somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিন সন্তানের মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে পিতার আবেদন

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রত্যেক বাবা-মা চায় তাদের সন্তান ভালো থাকুক। কোনো রোগে আক্রান্ত হলে তারা সব সময় সন্তানদের সুস্থতা কামনা করেন। কিন্তু মেহেরপুর জেলা শহরের বেড়পাড়ার তোফাজ্জেল হোসেন নিজের সন্তান, স্ত্রী ও নাতনির মৃত্যু কামনা করেছেন।


শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনাটি সত্য। এমনকি তাদের মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর আবেদনও করেছেন তোফাজ্জেল হোসেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মেহেরপুরের ডিসি পরিমল সিংহের কাছে এ লিখিত আবেদন করেন তিনি।

ছেলের চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে না পারা অসহায় বাবা তোফাজ্জেল হোসেন তার আবেদনে বলেছেন, দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত দুই ছেলে, স্ত্রী ও নাতনির মৃত্যুর অনুমতি দেয়া হোক না হলে চিকিৎসার ব্যয়ভার নেয়া হোক।

জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) খায়রুল হাসান এ আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, তোফাজ্জেলের দুই ছেলে জন্মের পর থেকেই 'ডুফিনি মাসুকলার ডিসট্রোফি' রোগে আক্রান্ত। যার ওষুধ আজও আবিস্কার হয়নি। দূরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিকিয়ে দিতে হয়েছে তার। আত্মীয়-স্বজনরাও হাত গুটিয়ে নিয়েছেন তার কাছ থেকে।

দিন যতই যাচ্ছে ততই মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন বড় সন্তানটি। একমাত্র মেয়ের শরীরেও একই রোগ বাসা বেঁধেছে। তোফাজ্জেলের স্ত্রীও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। এ অবস্থায় তিনি চোখে আঁধার দেখছেন।

তোফাজ্জেলের বড় ছেলে আবদুস সবুর (২৪), ছোট ছেলে রায়হান, নাতি সৌরভ (৮) - তিনজনই 'ডুফিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি' রোগে আক্রান্ত। সবুর বর্তমানে বিছানাগত।

শহরের বড় বাজারের পৌর মার্কেটে তোফাজ্জেলের একটি পান বিড়ির দোকান ছিল। সেটিও তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন ছেলের চিকিৎসার প্রয়োজনে।

স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করাতে সঞ্চিত সব অর্থ ও সহায়-সম্পত্তি শেষ করে ফেলেছেন। কিন্তু তাতে ছেলের শরীরের কোনো উন্নতি হয়নি।

আবদুস সবুর ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন। সে সময় তার রোগটি দেখা দেয়। ফলে তার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। সে সময় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুল আলম রোগটি সনাক্ত করেন।

ভারতের কেয়ার হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ গৌরাঙ্গ মণ্ডল, তপন কুমার বিশ্বাস, ভারতের কোঠারি মেডিকেল সেন্টারের শিশু বিশেষজ্ঞ ড.স্বপন মুখার্জিও সবুরের মল-মূত্র, রক্ত, কফ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন ‘ডুফিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি’ ডিজিজ বলে।

তোফাজ্জেল হোসেন তার সন্তানের আরোগ্যে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দূতাবাসেও ছুটে গেছেন। ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস সহযোগিতা দিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কাছে রোগের ওষুধ কি জানতে চায়।


শত শত চিকিৎসক ইন্টারনেটে জানিয়েছেন, এখনও এই রোগের কোনো ওষুধ আবিস্কার হয়নি। ফলে তোফাজ্জেল হতাশ হয়ে পড়েন।

এই রোগটি ক্যান্সারের চেয়েও ভয়াবহ উল্লেখ করে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ যুগান্তরকে জানিয়েছেন, আক্রান্তের শরীরে সব অংশের মাংসপেশী আস্তে আস্তে জমাট বেঁধে যাবে। চলাফেরা বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলার শক্তিও হারিয়ে যাবে। মাংস জমাট হওয়ার কারণে ও কোনো ওষুধ আবিস্কার না হওয়ায় এ রোগমুক্ত করা সম্ভব নয়।

তিনি জানান, চিকিৎসায় কোনো সুফল মিলবে না। বাড়বে শুধুই যন্ত্রণা। আক্রান্তের কয়েক বছরের মধ্যেই রোগী মারা যাবে।

শিশু বিশেষজ্ঞগণ আরো জানিয়েছেন, বাবা-মার জেনেটিক ডিজঅর্ডারের কারণে সন্তানদের মধ্যে সাধারণত এই রোগ দেখা দেয়।

তবে তোফাজ্জেল হোসেনকে আশার বানী শুনিয়েছেন ভারতের 'ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হোমিওপ্যাথি' হাসপাতালের চিকিৎসকগণ।

তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ মেয়াদের চিকিৎসায় এ রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব। যদি সেখানে ভর্তি করা যায়। একটু আশার পথ দেখলেও অর্থ সংকটের কারণে সন্তানদের চিকিৎসা পথ না পেয়ে বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে তোফাজ্জেলের আবেদন হয় আক্রান্ত ছেলেদের মৃত্যুর অনুমতি অথবা চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হোক।

আবদুস সবুরের ছবি তুলতে গেলে তার চোখ দিয়ে শুধুই পানি ঝরছিল। একপর্যায়ে সবুর বলে ওঠেন 'কবে হবে আমার মরণ?'

সরেজমিনে তোফাজ্জেলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় বসবাসের অযোগ্য একটি ঘরে ছয়জন ঠাসাঠাসি করে থাকেন।

তোফাজ্জেল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, 'ছেলের চিকিৎসা করাতে সঞ্চিত সব অর্থই শেষ হয়ে গেছে। এরপরও আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়েও চিকিৎসা করানো হয়েছে। এখন একদম নিঃস্ব।'

তিনি বিএনপি সরকারের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্থানীয় এমপির মাধ্যমে লিখিত আবেদন করেছিলেন চিকিৎসার সাহায্য চেয়ে। কিন্তু কোনো সাহায্য মেলেনি। তবে বর্তমান এমপি ফরহাদ হোসেন তোফাজ্জেলকে ৩০ হাজার টাকা অর্থ সহযোগিতা দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

তোফাজ্জেলের স্ত্রী শিরিনা বেগম জানান, প্রতিদিন নিয়ম করে ছেলেদের বিছানা থেকে তোলা, গোসল করাতে হয়। এমনকি কোলে করে বাথরুমে নিয়ে যেতে হয়। তিনি ছেলের রোগটি নিজের শরীরে কামনা করে তাদের রোগমুক্তি প্রাথর্না করেছেন।


জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহের ফোনে যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক (ডিডিএলজি) খায়রুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, 'বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। আবেদনটি পড়ে চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমরা বিভিন্নভাবে তাকে সাহায্য সহযোগিতা করতে চাই। আমরাও চাই তার তিনটি সন্তান বেঁচে উঠুক। সুস্থ থাকুক।'

দৈনিক যুগান্তর
http://www.jugantor.com/online/country-news/2017/01/19/37180
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৪১
১২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×