somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলোহীন জগৎ (ছোট গল্প)

২৩ শে জুন, ২০১৮ রাত ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক ছিল গরীব কৃষকের মেয়ে। তার নাম ছিল নীরা (ছন্দ নাম)। মেয়েটি বাবাকে কাজে সাহায্য করার জন্য বেতের জিনিসপত্র তৈরি করত। গ্রামের হাটে সেগুলো ভালই বিক্রি হতো। পাশের গ্রামের এক প্রবাসী যুবকের সাথে মেয়েটির পরিচয় ও প্রেম হয়। নীরা রুপে হয়ত পরীর মতো সুন্দরী ছিল না কিন্তু গুণে ছিল অতুলনীয়। শিক্ষিত শহরে প্রেমকে আজকাল অতি সারধরণভাবেই দেখা হয় কিন্তু এখনো গ্রামে ততটা ভালো চোখে দেখা হয় না। নীরার বাবা সামান্য কৃষক। ছেলেটির পরিবার সেটা মেনে নিতে পারে না। একটা সময় নীরার পূর্ব পুরুষদের বেশ সুনাম আর সম্পত্তি থাকলে কি হবে, অশিক্ষা আর অতি সারল্যের জন্য দিনে দিনে মানুষের কাছে ধোকা খেতে খেতে আজ তারা নিঃস্ব। এমন নিঃস্ব পরিবার থেকে ছেলের বউ ঘরে তুলতে অমত জানাল নীরার প্রেমিকের পরিবার।

ছেলেটির পরিবার যে খুব ধনী আর উচ্চ বংশীয় তা কিন্তু নয়। কয় বছর আগেও তিন বেলা খাবার জুটাতে পারত না। বিদেশ গিয়ে কিছু টাকা হাতে আসলে কি হবে, স্বভাব তো আর বদলায় নি। বংশীয় মর্যাদা দিয়ে বিচার করলে নীরার বংশ অনেক ভালো। শুধু দরিদ্রতার কাছে হেরে গিয়ে নীরার পরিবার ঐ ছেলেটির কাছে বিয়ে দিতে রাজী হয়। কিন্তু নীরার পরিবার রাজী হলে কি হবে, ছেলেটির পরিবার তো রাজী থাকতে হবে।

একদিন ছেলেটি পরিবারের কাউকে না জানিয়ে নীরাকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে ফেলে। ছেলেটির মায়ের অনেক শখ ছিল, একমাত্র ছেলেকে ধুমধামে বিয়ে করাবে। ঘরে বউ আসার সময় ফ্রিজ টিভি আর কত কি নিয়ে আসবে। এই দরিদ্র ঘরের মেয়েকে ঘরে তুলতে ছেলেটির মা রাজী হয় না। পাড়া পড়শী বুঝালেন, ছেলেটি বউকে আলাদা বাড়ীতে কিংবা বাপের বাড়িতে রেখে বিদেশ চলে গেলে সব টাকা পয়সা বাপের বাড়িতেই পাঠিয়ে দিবে। ওরা সব লুঠে খাবে। ছেলের রুজি খেতে হলে বউকে ঘরে তুলে নাও। ছেলেটির মা ভেবে দেখল, তাইতো। অবশেষে রাজী হয়ে ঘরে তুলে নেয়। কিন্তু নীরার শ্বাশুরী নীরাকে বউ হিসেবে ভেতর থেকে মেনে নেয় নি। নীরার শ্বাশুরী ভেতরে ভেতরে জ্বলতে থাকেন। ছেলে বিদেশ যাওয়ার পর বউকে বিদায় করে ছেলেকে আবারো বিয়ে করানোর ফন্দি আঁকেন।

এদিকে নতুন সংসারে নীরা সবার মন রক্ষা করে চলতে শুরু করল। স্বামীও বিদেশ ফিরে গেল। নীরার ভয় ভয় লাগতে শুরু করে। স্বামী ছিল সব থেকে বড় ভরসা। সব চিন্তা বাদ দিয়ে নতুন সংসারকে আপন করে নিতে শুরু করল নীরা। কিন্তু একটু এদিন সেদিক হলেই সবাই বলত, পালিয়ে আসা মেয়ের কাছ থেকে কি আর আশা করা যায়! কথায় কথায় অপমান আর বকা ঝকা শুরু হয়। নীরা নিরবে সব মেনে নেয়। ভয়ে স্বামীর কাছে কোন নালিশ করে না, পাছে শ্বাশুরী আরো বিগড়ে যায়।

