খুব দ্রুতই হয়ত ফুরিয়ে যাব।অনেক দিন ধরেই ফুরোচ্ছি।এই ক্যামো ইনজেকশন ব্লাড নেয়া আর ভালো লাগে না।কিন্তু জানো??সময় আমার মোটেই খারাপ কাটেনি।মনে হচ্ছে এমন ভাবে কাটলে খারাপ হয় না।কি মনে করছ?পাগল হয়ে গেছি বা সুঁচ আর ক্যামোর প্রেশারে মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে?আরে না।বছরদুটো দারুন উপভোগ করেছি।কিভাবে জানো??অপেক্ষার মাধ্যমে।অবাক হচ্ছো??না ভাবছ মিথ্যে বলছি?হাহাহা।মিথ্যে না।মৃতপ্রায় মানুষ মিথ্যে বলে না জেনে রাখো।আমার অপেক্ষা গুলো অনেক মধুর।অনেক উত্তেজনার।
প্রতিদিনই প্রতিটা মুহুর্ত তোমার অপেক্ষায় বসে থাকি।শুয়ে থাকি।অপেক্ষাগুলো তোমার মতই সুন্দর।মোহনীয়।ভাবি এই তো চাঁদমুখ নিয়ে তুমি হসপিটালে আসলে।এই আমার হাত চেপে ধরে বলছ"কোথাও যেতে পারবে না আমাকে ছেড়ে,তোমাকে আমি যেতে দেবনা"।হাহাহা অনেকটা বাংলা ছবির ডায়ালগের মত তাই না?
আমি ইদানিং খুব বেশি হাসি তাই না???কেন জানো??শুনেছি এক।মিনিট হাসলে নাকি পাঁচ মিনিট আয়ু বাড়ে।এই হাসির জন্যেই হয়ত বেঁচে আছি।দিনের অধিকাংশ সময়ই হাসি।জানো আমি যতটুকু হাসি মা ততটুকু কাঁদেন।আমার তো মায়ের চোখ মুছে দেবারও উপায় নেই।হাত পায়ে কি সব দিয়ে যেন আটকানো।তাই হাসি।মরনব্যাধি হওয়ার পর এক বার তো আসতে পারতে।ঘৃনা হয়?রোগ তো সবারই হয়।তার মানে এভাবে উপেক্ষা করবে?আমি তো তোমার জ্বরের সময় রাতভর তোমার মাথায় পানি দিয়েছিলাম।আমার গায়ে তো বমি করেছিলে।আমি কি দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম?হাহাহা দেইনি তো।তুমিই তো ইচ্ছা করে প্রেম করেছিলে।ভালোবেসেছিলে,বাসিয়েছিলে।আর এখন?সময় তো বদলেছে তাই না?আসলেই বদলেছে।দুই বছর আগে তাগড়া যুবক আর এখন হাড্ডিসার মৃত্যুপথযাত্রী।
জানো আমি পঁচে গেলেও আমার ভালবাসা পঁচে নি মোটেও।আগের থেকে যেন অনেক বেশি জমে আটকে মজবুত হয়েছে ভালবাসা।
হাহাহা হেরে গেছি একটি ব্যাধির কাছে,কিছু স্মৃতির কাছে,একটি মেয়ের কাছে,একটি ছলনার কাছে,একটি জীবনের কাছে।
আজ কেনো যেন তত হাসতে পারছি না।মোটেও না।হয়ত আজ আর নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ করে যেতে পারব না।তোমার অপেক্ষা করতে পারব না।তবুও শেষ কার্বণডাই অক্সাইড তোমার নামে ছেড়ে দিয়ে গেলাম।যতদিন এটি বাতাসে ভাসবে ততদিন পৃথিবীর বুকে দাপট নিয়ে বেঁচে থাকবে।যাও বাজি।ভালো থেকো।বেঁচে থেকো।