ডায়রীতে।।
ব্লগে আসার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত আমার সঙ্গী ডায়রী।।যা একমাত্র ও ছাড়া আর সবার কাছেই….।। স্ত্রীকে দিয়ে উত্তর পেয়েছি তোমাকেতো সেই ছোট থেকেই দেখে আসছি আর বড়ভাইয়ের(আমার বন্ধু)কাছ থেকেই আজো শুনছি।। সুতরাং তোমার একান্ত ব্যাপার তোমারই থাক।।আসলেও পড়ে নি।। সব কটা ডায়রী বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে আছে তারই কাছে।।
আজ ব্লগ,ফেবু,টুইটার নামে স্যোশাল মিডিয়া গুলি বের হবার পর ডায়রীর গুরুত্ব কমে গেছে,বেশ খানিকটাই।। এখন মানুষ তার মনের রাগ-বিরাগ,আবেগ,ক্রোধকে প্রকাশ করে এই মাধ্যমগুলিতেই।। আমিও যার ব্যতিক্রম না।।
স্কুলজীবনতো TTMP মানে টেনে টুনে ম্যাট্রিক পাশ করলাম।। কিন্তু ভর্তি হবো কোথায়??একবন্ধু “গুজা মতিনের” পরামর্শে নটরডেমে টেষ্ট দিয়ে আরামসে দিন কাটাচ্ছি।।মানে কফি হাউের মত।। পার্থক্য (হয়তো মান্না উল্লখ করেন নি,আমি করলাম,হরেকরকম নেশার জগতে)।। সিনিয়রের সাথে থেকে সেই ’৭৩ থেকেই নেশার হাতেখড়ি।। যার শুরু সোনারিল ট্যাবলেট দিয়ে।।এখান থেকেই মার অনেক পাঠক ভাবতে পারেন যে কজন পাড়-নেশাখোর আমাদের সঙ্গী?? হয়তো এখন থেকে ঘৃনা বা এড়িয়েও চলতে পারেন।।শুধু তাদের জন্য বলছি,দয়া করে পরিবেশ,পরিস্থিতি আর বয়সের কথা ভেবে দেখবেন।।দেশটা মাত্র স্বাধীন।। সাথে সবার অস্ত্র।। হোক না তা আইনি-বেআইনি।।সাধারন থেকে ভিন্ন কিছু দেখানোর উদ্দেশ্য লক্ষ্যনীয়।।
যাক মূল কথায় ফিরে আসি।। জানি এল্যাও হবো না।।তাই বন্ধুদের সাথে বিল্ডিংয়ের ছাদে বসে নক্ষত্র গোনার মুহুর্তে বাবলু(অপঘাতে মৃত্যু)এসে জানলো তোদের রেজাল্ট বেড়িয়েছে।। তুই এলাও হয়েছিস।। হাসতে হাসতে বললাম ব্যাটা তুইতো স্কুলও ডিঙ্গোতে পারিস নি,এ খবর পেলি কোথায়।।অমলিন হেসে বললো গুজার কাছে পেয়েছি।। ও কিন্তু এ্যালাও হয় নি।। এবার সবাই ধরে বসলো আরো কিছু খাওয়ার জন্য।। পুরন করলাম দাবী।।
পরের দিন কলেজে এসে নোটিসবোর্ডে নাম দেখে বাসায় জানালাম।। আব্বা টাকা জোগাড় করলেন নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে।। বড়ভাই যে ঘোষনা দিয়েছিলো আমি ম্যাট্রিক পাশ করলে সে হাতে চুড়ি পড়বে,সেও হতবাক!!
