somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোশাক শিল্পের পেশা পরিচিতি -১ B:-)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের বসবাস, সময়ের কারনে হোক আর ইচ্ছার কারনে হোক আমরা মানুষের পেশা নিয়ে খুব বেশী ঘাটাঘাটি করি না। মজার ব্যপার হচ্ছে আমাদের সমাজে কারো সাথে কারো যখন বিয়ের কথাবার্তা চলে শুধু তখনি দেখি মেয়ে পক্ষ বা ছেলে পক্ষরা এই পেশা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে। যেমন আমি গ্রামের অনেক বিয়ে খেয়েছি এবং মেয়ের বাবা মা বা তাদের নিকট আত্মীয় স্বজনদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি, ছেলে কই করে ? এক কথায় ছেলে গার্মেন্টসে চাকরী করে, কি পোস্ট বা কোন সেকশনে সেটা জানে না। তবে একটা সময় ছিল যখন এই গার্মেন্টসে চাকরীরত ছেলেদের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে কনে পক্ষ একটু ইতস্তত করত আমার মনে হয় এখন আর সেটা হয় না। তাই আমি আমার খুব প্রিয় একজন ব্লগার “আরজুপনি”আপুর একটা কমেন্টস থেকে এই পেশা নিয়ে লেখার আইডিয়াটা আসলো, আশা করি কারো কোন কাজে লাগলে আমার ভাল লাগবে।


আসুন এবার মুল লেখাতে যাই,
গার্মেন্টস ট্রেক মূলত একটি চেইন সিস্টেমের মধ্যে আবদ্ধ কোম্পানীর মালিক থেকে শুরু করে গেটের দারোয়ান পর্যন্ত সকলের সহযোগিতায় এক একটি গার্মেন্টস / পোশাক এর জন্ম।আজ আমি দেখাবো গার্মেন্টসে কি কি সেকশন থাকে এবং তাদের কি ধরনের কাজ হয়ে থাকে এবং সেই সকল পোস্টে চাকুরি করতে হলে কি জানতে হবে এবং কতটুকু শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে।
গার্মেন্টস এর অফিসিয়াল লেভেলের পদবী সমূহঃ
ম্যনেজম্যন্ট সেকশনঃ

চেয়ারম্যনঃ ইনি নিজে কোম্পানীর মালিক হতে পারে আবার ক্ষেত্র বিশেষে শুধু ইনেভেস্টর ও হতে পারে, সেটা নির্ভর করে সেই কোম্পানীর পলিসির ওপর।

ম্যনেজিং ডিরেক্টরঃ ইনি নিজে কোম্পানীর মালিক হতে পারে আবার ক্ষেত্র বিশেষে নিয়োগ প্রাপ্তও হতে পারে, সেটা নির্ভর করে সেই কোম্পানীর পলিসির ওপর । ইনি সরাসরি নিজে মার্কেটিং করে থাকে দেশ বিদেশ ঘুরে এবং কোম্পানীর ফাইনান্স আয় ব্যয় সমস্ত কিছু তদারকি করে থাকে।

ডিরেক্টরঃ ইনি সাধারণত নিয়োগ প্রাপ্তও হয়ে থাকে এবং বেতন ভুক্ত হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠান ভেদে এই পদবীর কর্মকর্তাদের বেতন ( দুই লক্ষ থেকে – পাঁচ লক্ষ টাকা ও হতে পারে ) তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এই শ্রেনীর কর্মকর্তাগন কোম্পানীর মোট আয়ের একটা পারসেন্টেজ ও পেয়ে থাকেন।বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানীতে একসাথে ৩-৪ জন ও ডিরেক্টর থাকে। এই পোস্ট অর্জন করতে হলে আপনাকে ক্ষেত্র ভেদে ২০-২৫ বছরের গার্মেন্টস এর ওপর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রোডাকশন এবং মার্কেটিং লেভেলে অত্যন্ত দক্ষ হতে হবে। মূলত এই পোস্টের কর্মকর্তাগন নিজেরা দেশ বিদেশ ঘুরে বায়ারের সাথে মিটিং করে গারমেন্টেস এ অর্ডার আনতে সাহায্য করে, তবে কোম্পানী ভেদে চেয়ারম্যন এবং ম্যনেজিং ডিরেক্টর ও এই কাজ করে থাকে।

মারচেন্ডাইজিং / মার্কেটিং সেকশনঃ

মারচেন্ডাইজিং/মার্কেটিং ম্যনেজার / জি এমঃ
এই ডিপার্টমেন্টের প্রধান ব্যক্তি হলেন এই পদবী ধারী ব্যক্তি। ম্যনেজম্যন্টের কাছে প্রোডাকশান/শিপমেন্ট নিয়ে সমস্ত জবাবদিহিতা এই ব্যক্তির করতে হয়। কেন প্রোডাকশান অন টাইমে হল না, কেন শিপমেন্ট অন টাইমে হল না এই সকল জবাবদিহিতা এই ব্যক্তির করতে হয়। ইনার অধনস্ত পোস্ট ধারীরা হল –
• সহকারী মারচেন্ডাইজিং/মার্কেটিং ম্যনেজারঃ
• সিনিয়র মারচেন্ডাইজার।
• মারচেন্ডাইজার।
• সহকারী মারচেন্ডাইজার।
• ট্রেইনি মারচেন্ডাইজার।

