কেউ যদি আহলে ছুন্নাত হয় তবে স্বভাবত প্রশ্ন আসে সে কেন আহলে ফরজ নয়? কেউ যদি আহলে হাদিস হয় তবে স্বভাবত প্রশ্ন আসে সে কেন আহলে কোরআন নয়? কেউ যদি শীয়ায়ে আলী হয় তবে স্বভাবত প্রশ্ন আসে সে কেন শীয়ায়ে মোহাম্মদ (সা.) নয়? কেউ যদি ইবাদী হয় তবে স্বভাবত প্রশ্ন আসে সে কেন মুসলমান নয়? আর এ প্রশ্ন যদি আল্লাহ করেন, তবে তাঁর মনপুত জবাব না দিয়ে পার পাওয়া যাবে কি? আর আল্লাহ এমন প্রশ্ন করেন, যেমন তিনি বলেছেন,‘ওয়া ইযাল মাউউদাতু সুয়িলাত, বি আইয়ি যামবিন কুতিলাত-যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?’-আল কোরআন, সূরা তাকভীর, ৮ ও ৯ নং আয়াত। আল্লাহ যদি বলেন আহলে ছুন্নাত, আহলে হাদিস, শীয়ায়ে আলী ও ইবাদী হতে তিনি বলেছেন কি? তখন উত্তর কি হবে?
আল্লাহ বলেছেন,‘ওয়াকালু কুনু হুদান আও নাসারা তাহতাদু,কুল বাল মিল্লাতা ইব্রাহীমা হানিফা,ওয়ামা কানা মিনাল মুশরিকিন- তারা বলে ইয়াহুদী বা খৃস্টান হও, হেদায়েত পাবে।বল বরং ইব্রহীমের হানিফি মিল্লাত এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না’- আল কোরআন,সূরা বাকারা, ১৩৫ নং আয়াত।তবে কি ইব্রাহীমের (আ.) হানিফি মিল্লাত না হয়ে লোকেরা এমন কিছু হয়েছে যা হতে আল্লাহ তাদেরকে বলেননি।
বানু কোরায়জার ইহুদীদের সাতশত পুরুষকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে হত্যাকরে তাদের স্ত্রী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদেরকে দাসদাসীতে পরিণত করা হয়েছে। বানু কোরায়জার বেঁচে থাকা সদস্যরা পরিবার হারিয়ে স্বজনদের শোক বুকে নিয়ে অবমাননাকর জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছে। আর ইহুদীদের চেয়ে সামান্য লঘু অপরাধে খ্রিস্টানদেরকে মদীনা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।এদের কেউ কেউ প্রতিশোধ পরায়ান হয়ে মুসলমান সেজে বানয়াট হাদিস প্রচার করে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ তৈরীতে কাজ করেছে কি? যাতে করে মুসলমানরা নিজেরা মারামারি করে শেষ হয়? নতুন কিছু গ্রহণ করে মুসলমানরা যেন এগিয়ে যেতে না পারে সেজন্য নতুন কিছু গ্রহণে বাধা সৃষ্টিকারী হাদিস কি কেউ তৈরী করেছে? হাদিসের নাম শুনলেই যাচাই বাছাই না করেই মুসলমান কেন উহা গ্রহণের জন্য পাগল হয়ে যেত? অথচ মহানবি (সা.) বলেছেন তাঁর নামে বানোয়াট হাদিস প্রচার করা হবে।
ইমাম আবু হানিফা (র.) একটু ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি হাদিসের নাম শুনলেই পাগল হতেন না।বরং তাঁর পর্যবেক্ষণে গ্রহণযোগ্য না হলে তিনি সে হাদিস গ্রহণ করতেন না।আর সে জন্যই দুই তৃতীয়াংশ মুসলিম তাঁকে তাদের ইমাম মানে।সম্ভবত আরবদের অনেকে তাঁকে শুধুমাত্র অনারব হওয়ার কারনে ইমাম মানে না। ঘটনা এমন হলে এরা হেদায়েত থেকে অনেক দূরেই থাকবে।কিন্তু যারা মুসলমানদের মাঝে বিভেদ তৈরীতে কাজ করেছে অতি হাদিস ভক্তকুল তাদের ফাঁদে আটকা পড়ে হানাফী থেকে আলাদা হয়েছে।অতি হাদিস ভক্তরা যে সব হাদিস মেনে হানাফী থেকে আলাদা হয়েছে সে সব হাদিস প্রথমত হাদিস নয়। আর হাদিস হলেও সে সব হাদিস মানসুখ।