যাইহোক ভর্তি হলাম।। প্রিন্সিপ্যাল ফাদার পিসাতো।। আর ডিরেক্টর অব গাইডেন্স ফাদার ডি কষ্টা।। যাকে আমরা DOG বলে ডাকতাম*পরবর্তিতে প্রিন্সিপ্যাল*।। আরো ছিলেন র্ ম্যাটারিয়েল,হামিদ স্যার ইত্যাদি।।সাথে ছিলেন (তখনকার দৃষ্টিতে) পিকিউলিয়ার লজিক স্যার।। এভাবে বলার কারন তার জামার বুতাম একটা ভিন্ন ঘরে লাগানো, দুপায়ে দুমোজা এবং খেয়ল না করা কে হাজিরা দিলো না দিলো।।
কলেজের ক্যাফেটেরিয়াতে ছিলো কাঠের চেয়ার-টেবিল।। যা দিয়ে চলতো আমাদের বিভিন্ন খেলাধুলা।। একদিন দীর্ঘছুটির পর যেয়ে দেখি সব আমূল বদলে সিমেন্ট দিয়ে বাধানো!!যেনো দাঁত মেলে বলছে, খেলো দেখি আমাকে নিয়ে।।
একদিন সকলে নোটিসবোর্ডে দেখলাম সরকারের আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা বা বিসিসি অর্থাৎ বাংলাদেশ ক্যাডেট কোরের শিক্ষা নিতে হবে, ইচ্ছুকদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।। আর্টস থেকে আমি,খালেদ,ইসতিয়াক,বাবু যোগ দিলাম।। আমাদের ইউনিফর্ম পাওয়ার পর পরলাম আসল বিপদে।। কলেজের সব বই-খাতা একত্র করেও কমোড় ঢিলা!!কি আর করা।। নিজ খরচে অল্টার করতেই হলো।।আজ খালেদ এবং ইসতিয়াক যদি সেনাবাহিনীতে টিকে থাকে তবে বিগ্রেডিয়ার বা মেজর জেনারেরেল পোজিশনে অভিষিক্ত।। কারন ’৮০ দশকের প্রথম দিকেই এরা দু’জন ছিলো ল্যাফট্যান্ট এবং ক্যাপ্টেন।।আরো আছেন ক্যাপ্টেন ডাঃ হাবিব এবং তার স্ত্রী ডাঃ শাহিনা।।
রাইফেল পেলাম।। সবই ঠিক শুধু ব্যারেলে এক টুকড়া কাঠ ঠোসা।। শুরু ট্রেনিং।। ট্রেনিং নূতন করে কি নেবো?? সবচালনাই তো আগে থেকে অবগত।। শুধু স্যালুট আর ক্রলিং!! তবুও হাবিলদার স্যারের অনুমোদন পেলাম।।
নির্দিষ্ট সময় ছাড়া সেই রাইফেল দিয়ে আমরা ক্রিকেট ও হকি খেলতাম।। যদিও আমি ফুটবল এবং ক্রিকেট টিমের সদস্য বিধায় অনেক কুইজ থেকে মুক্তি পেতাম,এবার পেলাম আরেকটু বেশী।।কারন আমি তিন তিনটা বিভাগের সদস্য!!
কিন্তু সেই লজিক স্যার(যাকে গ্রাহ্য করতাম না)তার রিপোর্টে DOG ফাইন্যাল পরীক্ষার আগে ভদ্রভাষায় আমাকে জানিয়ে দিলেন ষট্ঠ সাবজেক্ট লজিক বাদ দিয়েই পরীক্ষা দিলে ভাল হবে।।মানে এটাই নিয়তি।। বুঝে নিজের কথাও জানালাম।।
তারপরও সেই TTMP।। এবার আমি আর বেশী দূরে গেলাম না।। টিএন্ডটি কলেজ এবং ভার্সিটি থেকেই গ্রাজুয়েশন করলাম।। দেশের কেউ বুঝলো না আমাকে।।। আমি ট্যাগ খেলাম বিভিন্ন খেলাপে।। এটাই নিয়তি!! ইতিহাসে আমাদের নাম কখনো লেখা হবে না।। প্রত্যাশাও নেই।। আমরা(আমার সকল বন্ধুদের পক্ষ থেকে,যারা মৃত এবং বেচে আছেন) শুধু চাই একটু সান্তনা আর আমাদের মূল্যায়ন।। ঠিক আজ যেমন ভিন্নদলের লোকেরা তাদের মূল্যায়ন করছেন।। আসলে মূল্যায়ন হবে আপনাদের নেতাদের,আপনাদের নয়।। ভেবে দেখুন আমার কথা।।
জানানো হলো কি নিজের কথা?? না হলো না।। কারন এটাই জীবন নয়, এর বাইরেও থাকে “অন্যজীবন” যা শুধুই অবাহেলার(সামাজিক দৃষ্টিতে)।। আজ সরকারের বিরোধী মানেই আগামীতে হয়তো সরকারের পক্ষের।। কিন্তু আমরা যারা সাদাকে সাদা বলার পক্ষপাতী তাদের স্থান কোথায়?? যারা নেতাদের কথায় অকাতরে নিজেদের প্রান আর রক্ত বিলিয়ে দিয়েছেন,তাদের স্থান?? নেতারা ভোল বদলে ভালই আছেন,বিপদে শুধু কর্মিরাই!!
আসলে শেষ বয়সে এই পরিক্রম যে,রাজনীতি এবং আবেগ পুরো ভিন্ন।। আমরা বোকারাই এটা বুঝি না।।