতির হাওয়ায়ও তা টের পাবেন। পানি স্পর্শ করা, পান করা, ওযু করা, রান্না করার সময়েও এই ঠান্ডা আপনাকে ঠান্ডার সংজ্ঞা শেখাবে। তাই বলাই যায় ঠান্ডা শব্দটাই আসলে বড্ড বেশি ঠান্ডা।

দিন ছোট রাত বড়:
প্রায় ছয়টা বাজতে যাওয়া পর্যন্ত যেন সুবহে সাদেক গড়ায়। আর পাঁচটা বাজতে না বাজতেই যেন দিন শেষ। সকাল সাতটা বাজতেই বাসস্টপেজগুলোতে লোকাল এবং কাউন্টার সার্ভিসের জন্য যখন লাইন ধরে বা লাইন ছাড়া দৌড়াদৌড়ি হুড়োহুড়ি তখন সকাল আটটা বাজলেও দিব্যি সীটসহ লোকাল বাসগুলোতে যেতে পারবেন অফিসে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। যাদের সকালে কোন না কোনভাবে ওঠার অভ্যাস আছে তারা এই সুবিধাটি সহজে ভোগ করতে পারবেন। আলসেপনায় আর ঠান্ডায় যারা কুঁড়ে হয়ে থাকেন তাদের জন্য অবশ্য উল্টো অবস্থা হবে। অফিসে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করলেন আর সাথে সাথেই যেন দুপুরের লাঞ্চ ব্রেক হয়ে বিকেল গড়িয়ে দিন শেষ। হায়রে এতো ছোট দিন! অনেক কাজ তো রয়েই গেল। এমন মনে হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

ছাদ সকাল:
শীতের সকাল যদি হয় মিষ্টি রোদ্রের খেলায় ঝলমলে, তবে ছাদ সকাল হলে মন্দ হয় না। গোসল সেরে ছাদে উঠে সকালের সেনা রোদ পোহানো যেতে পারে। ভিটামিন-ডি’র জোগানও হলো আবার কর্মস্থলে যাবার পূর্বে শীররটাও চাঙ্গা হলো। এতকিছুর পরেও শীতকে স্বাগত। সাবধানে সঠিকভাবে উপভোগ করুন শীতকালকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ঋতু বৈকল্যের মধ্যেও যদি ভিনদেশীরা সাফল্য আনতে পারে, তবে আমরাও পারবো।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×