somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজো তোমারই স্মৃতিতে বিভোর

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কি এক মায়া যেন ছড়িয়ে আছে সেই পাথুরের ভূমিতে! প্রতি ওয়াক্ত নামাজে পবিত্রতার উৎসব। হারাম শরীফে সারাক্ষণ যেন বসে থাকতেই ইচ্ছে করতো। নামাজ, জিকির, তজবীহ্ পড়া- আহা কি এক প্রেমময় সময় যেন কাটিয়ে এসেছি। আজো প্রতি ওয়াক্ত নামাজে বসে যেন সেই পবিত্র কাবা, হারাম শরীফের প্রতিটি আনাচ কানাচ, মদীনার নব্বী, হযরতের (সাঃ) মাজার শরীফ চোখের সামনেই দেখতে পাই। এখনো দেশে প্রচারিত সৌদী চ্যানেলটি দেখলে মনে হয়- আমি এখনো কাবা শরীফ তাওয়াফ করছি। সাফা-মারওয়া দৌড়াচ্ছি। কত পবিত্র আর দামী সেই ভূমি- যে ভূমি কত নবী, রাসুল, সাহাবী, ওলী, আওলাদের পদস্পর্শে ধন্য। মৃত্যুকে ইচ্ছে করেই যেন স্মরণে না রাখার প্রতিযোগিতায় মেতেছি আমরা। কিন্তু যে-ই শেষ হচ্ছে সে-ই বুঝতে পারছে মৃত্যুর স্বাদ কেমন! ভয়াবহ সেই মৃত্যুর স্বাদ সকলকেই একা একা গ্রহণ করতে হবে।

আল্লাহ বলেছেন- মক্কাতে কাবায় অবস্থিত দু’টি পাথর বেহেশ্তের- একটি হজরে আসওয়াদ অপরটি মাকামে ইব্রাহীম। কাবা ঘরটিও বেহেশ্তের ঘর। এমন নেয়ামত পৃথিবীতে পেয়েও কি আমরা হজ্বে যাবো না? বিশ্ব মানবতার সর্বোত্তম উদাহরণ আর সৃষ্টির সেরা মানুষের রওজা যেখানে সেই পবিত্র স্থান কি দেখে আসবো না? আজো যিনি কবরে শুয়ে ‘ইয়া হাবলি উম্মাতি, ইয়া হাবলি উম্মাতি’ বলে কাঁদছেন! হে আল্লাহ্ আপনি আমার উম্মতদেরকে ক্ষমা করুন- যিনি সকল পাপ থেকে ঊর্ধ্বে , যাঁর বেহেশ্ত নিশ্চিত, তিনি উম্মতের পাপের ক্ষমার জন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’লার কাছে আঁকুতি জানাচ্ছেন, সেই আমরা কি বুঝতে পারছি না- অন্যায় আর পাপের শাস্তি কত মর্মন্তুদ হবে? এহরাম বেঁধে কোন প্রাণী, মশা, মাছি না মেরে, কোন গালি-বিবাদে না জড়িয়ে, শরীরের একটি চুলও চুলকে না ফেলে, কোন কিছু না মেখে, গোসল না করে- শুধু ওজু করে নামাজ, জিকির, কান্নাকাটি, তাওয়াফ আর সাঈ ছাড়া যখন আর কিছু করার অনুমতি থাকে না, তখন বোঝা যায় নিজেকে উদার আর উদাত্ত করা কত কঠিন কাজ।

কত সুখে আছি এই ভঙ্গুর দুনিয়ায়, কত রঙ্গে মজে আছি। পরিবেশের বৈরীতা থাকা সত্ত্বেও মহান আল্লাহ্ এই এলাকাটিকেই করেছেন সবচেয়ে সম্মানীত, পুত-পবিত্র স্থান। প্রচন্ড তাপ, সবুজ হীন, ঘাস হীন, পোকা-মাকড়-প্রাণী হীন, পানি হীন প্রায় মৃতের মতো এই ভূমির সেই রূপ সেই নবী-রাসুলদের সময়ে নিশ্চয়ই আরো ভয়াবহ ছিল। ধীরে ধীরে এই অঞ্চল হয়ে উঠেছে বেশ নান্দনিক। এখন অনেক সুবিধা বিদ্যমান। পথে পথে হাজীদের জন্য ওয়াটার উইন্ডব্লো ফ্যান, এসি, কুল ব্লোইং, শেড, কৃত্রিম ঝর্ণা, আন্ডারগ্রাউন্ড পাথ, উড়াল সড়ক, সুসজ্জিত টয়লেট, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, জমজম পানি- আরও কত কি!

মহান আল্লাহ’র প্রেমে মত্ত হয়ে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় সন্তানকে নিজ হাতে কোরবানী করতে প্রচেষ্টা করতেও দ্বিধা করেননি হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। সর্বমহান আল্লাহ’র সানুগ্রহে ছুরির নিচে দুম্বা কোরবানী হয়ে যায়। ঈমানের পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন তিনি। এ শিক্ষা শুধু নিছক গল্প নয়, এই ইতিহাস মানুষকে আলোর পথ দেখানোর শিক্ষা। মানুষের ঈমান ও অখলাক-আকিদা বোঝানোর উপমা। বিবি হাজেরা (রাঃ) যে কত বড় ধৈর্যের উদাহরণ রেখে গেছেন তার কি কোন তুলনা আছে? অমন সময়ে কি কঠিন পরিবেশে পাথর আর পাহাড়ময় নির্জন স্থানে শিশু ঈসমাইলকে নিয়ে একজন মা কতটা অসহায় আর অনিরাপদ হতে পারেন- তা ভাবলে গা শিওরে ওঠে। সবই সয়েছেন আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীনের প্রতি সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।

আমার কি করছি? দিনে দিনে ঔদ্ধত্য আর বৈঈমান হচ্ছি। একবার ভাবুন যে আজাজিল ফেরেশতা মহান আল্লাহ পাকের এতো প্রিয় বান্দা ছিল, অথচ তার একটি আদেশ অমান্য করার কারণে সমস্ত আমল, সওয়াব চিরতরে ধুলিস্যাৎ হলো। ঔদ্ধত্য আর অহমিকা তাকে এতটাই নিচে নামিয়ে দিয়েছিল যে আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীন তার প্রতি অনন্ত জীবনের জন্য অসন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। তিনি তো সেই মহান, যিনি জাত-কুল-বংশ-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে তার রহমতের ছায়া তলে রেখেছেন। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এইভাবে- নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কঠিন প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আমাদের কি এখনো বোধের জাগরণ ঘটবে না?

মক্কায় হেরা পর্বতের গুহায় যখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ধ্যান মগ্ন থাকতেন, নামাজ-কালামে-জিকিরে সময় কাটাতেন, তখন সেই দুর্গম সুউচ্চ পাহাড়ের কঠিন পাথর বেয়ে প্রতি দুপুরে হযরত খাদিজা (রাঃ) নিজে খাবার তৈরী করে কাপড়ে বেঁধে খাবার পৌঁছে দিতেন। সন্ধ্যায় আবার নিজ আলয়ে পায়ে হেঁটে হেঁটে ফিরে আসতেন। পরের দিন আবার যেতেন। এইভাবে চল্লিশ দিন উনি খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। এতো উন্নত এই সময়েও হাজিদের ঐ হেরা পর্বতে একবার উঠতে ও নামতে চার ঘন্টা করে মোট আট ঘন্টা সময় লাগে। হযরত খাদিজা ছিলেন সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে, সম্পদের কোন অভাব ছিল না। তাঁর সম্পদ বিক্রি করে কয়েকটা সোনার পাড়ার ক্রয় করা যেতো বলে ধারণা করা হতো। অথচ এই সকল সম্পদ গরীবের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে নিঃস্ব হয়ে শুধু আল্লাহ্ সোবহানাহু তা’লার সন্তষ্টি অর্জনের জন্য, তাঁর হুকুম পালনের জন্য কত কষ্টই না সয়েছেন।

আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীন সে-ই যিনি না চাইতেই কত কত নেয়ামত এই গ্যালাক্সীতে প্রদান করেছেন। মানুষকে করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ। অন্যান্য সকল জীব, প্রাণী ও জড় কুলকে করেছেন মানুষের সেবার্থে নত। যিনি এতো নেয়ামত প্রদান করতে পারেন, তিনি তা আবার ছিনিয়েও নিতে পারেন। আপনার আফসোস তখন হবে- যখন চোখের সামনেই দেখবেন আপনার হাত আর আগের মতো লিখতে পারে না, পা দু’টি সেই যৌবনের দুরন্তপনার মতো লাফিয়ে চলে না, কণ্ঠে আর জোর আসে না, চোখের দৃষ্টি নিষ্প্রভ-অস্পষ্ট, প্রতিটি প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকের বিপরীতে চলছে। আহা সেই সময়টি বড় কষ্টের যা মানুষ পৃথিবীতেই অনুভব করে। কোরআনেই তো আছে- পরকালে তোমরা তোমাদের যৌবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।

আপনার চোখ আশ্চর্যে বিস্ফারিত হবে- যখন দেখবেন কাবার চারপাশে যুবকরাই সংখ্যায় বেশি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ্ পাক নির্দেশ দিয়েছেন- সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে আহ্বান করো তারা যেন এই ভূমিতে আগমন করে, পবিত্র ঘর বেশি বেশি তাওয়াফ করে, সাফা-মারওয়া সাঈ করে, মুসলমানদের গৌরবের ইতিহাস সমৃদ্ধ এই স্মৃতি চিহ্নগুলো অবলোকন করে, আর আল্লাহ্ প্রেমে উদ্বেলিত হয়। পবিত্র ঈদুল আজহা’র দিনে হাজিগণ মিনায় শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করার পর আল্লাহ’র সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানীর করেন। এই কোরবানীর মধ্য দিয়ে যে আদর্শ স্থাপিত হয়েছে মুসলিম উম্মায় তা ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। মানুষ হোক মানবিক, পৃথিবীই হোক স্বর্গধাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×