আমার দুখীনি মা'কে সবাই ধর্ষন করতে চায় কেন? একে একে কতো ধর্ষক এলো আর মায়ের সন্তানদের দৌড়ানি খেয়ে জান নিয়ে পালালো! এখন শেখের বেটি বাপের মাথার উপর নুন রেখে তার হিজরা বাহিনী দিয়ে বরই খেতে চাচ্ছে! দৌড়ানিতো শুরু হলো,পালাবে কবে! পালানো ত্বরান্বিত করার জন্য জোর দৌড়ানি চাই!
‘দূর থেকে সমর্থন’ ‘নৈতিক সমর্থন’ ‘এগিয়ে যান’ ‘সাথে আছি, পাশে আছি’ এসবের দিন শেষ। মঞ্চে আসুন, এসে দু’হাত তুলে চিৎকার দিয়ে বলুন ‘আমি এসে গেছি, এবার সামনে আগাও!’ আমার দুখিনী মায়ের মুখটা একবার চেয়ে দেখুন, এ মা যদি আপনার মা হয়, তবে দেখবেন কালো দু:খের নির্যাতনে মায়ের চেহারা আপনার পরিচিত ভয়ার্ত কোন রাতের মতো অন্ধকার হয়ে গেছে। আপনি দেখবেন, সরেষ ধানের মতো দু’গাল ভয়ে শুকোতে শুকোতে চুপসানো চিটার মতো হয়ে গেছে। দেখুন... দেখুন... গালের উপর নখের আঁচড়, দেখুন... কতোটা ডেবে গেছে! দেখবেন, চারপাশে ছায়ায় ভরে গেছে। উঁহু... শীতল শান্তি পাওয়ার আগে আরেকটু ভালো করে দেখুন, এ ছায়া শকুনের ছায়া, বিষাক্ত কাল কেউটের ছায়া!
আর যদি এ দুখিনী মা আপনার মা না হয়, তবে দেখবেন ভারি লাস্যময়ী, যৌবনে ভরপুর এক সতেজ স্নিগ্ধ রূপ। যার শরীর বেয়ে নেমে গেছে নদের জল, ঘাসের কাঁথা; বুকের গহীনে লুকিয়ে আছে সম্পদের দরবার। আপনি দেখবেন যৌবন আর সম্পদের ভারে হৃষ্ট হওয়া এমন কিছু, যা দখলের জন্য গালের দু’পাশ বেয়ে লালা ঝরবে, লালার সাথে সাথে আপনিও ঝরে পড়বেন আমার মায়ের গায়ের উপর। বের হয়ে আসবে আপনার রক্তবান্ধব দাঁত, নখ সহ অন্যান্য অস্ত্রসমূহ। তারপর আপনি লুটে পুটে খেতে থাকবেন, যেভাবে আপনি খেতে পারেন।
খুব শান্তিতে খেতে পারবেন। কারণ আপনাকে সাহায্য করার মতো মানুষের অভাব হবে না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন এ ফকিরনিকে দেখার মতো কোন হাতি ঘোড়া নেই। আছে কিছু অবুঝ আগুনের গোলক। যারা খুব সহজে জ্বলে না, জ্বালায় না। ওরা জেগে ওঠার আগে আগে লুটপাট সেরে আপনি স্বর্গ পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন। এখটু খেয়াল করলে দেখবেন, মিত্র হিসেবে আপনি পাচ্ছেন ধর্মের মাথায়, জাতীয়তাবাদের মাথায়, মুক্তিযুদ্ধের মাথায় নুন রেখে বরই খাওয়াদের।
কিন্তু আমার বিশ্বাস আপনি এ ফকিরনি’র সন্তান। সবচেয়ে দুখিনী যে চেহারা আপনি দেখেছেন, তাই আপনার মায়ের চেহারা। মা সন্তানের দিকে চেয়ে আছে। আমার দিকে, আপনার দিকে চেয়ে আছে।
কিছু মানসিক রোগী আমাদেরকে শাসন করে যাচ্ছে মৌসুম ভাগ করে। চিন্তা করে দেখুন দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিরোধী দলীয় নেত্রী নৌকায় বসে বিলের পানিতে পা চুবাতে পারে না আজ কতোদিন ধরে, পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় যেতে পারে না, পারে না শান্ত বিকেলে লেকের পাড়ে গিয়ে সুনসান নিরবতায় গুনগুন গান গাইতে। একেবারে খাঁটি ঘামের গন্ধ পায় না, পায় না মঞ্চ নাটকের আলো আঁধারিতে প্রখর শিহরণ! এরা পারে না ক্রিকেট দলের জয়ে রাস্তায় নেমে আসতে, এরা পারে না বিবৃতি আর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বাইরে কথা বলতে। এরা কারো পোষা ময়নার মতো। যা শেখায় তাই বলে! জীবনের এতো স্বাদ, এতো সুন্দর থেকে যারা বছরের পর বছর ধরে দূরে আছে, আপনি তাদেরকে মানসিকভাবে সুস্থ বলবেন? এটা কোনভাবে সম্ভব? এর কতো ইন্দ্রিয় মরে ভুত হয়ে গেছে কতো আগে! তবুও আমরা এসব উন্মাদ শেয়ালের পেছনে হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া করে যাই। তারেকের দুর্নীতির পক্ষে বলে যাই, হাসিনার দু:শাসনের পক্ষে বলে যাই, মোল্লাদের ধর্ম ব্যবসার পক্ষে বলে যাই!
