দেশপ্রেমের চির অম্লান ঐতিহাসিক সুবচন জননী, জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী। ইতিবাচক চেতনার ধারক প্রতিটি মানুষই মাতৃভূমির প্রতি একধরনের আবেগপূর্ণ অনুরাগ বা ভালোবাসা লালন করে। দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ একটি জাতীয় অহংকার হিসেবে স্বীকৃত। জাতিগত, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অথবা ঐতিহাসিক পটভূমিকায় দেশভেদে দেশপ্রেমের ভিন্ন ভিন্ন রূপ পরিদৃষ্ট হলেও বিষয়টি মূলত এক ও অভিন্ন। সকল দেশপ্রেমিকই দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। আরবি প্রবচনে আছে, ‘আল্ হব্বুল ওয়াতান মিনাল ইমান,’ অর্থাৎ দেশপ্রেম হচ্ছে ইমানের অঙ্গ। যার অন্তরে দেশপ্রেম আছে ইসলামী আকিদায় সে মোমিন, পক্ষান্তরে অন্তরে দেশপ্রেমের দীপশিখা প্রজ্বলিত না থাকলে ধরে নিতে হবে তার ইমান পরিপূর্ণ নয়। রোমান কবি ভার্জিল বলেছেন, ‘সে-ই সবচেয়ে সুখী, যে নিজের দেশকে স্বর্গের মতো ভালোবাসে।’ আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ এর মতে, ‘দেশপ্রেম হচ্ছে আপনার দৃঢ় প্রত্যয় যে আপনার দেশটা অন্যান্য দেশের চেয়ে উৎকৃষ্টতর।’ গত শতাব্দীর ষাটের দশকের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এ প্রসঙ্গে একটি প্রণিধানযোগ্য কথা বলেছিলেন, ‘আপনার দেশ আপনার জন্য কী করতে পারে সে প্রশ্ন করবেন না, প্রশ্ন করুন আপনি দেশের জন্য কী করতে পারেন।’ এ ধরণের অসংখ্য উদ্ধৃতি ছড়িয়ে আছে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে বর্তমানে এ দেশে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা তাদের বক্তৃতা, বিবৃতিতে স্বঘোষিত দেশপ্রেমিক, দেশের জন্য মায়াকান্নায় চোখের জলে তাদের বুক ভেসে যায়। কিন্তু সার্বক্ষণিকভাবে নানা বৈধ-অবৈধ পথে লুটপাট করে দেশ থেকে যতটা সম্ভব আদায় করে নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। আবার কিছু লোকের জন্য দেশপ্রেম হচ্ছে দেশের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করার সদিচ্ছা পোষণ যতক্ষণ পর্যন্ত না বিষয়টি তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যক্তিগত সম্পদের কোন ক্ষেত্রে ক্ষতি না করে। তবে প্রকৃত দেশপ্রেমিককে হতে হয় নিঃস্বার্থ। দেশের সার্বিক কল্যাণের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থ অকাতরে বিসর্জন দেয়ার মানসিকতার অনুশীলন করতে হয়। তবে হ্যাঁ দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে Xenophobia অর্থাৎ বিদেশের প্রতি অহেতুক ভয় বা ঘৃণা পোষণ করা যাবে না। একই সঙ্গে Chauvinism তথা উৎকট স্বদেশপ্রেম এবং Jingoism তথা সংগ্রামপ্রিয় দেশপ্রেমের চর্চাও পরিহার করতে হবে। দেশে বর্তমানে মতাদর্শগত বিভেদের কারণে অসুস্থ রাজনীতি প্রসূত রাজনৈতিক সংঘাতের যে অশুভ অপতৎপরতা চালু রয়েছে সেটা নিরসনে আমরা সবাই জননী, জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী এই বীজমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেমিক হয়ে উঠব, এটাই সকলের প্রত্যাশা। তবে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে অতি-দেশপ্রেমের নেশায় বুঁদ হয়ে আমাদের কথা ও কাজে বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও জাতির প্রতি ঘৃণা বা তাচ্ছিল্য প্রকাশ না পায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৪