একনিষ্ঠতার বিচারে হানাফীর চেয়ে এগিয়ে কেউ নেই।আল্লাহকি কোন লোককে প্রশ্নকরবেন যে সে হানাফী কেন? সম্ভবত তিনি এমন প্রশ্ন করবেন না। কারণ কোরআনের অনেক স্থানে তিনি হানাফী বা একনিষ্ঠ হতে নিজেই বলেছেন। আর তিনি যদি প্রশ্ন করেন কেন আবু হানিফার (র.) অনুসারি হয়েছ? আর কেউ যদি দেখাতে পারে যে আবু হানিফার (র.) মাঝে একনিষ্ঠতা রয়েছে, তবেতো সে ধরা খাবে না।
আবু হানিফা (র.) বলেছেন, সহিহ হাদিস তাঁর মাযহাব। কাজেই সহিহ হাদিসের বাইরে কোন হাদিস তিনি গ্রহন করেননি। তিনি যে হাদিস বাদ দিয়েছেন, তা’মূলত হাদিস নয় অথবা মানসুখ হাদিস। কাজেই তাঁর মাসয়ালার বিরুদ্ধে মানসুখ ছাড়া সহিহ হাদিস পাওয়া যাবে না। আর সহিহ মানসুখ হাদিস আমল যোগ্য নয়।
আল্লাহ খুঁটিনাটি প্রশ্ন করবেন। সে প্রশ্নের জবাব প্রদানের জন্য সবাইকে অবশ্যই তৈরী থাকতে হবে। আল্লাহ অবশ্যই জিজ্ঞাস করবেন দুই তৃতীয়াংশের বেশী মুসলমানদের দল হানাফিতে কারা এবং কেন শামিল হয়নি? তখন তাঁর মনপুত জবাব দিতে না পারলে বিপদতো ঘটবেই। তবে এ ক্ষেত্রে সে রক্ষাপাবে যাকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন। আর ফেল করে পাশ কোন উঁচু দরের পাশ নয়। উঁচু দরের পাশ হলো উঁচু গ্রেডে পাশ।
আল্লাহ সব মুসলমানকে একদল হতে বলেছেন। একদলের নাম আহলে ছুন্নাত, আহলে হাদিস, শীয়ায়ে আলী, ইবাদী সঠিক নয়। একদলের নাম ‘হানিফাম মুসলিমা’ সঠিক। কারন ‘হানিফাম মুসলিমা’ আল্লাহ প্রদত্ত নাম।একদলের নাম শুধু মুসলিম হলেও হবে। কারণ আমাদের জাতির পিতা আমাদের নাম মুসলিম রেখেছেন।আর আল্লাহ আমাদের নাম রেখেছেন ‘হানিফাম মুসলিমা’।
বানোয়াট ও মানসুখ হাদিস হতে আত্মরক্ষা করতে হাদিসকে কোরআন দিয়ে যাচাই করে দেখতে হবে।অমুক সহিহ বলেছেন, তমুক সহিহ বলেছেন বলেই হাদিস সহিহ হবেনা। কারণ সে অমুক ও তমুক ভুল কথাও বলতে পারেন। কারণ মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়।যে হাদিস সঠিক বা বেঠিক কিছুই প্রমাণিত হবেনা সে হাদিস মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হলে বাদ দিতে হবে। আর কল্যাণকর প্রমাণিত হলে আমল করতে হবে।
মুসলমানদের মাঝে অধিক গন্ডগোল হচ্ছে হাদিস নিয়ে। কাজেই দেখতে হবে ষড়যন্ত্রকারীদের বানানো হাদিস সহিহ তালিকায় যুক্ত হয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছে কি না?
আমি মুসলমানদেরকে মুসলমানদের সর্ব বৃহৎদল হানাফীতে একত্রিত হতে আহবান জানাই।কারণ একত্রিত হওয়া ফরজ।কেউ যদি অন্য কোন দলে একত্রিত হতে আহবান জানিয়ে থাকেন তবে তাঁকে সে দল সঠিক প্রমাণ করতে হবে। আহলে হাদিস নামের দিক থেকেই প্রশ্নবিঁদ্ধ। আর প্রশ্নহলো আহলে কোরআন কেন নয়? আহলে কোরআনও নামের দিক থেকে প্রশ্নবিঁদ্ধ। আর প্রশ্নহলো আহলে কোরআন ওয়াল হাদিস কেন নয়? শীয়ায়ে আলী নামের দিক থেকে প্রশ্নবিঁদ্ধ। আর প্রশ্নহলো শীয়ায়ে মোহাম্মদ (সা.) কেন নয়? আহমদী, ইবাদী ও হানাফী ক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো মুসলিম কেন নয়? এ ক্ষেত্রে ইবাদী ও আহমদী মুসলীমের সমার্থক না হলেও হানাফী মুসলিমের সমার্থক। আর ‘হানিফাম মুসলিমা’ আল্লাহ প্রদত্ত নাম। ‘ইবাদী-ইবাদতকারী’ যে কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।‘আহমদী-অধীক প্রসংশাকারী’ যে কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।কিন্তু ‘হানিফাম মুসলিমা’ মুসলিম হিসেবে সুনির্দিষ্ট। তা’ছাড়া এক্ষেত্রে কোরআনের বর্ণনা রয়েছে।‘মুসলিম-আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পনকারী’ আর হানাফী বলতেও শুধুমাত্র আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পন বুঝায়।সেজন্য হানাফী ও মুসলীম সমার্থক।
