somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিক পণ্ডিত রিচার্ড ডকিন্সের অজ্ঞতা ও অসততা’র নমুনা

০৯ ই মে, ২০১২ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা নাস্তিকদের কাছে দেবতুল্য নাস্তিক পণ্ডিত রিচার্ড ডকিন্স বলেছেন,

"I am against religion because it teaches us to be satisfied with not understanding the world."

"One of the truly bad effects of religion is that it teaches us that it is a virtue to be satisfied with not understanding."

রিচার্ড ডকিন্সের দাবি অনুযায়ী ধর্ম মানুষকে এই মহাবিশ্বকে না বুঝেই সন্তুষ্ট থাকতে বলে। এমনকি এই মহাবিশ্বকে না বুঝে সন্তুষ্ট থাকা নাকি পূণ্যের কাজ! অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না, যেহেতু সবগুলো ধর্মগ্রন্থ তন্নতন্ন করে পড়া হয়নি, তবে কুরআনের অনেক আয়াতে এই মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা করার কথাই বলা হয়েছে। অতএব, রিচার্ড ডকিন্স এমন কিছুর 'বিরুদ্ধে' যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নাই! একে অজ্ঞতা ছাড়া আর কী-ই বা বলা যাবে!

"Bush and bin Laden are really on the same side: the side of faith and violence against the side of reason and discussion…" ― Richard Dawkins

নাস্তিক পণ্ডিত রিচার্ড ডকিন্স এখানে স্ট্যালিন, মাও, ও পল পট এর মতো গণহত্যাকারী নাস্তিকদের নাম চেপে যেয়ে অসততার পরিচয় দিয়েছেন।

"Science flies you to the moon. Religion flies you into buildings." ― Richard Dawkins

রিচার্ড ডকিন্স এখানে কী বুঝাতে চেয়েছেন তা অনেকেই হয়ত বুঝতে পারছেন। প্রথমত, উনি জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করতে না পেরে বিজ্ঞানকে ধর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ভাল কথা। কিন্তু ইসলামে বিশ্বাসীদের কাছে বিজ্ঞান কোনো ধর্ম নয়। আজ থেকে শত শত বছর আগে বর্তমান যুগের বিজ্ঞান বলে কিছু ছিল না, আবার আজ থেকে শত শত বছর পর বর্তমান যুগের বিজ্ঞানের অনেক কিছুই হয়ত থাকবে না। বিবর্তন তত্ত্ব তখন হয়ত ব্রিটিশ মিউজিয়ামে শোভা পাবে! দ্বিতীয়ত, তার এই বক্তব্য থেকে মনে হতে পারে বিজ্ঞান হচ্ছে নাস্তিকদের পৈত্রিক সম্পত্তি যদিও বিপরীতটাই সত্য। তৃতীয়ত, ৯/১১ ঘটনার জন্য যে ইসলাম-ই দায়ি সে ব্যাপারে রিচার্ড ডকিন্সের মনে সামান্যতমও কোনো সংশয়-সন্দেহ নাই, একেবারে আন্ধা বিশ্বাসী! চতুর্থত, ৯/১১ ঘটনার জন্য যে রিচার্ড ডকিন্সের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত বিজ্ঞানকেই ব্যবহার করা হয়েছে তা বুঝার মতো জিনিস কি তার মাথায় নাই? বিজ্ঞান না থাকলে ৯/১১ এর মতো ঘটনা ঘটানো কি সম্ভব হতো? পঞ্চমত, হিরোশিমা-নাগাসাকি'র জন্য দায়ি কি ধর্ম নাকি বিজ্ঞান নাকি অন্য কিছু? স্ট্যালিন, মাও, ও পল পটের গণহত্যার জন্য দায়ি কি ধর্ম নাকি নাস্তিকতা?

"Isn't it enough to see that a garden is beautiful without having to believe that there are fairies at the bottom of it too?" ― Richard Dawkins

হাহাপগে! এই মহাবিশ্বের স্রষ্টায় বিশ্বাসকে বাগানের তলায় ভূত-প্রেতে বিশ্বাসের সাথে তুলনা করা হয়েছে! রিচার্ড ডকিন্সের অজ্ঞতা যারা ধরতে পারেননি তারা নিচের বাক্যটি বুঝার চেষ্টা করুন,

"Isn't it enough to see that a TV/Computer is beautiful without having to believe that there are fairies at the bottom of it too?"

