‘প্রথমে মিস কল দিতাম। একবার নয় একাধিকবার। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই নম্বর থেকে কল ব্যাক করতো। আমি একটু কথা বলে বলতাম ‘রং নাম্বার’। লাইন কেটে দিতাম। ঘণ্টাখানেক পর আবারও মিস কল দিতাম। আবার কল ব্যাক করলে কথা বলতাম। মেয়ের গলা পেয়ে অপর প্রান্তের লোক এমনিতেই কথা বলতো। এভাবেই শুরু হতো ফোনালাপ। তারপর একদিন উনিই (ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি) আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইতো। প্রথমে রাজি হতে চাইতাম না। পরে রাজি হয়ে যেতাম। প্রথমে দেখা করতাম কোন একটি রেস্টুরেন্টে। পরে ফোনের কথোপকথন এডাল্ট বিষয়ে নিয়ে যেতাম আমি নিজেই। এরপর উনিই আমাকে কোন ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে চাইতো। কখনও কক্সবাজার বা অন্য কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে চাইতো। আমি বলতাম, আমার খালার বাসা ফাঁকা। এলে এখানে আসেন। বাসা ফাঁকা শুনে তিনি সহজেই রাজি হয়ে যেতেন। এভাবেই আমার কাজ ছিল ফ্ল্যাট পর্যন্ত এনে দেয়া। বাকি কাজ অন্যরা করতো।’
প্রেমিকা সেজে বিত্তশালী বিভিন্ন লোকজনকে নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে এনে ব্ল্যাকমেইল এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় চক্রের সদস্য দোলা আক্তার বলছিল এসব কথা।
গত মঙ্গলবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল দোলা ও তার পাঁচ সহযোগীকে মিরপুরের মধ্য পাইকপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দোলার আপন খালা সালমা বেগম ও চাচা আবু তালেবও রয়েছে। তালেব-সালমা বিবাহিত দম্পতি। ভাগ্নি দোলাকে দিয়ে তারা এই প্রেম-প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল।
গ্রেফতারকৃত ভয়ন্কর প্রেমিকা দোলা জানান, বিভিন্ন ব্যক্তিদের ফোন নাম্বার এনে দিতো তার চাচা আবু তালেব ও আজহার। তার কাজ ছিল শুধু ওইসব ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করা। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের নিজের ফ্ল্যাটে এনে দিলেই তার কাজ শেষ।
মধ্য পাইকপাড়ার ৩৬/২ নম্বর বাসার পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় আজহার। দুই বেডরুম ও ড্রয়িং-ডাইনিংয়ের ওই বাসায় তার খালা, চাচাসহ সে নিজেও মাঝে মধ্যে থাকতো। ওই বাসায় নেয়ার পরই বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি ও ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতো তারা।
দোলা জানান, একটি লোককে পটিয়ে বাসা পর্যন্ত আনতে তার সময় লাগতো সর্বোচ্চ ১৫ দিন।
এদিকে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এই চক্রটি এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রের পুরুষ ব্যক্তিরা প্রথমে বিত্তশালী লোকজনের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করতো। পরে ওই নাম্বারটি দেয়া হতো দোলকে। দোলা প্রেমের অভিনয় করে লোক পটিয়ে ওই ব্যক্তিকে নিজেদের ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতো।
ফ্ল্যাটে ঢোকার পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মাথায় আবু তালেব, আজহার, মোস্তফা ও শামিম শিকদার ওই ফ্ল্যাটে ঢুকে পরলো। তাদের হাতে থাকতো খেলনা পিস্তল, হ্যান্ডকাফ ও ওয়্যারলেস সেট। শামীম শিকদার নিজেকে ফটোসাংবাদিক ও অন্যরা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইল ও ভয়ভীতি দেখাতো। অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে দেয়া ও গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে বিপুল অর্থ আদায় করতো তারা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের ২৬ই আগস্ট এই চক্র লন্ডন প্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে এভাবে নিজেদের ফ্ল্যাটে নিয়ে ২৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে।
চলতি বছরের ২০শে ফেব্রুয়ারি সরকারি এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে একই কায়দায় ১৭ লাখ টাকা আদায় করে।
সর্বশেষ রংপুরের এক রাজনীতিক এই চক্রের প্রেম-প্রতারণার ফাঁদে পড়েন। তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলে তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ চক্রটি শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রহমত উল্লাহ চৌধুরী জানান, প্রেম-প্রতারণার ফাঁদে ফেলে চক্রটি বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এই ফাঁদে পা দেয়া ব্যক্তিরা সাধারণত সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপও নিতে চায় না। এই সুযোগই কাজে লাগিয়েছে তারা। এদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সুত্রঃ
- মানব জমিন
======================
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হাজারো সুন্দরী দোলা এই পেশায় জড়িত। তাদের কাজ হচ্ছে মোবাইলে প্রেমের অভিনয় করে সমাজের বিত্তশালী ও সম্মানিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া। দোলাদের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়। প্রতারিত হয়। প্রতারিতা কেউ লজ্বায় মুখ খুলতে চায় না। তাই আমাদের উচিত অপরিচিত নারী কন্ঠের সাথে বেশী কথা না বলা। তাদের ফাঁদে পা না দেয়া...
ভয়ন্কর প্রেমিকা থেকে সাবধান (প্রেমিকা সেজে বিত্তশালী বিভিন্ন লোকজনকে নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে এনে ব্ল্যাকমেইল এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ
সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি
পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।
ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?
কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।
এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন
একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!
ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন