-বিল তুই দে ।আমার ভাংতি নাই । ফুচকার খালি প্লেটটা মামার হাতে দিতে বলল নিকিতা ।
-অজুহ্যান্ড ছাড় মামী ।প্রতিদিন একই কথা ।
পার্স থেকে এক হাজার টাকার নোট বের করে শাওনের মুখের সামনে দোলায় নিকিতা ।অগ্যতা প্যান্টের পিছনের পকেটে হাত দিতে হয় শাওনকে । একশ টাকার একটা নোট মানিব্যাগ থেকে হালকা হয়ে গেল । প্রতিদিন ক্লাস শেষ হবার পর নিকিতাকে দু প্লেট ফুচকা খাওয়াতে গিয়ে নিজের বিড়ির বাজেটে টান পড়ে যায় তার । তারপরও সওয়া যায় ।কারন ভার্সিটির হার্টথ্রব আগুনটার সঙ্গে তাকে দেখে অনেকের হৃদয়ে যে দাবানল জ্বলে তা উপভোগ্য শাওনের কাছে ।
-পৌছেঁ দিতে হবে বাসায়?
-ধইন্যাপাতা আপনাকে । মুখ ভেঙিয়ে বলে নিকিতা ।অতঃপর রিকশায় পাশাপাশি দুজন । নিকিতার উরুর উষ্ন সান্নিধ্য তার হার্টবিটের বেড়ে যাওয়া লাব-ডাব শব্দ যে আটগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে সেটা কি নিকিতা শুনছে?
-কি শ্যাম্পু দিছিস রে? বাতাসে উড়ে আসা সফট চুল গুলো নাকে মুখে জড়িয়ে যায় শাওনের ।
-গার্নিয়ের । অরিজিনাল ।
-ফেইক না অরিজিনাল জিগাইসিলাম?খালি আলগা পার্ট । খোচাঁটা মেরেই দেয় শাওন । রেগে জোড়ে জোড়ে তার জিনসের প্যান্টের উপর চিমটি কাটে নিকিতা ।
-জরুরি একটা কথা বলার ছিল তোকে । রিকশা থেকে নামতে নামতে বলে নিকিতা ।
-ডা,মাদমোয়াজেল ।
-SMS করে জানাব ।
-ওকে ।
নিকিতাকে রেখে রিকশাটা বেশিদূর যায়নি ।শাওনের ফোনে টুংটাং টোনে মেসেজ এল ।
"kal sakale saboj panjabe pore asbe cls a.bye" মুচকি হাসল শাওন নিকিতা টাকলির মেসেজ পড়ে ।সুন্দরীদের টাকলা রোগ থাকা বিচিত্র কিছু নয় । কি কারনে পাঞ্জাবি পড়তে বলল কে জানে! ওর তো পাঞ্জাবি পড়ার অভ্যাস নেই ।যাক গে!রুমমেট শিবির শিহাব থেকে ধার নিলেই হবে । পরদিন ক্যাম্পাসে সবুজ পাঞ্জাবি পরিহিত শাওনকে দেখা গেল ক্যাফেটেরিয়া টু ক্লাস চিন্তিত ভঙ্গিতে মার্চ করতে । লাল সেলোয়ার কামিজের সাথে ম্যাচিং ওড়না প্যাচিয়ে নিকিতা এল আগুনের বহ্নিশিখার মত । পেছনে হাত লুকিয়ে শাওনের সামনে এসে দাড়াঁয় সে ।
-কথাটা অনেকদিন বুকে চেপে রেখেছি ।আর পারছি না ।
-ক্ক ..ক্ব ..ক্কি? ক্কি?
-ওমা!মুরগীর মত কক কক করছো কেন?
-ক্ক ..ক্কই? নাতো!
শাওনের তখন দিল মে বাজে গিটার । তবে কি?... তবে কি?
-আই লভ ইউ ।
পেছন থেকে মুঠি ভরা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলে নিকিতা । লাজে লাল রাঙা গালে চেয়ে আছে নিজের পায়ের বুড়ো আঙুলের দিকে । শাওন মনে হয় ঘোরে চলে গেছে ।ধুমের আলীর মত সেও নিকিতাকে নিয়ে ফ্যামিলি প্ল্যানিং ভেবে ফেলেছে ।দুটো ছেলে ,দুটো মেয়ে ।হ্যাপি ফ্যামিলি,এক্সপোর্ট ফ্যামিলি ।
-তুই ...থুক্কু! তুমি এতদিন সময় নিলে কেন?আমিতো কবে থেকে তোমাকে...
-এপ্রিল ফুল!হি হি হি হি!
অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে ছলনাময়ী ললনা ।সাথে হাসির তুবড়ি ছোটায় স্তম্ভিত করিডরে দাড়িঁয়ে থাকা স্টুডেন্টরা । অভিমানে গলায় মেঘ জমে শাওনের । ঢোক গিলেও নামানো যায়না সে মেঘ ।ওদিকে হেলেদুলে হেসে যাচ্ছে নিকিতা ।বন্ধুর অপদস্থ হওয়া সহ্য হলনা দাড়িঁয়ে থাকা শাওনের বন্ধু সৌরভের ।
-অই ছেমড়ি!খাড়া!
শাওনের বদনা হয়ে যাওয়া দেখে হেসে কুটি কুটি তখন লাস্যময়ী নিকিতা । সৌরভের ডাকে তব্দা ফিরে তার ।
-কিস্সে রে কুট্টি?
কুট্টি নিক শুনে মেজাজ বিলা হয় সৌরভের ।মাথা ঠান্ডা রেখে বলে সে
-হেরে ভুয়া কথা কইয়া এপ্রিল ফুল বানাইছস ঠিক ।মাগার হাতে কইরা এই ফুল কিল্লাইগা আনছস?হুম?
-ইয়ে... না মানে... এগুলো এপ্রিল ফ্লাওয়ার আরকি! আমতা আমতা করে বলে নিকিতা ।
-সোজাসুজি কইয়া দে ভালবাসস ।তগো মাঝে চক্কর চলে হগলে জানে । চোখ কঠিন করে সৌরভের দিকে তাকায় নিকিতা ।
-হ্যা !আমি শাওনকে ভালবাসি ।ও আমার জান । এতগুলা অবাক চোখের সামনে জড়িয়ে ধরে নিকিতা শাওনকে ।শাওনের দৃস্টি তখন হতভম্ভ । নিকিতা তখন আগুনঝরা চোখে তাকিয়ে আছে সৌরভের দিকে ।
- লও ঠেলা ।মাঝখান থেকে আমি ভিলেন ।ছেমড়িগো মাথায় যে গু থাকে আবার প্রমানিত । অনুচ্চারিত স্বরে বলে সৌরভ ।
-কি কইলি কুত্তা ? তেড়ে মারতে আসে তাকে নিকিতা । হেসে ওঠে সবাই ।সাথে শাওন ও ।পাখিরাও কি গেয়ে উঠল গান শাওনের খুশিতে?