somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শেখ মিজান
অন্যায় অপশক্তির বিরুদ্ধ্যে সোচ্চার কন্ঠধ্বনি, মুক্তবাক, স্বাধীন চিন্তা, প্রগ্রেসিভ রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সামাজিক বৈপ্লবিক পরির্তন চাইযুক্তিহীন কথা মূল্যহীন। কিছু কিছু লোক আছে যারা অযুক্তিক অসত্য কথা বলে বেড়ায়। এদের কথার মূল্য খুবই কম। যুক্তি যু

ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী হত্যাকান্ড; রাজনীতিকদের কুকথা

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী
আলী, শাহেদ১ (১৮৯৯-১৯৫৮) আইনজীবী, রাজনীতিক। ১৮৯৯ সালে চাঁদপুর জেলার মতলব থানার আশ্বিনপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। তিনি ১৯২১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে বি.এ (অনার্স) এবং ১৯২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২৫ সালে বি.এল ডিগ্রি লাভ করে তিনি ১৯২৬ সালে কুমিল্লা জেলাকোর্টে আইনব্যবসা শুরু করেন


১৯২৯ সালে শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের কৃষক-প্রজা পার্টিতে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে। শাহেদ আলী দীর্ঘকাল কৃষক-প্রজা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কুমিল্লা জেলা শাখার সহসভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। এ.কে ফজলুল হক কর্তৃক কৃষক-শ্রমিক পার্টি গঠিত হলে (১৯৫৩) তিনি তাতে যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্তফ্রণ্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং ১৯৫৫ সালে পরিষদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে শাহেদ আলী কৃষক-শ্রমিক পার্টি ত্যাগ করে ১৯৫৮ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।


১৯৫৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) দলীয় সদস্য দেওয়ান মাহবুব আলী কর্তৃক স্পিকার আবদুল হাকিমের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব পরিষদে গৃহীত হয়। ফলে ২৩ সেপ্টেম্বর ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে পরিষদের অধিবেশন পুনরায় শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতেই সরকারি দলের সদস্য এবং বিরোধীদলীয় সদস্যদের মধ্যে কতিপয় বিষয়ে তুমুল বাকবিতন্ডা শুরু হয় এবং অচিরেই তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ঘটনাচক্রে শাহেদ আলী মারাত্মকভাবে আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় এবং ২৬ সেপ্টেম্বর (১৯৫৮) হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]

ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী হত্যাকান্ড; রাজনীতিকদের কুকথা

কুট কৌশল ও কুকথার রাজনীতির চর্চা :

লন্ডনে আয়েশী জীবনে থাকা একটি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক হাওয়া ভবনের স্রষ্টা, বিভ্রান্তিকর মন্তব্যে ঝড় তুলতে ইতি মধ্যে নানা কুট কৌশলে ব্যর্থ হয়েছেন। তারেক রহমানের কা-জ্ঞানহীন বক্তব্যে তাদের নিজ দল বিএনপিতে ক্ষোভ হতাশা নতুন নয়। তবে এবার তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে খুনি করেছেন কুন্ঠিত বোধ করেন নাই। আওয়ামী লীগকে বলেছেন কুলাঙ্গারের দল। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কুলাঙ্গারের নেতা বলে মন্তব্য করেছেন।

ফেরারি আসামি হয়ে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান এখন মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে ২৪ আগস্ট এক সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি নতুন এই বিতর্কের জন্ম দেন।

রাজনীতি এখন আর রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ নেই। এক সময়কার রাজার 'নীতি' খ্যাত 'রাজনীতি' এখন হয়ে উঠছে যত 'অসভ্য নীতি'। কারণ সভা-সমাবেশ, দলীয় কর্মসূচি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, এমনকি সংসদে দাঁড়িয়েও রাজনৈতিক নেতারা কুকথা বলতে কোনো ধরনের দ্বিধা করছেন না। বরং নানাবিধ কুকথায় একপক্ষ অপরপক্ষকে ঘায়েল করছেন।

তাহলে কি অদ্য: ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ ইং তারিখ- তারিক জিয়ার মিথ্যা উক্তির ধারাবিহকতায় "বঙ্গবন্ধুকে খুনি বললেন কলেজ অধ্যক্ষ"?


মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দরে অবস্থিত শহীদ সরদার সাজাহান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মঙ্গলবার মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এক আলোচনা সভায় এমন বক্তব্যে সভাস্থলে তুমূল তর্ক-বিতর্ক ও হৈ চৈ এর সৃষ্টি হয়। অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান তার বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করে পুনরায় একই কথা বলেন। তিনি আরও জানান, কয়েকটি ইতিহাসের বই পড়ে তিনি এ তথ্য পেয়েছেন। তবে তিনি কোনো বইয়ের নাম উল্লেখ করতে পারেননি।



যে বইয়ের নাম অধ্যক্ষ উল্লেখ করেন নাই, চলুন আমরা উম্মুচন করতে পারি কি না !

বাংলার স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তান পন্থীদের এহেন অভিযোগ নতুন কিছু নয়, অতি সম্প্রতি লন্ডনে পালিয়ে থাকা বিএনপির সিনিয়র সভাপতি তারেক জিয়া দাবী করেন "শাহেদ আলীকে নাকি বঙ্গবন্ধু চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। তারেক রহমান আবার আবুল মনসুর আহমদের ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইদের উল্লেখ করেছেন। সেখানে নাকি এসব লেখা আছে। বইটির লিংক যুক্ত করা হলো, প্রয়োজনে পড়ে দেখতে পারেন।

এসব দেখে মনে হয়, যেন অপ্রত্যাশিত শব্দে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আমাদের দেশের রাজনৈতিক লিডাররা সমানতালে নগ্ন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। সৃষ্টি করেছেন সুস্থ রাজনৈতিক ধরার আদলে 'বেমাননা ধারা'। প্রতিপক্ষের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত চরিত্র হননের চেষ্টা করারও অপরাজনীতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কুকথার স্রোত বইছে দেশের রাজনীতিতে। সবমিলে বলা যায়, অসভ্যর কালাজ্বরে আর কুকথার প্রত্যাবর্তনে বর্তমানে সহসাই চলছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছন্দ পতন।

ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীর মৃত্যু
শাহেদ আলী পূর্ব পাকিস্তান গণপরিষদে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৯৫৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আর মৃত্যুবরণ করেন ২৬ সেপ্টেম্বর।

তখন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগে নেত্রীত্ব যুক্তফ্রন্টের সরকার গঠিত হয়, প্রধানমন্ত্রীর দায়ীত্ব নেন "হোসেন শহীদ সোরওয়ার্দী" তিনি আওয়ামীলীগেরও নেতৃত্ব দিতেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। পূর্ব পাকিস্তান গণপরিষদে বিরোধী দলে ছিলো কৃষক প্রজা পাটি, দলের প্রতি আশীর্বাদ ছিলো শেরেবাংলা এ, কে, ফজলুল হকের।



যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকেই বিরোধী পক্ষ ও সরকার পক্ষের দু'জনকে (প্রাদেশিক পরিষদ) সংসদের দায়ীত্ব দেয়া হয়।
=> কেএসপি সমর্থিত: আব্দুল হাকিমকে স্পিকার এবং
=> পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শাহেদ আলীকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হয়েছিলো।

১৯৫৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন শুরু হলে মুসলিমলীগ দলীয় সদস্য হাসেম উদ্দিন আহ্্ম্মদ আওয়ামীলীগর নেতৃত্বে গঠিত কোয়লিশন দলের ৬ জন সদস্যের প্রতি স্পিকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এদের পরিষদের অধিবেশনের যোগদানের কোন অধিকার নেই। কারণ নির্বাচন কমিশন এদের নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নাকচ করে দেয়। ইচ্ছাকৃত ভাবে হাসেম উদ্দিন সাহেব এ কথা উল্লেখ করেননি। তার বক্তব্য সম্পর্কে স্পিকার বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি এ সম্পর্কে রুলিং দেবেন। এর ফলে সৃষ্ট উত্তেজনামূলক পরিস্থিতিতে ন্যাপ এর সদস্য দেওয়ান মাহবুব আলী স্পিকারের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন। স্পিকার এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। ফলে পরিষদ কক্ষে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে ব্যর্থ হয়ে স্পিকার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।


এরপর ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী স্পিকারের আসন দখল করেন। দেওয়ান মাহবুব আলী তার প্রস্তাব পুনরায় পেশ করেন। প্রস্তাবটি সম্পর্কে ভোট গ্রহণ করা হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১৭০ জন ভোট দেওয়ায় স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়।

