পতাকাটায় একটা দাগ লেগেছিল,
কড়া দাগ,
রক্তজমা!
খুনে লাল বৃত্তটা আরো লাল হয়েছিল,
সেদিন একবার!
এরপর,
তেতাল্লিশ বছর হয়ে গেল,
দাগটা রয়ে গেছে!
সাথে,
গজিয়েছে আরো অনেক,
ছোট-বড় দাগ!
সবগুলোই রক্তঝরা দাগ,
ঘাতকের ছুরি থেকে ঘরে পড়া রক্ত!
কিন্তু মাঝের ওই দাগটাই,
সবচে বড়!
সবচে কল্মাষী!
যে দাগ আমায় স্মৃতিতে ভাসায়!
হাসায়! আবার কাঁদায়!
যে দাগ আমায় মনে করায়,
আমার ত্রিশ লক্ষ ভাই
কিংবা, দু লক্ষ বোনের কথা!
যে দাগ আমায় মনে করায়,
পঁচিশে মার্চের কালরাত্রি,
অথবা, নীল নকশার চতুর্দশী !
যে দাগ আমায় মনে করায়,
টর্চারসেলে হাসি মুখে বসা কোন মুক্তিযোদ্ধা,
কিংবা,বাংকারের ভিতর আমার কোন এক বোনের দীর্ঘশ্বাস!
যে দাগ আমায় মনে করায়,
সন্তান হারা কোন মায়ের আহাজারি,
অথবা, মৃত বাবার পানে অবুঝ শিশুটির চেয়ে থাকা!
যে দাগ আমায় মনে করায়,
শরণার্থী শিবিরের তাবুর মাঝে,
ক্ষুদার্থ নরকঙ্কালের জেগে থাকা!
আবার, সে দাগটিই আমায় মনে করায়,
ভাষার দাবিতে উত্তাল রাঝপথ,
রেসকোর্স ময়দানে নিয়াজীর নত মুখ!
সে দাগটিই আমায় মনে করায় ,
সামসুর রহমানের দুর্জয় হাতে,
মতিউরের রনস্তুতি!
সে দাগের মাঝেই দেখি আমি,
স্টপ জেনোসাইড,
জহির রায়হানের হারানো ফিতা!
সে গের মাঝে আমি দেখি,
নব্বই এর শাসক পতন,
গনতন্ত্রের বেড়ে ওঠা!
সে দাগটি আজ উঠে গেছে,
নিজে নিজেই!
হয়তো আর লজ্জা সহ্য করতে পারে নি!
কম তো না! ষোল কোটি বাঙ্গালীর ঘৃণা!
কেউ যে তাকে দেখতে চায় না,
সবাই চায় মুছে ফেলতে। চিরতরে!
তাই হয়তো নিজ থেকেই মুছে গেল!
ভালই হল।
কাল ভোরে ভোরে যখন,
ঐ পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে গাইবো-
“আমার সোনার বাংলা...
আমি তোমায় ভালবাসি”
মাথাটা তখন একটু হলেও উঁচু থাকবে।
তেতাল্লিশ বছর ধরে বয়ে বেড়ানো,
অপবাদ থেকে যে মুক্তি পেলাম!
হঠাৎ দেখি,
পাশের ছোট দাগগুলোও-
ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে!
তবে কি এল?
এল কি তবে বোধনের বেলা?
আমার পতাকাটি কি তবে ছেয়ে যাবে ঐ আকাশটায়?
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের, প্রতিটি কোনায়
এবার কি দেখবো লাল-সবুজের অহংকার?
দেখবো আকুস্টিক হাতে গাইছে কোন তরুন-
“বাংলা আমার দীপ্ত স্লোগান,ক্ষিপ্ত তীর-ধনুক
আমি একবার দেখি, বারবার দেখি
দেখি বাঙ্গলার মুখ...”
আর আমি দেখবো!
সাথে উচ্ছাসে বলবো-
দ্যাখো চেয়ে!
ওই যে আমার বাংলা!
চেয়ে দ্যাখো বিশ্ব
ওই আমার স্বাধীনতা!
আমার লাল-সবুজ পতাকা!