মুক্ত কথা: ♣যাদের ঘরে ঈশ্বর খেলেন ঘুড়ি উড়াবার খেলা ♣
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শুরু হলো আরেকটা বৈশাখ। বিব্রতকর ভাবে নগরে অলি-গলি সহ বাজারের মাংশওয়ালার দোকানে ঝুলছে গৃহপালিত পশুদের কাটা দেহ। বছরটা-মাংশ ভাত দিয়েই শুরু করতে হবে এমনটাই অতীত ধারনা আমাদের। প্রানী হত্যা দিয়েই বছর শুরু করি। এ যেন উদরপুর্তির আর এক উৎসব। এই একটা দিন বাউল-জারী-পুথি-পালায় বাঙালী সাজার ধুম। হাতে কাচেঁর চুড়ি, প্রেমের ফুলঝুড়ি, লাল-সাদা শাড়ীতে, পায়ে দলিয়ে দৈন্যবাসীদের মতো হাতে তুলে নুন-পান্তায় মত্ত। এই আমাদের পহেলা বৈশাখ।
ছোটবেলায় মাটির সানকিতে ভাত খেতাম। জীবনটা কুড়েঁতেই শুরু হয়েছিল বলে মাটির সাথে শুয়ে ছিলাম অনেকটা বছর। এখনো মাটিতে কান পেতে শুনি ফেলে আসা বোশেখের সেই সব গন্ধমাখা দিনের কলকাকলী। সেই দিনগুলো এখন সোনার খাচা থেকে ব্রোঞ্জের খাচায় স্থান করে নিয়েছে। শীতের পর-পরই পান্তা আমাদের সকালের অমৃত হয়ে ঠোটের ভালোবাসায় উদরে যেত মহা আনন্দে, কাচা মরিচ, সরষে তৈল কিংবা খানিকটা পোড়া মরিচ দিয়ে। পান্তা এখনো খাই, সেই আগের স্বাদ খুজি, শরীর ভারী হয়ে আসে মনে হয় খানিকটা মাতাল হয়ে যাচ্ছি, ঘোরের মধ্যে চলে যাই পূর্বের পান্তা-সানকির দিনে। বোশেখের উৎসবে পান্তায় চোখ রাখিনা। তাবু টানানো ঘরে খাওয়া হয়না, সিরামিকের প্লেটে হাত উঠেনা কিংবা ইলিশ ছুয়েই গলাধকরন করতে পারিনা এই সব।
চৌত্র সংক্রান্তির পরদিন আমরা আর্শিবাদ কুড়াতে যেতাম বর্ষিয়ানদের কাছে। মাথায় হাত ছুইয়ে দীর্ঘাযু কামনা করতেন কেউ কেউ ঠোট চাপা হাসি নিয়ে হাতে দিতেন হরেক রকম মিষ্টি পুতুল। আমাদের ছিল তখন ফরিঙ ধরার বয়েস সে বয়সে স্বাদ লুকিয়ে থাকতো জ্বিভের ডগায় সেইসব মিষ্টি পুতুল খানিকটা সময় হাতে নিয়ে রাখার পার গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে বসে খেয়ে নিতাম মিষ্টি পুতুল। এখন আর্শিবাদ কুড়াতে কেউ আসেনা প্রত্যেকেই হিমালয় হবার জন্যই বড় হয়ে যায় হাওয়া খেয়ে। আজকাল ফরিঙ ধরার বয়সে কেউ ঘুড়ে বেড়ায় না হন্যে হয়ে রোদের সাথে সাথে।
সুসং নগরের আত্রাখালী নদীর ধারে মেলা বসতো, তখনকার পুতুল চোখে মনে হতো এ যেন এক নতুন বাজার। সব কিছুর আয়োজন থাকতো সেখানে, সন্ধ্যের পর হতো যাত্রাপালা, সঙ সেজে মানুষ কারো বুকে জাগিয়ে দিতো ভালোবাসার ঢেউ কারো বা সর্বনাশের কান্না। এখন সেই সব পালা মানে অর্ধ উলঙ্গ নৃত্য। আমরা কেউ কেউ তাতেই বাহবা দিই কেননা আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সময়ের হাত ধরে নুতনের দেশে।
নিম্নবিত্তের কোন বিত্ত থাকেনা তবু ও নামেই ডাকি। গরীবদের কোন বাছ-বিচার থাকেনা। গরীবদের পেটে অনেক খিদে। ওরা জন্মেই এসব গুনাবলী নিয়ে। আমরা যারা রঙ-চঙ মেখে বাঙালী বাবু হয়ে বোশেখের বাতাসে পারফিউমের সুবাস ছাড়ি তারা কিন্তু চোখের ফাকে এড়িয়ে চলি সেই সব বিত্তবানদের, যাদের কে নিম্ন চোখে দেখি। তাদের হাতে দেইনা তুলে এক টুকরো ইলিশ। তাদের কাছে রোজ পান্তা আছে, একদিনের ফুলবাবু বাঙালী সাজার প্রয়াসে পান্তা খাই ওদের মতো। কোনদিন কি ওদের মতো হতে পারবো?
অনেক দাতা সংস্থা আছে যারা চোখের কোন লুকিয়ে রাখে সমস্যার নোটখাতা। বোশেখে কোন দান-দক্ষিনা হয়না। আমরা নতুন পোষাক গায়ে চাপিয়ে চলি সবুজ-ধূসর পথ, যাদের গায়ে মলিন পোষাক তাদেরকে তখন ভাবি ভীনগ্রহের মানুষ। আমাদের গায়ে এলার্জি আছে, আছে নাক উচু ভাবনা। নেই নিম্ন বিত্তের জন্য এই একটা দিনে কিছু হাতে তুলে দেবার প্রয়াস। ভালো খাবার কিংবা ভালো পোষাক দেবার মতোন মানসিকতা।
প্রেমিকার ঠোটে বাহারী আকাঙ্খা, আমি কিংবা আমাদের শার্টে বিশ্ব বেহায়া হবার জলছাপ তবু আমি গর্বিত হয়ে বলি বাঙালী, কেননা চোখের জল মুছে আমি প্রতিবার নতুন করে জেগে উঠি বোশেখের মতো। আমাদের দেয়ালে কাল বৈশাখীর আচ লাগেনা। আমার কিংবা আমাদের দেখা সেই সব বিত্তবানদের ঘর উড়ে যায় শৈশবের ঘুড়ির মতো। যাদের ঘরে দুঃখের বসবাস আজীবন। যাদের ঘরে ঈশ্বর খেলেন ঘুড়ি উড়াবার খেলা। আমরা হই সেসবের দর্শক কিংবা সকরুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা শব্দ কারিগর।
___________________________________________
রচনাকাল-
১ লা বৈশাখ-১৪২১ বঙ্গাব্দ
উইলকিংসন রোড, সুসং নগর
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?
সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??
সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন