এ করুন কান্না আর অসহায় বক্তব্য গার্মেন্টস কর্মী শাহানার। গত ৪ মার্চ রাতে বাড্ডার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী থেকে কাজ শেষে বাড়ী ফেরার পথে কড়াইল বস্তির পাশে স্থানীয় চার যুবক তাকে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ৮ দিন ঢাকা মেডিকেলের ওসিসি’তে (ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) শাহানা ভর্তি ছিল। গত ১৩ মার্চ মেয়েটি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ‘ওসিসি’ এর নির্দেশনা অনুযায়ী বনানী থানায় মামলা করতে যায়। সেদিন ওসি থানায় নেই বলে বনানী থানা মামলা নেয়নি। মঙ্গলবার ১৪ মার্চ বনানী থানায় গেলে থানার ওসি অমানবিক আচরণ করে নির্যাতিত শাহানাকে থানা থেকে বের করে দেয়। বনানী থানার ওসি ফরমান আলী শাহানার মামলার অভিযোগনামা ছিড়ে ফেলে দেন। শাহানাকে ওসি বলেন, ‘এসব কাগজে কিছু হবেনা, মামলা নিয়ে আমরা বিপদে পড়বো নাকি। যতসব ফালতু অভিযোগ। স্বামীকে ছাড়া আমরা মামলা নেব না’। এরপর এ ব্যাপারে বুধবার শাহানা বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থায় গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘থানায় গিয়ে মামলা করবার চাইলাম, ওসি স্যার বলে, স্বামীকে লাগব। নির্যাতন যখন করছে তখনতো স্বামী ছিল না। তাইলে মামলার সময় স্বামীরে লাগব ক্যান? কোন মাইয়া কি সাইধা নিজের গায়ে অপবাদের কালি লাগায়’? শাহানার স্বামীকে ধর্ষকরা মৃত্যুর হুমকি দেওয়ায় স্বামীও আজ শাহানার পাশে নেই। ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। শাহানার বুক ভরা আর্ত্বনাদ আর হাহাকার, ‘ক্ষতি হইল আমার। আবার থানায় মামলাও নেয়না। আমি তাহলে যামু কই? মইরা কি প্রমাণ দিতে হইব আমারে, আমার ক্ষতি হইছে’। এ সমাজে ধর্ষিতা নারীদের সম্মান কোথাও নেই, স্বামী, সমাজ, পরিবার সবাই ধর্ষিতাদের পরিত্যাগ আর ঘৃণার চোখে দেখে। এ দূর্ভোগের শিকার সমাজের আমি, আপনি, আমাদের পরিবারের মা, বোন, সন্তান যে কেউ হতে পারে। নারী উন্নয়নের সাথে সাথে চারিদিকে পুলিশের উন্নয়নের খবর আমাদের নজর কাড়লেও পুলিশের এ অমানবিক আচরণের শিকারের দুঃখজনক ঘটনা যেন দৃষ্টি এড়িয়ে না যায় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ আর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মতো এসব ধর্ষিতা নির্যাতিতাদের পাশে দাঁড়ানো ও আইনি সহায়তার জন্য সরকারীভাবে ওয়ানস্টপ পুলিশ ও লিগ্যাল সার্ভিস গঠন করে অভিযুক্তদের দ্রুত আর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এতে সরকারের ও পুলিশের ভাবমূর্তিও বাড়বে। এ ধরণের অসহায় নারীরাও বিচারের জায়গা খুঁজে পাবে...............।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৮