প্রথম পর্বঃ Click This Link
দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে আমার এককালের প্রিয়তমা! যার কথা ভেবে এখনও আমার চোখের ঘুম পালিয়ে যায় যোজন যোজন দূরে, যার স্মৃতি এখনও আমাকে কুরে কুরে খেয়ে চলেছে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। তাকে আমি এভাবে এতরাতে আমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখব এটা আমি কস্মিনকালেও ভাবিনি!
হতবাক হয়ে দরজা খুললাম! পাতলা ফিনফিনে নাইটি গায়ে দু'হাত বুকে ভাঁজ করে এই প্রচন্ড শীতের রাতে প্রায় নির্বিকার অবস্থায় ওকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনের মধ্যে এলোমেলো আর পরস্পরবিরোধী ভাবনা খেলে গেল। একপাশে সরে গিয়ে তাড়াতাড়ি ওকে ঘরের ভেতর আসতে বললাম। ও ঘরে ঢুকতেই তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে খোলা জানালাটাও লাগিয়ে দিলাম। তারপর দু'টো গরম কম্বলে ওকে মুড়ে দিয়ে আমার বিছানায় নিয়ে বসালাম। জিজ্ঞেস করলাম আরও কম্বল লাগবে কিনা? ও মাথা নাড়ল। আমি তাড়াতাড়ি কিচেনে গিয়ে দু'কাপ কফি করে আনলাম। ও কিছু না বলে হাত ইশারায় কফি খাবে না বলে জানিয়ে দিল। একটু বিস্মিত হলেও আমি ওর কাপটা রেখে চেয়ারে বসে নিজের কাপে ধীরে ধীরে চুমুক দিলাম।
কফি শেষ করে ওকে ভালমত পর্যবেক্ষণ করার প্রয়াস পেলাম। ঘরে ঢোকা অবদি ও একটি কথাও বলেনি। শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থেকেছে। এতক্ষণে আমি পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে ওকে দেখতে লাগলাম।
দীর্ঘ ছয় বছর পর ওকে এত কাছ থেকে সামনাসামনি দেখছি! যদিও তীব্র শীতের কারণে মুখটা একটু ম্রিয়মাণ দেখাচ্ছিল তবুও ওর সেই অপার সৌন্দর্য এতদিন পরেও একটুও ম্লান হয়নি। বরং এ ক'বছরে সৌন্দর্যের ধার যেন আরও বেড়েছে। এখনও ওর সেই পাগল করা রূপ আমাকে যেন সম্মোহিত করে ফেলতে চাইছে। আমি বহুকষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনলাম। ভাবতে চেষ্টা করলাম-এতরাতে ও এই পোশাকে হঠাৎ করে কোত্থেকে, কেমন করে আর কেন আমার কাছে ছুটে এসেছে।
হঠাৎ ও কথা বলে উঠল-
'কেমন আছ?'
'ভাল আছি একথা বলব না। আবার ভাল নেই একথা বললেও মিথ্যে বলা হবে। মনে কর ভালমন্দ মিশিয়ে একরকম আছি।'
'আমাকে দেখে খুব অবাক হয়েছ?' ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল।
'হ্যাঁ, তা হয়েছি বৈকি!'
'অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি বহুকষ্টে তোমার ঠিকানা জোগাড় করে এতরাতে তোমার কাছে স্বার্থপরের মত সাহায্য চাইতে এসেছি। আমাকে আবার এখনই ফিরে যেতে হবে'
আমি বিস্মিতকন্ঠে প্রশ্ন করলাম-
'এখনই ফিরে যেতে হবে মানে? আমি তো তোমার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না! আচ্ছা তুমি বল দেখি, এতরাতে আর এইভাবে কোত্থেকে আমার এখানে হাজির হলে?'
'সবই বলছি। আমাকে একটু সময় দাও।'
ও কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখে সম্ভবতঃ কথাগুলো মনে মনে একটু গুছিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করল-
'তোমার মনে আছে? আজ থেকে ঠিক ছ'বছর আগে তোমার জন্মদিনের গিফট কেনার জন্য আমি বিকেলে বাসা থেকে বেরিয়ে নিউমার্কেটে গিয়েছিলাম?'
আমার মনে পড়ল ১৪ জানুয়ারি আমার জন্মদিন। ভালমত দেখেশুনে আমার জন্য গিফট কিনবে বলে দশ তারিখেই ও মার্কেটে চলে গিয়েছিল আর আমাকে ফোন করে আমার পছন্দের কথা জিজ্ঞেস করেছিল। এত আগে যাওয়ার কারণ হল যাতে সেদিন পছন্দমত কিছু কিনতে না পারলেও পরের দু'দিন ঘোরাঘুরি করে সঠিক জিনিসটা কিনতে পারে আবার পছন্দসই না হলে আবার চেঞ্জ করে আনতে পারে। মেয়েদের এই দরদাম আর হরেক রকম যাচাই-বাছাইয়ের অভ্যাসের কথা আমার ভালমতই জানা ছিল বলে আমি ওকে নিষেধ করিনি।
চলবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৪