মারচেন্ডাইজিং/মার্কেটিং ম্যনেজার/জি এম এর কাজ এবং সুবিধা সমূহঃ
মূলত এই পোস্টের পদাধিকারী বাইরে মার্কেটিং করার চেয়ে ম্যনেজম্যন্ট লেভেল থেকে মার্কেটিং করে আনা অর্ডার / ডেভোলপমেন্ট গুলো সঠিক সময়ে প্রস্তুত করা ইনার মুল দায়িত্ব, আর সেই কাজ গুলো সুন্দর ভাবে শেষ করার জন্য তাকে কোম্পানী ভেদে উল্লেখিত পদবীর কর্মকর্তাদেরকে দেয়া হয়। এই পোস্টের পদাধিকারী প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ভেদে বেতন ( ৭০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা )পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোম্পানী ভেদে এরা বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে, যেমন- অফিসিয়াল ট্রান্সপোর্ট, স্পেশাল বোনাস, বিভিন্ন দেশে বিজনেস ট্যুর ইত্যাদি। এই পোস্টে আসতে হলে খুব ভাল ইংরেজী জানতে হবে সাথে সাথে প্রচন্ড মেধা এবং ধৈর্য নিয়ে কাজ করার মন মানসিকতা থাকতে হবে। মার্কেটে নিজের পরিচিতি এবং কাজের দক্ষতা এই পদবীতে আসতে অনেক সহায়ক হয়ে থাকে। তার অধনস্ত সকল পোস্টের কর্মকর্তাগন তাকে মেনে চলা এবং তার কমান্ড শুনতে বাধ্য।

সহকারী মারচেন্ডাইজিং/মার্কেটিং ম্যনেজারঃ
খুব বেশী বড় কোম্পানী ছাড়া এই পোস্ট থাকে না তবে ম্যনেজারের কাজে সহায়তা করাই এই পদাধিকারী ব্যক্তির কাজ। বেতন ও ম্যনেজারের কাছাকাছিই থাকে খুব বেশী ডিফারেন্স থাকে না।

সিনিয়র মারচেন্ডাইজারঃ একক ভাবে একটা অথবা দুইটা বায়ার নিজে ফলো আপ করে, এবং মারচেন্ডাইজার এবং সহকারী মারচেন্ডাইজারের মাধ্যমে কাজ গুলো করিয়ে নেয়াই এই পদাধীকারীর প্রধান কাজ। এছাড়া ও সকল প্রকার সুতা / কাপড় / এবং পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন এক্সোসরিজ কেনা এবং সঠিক সময়ে প্রোডাকশনের জন্য ফ্যক্টরীতে ইন হাউস করা এই ব্যক্তির কাজ। এই ধরনের পোস্টের ব্যক্তির বেতন কোম্পানী ভেদে ( ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ) টাকা হয়ে থাকে।

মারচেন্ডাইজারঃ এই পদবীধারীর কর্মকর্তা সিনিয়রের আদেশ নির্দেশ ফলো করে কাজ করে থাকে। আর এই ধরনের ব্যক্তির বেতন প্রতিষ্ঠান ভেদে ( ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা ) হয়ে থাকে।

সহকারী মারচেন্ডাইজারঃ এই পদবীধারীর কর্মকর্তা তার সিনিয়র মারচেন্ডাইজারের আদেশ নির্দেশ ফলো করে কাজ করে থাকে। আর এই ধরনের ব্যক্তির বেতন প্রতিষ্ঠান ভেদে ( ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা ) হয়ে থাকে।

ট্রেইনি মারচেন্ডাইজারঃ এই পদবীধারীর কর্মকর্তা সবচেয়ে বেশী পরিশ্রম করতে হয় তাকে উপরের ধাপে উঠার জন্য। সুতরাং সে তার সিনিয়র,মারচেন্ডাইজার এবং ম্যনেজার সবার আদেশ নির্দেশ ফলো করে কাজ করতে হয়। আর এই ধরনের ব্যক্তির বেতন প্রতিষ্ঠান ভেদে ( ৮ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা ) হয়ে থাকে।

কিভাবে মারচেন্ডাইজিং / মার্কেটিং সেকশন এ আপনি চাকুরী পেতে পারেনঃ

বিডি জবস ঘটলেই দেখতে পারবেন কি কি যোগ্যতা চাই উপরের এই পোস্ট গুলোর জন্য। তবে আপনাকে এই সেকশনে আসতে হলে প্রথমত আপনি যদি টেক্সটাইল এর উপর লেখা পড়া করে থাকেন তাহলে তাদের জব রিকোয়ারমেন্ট এর সাথে মিলে যাবে, সাথে সাথে আপনাকে কম্পিউটার চালনা বিশেষ করে, অফিস এপ্লিকশান পোগ্রাম, এবং মেইল করস্পন্ডিং এ দক্ষ হতে হবে সুতরাং যারা এই ট্রেকে আসতে চান তারা এখন থেকেই মেইল চালানো ভাল ভাবে শিখে ফেলেন সাথে সাথে ইংরেজী ভাষার ওপর ও দক্ষতা প্রয়োজন, ভাল যে কোন প্রতিষ্ঠানে আপনাকে ইন্টারভিউর জন্য ইংরেজী জানতেই হবে নতুবা প্রথমেই আপনি বাদ। আর মামা চাচা থাকলে তো কথাই নাই যে কোন জায়গায় ঢুকে বি জি এম ই থেকে ৩/৬ মাসের একটা মারচেন্ডাইজিং এর ওপর কোর্স করে নিন তাতে আপনার সিভি অনেক ভারী হয়ে যাবে। তারপর আস্তে আস্তে সময় যাবে আপনার অভিজ্ঞতার পাল্লা ও ভারী হবে এবং একসময় সবোচ্চ চুডায় উঠতে পারবেন।

এই পোস্টটি পর্ব আকারে চলবে, আশা করছি পরের পোস্টে কোয়ালিটি সেকশনের কর্মকর্তাদের বিস্তারিত নিয়ে আসবো।
সকলকে অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×