একজন গরীব কৃষকের মেয়ে যদি ইজ্জত হারায় তবে তার বাবা নিরবে অশ্রু ঝরায় আর স্রষ্ট্রার কাছে বিচার চায়। সত্য আর ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী আলীম ফতুয়া দেন এই মেয়েকে স্পর্শ করা যাবে না। কারণ সে অশুচি। এর বিয়ে দেয়া যাবে না। পতিতা বানানোর যত রকম কৌশল আছে সবই প্রয়োগ করা হয়। এই মেয়েকে অপবিত্র বানিয়ে একা করে দেয়া হয়। পরিবারকে করা হয় সমাজ বিচুত্য। ধর্ষকের কি হয়? ধর্ম ব্যবসা দিনে দিনে এভাবেই আমাদেরকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে।
আমাদের জ্ঞান কিভাবে বিকশিত হচ্ছে? ভেবে দেখেছেন কখনো? সিরিয়ালে যেভাবে যা দেখানো হচ্ছে আমরা তাই দেখছি। আমাদের যা বুঝানো হচ্ছে আমরা তাই বুঝচ্ছি। আমাদের নিজস্ব কোন জ্ঞান কি আছে? আমরা নিজেরা কি কখনো ভাবনা ও চিন্তা করার সময় পাই?
এরপরও তোমরা কি গভীর ধ্যানে লিপ্ত হবে না? কারণ প্রকৃত জ্ঞান আসে স্রষ্টার কাছ থেকে। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু দেন। তবে সেই জ্ঞানের জন্য অনুসন্ধান করতে হবে। ধর্মকে জীবিকা নয়, ধর্ম হতে হবে সত্য আর মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারার মাধ্যম।
আমাদের বলা হলো খলিফাদের সময় ইসলাম অর্ধেক পৃথিবী শাসন করেছে। আমরা তাই শিখলাম। আমাদের জানানো হলো সুলতান সুলেমান অটোম্যান সম্রাজ্য পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশে ইসলামী রাজত্ত্ব ছিল। আমরা তাই শিখলাম।
ইসলাম কি পৃথিবীকে শাসন করতে এসেছে? না কি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে এসেছে? খলিফাদের সময়ও ইসলাম পৃথিবীকে শাষন করে নি। বরং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছিল। পৃথিবীতে ইসলাম শাষন করেছে সুলতান সুলেমানের সময়। তখন কি কোথাও ইসলাম বিকশিত হয়েছিল? শুধু শাষন করলেই ইসলাম এতোটা বিকশিত হত না। খলিফাদের জীবনী দেখুন। তারা কতই না সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। শাষন করার জন্য তারা রাজ প্রাসাদ গড়ে তুলেন নি। তারা মানুষের মাঝেই থেকেছেন।
এখনই সময় গভীরভাবে ধ্যানে বসার। এক ঘন্টার ধ্যান ৭০ হাজার বছর নফল ইবাদতের সমান সোয়াব। শুধু জ্ঞান অর্জন করলেই মানুষের মেধার বিকাশ ঘটে না। রাগ করলে শারীরিক ক্ষতির সব কিছু জানা সত্ত্বেও অনেক জ্ঞানী রাগ করেন কথায় কথায়। আর গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ দেখা যায় , সহজে রাগ করেন না শুধু এই্ জন্য যে "রাগ করা হারাম"। তাই শুধু জানার মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করা যায় না। প্রয়োজন জ্ঞানের অনুশীলন।
একজন সাধারণ মানুষ কখনই ধর্মকে অর্ধমের পথে নিয়ে যেতে পারবে না। ধর্মকে অধর্মের পথে নিয়ে যাচ্ছেন ধর্মের রক্ষকেরাই। আলীম সমাজকে এখনই সতর্ক হতে হবে। ধর্ম নিয়ে এতো মত বিরুধের কারণ কি?
কেউ বলছে এভাবে নামাজ পড়। কেউ বলছে ওভাবে। কেউ বলছে রোজা এভাবে রাখো , কেউ বলছে ওভাবে নয় এভাবে। ধর্মের কোথায় বিভেদ সৃষ্টি করা হয় নি? কেউ বলছে মাজহাব না মানলে ধর্মের জ্ঞান তোমার পর্যন্ত আসবে না। কেউ বলছে মাজহাব মানলে শিরিক হবে। কেউ বলছে তারাবী নামাজ ২০ রাকাআত, কেউ বলছে ৮ রাকাআত। কেউ বলছে মহিলারা সুব্যবস্থা থাকলে মসজিদে নামাজ পড়তে পারবেন, কেউ বলছেন মসজিদে মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ। কেউ কেউ মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন, কেউ বলছেন মসজিদ ভাঙ্গার মানষিকতা উগ্র চিন্তার প্রতিফলন। কেউ বলছেন নবীজী (সা) এর জামানায়ও মসজিদ ভাঙ্গার মতো ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ মানুষ কোন দিকে যাবে?
ঘৃণা আর বঞ্চনার পৃথিবীতে ধর্ম ব্যবসায়ীরা একটু কি আমাদের শান্তিতে থাকতে দিবে না? সাধারণ বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করলেই তো সত্য আর মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব। মানুষের এতোটা অধ্বপ্রতন কিভাবে ঘটল?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৫৮