২৩ তারিখে খুব তোড়জোড় করে অধিবেশন বসার কথা। স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলেও তিনি তা মানতে রাজি হননি। তিনি জোর করে স্পিকারের চেয়ারে বসবেন বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এদিকে সরকার পক্ষ তাকে মানতে রাজি নয়। অতএব, ডেপুটি স্পিকার সভাপতিত্ব করবেন বল্রে স্থির করা হয়।

বিরোধী দলের নেতৃ বৃন্দ প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দর মির্জার সহায়তায় আওয়ামীলীগ সরকারকে অপসারণের সারযন্ত্র করে।

পাকিস্তানের উচ্চতম কর্তৃপক্ষের সমর্থন লাভ করে কৃষক-প্রজা পার্টির নেতৃত্বে গঠিত বিরোধী দল স্থির করলো, ২৩ তারিখের অধিবেশনে কার্যপরিচালনা অসম্ভব করে তুলে পূর্ব পাকিস্তানে প্রেসিডেন্টের শাসন অবশ্যম্ভাবী করাই হবে তাদের রণকৌশল।

২৩ সেপ্টেম্বর বিকাল বেলা ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী পরিষদ কক্ষে প্রবেশ করে স্পিকারের আসন গ্রহণ করলে সরকার পক্ষ তাকে সমর্থন করে। বিরোধী পক্ষ প্রবল প্রতিবাদ জানায়। এর ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচন্ড বাদানুবাদ শুরু হয়। বিরোধী দল শাহেদ আলীকে স্পিকারের আসন ত্যাগ করার দাবী জানায়। এক পর্যায়ে পরিষদ কক্ষে ব্যাপক হাঙ্গামা শুরু হয় এবং সদস্যরা একে অপরকে শারীরিক আক্রমণ করেন। কেউ কেউ ডেপুটি স্পিকারকে লক্ষ্য করে হাতের কাছে যা পেয়েছেন তা ছুঁড়ে মারা শুরু করেন।

পঞ্চাশের দশকের সাংবাদিক, লেখক, গবেষক আব্দুল মতিন এই সময়ে পূর্ব পাকিস্তান পরিষদ কক্ষে সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার স্মৃতি চারণায় বলেছেন, “প্রেস গ্যালারী থেকে আমি তখন পরিষদ কক্ষের শ্বাস-রুদ্ধকর পরিস্থিতি লক্ষ্য করছিলাম। যতদুর মনে পড়ে আমার সাংবাদিক বন্ধুরা তখন করিডরে এ হাতাহাতি এবং বাইরের রাস্তায় বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।

আমার সামনে প্রেস গ্যালারীর অনুচ্চ দেওয়ালের তিন চার সারি দুরের একটি আসনে কৃষক প্রজা পার্টির প্রভাবশালী সদস্য ইউসুফ আলী চৌধ্রুী (মোহন মিয়া) বসেছিলেন। তার চোখে মুখে উত্তেজনার চিহ্ন স্পষ্ট। টেবিল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সদস্যদের আসনের উভয় হাতলের উপর রাখা একটুকরো পালিশ করা চ্যাপ্টা কাঠের এক মাথায় স্ক্রু দিয়ে লাগানো ছিলো। মোহন মিয়া তার আসনের সঙ্গে লাগানো কাঠের টুকরোটি হঠাৎ শাহেদ আলীর দিকে ছুঁড়ে মারলেন। কাঠের টুকরোটি তার মুখে ও বুকে গিয়ে লাগলো। তিনি গুরুতর আহত হয়ে তার আসনের উপর লুটিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে নিকটস্থ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। - আব্দুল মতিন

২৩ সেপ্টেম্বর সংঘঠিত রক্তক্ষয়ী ঘটনার অব্যবহিত পর, পরিষদ ভবন ত্যাগ করার আগে, জনৈক পুলিশ অফিসার চাক্ষুষ বিবরণ দেওয়ার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন। আমি তখনো পর্যন্ত ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারলেও এর ফলাফল কি দাঁড়াবে তা অনুমান করতে পারিনি। ডেপুটি স্পিকার কে আহত করার জন্য কৃষক-প্রজা পার্টি দায়ী, এ কথা মনে রেখে আমি চাক্ষুষ বিবরণ দিতে রাজী হলাম। পুলিশ অফিসার আমার বক্তব্য লিখে নিলেন। মোহন মিয়াকে আক্রমণ কারী বলে আমি সরাসরি উল্লেখ করলাম।”
(স্মৃতি চারণ: পাঁচ অধ্যায়, পৃঃ ১৭, ১৮, ১৯) ।

এরপর আব্দুল মতিন ঐতিহাসিক যে মন্তব্যটি করেছেন তা গুরুত্বপুর্ণ। বলেছেন, “৭ই অক্টোবর মধ্যরাত্রে কৃষক-প্রজা পার্টি ও আওয়ামীলীগ বিরোধী মহলের আশা পূর্ণ হল। কন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার আসন বন্টন নিয়ে ফিরোজ খান নুনের সাথে আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরোধের ফলে আওয়ামীলীগ মন্ত্রীরা ২রা অক্টোবর ‘কোয়লিশন’ মন্ত্রী সভা থেকে পদত্যাগ করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার সংকট এবং শাহেদ আলী হত্যাকান্ডের ফলে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দর মির্জা জেনারেল আয়ুব খানের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সারা পাকিস্তানে সামরিক শাসন প্রবর্তন করে।” (ঐ) ।

এর মাত্র ২০ দিন পর ইস্কান্দর মির্জাকে সরিয়ে আয়ুব খান সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পাকিস্তানের প্রভুবনে যান।

পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, বিএনপির প্রভাব শালী মন্ত্রী চৌধুরী ইবনে ইউসুফের পিতা ইউসুফ আলী চৌধুরী (মোহন মিয়া), যিনি ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে হত্যা করেছেন। মোহন মিয়া ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও মোহন মিয়া খাজা নাজিমুদ্দীন, নূরুল আমিনদের পক্ষে ছিলেন। আবুল হাশেমের আত্তজীবনে ‘বিভাগ পূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি ও আমার জীবন’ বইতে পড়েছি, মোহন মিয়া সহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর প্রধান মন্ত্রী হওয়ার প্রবল বিরোধী ছিলেন। তখনো তিনি শহীদ সাহেবের পক্ষের এক কর্মী বরিশালের, শামসুদ্দীনের পাকস্থলিতে লাথি মেরে সংজ্ঞাহীন করে দিয়েছিলেন। এর পর বঙ্গবন্ধু মোহন মিয়ার জামার কলার চেপে ধরে রাস্তায় চিৎ করে ফেলে দেন। দার্শনিক, অধ্যক্ষ সাঈদুর রহমান তার ‘শতাব্দীর স্মৃতি’ বইতে জানিয়েছেন, ৪০ এর দশকে কুষ্টিয়ায় ছাত্র সম্মেলনে শাহ আজিজুর রহমানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর হাতাহাতি হয়েছিলো। শাহ আজিজ ছিলেন খাজাদের প্রতিনিধি। আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন হাশিম-সোহ্রাওয়ার্দী পক্ষের ছাত্র নেতা।

আবুল হাশিম তার বইতে বলেছেন যে, তার নেতৃত্বাধীন বঙ্গীয় মুসলিমলীগের প্রগতিশীল কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রধান মন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের আশীর্বাদ পুষ্ট মোহন মিয়াদের সঙ্গে প্রায়ই শেখ মুজিবের মারা মারি করতে হত।

আসুন জেনে নেই চৌধুরী ইউসুফ আলী মোহন মিয়া কে এদেশের কোন সংগঠন স্বরণ করছে এবং কেন?

চৌধুরী ইউসুফ আলী মোহন মিয়া

মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে: ইউসুফ আলী চৌধুরী (মোহন মিয়া) ভারত উপমহাদেশের একজন প্রভাবশালী বাঙ্গালি রাজনীতিবিদ যিনি ভারত-বিভাগ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় এবং মুসলমান সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। নিজে জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি ব্রিটিশ আমলে নির্যাতিত প্রজাদের জন্য জীবনারম্ভে শুরু করেন। তাঁর জন্ম: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর, মৃত্যু: ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে নবেম্বর। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনৈতিক জীবন : তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির মাধ্যমে।


বিএনপি চৌধুরী ইউসুফ আলী মোহন মিয়ার মৃত্যু বার্ষিকী পলন
সুরুতেই উল্লখ করছি- বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ঈবনে ইউসুফের পিতা ছিলেন মোহন মিয়া।



November 26, 2016, ফরিদপুরের একটি নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে জানতে পরি যে, ফরিদপুর শহরের কমলাপুর এলাকার ময়েজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চৌধুরী ইউসুফ আলী ওরফে মোহন মিয়ার ৪৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে স্থানীয় বিএনপি উক্ত অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় জামাত ও বিএনপির সুদৃষ্টির কৃষ্পায় ঘটা করে পালিত হয়ে আসছে।


ধ্যাপক এবিএম আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মোহন মিয়ার দৌহিত্রা বিএনপি নেত্রী নায়াব ইউসুফ চৌধুরী। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এএফএম কাইয়ুম জঙ্গী ও জাফর হোসেন বিশ^াস, ফরিদপুরের সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদ তাবরীজ, ফরিদপুর মুসলিম মিশনের সম্পাদক অধ্যাপক এমএ সামাদ, অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নান্নু, রউফ উন নবী, রঞ্জন চৌধুরী, রেজাউল ইসলাম রেজাউল, গোলাম মোস্তফা মিরাজ, মুরাদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আশুতোষ টিকাদার, এএম সাদেক প্রমুখ। সভা শেষে মোহন মিয়ার রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সুত্র: অপেন আই ডিউজ পোর্টাল ।

প্রধান অতিথি ছিলেন মোহন মিয়ার দৌহিত্রা বিএনপি নেত্রী নায়াব ইউসুফ চৌধুরী। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এএফএম কাইয়ুম জঙ্গী ও


ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছিলেন-, সাহস চোর-ডাকাতেরও থাকে কিন্তু শেখ মুজিবের সাহস ছিলো জাতীয়তাবাদী সাহস। এ দেশে সাহসী মানুষের অভাব বলে শেখ মুজিবকে এদেশের মানুষ ভালো বেসেছিলো। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে, দল সমর্থিত ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে হত্যা করবেন কোন যুক্তিতে ? আর কথা বাড়াতে চাই না।



ড. নাজমুল আহসান মোহাম্মদ কলিমউল্যাহ স্যারের মতে- 'রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দল উভয়ের সপেস থাকতে হয়; এটা গণতন্ত্রের মূল শর্ত। যখন রাজনীতিতে এ পরিবেশ থাকে না, তখন গণতন্ত্রও থাকে না। রাজনীতি তখন একনায়কতন্ত্র বা গোলযোগপূর্ণ পরিবেশের দিকে ধাবিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মত বিরোধী দলের সপেস একদমই নেই। অথচ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ অবস্থায় রাজনীতি গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে এবং যার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।

উপসংহার:
শিষ্টাচার বহির্ভূত অশালীন রাজনৈতিক সহিংসতার অশনি সংকেতও বটে। কারণ ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল দুই পক্ষই যেভাবে একে অপরকে শিষ্টাচারবহির্ভূত আপত্তিকর কথাবার্তা বলে আক্রমণ করছে তাতে যে কোনো মুহূর্তে রাজনৈতিক অঙ্গনে গণআগুন ছড়িয়ে পড়ে অনেক কিছুই পুড়ে ভূস্মীভূত হওয়াটা নিতান্তই অস্বাভাবিক নয়। নিশ্চই নতনু প্রজন্মের গণজাগরণ সরকার ও এদেশের মানুষ ভূলে যাবেন না, ভার্চুয়াল প্রজন্ম মিছিল মিটিং এ দেখতে পাবেন না, তবে দেশের প্রয়োজনে ঐক্যগড়তে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হয় না হবেও না।

দেশের উন্নয়ন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কট ও সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশাসহ চলমান সঙ্কট নিয়ে রাজনৈতিক বাগযুদ্ধ চলতে পারে। অপরদিকে রাজনীতিকদের খেয়াল রাখতে হবে শুধু তর্কের খাতিরেই তর্ক নয়, রাজনৈতিক বাগযুদ্ধ হবে দেশ ও জনগণের স্বার্থে। এছাড়া ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল দু'পক্ষের নেতাদেরই মানসিকতা থাকতে হবে যে প্রতিপক্ষের যুক্তি অকাট্য হলে তা মেনে নিয়ে নিজেদের সংশোধনের পথ খুঁজে দেখা। সংশোধন গৌরবের লজ্জার নয়।


শেখ মিজান
১০ ফাল্গুন ১৪২৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
ঢাকা, বাংলাদেশ ।

তথ্যসুত্র:
বাংলাপিডিয়া, এফএনএস, যুগান্তর
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:২৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×