বাংলাদেশ এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, যেখানে উগ্রপন্থা বা জঙ্গিবাদ নতুন করে একটি উদ্বেগ ও ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর গুলশানে জঙ্গি হামলা এ ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, ওই ঘটনার পর আমরা পুরো দেশে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার মনোভাব লক্ষ্য করেছি। এর ফলে গত এক বছরে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার ঘটনা আমরা দেখিনি। যদিও জঙ্গিবাদের হুমকি এখনো অনেকটাই ব্যাপক। জঙ্গিবাদকে সম্পূর্ণভাবে মোকাবিলা করতে গেলে তরুণ সমাজের মধ্যে সচেতনতা আনাটা সবচেয়ে জরুরি। কেননা, তারাই উগ্রবাদীদের লক্ষ্য থাকে। বর্তমানে আমাদের তরুণ সমাজের একাংশের মধ্যে দেশ নিয়ে, সমাজ নিয়ে, সমাজব্যবস্থা নিয়ে একধরনের হতাশা ও আশাহীনতা কাজ করছে—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এর পেছনে বেকারত্ব, ভাল সুযোগের অভাব, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরও চাকরি না পাওয়া, সঠিক কর্মসংস্থান না পাওয়ার হতাশা ইত্যাদি কারণ রয়েছে। ফলে তাদের মধ্যে হতাশার জন্ম নেয়। জঙ্গিরা এসব বিষয় কাজে লাগিয়ে কিছুসংখ্যক তরুণকে তাদের দিকে আকৃষ্ট করে। এ কারণেই কোন অবস্থাতেই যাতে তরুণদের মধ্যে হতাশা বা আশাহীনতা জন্ম না নেয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তরুণদের মধ্যে যে কর্মক্ষমতা, উদ্ভাবনী শক্তি ও নতুন চিন্তা রয়েছে, তা কীভাবে দেশের জন্য কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তাদের শিক্ষাজীবন শেষে যথোপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু একটি গোষ্ঠী বা কিছুসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তরুণেরা জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে না; সমাজের বিভিন্ন স্তর ও অংশ থেকেও কিছু মানুষ এ পথে যাচ্ছে। তাই আমাদের দেখতে হবে, কীভাবে ধর্মের অপব্যাখ্যা বা ভ্রান্ত আদর্শ তৈরি করে তরুণদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যে লড়াই তা আদর্শিক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান তৎপরতা এখানে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর পাশাপাশি কিছু কৌশলগত পরিকল্পনা নেওয়ারও প্রয়োজন আছে। জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে গেলে সামাজিক প্রতিরোধ ও সামাজিক সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রমের মধ্যে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধী বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার। এর সঠিক পাঠের মাধ্যমে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান/গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। জঙ্গিবাদীদের ভ্রান্ত আদর্শের বিরুদ্ধে সঠিক আদর্শ তুলে ধরতে হবে। এখন উগ্রবাদের বিস্তারে ইন্টারনেট একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। তাই জঙ্গিগোষ্ঠী যেভাবে ইন্টারনেটকে কাজে লাগাচ্ছে, একইভাবে তাদের আদর্শ প্রতিরোধেও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। অনলাইনেও সঠিক ও ইতিবাচক মূল্যবোধ তুলে ধরতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া সংবাদ প্রতিরোধ করা এবং তা নিয়ে প্রশ্ন করার সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সমাজকে জঙ্গিবাদের ক্যানসারমুক্ত করা আমাদের সমগ্র সমাজব্যবস্থার জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য জঙ্গিবাদকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা একান্ত দরকার। এর জন্য সরকারের পাশাপাশি সুশীল সমাজকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে, তাহলেই একটি সুখি সুন্দর দেশ গড়া সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:২১