somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকারে দু'চোখ আলোয় ভরো প্রভু..

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"একটি বাংলাদেশ
তুমি জাগ্রত জনতা।
সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার!"

ভিন্ন মতাবলম্বী দের মতামতের প্রতি যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সবিনয়ে বলতে চাই যে,আমি ডক্টর ইউনুস এর পক্ষে,আমি গ্রামীণ ব্যাংক এর পক্ষে। নোবেল পুরষ্কার লাভের পর আবেগের আতিশয্যে ডক্টর ইউনুসকে 'মহামানব' এর অভীধায় অভিষিক্ত করার মত বালখিল্য আমার নাই,কিন্ত যাবতীয় দুর্বলতা ও সমালোচনার ঊধের্্ব,ফতুয়া-পরা এই ভদ্্রলোক এবং উনার ক্ষুদ্্রঋণ প্রকল্প ,নিদারূণ নৈরাশ্যবাদী এই আমাকেও জাগ্রত বাংলাদেশের স্বপ্ন দ্যাখায়।

আমাদের দারিদ্্র্য এবং বিবিধ দুর্ভাগ্যের জন্য দৈব দুর্বিপাকের পাশাপাশি আমাদের দুর্বিনীত রাজনীতিবিদ সকলের অবদান ও নেহাত বেশি বৈকি,কম নয়। সম্পদের উপর সাধারণ মানুষের অধিকারহীনতাও শতাব্দীব্যাপী বিরাজমান অপব্যবস্থার ফসলমাত্র।রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা এবং রাষ্ট্রী য় অপশাসনের সাথে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত আমাদের জাতিগত চারিত্রিক ত্রুটি তো অগণিত আছেই।এইখানে সেইসব ত্রূটির উল্লেখ করে আর নিজেকে লজ্জা দিতে চাইনা।যাইহোক,দুঃশাসনে কোমরভাঙ্গা এই আমাদের কাছে যখন কেউ ক্র্যাচ নিয়ে এগিয়ে আসে,তখন তাকে ক্র্যাচ ব্যবসায়ী বলে অভিহিত করে, আমাদের কোমরভাঙ্গার পেছনে তার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হই।

তবে আশার কথা যে,যারা মাটির সবচেয়ে কাছাকাছি মানুষ-ষড়যন্ত্র উদঘাটনের চাইতে ভাঙ্গা কোমরের চিকিৎসাতেই তাদের আগ্রহ অধিক বলে মনে হয়।সেই জন্যই 25্#ীসু;দে(গ্রামীণ ব্যাংকের ভাষ্যমতে 20%) ধার করা ঋণ ফেরত দেওয়ার সময় তাদের শতকরা 98.85 জনই সফল হন।মুক্তবাজার অর্থনীতির করূণ শিকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা যখন রাস্ট্র করতে পারলোনা,তখন তারা ক্ষুদ্্রঋণের টাকায় মুরগীর আন্ডা বেচে,লাউ চাষ করে নিজেদের ভরণ-পোষণের যোগাড় টুকু নিজেরাই করে নিলো।আমি এই কৃষিভিত্তিক প্রয়াসকেই টেকসই উন্নয়নের প্রথম ধাপ বলে মনে করি।আমাদের মত প্রান্তিক অর্থনীতিতে কেউ যদি শিল্প বিপ্লব অথবা অতি অধুনা তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লবের রুপকথা শোনাতে আসে-তবে তা নিতান্তহঠকারিতা ছাড়া কিছুই নয়।

এই তথাকথিত রক্তচোষা,সুদখোর গ্রামীণ ব্যাংকের ইক্যুইটি'র শতকরা 94 ভাগের অংশীদারই কিন্তু এর ঋণগ্রহীতারা।এই ব্যাংক আজ পর্যন্ত প্রান্তিক জনগণের কাছে প্রায় 29হাজার কোটি টাকার ক্ষুদ্্রঋণ বিতরণ করেছে,যার সিংহভাগই আদায়ী ঋণ।1998 সাল থেকে এই ব্যাংক কোনপ্রকার বৈদেশিক অর্থসাহায্য গ্রহণ করেনি,সম্পূর্ণ নিজস্ব সঞ্চয়ের উপর নির্ভরশীল।তাই,কম সুদে টাকা এনে বেশি সুদে প্রান্তিক মানুষ কে গছিয়ে দেবার অপবাদও ধোপে টিকবেনা।আর গ্রামীণ ব্যাংকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে,ঋণগ্রহীতার প্রায় 97শতাংশই নারী।সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত নারী আসনের প্রায় এক-চতুর্থাংশই গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য।একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নে এই প্রভাব কি সোশ্যাল রিফর্মের ঈঙ্গিত দেয়না?আজকের গ্রামবাংলায় পারিবারিক অর্থনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাদের শহুরে নারীবাদীদের চোখের আড়ালে নীরবেই ঘটে গেছে।আর টোটাল ডেভেলপমেন্টের জন্য পলিটিক্যাল কমিটমেন্টের দরকার আছে বলে আমি অন্তত ঃ মনে করিনা,পলিটিক্যাল অ্যাওয়ারনেস ই যথেষ্ট।

যাইহোক,অনেক ভারী ভারী কথা লিখে ফেললাম।সারমর্ম হলো যে,আমি ডক্টর ইউনুস এর পক্ষে আছি,কারণ উনার প্রস্তাবিত ক্ষুদ্্রঋণ তত্ত্ব আমার দেশের অনেক মানুষকে স্বপ্ন দ্যাখার সাহস দিয়েছ।আমি এই স্বপ্নের পক্ষে,এই সাহসের পক্ষে।রাস্ট্র যখন এইসব মানুষের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছিল,তখন এই ভদ্্রলোক ই ব্যক্তি উদ্যোগে নিজের তত্ত্বের বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছিলেন।বড় বড় বুলিতে উনার কাজের সমালোচনা করার পূর্বে নিদেনপক্ষে চিন্তা করা উচিত যে,এর চেয়ে ভালো কি বিকল্প আমরা আমাদের কোমরভাঙ্গা মানুষদের দিতে পেরেছি?ডুবন্ত মানুষগুলোকে এই ভদ্্রলোকের ক্ষুদ্্রঋণ প্রকল্প শুধু আঁকড়ে ধরার জন্য খড়কুটো দেয়নি,বরং ময়নাদ্্বীপের তীরে পৌঁছে দিয়েছ।এখন আমাদের সেই ময়নাদ্্বীপকে সবুজ করে তোলার পালা..আমরা কোমর সোজা করে দাঁড়াচ্ছিমাত্র,একদিন নিশ্চয়ই ঋজু হবো।
আমি দেশ কে নিয়ে স্বপ্নদ্যাখার দুঃসাহস অনেকদিন করিনাই..ডক্টর ইউনুস এর নোবেল পুরষ্কার পাবার দিনে সারাদিন ই চোখে যেন কি পড়ছিল আর মনে হচ্ছিলো যে,এইবার বোধহয় একটু সাহস করা যায়..গ্রামে গ্রামে স্বাবলম্বী মানুষের দল আমাকে স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্নদ্যাখায়..অন্ধকারে মঙ্গলদীপ জ্বেলে যাবার জন্য ফতুয়া পরা ভদ্্রলোক কে ধন্যবাদ!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×