আমরা জল হয়ে গেছি। আমাদের কোন লজ্জা নেই। জলের কোন লজ্জা থাকে না। আজ চিহ্নিত অপূর্ণাঙ্গ মস্তিষ্কের উন্মাদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে টোকাই বললে আমাদের গায়ে আগুন ধরে না। একজন লুটেরা নিজেকে দেশপ্রেমিক দাবি করলে আমাদের সিনায় টান পড়ে না। আমরা পরিত্যক্ত জাহাজ ভাঙা শিল্পের মতো লোহার অধিকার আঁকড়ে ধরে পরিবেশ দূষন করে যাচ্ছি। আমাদের মরিচা পড়া শরীরের শিরায় উপশিরায় দৌড়াচ্ছে পঁচা রক্ত পুঁজের স্রোত। তবুও আমরা মরে যেতে পারি না, আবার পারি না বজ্রমুষ্টি হাঁকিয়ে সিনা টানটান করে উঁচু মাথা নিয়ে বেঁচে থাকতে। উন্মাদের লাত্থি উষ্ঠা খাওয়ার জন্য বেঁচে থাকার যন্ত্রনা কাতর হাহাকারে শুকিয়ে যাচ্ছে নদীর শরীর, মরন দৌড়ে লুটেরা ঢুকে যাচ্ছে সাগরের তলদেশে। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি মায়ের বস্ত্রহরণের দৃশ্য, কান পেতে শুনি মায়ের চিৎকার, জিহ্বা দিয়ে চেটে দেখি লুটেরার বীর্য স্বাদ। আমরা নষ্ট হয়ে গেছি, আমরা নষ্টদের দখলে চলে গেছি।
২৪ বছর পাকিস্তানীদের হাতে মাতৃ ধর্ষন দেখে ৯ মাসের জন্য গর্জে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। প্রায় এক যুগ সামরিক শাসনে থেকে আবার গর্জে উঠেছিলাম ৯০’এ। তারপর আবার মৃত্যু ঘুমে ডুবে গেছি। এ ঘুমে কেটে গেছে ২০ বছর সময়। অথচ আমাদের জেগে উঠার কথা ছিলো কতো আগে! ২৪ এর ১২, তারপর কি ৬ হওয়ার কথা নয়? অথচ বিশ পেরিয়ে গেলেও আমাদের বিষ উঠে না কেন? কেন আমাদের বিষে নীল হয় না হায়েনার শরীর।
নাহ! আবার আমাদের হাঁটুর ভেতরে জন্ম নিক বারুদের শরীর! সিনার টানে গুড়িয়ে যাক কথিত দেশপ্রেমিকের প্রাসাদ! আমাদের কন্ঠ হয়ে উঠুক দুর্বৃত্তের জন্য অশনি সাইরেন! হুংকারে হুংকারে তলিয়ে যাবে নকল দেশপ্রেমিকের সোনার মেডেল! আমাদের সম্পদ লুটেরার বুক পকেট থেকে বের করে আনবোই! আমাদের রিকশাচালক ভাই, গার্মেন্টস কলের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বোন, গ্রামের ঠনঠনে মেঠোপথে জীবন হারিয়ে ফেলা দিন মজুরের দল, হাতে পায়ে সোনা মাখানো কৃষানী; যারা কথা বলতে পারে না, যাদের চোখের ভাষায় লুকিয়ে আছে দিগন্ত সমান কষ্টের কান্না, তাদের কাছে পৌঁছে দিবো সম্পদ রক্ষার আনন্দ মিছিল। এখন সময় এসেছে সে প্রতিজ্ঞা নেয়ার। সময় এসেছে আজ যে শিশু জন্ম নিয়েছে, তার অধিকার রক্ষার। নইলে সেও ক্ষমা করবে না, পূর্বপুরুষদের ব্যর্থ অতীতের গায়ে কিল ঘুষি মেরে ওরাও কাটিয়ে দেবে অভিমানের জীবন। এ মা আবারো সম্ভ্রম হারাবে, আবারো মায়ের চোখের সামনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেবে।
এইযে আমরা একটু গা’র আড়মোড় ভাঙতে শুরু করেছি, এই যে কিছুটা নড়েচড়ে উঠেছি, তাতেই নড়ে গেছে শাসকের আরশ। তাতেই কাঁপন লেগেছে বেয়াদবের হাঁটুতে। আরেকটু উঠলেই একের পর এক মোটা হতে থাকবে পত্রিকার শিরোনাম, লুটেরার পতনের খবরে। আরেকটু ভাই, আরেকটু!
ওই যে, ওইতো ... ধর্ষক পালিয়ে যাচ্ছে, চারদিক ঘেরাও দে!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১২ রাত ১:৫২