এদিকে নীরার পেঠে নতুন প্রাণের আগমন ঘটে। নীরার শ্বাশুরী এবার নীরাকে শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। একটি সন্তান হয়ে গেলে পরে আর এই মেয়েকে বিদায় করা যাবে না। তাই ঘরের সব কাজ নীরাকে দিয়ে করাত। নীরা যথেষ্ঠ পরিশ্রমী ঘরের মেয়ে। কিন্তু পেঠে যখন অন্য আরেকটি প্রাণ তখন তো একটু সতর্ক থাকতেই হয়। দিনে দিনে অবস্থা এতই খারাপ হতে থাকে যে, নীরাকে ঠিকমতো খাবার দাবারও দেয়া হয় না। নীরা পুষ্টিহীনতায় ভুগতে থাকে।

নীরা নতুন একটি দিনের আশায় সব সয়ে যেতে থাকে। সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার সময় আসে। ভালো কোন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে দেয়া হয় না। নানা কুসংস্কার আর অজুহাত দেখানো হয়। কোন দাত্রী ছাড়াই একা একটি ঘরে নীরা একটি ফুটফুটে মেয়ের জন্ম দেয়। পাড়া পড়শীর কাছ থেকে শুনা যায়, মেয়ে জন্মের পর নীরার শ্বাশুরী তিন দিন পর্যন্ত পুত্র বধুকে কোন খাবার দেয় নি। সুচিকিৎসা আর যত্নের অভাবে নীরা ধীরে ধীরে মৃর্ত্যুর কুলে ঢলে পড়ে।

নীরার বাবা সেদিন অনেক কেঁদেছিল। সেদিন আকাশ ফেটে বৃষ্টিও হচ্ছিল খুব। আদরের মেয়েকে কাধে করে মাটির বুকে রেখে আসেন নীরার বাবা। নীরার বাবার কান্না যারা দেখেছেন কেবল তারা বলতে পারবেন, একজন অসহায় পিতার চিৎকার কতটা করুন। যে মেয়েকে হাত ধীরে ধীরে হাটানো শিখানো হয়েছে, মুখে তুলে খাওয়ানো হয়েছে। আবার বাবার দরিদ্রায় আগলে রেখেছিল সব। সেই মেয়েকে কবরে রেখে আসা সহজ কাজ নয়। এতো ভালো একটি মেয়ে এতো দ্রুত পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে তা পাড়া পড়শীও মেনে নিতে পারছে না, সেখানে নীরার বাবা কিভাবে মেনে নেবে?

দিনে দিনে সব স্বাভাবিক হতে থাকে। নীরার শাশুরী ছেলের আরেকটি বিয়ে করিয়েছেন। সেই বউ না কি শাশুরীকে ঠিকমত খেতে দেয় না। মাঝে মধ্যে নীরার শ্বাশুরী ঘুমের ঘোরে নীরা, নীরা, আমার নীরা মা বলে ডাকতে শুনা যায়। পাড়া পড়শীর মুখে শুনা যায়, নতুন বউ ঠিক তাই করছে যা এক সময় নীরার শ্বাশুরী নীরার সাথে করত। নীরার মৃত্যুর পর নীরার শ্বাশুরী নীরার গুণগুলো উপলব্দী করেন আর নীরা নীরা বলে বিড়বিড় করেন।

নীরার মেয়ের বয়স এখন ৮ বছর। ঠিক নীরার মতো হয়েছে। নীরার বাবা নাতনীকে বুকে নিয়ে মেয়ে হারানোর কষ্ট কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করেন। নীরার মত করে তাঁর মেয়েকেও বড় করতে শুরু করেছেন। মাঝে মধ্যে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকেন। কিছু খুজেন হয়ত। কি খুজেন কেউ জানে না। মেয়ে নীরাকে, না কি জগতের মালিককে?

নোট: বাস্তব জীবন থেকে এই গল্পটি লেখা হয়েছে। দ্রুত লিখতে গিয়ে বাক্যের অলংকার ঠিকমত তৈরি করা যায় নি। মূল কাহিনী বুঝানোর চেষ্টা করেছি শুধু। ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৮ রাত ৩:১১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×