আপনি কেন হানাফী হবেন? এর উত্তর হানাফী বা একনিষ্ঠ হতে আল্লাহ বলেছেন। প্রমাণ সূরা বাকারা ১৩৫ নং আয়াত।এখন আবু হানিফার (র.) অনুসারি হলে হানাফী হওয়াগেলে আবু হানিফার অনুসারী হতে অসুবিধা কোথায়? আপনি কেন হানাফী ছাড়া অন্য কিছু হবেন না? কারণ অন্য কিছু হতে আল্লাহ বলেননি।আপনি হানাফী না হয়ে মুসলিম হবেন, যদি এমন হয় যে হানাফী না হয়ে মুসলিম হওয়া যায়না, কারণ একনিষ্ঠ হওয়া মুসলিম হওয়ার প্রধান শর্ত। তখন কি করবেন? যদি এমন হয় যে আবু হানিফার অনুসারি না হলে মুসলিম হওয়া যায়না। কারণ আবু হানিফার (র.) মধ্যে যদি মুসলিম হওয়ার যাবতিয় বিষয় থাকে তবে তো এর বাইরে গেলেই মুসলিম থেকেও বের হতে হবে।যদি বলে আবুহানিফা (র.) নয় রাসুলের (সা.) অনুসরন। কিন্তু আবু হানিফার (র.) অনুসরন ও রাসুলের (সা.) অনুসরন যদি বরাবর এক হয়, তাতেও আবু হানিফার (র.) অনুসরন থেকে বের হলে রাসুলের অনুসরন থেকে বের হতে হবে।তবে হ্যাঁ আবু হানিফার (র.) রাসুলের খেলাফ অনুসরন করা যাবে না। তবে সেটা রাসুলের খেলাফ অবশ্যই প্রমাণীত হতে হবে।
আমাদেরকে হানাফী হতে হবে। এতে আবু হানিফার (র.) অনুসরন যতটা সহায়ক তাঁর অনুসরন ততটা করতে হবে।যা সহায়ক নয় তা’বাদ দিতে হবে। হানাফী যাদের নাম তারা আবু হানিফার (র.) একশভাগ অনুসারী নয় বরং তাঁর ভুলগুলো বাদ দিয়ে তারা তাঁর অনুসারী।কাজেই কারো হানাফী হতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমাদেরকে কোরআন ও হাদিসের অনুসারি হানাফী হতে হবে। তবে কোনভাবেই হাদিস নয় হাদিস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে রাসুলের (সা.) অনুসরনের নামে এমন কিছুর অনুসরন করা যাবে না।
হানাফী আলেমদেরকে অনেক হাদিস গ্রহণকরানো যায়নি। কারণ সেসব আমলযোগ্য হাদিস ছিলনা।সেসব হাদিস ছিল বানোয়াট অথবা মানসুখ।
দুই তৃতীয়াংশের বেশী মুসলমান এমনিতেই হানাফী, কাজেই মুসলমানদের হানাফী হতে বলা দোষের কিছু হতেই পারে না। কেউ যদি বলে এটা দোষের। তবে সে বলুক হানাফিদের সমস্যাটা কোথায়? যদি সেটা বলতে না পারে তবে সে যেন আজারা প্যাঁচাল থেকে বিরত থাকে।
বিঃদ্রঃ বিশ্ব হানাফী জামাত নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন অচিরেই যাত্রা শুরু করবে- ইনশাআল্লাহ। এ সংগঠনের কাজ হবে মুসলমানদেরকে ভুল পথ থেকে সঠিক পথে ফিরানো। কেউ যদি বলে আমি ডাক্তার মানিনা আমি চিকিৎসা বিজ্ঞান মানি তো সে চিকিৎসা বিজ্ঞান দিয়ে তার চিকিৎসা করুক। এমনটা সে করবে কি? কেউ যদি বলে আমি ইমাম মানিনা, আমি কোরআন হাদিস মানি, তো সে তেমন মেনে জান্নাতের ঠিকানায় পৌঁছতে পারলে আমাদের সমস্যা কি? কিন্তু আমরা বলি আমরা কোরআন হাদিসের যা বুঝি না সেটা ইমাম কি বুঝেছেন সেটা আমরা দেখে ইমামের বুঝার সাথে আমাদের বুঝা মিলিয়ে সঠিক ভাবে কোরআন ও হাদিস বুঝার চেষ্টা করি। এটাকে কেউ দোষের কাজ বলে থাকলে তার পন্ডিতি কথায় কান দিতে আমরা রাজি নই। কারণ ইবলিশের এমন অনেক পন্ডিতি কথা সম্পর্কে আমরা অবগত।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৭:৩৪