অথবা, "Isn't it enough to see that a TV/Computer is beautiful without having to believe that there is a maker of it too?"

"We are all atheists about most of the gods that societies have ever believed in. Some of us just go one god further." ― Richard Dawkins

প্রথমত, নাস্তিক পণ্ডিত রিচার্ড ডকিন্সের কাছে হোরাস, থর, জিউস, যীশু, রাম, কৃষ্ণ, আল্লাহ সহ এরা সবাই গড তথা এই মহাবিশ্বের সম্ভাব্য স্রষ্টা! দ্বিতীয়ত, উনি বলার চেষ্টা করেছেন যে প্রত্যেক গডে বিশ্বাসীরা যেহেতু নিজ ধর্মের গড ছাড়া অন্যান্য গডকে অস্বীকার করে সেহেতু তারা সবাই এক অর্থে নাস্তিক, এক গডে কম অবিশ্বাসী! অন্যদিকে রিচার্ড ডকিন্স যেহেতু সকল গডকে প্রত্যাখ্যান করেন সেহেতু উনি পুরোপুরি যুক্তিবাদী নাস্তিক! তৃতীয়ত, রিচার্ড ডকিন্স যে ইসলাম সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ তা তার কথাবার্তা থেকেই বুঝা যায়। উনি অনেক ক্ষেত্রেই জুদায়ো-খ্রীষ্টান ধর্মের চশমা দিয়ে ইসলাম সম্পর্কে মন্তব্য করেন, বিশেষ করে অন্ধ বিশ্বাস ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে। মুসলিমরা যেসকল গডে অবিশ্বাস করে তারা এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা নয়, তারা আসলে মানুষের তৈরী গড বা ম্যান গড। মুসলিমরা মানুষের তৈরী গডে অবিশ্বাস করে, আসল গডে নয়। মুসলিমরা আসলে কুরআনের ১১২ নাম্বার সূরাতে উল্লেখিত টাচস্টোন দিয়ে বিভিন্ন ধর্মের গডকে বিচার করে বিশ্বাস অথবা প্রত্যাখ্যান করে।

"Evolution could so easily be disproved if just a single fossil turned up in the wrong date order. Evolution has passed this test with flying colours." ― Richard Dawkins

পুরাই হাস্যকর! বিবর্তন তত্ত্বকে ভুল প্রতিপাদনের জন্য এটি কোনো টেস্ট হতে পারে না। প্রথমত, ফসিল ডেটিং কে বা কারা এবং কীভাবে করেছে? রিচার্ড ডকিন্সের বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে এই দুনিয়ার সবগুলো ফসিলের গায়ে আগে থেকেই দিন-তারিখ লিখা আছে! তা না হলে কীসের ভিত্তিতে ফসিলগুলোকে সাজানো হয়েছে, আর রিচার্ড ডকিন্স-ই বা কীসের উপর ভিত্তি করে এই কথা বলেছেন? তৃতীয়ত, রিচার্ড ডকিন্স যা বলতে চেয়েছেন সেরকম কোনো ফসিল পাওয়া না গেলেও তাতে প্রমাণ হয় না যে ব্যাক্টেরিয়া-সদৃশ একটি অণুজীব থেকে রিচার্ড ডকিন্স সহ ধাপে ধাপে পুরো উদ্ভিদজগত ও প্রাণীজগত বিবর্তিত হয়েছে, এক প্রজাতি থেকে ভিন্ন প্রজাতি ধাপে ধাপে বিবর্তিত হয়েছে। তথাপি রিচার্ড ডকিন্স এমন কল্পকাহিনীতে বিশ্বাস করতে চাইলে করতে পারেন, কিন্তু বিজ্ঞানের নামে অন্যকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করা নিঃসন্দেহে অসততা।

রিচার্ড ডকিন্সের বচনগুলো এখানে পাওয়া যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:৩৪
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×