প্রান্তিক
লেখক: আব্দুর রশিদ (মাহি)
আলোচনা:
প্রান্তিক, একজন নতুন লেখকের দক্ষতার সাথে অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ সংবলিত একটি সাইয়েন্সফিকশন। লেখক নতুন হলেও এখানে তিনি বিজ্ঞানের (জীব বিজ্ঞানের)নতুন নতুন আইডিয়া তার কল্পনারসাথে মিশিয়ে গল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ।লেখক মূলত তার বিজ্ঞানের আইডিয়াগুলো ব্যক্ত করেছেন বুড়ো বিজ্ঞানী/ গবেষক প্রফেসর ড. ইসলাম, ড. পিন্টু নামের চরিত্রগুলোর মাধ্যমে ।যদিও সাইয়েন্স ফিকশনটি শুরু হয়েছে বিমান দূর্ঘটনায় ব্যবহৃত রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার ও দূর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান কে কেন্দ্র করে । প্রথমে পাঠকের কাছে মনে হতে পারে এটি একটি গয়েন্দা কাহিনী কিন্ত লেখক সুকৌশলে তার মনের ইচ্ছা চরিতার্থ করেছেন। গল্পের প্রয়োজনে লেখক ধারাবাহিক ভাবে পর পর “বোয়িং 71 এবং জিন” নামে দুটি খন্ডে তার গল্পের অবতারণা করেছেন । সমস্ত গল্প জুরে অনিতা দেবী নামের এক গয়েন্দা কর্মকর্তার কার্যক্রম এর মধ্যদিয়ে লেখক ক্লাইমেক্সের দিকে এগিয়ে গেছেন । এখানেও লেখকের মুন্সীয়ানার পরিচয় পাওয়া যায় । নায়িকা প্রধান উপন্যাস বললে অত্যক্তি হয় না । লেখক “জিন” খন্ডে তার বৈজ্ঞানক ( জীবজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি) সব আইডিয়া মেলে ধরেছেন । যেমন- মৃত মানুষ মারা যাওয়ার ঠিক 6 ঘন্টা পূর্বে কি শেষ দেখেছিল তা যেমন বের করা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কৌশলগুলো তিনি বর্ণনা করেছেন তেমনী বর্ণনা করেছেন একজন কমায় চলে যাওয়া মানুষকে কিভাবে কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কথা বলানো যায়, তারও ।বর্তমান তরুণ প্রজন্ম যে জটিল তথ্য প্রযুক্তির কথা এখনও কল্পনাও করেনি, লেখক সেই বিষয় নিয়েই তার প্রান্তিক এর শুভ সূচনা করেছেন । লেখক বিজ্ঞানের পাশাপাশি ধর্মতত্ব মানুষের আচরণ, সমাজের বিভিন্ন স্তর, প্রেম ভালবাসা সবকিছুরই একটা শৈল্পিক ও নান্দনিক মিশেল ঘটিয়েছেন তার প্রথম সাইয়েন্সফিকশন বই - প্রান্তিকে ।
সমালোচনা: সায়েন্সফিকশনটি সর্বগুণে গুনান্বিত হলেও এর কিন্ত কিছু সমালোচনাও রয়েছে । যেমন লেখক নায়ক সাজ এবং নায়িকা অনিতা, এবং প্রফেসর ইসলাম থেকে কিন্ত বেরুতে পারেননি ।সারাক্ষণ ল্যাবে থাকতে থাকতে অনেক সময় একটু বোর মনে হয় । মাঝে মাঝে ম্যাসিভ ডাইনামিকে গেলেও মালিহার চরিত্র প্রথমে যেমন সন্দেহ প্রবণ ও ভিলেনের মত মনে হয় এর কিন্তু শেষ পরিনতি লেখক দেখাননি । এখানে পাঠকের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন থেকেই যায় । তাছাড়া তাড়াহুড়া করতে গিয়ে কম্পোজার দু এক জায়গায় দু একটা শব্দে বানানের ভুল করেছেন সাধারণ পাঠকের চোখে নাও পড়তে পারে ।যাই হোক সব মিলিয়ে লেখক কিন্ত তার দক্ষতা ও বিজ্ঞান মনস্কতার পরিচয়ই দিয়েছেন । বাছাই করা ধানের মধ্যে চিটা ধান তো থাকবেই এটাই যেমন স্বভাবিক তেমনি । নতুন লেখক হিসেবে সামন্য ভুলভ্রন্তি হতেই পারে । লেখকের দূর্দান্ত এগিয়ে চলাকে আমরা প্রশংসা করি এবং তার লেখালেখির জগতে আগমন আমরা স্বাগত জানাই । ভবিষ্যতে আমরা বিজ্ঞানের আরো অনেক নতুন নতুন আইডিয়া পাব এই প্রত্যাশায় অপেক্ষায় থাকলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩০