somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদিও পা ফেটে রক্ত ঝরছিল,কিন্তু হাটতে ব্যাথা লাগছিল না -উঠে দাড়ানোর গল্প

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(১) প্রাকৃতিকভাবেই আমার গায়ের চামড়া একটু নরম। ছোটবেলা কঠোর পরিশ্রম করে বড় হই নি তাই হয়ত এমন হয়েছে। তেমনী পায়ের গুড়ালীও একটু নরম হয়েছে। বেশী হাটার অভ্যাসও ছিল না। একটু হাটতে গেলেই পায়ে ব্যাথা করত। শীতের সময় একটু বেশী হাটাহাটি করলেই পা ফেটে রক্ত ঝরে। অবশ্য সমস্যা আমাদের ডিএনএ তেও থাকতে পারে। বড় ভাইয়ের একটি মেয়েরও একই সমস্যা। অন্যদের আবার সে সমস্যা নেই। হঠাৎ করেই জীবনে আসল পরিবর্তন। দামী লাইফস্টাইলে যে ছেলেটা ছিল অভ্যস্ত সে খুজে নিল টিউশনি। একটা সাইকেলও একসময় জোগাড় করে ফেললাম নিজেরই টিউশনির টাকায়। লক্ষ্য তবুও অনেক দূর যাওয়ার। এখনো অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে। অনেকটা যাওয়া এখনো বাকি।

(২) খরচ বাচাতে কলনীর মতো একটা বাসায় উঠলাম। টিনের চাল। মনের মধ্যে হয়ত একটু কষ্ট ছিল। ভাল বাসায় থাকার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। টাইলস ছাড়া ছোট বাসায় থাকতে কেমন যেন লাগত। এরই মাঝে পাশের এক মাজারে এক সন্ধ্যায় নামাজ পড়ে কবর জিয়ারত করে ফিরছিলাম। এমন সময় শুরু হল বৃষ্টি। সবাই যে যেদিকে পারে গিযে আশ্রয় নিল। আমিও একটি বড় গাছের নিচে আশ্রয় নিলাম। এমন সময় খুব করুন সুরে আল্লাহ আল্লাহ ধ্বনি শুনে পাশ ফিরে দেখলাম এক ভিক্ষুক। যার দুই হাত আর পা নেই। হামাগড়ী দিয়ে যে গাছের নিচে আশ্রয় নিবে সে শক্তিও নেই। আল্লাহ আল্লাহ ধ্বনি এখনো আমার কানে বাজে। আমি এখনো শুনতে পাই। সে ধ্বনি যেন আমার হৃদয় ছিড়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। শুধু মনে করতে চেষ্টা করছিলাম, আমি কি কখনো এমন সুরে আল্লাহকে কখনো ডেকেছি? মনে পড়ল না। জানি ডাকি নি। তার হাত আর পা নেই। সে কিভাবে এতো দরদ কষ্ঠে আল্লাহ ডাকে? আমি তো এখনো দুই পায়ে দাড়াতে পারি। ছোট হলেও মাথার উপর টিনের ছাল আছে। কাজ করার শক্তি আছে।

(৩) এরই মধ্যে সাইকেলটা চুরি হয়ে গেল। স্রষ্টাকে বললাম, তুমি পরীক্ষা নিচ্ছ? দেখ আমি শোকরগোজারই আছি। সাইকেল চুরি হয়েছে তো কী হল পা দুখান তোমারই দেয়া। সেই পায়ের জন্যই শোকরীয়া জানাই। টিউশনির দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে আসা যাওয়া শুরু করি। এক শীতের সকালে তেমনী হাটছিলাম। পায়ের জুতা জোড়াও একটু বেশী পাতলা হয়ে গিয়েছিল। পা ফেটে রক্ত ঝরতে শুরু করে। কেন জানি আমার কোন ব্যাথা করছিল না। চোখের কোণে পানি জমেছিল সত্যি। তবুও আমি ব্যাথা পাচ্ছিলাম না। নিজেকে ঠিকিয়ে রাখতে একটা ফার্মেসীতে চাকুরী নিলাম। তারপর একটা কম্পিউটারের দোকানে টাইপিংয়ের কাজ নিলাম। যেহেতু আমার স্বপ্ন ছিল আইটি সেক্টরে তাই এই কাজটি আমি আরো বেশী ভালোবেসে করতে লাগলাম। ডিউটি টাইমের আগে এসে কম্পিউটার সম্পর্কে জানার জন্য নেটে সার্চ করতাম। ডিউটি টাইম শেষেও অনেকক্ষণ বসে থাকতাম দোকানে নতুন আরো কিছু শেখার চেষ্টায়। জানলাম ইন্টারনেট ফ্রিলেন্সিং সম্পর্কে। দোকানে কাজের ফাকে ফাকে ইন্টারনেটে ফ্রিলেন্সিং শুরু হল। যে দোকানের কর্মচারী ছিলাম তারই পাশে নিজেই একটি দোকান খুললাম। আমার ঠিকে থাকার এই গল্পে আরো অনেক ছোট ছোট গল্প আছে যা বলতে হলে দীর্ঘ সময় লাগবে। কত বাধার যে সম্মুখীন হয়েছি তার কি হিসেব আছে। সব থেকে বেশী ভেঙ্গে পড়েছিলাম নাহিদ মারা যাওয়ার পর। সেখান থেকেও উঠে দাড়িয়েছি। শুনেছি, এই উঠে দাড়ানোই না কি স্রষ্টা খুব পছন্দ করেন।

আমরা অনেক সময় হুটহাট করে অনেক কিছু পেয়ে যাই। যে জিনিসটা হুট করে পাই সেটা সেভাবেই হারাই। স্বপ্নজয়ের পেছনে সব থেকে বড় অনন্দ হচ্ছে বাঁধাগুলোকে অতিক্রম করা। লক্ষ্যে কখনো সন্দিহান হতে নেই। হতাশ হতে নেই। তা না হলে বাঁধাগুলো পাহাড় সমান মনে হবে। ঢেউয়ের মতো লক্ষ্য পূরণের পথে আসে বাধা। আমার এই পথ অতিক্রম করে যারা এগিয়ে যাই তারা বিজয়কে স্বায়ী করতে পারি। সবার জীবন হোক সুন্দর।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×