somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের প্রাচীন নানা নাম

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে উল্লিখিত হয়েছে। বাংলার নাম হিসেবে আমরা পেয়েছি ১) গৌড় ২) বঙ্গ ৩) সমতট ৪) হরিকেল ৫) চন্দ্রদ্বীপ ৬) বঙ্গাল ৭) পৌণ্ড্র ৮) বরেন্দ্রী ৯) রাঢ় ১০) তাম্রলিপ্ত। কোন নাম কোন অঞ্চলকে বোঝাত সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া মুশকিল। সাধারণভাবে বিভিন্ন সূত্রের সমন্বয়ে একটি ধারণা করা যায়।
১) গৌড় – সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে বাংলার প্রথম বিশিষ্ট রাজা শশাঙ্ক গৌড়কে কেন্দ্র করে তার রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ ছিল মুর্শিদাবাদে – এরকমই মনে করেছেন ঐতিহাসিকরা। বর্তমান মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ ছিল গৌড়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চল। এই গৌড় থেকেই পরবর্তীকালে পাল ও সেন রাজারা তাদের রাজত্ব চালিয়েছিলেন। লক্ষণ সেনের সময়ে গৌড়ের নাম হয়েছিল লক্ষণাবতী। লক্ষণ সেনের পরাজয়ের পর বাংলায় মুসলিম শাসন শুরু হয়। নয়া শাসকেরাও নাম পরিবর্তন করে গৌড় থেকেই তাদের রাজত্ব চালিয়েছিলেন। ঢাকা থেকে মুর্শিদকুল্লি খাঁ মুর্শিদাবাদে প্রত্যাবর্তন করার পর আবার গৌড় বাংলার রাজধানী হয়ে ওঠে। ইংরেজরা কোলকাতা থেকে শাসন শুরু করার আগে অবধি এই গৌড়ই ছিল রাজনৈতিকভাবে বাংলার সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ অঞ্চল।
২) বঙ্গ – হুগলি নদীর পার্শ্ববর্তী পূর্বদিকের সমভূমি অঞ্চলই হলো বঙ্গ। যদিও তার সীমানা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চেহারা নিয়েছে। কালিদাসের রঘুবংশে (খ্রি. চার ও পাঁচ শতক) বঙ্গের অবস্থান সর্ম্পকে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। রঘুর বিজয়াভিযান বর্ণনার সময় উল্লেখ করা হয় যে, সুহ্মদের পরাজিত করার পর নৌ-বিদ্যায় (নৌসাধনোদ্ধতান্) বিশেষ পারদর্শী বঙ্গীয়দেরকেও তিনি পরাজিত করেন। তিনি গঙ্গার দুই মোহনার অন্তর্বর্তী (গঙ্গাস্রোতোন্তরেষু) বদ্বীপে বিজয়স্তম্ভ নির্মাণ করেন। এটি সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, গঙ্গার দুই প্রধান স্রোতোধারা ভাগীরথী ও পদ্মার মধ্যবর্তী ত্রিভুজাকৃতির ভূখন্ডটিই বঙ্গ। আর এরূপ জলমগ্ন প্লাবনভূমির অধিবাসীদের পক্ষে নৌবিদ্যায় দক্ষ হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন ক্ল্যাসিক্যাল লেখকগণ এই অঞ্চলকেই গঙ্গারিডাই বলে আখ্যা দিয়েছেন। ৩) সমতট –মেঘনা পূর্ববর্তী এলাকায় কুমিল্লা-নোয়াখালীর সমতল অঞ্চলে ছিল সমতটের অবস্থান। পূর্বদিকে সংলগ্ন ত্রিপুরার পাহাড়ি অঞ্চল (সমতটের অটবি-খন্ড বিভাগ)এবং দক্ষিণে মেঘনার মোহনায় দ্বীপাঞ্চলও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। মোটামুটিভাবে উত্তরে সিলেট সীমান্তের পর্বত ও হাওর থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এবং পূর্বদিকে ত্রিপুরা ও আরাকানের পাহাড়ি উঁচুভূমি থেকে পশ্চিমে মেঘনা (পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্রের সম্মিলিত স্রোতধারা) পর্যন্ত এর বিস্তৃতি।
৪) হরিকেল – প্রাচীন হরিকেল রাজ্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে, খুব সম্ভবত রামু, দিয়াঙ্গ অথবা চট্টগ্রামের নগরাঞ্চলে অবস্থিত ছিল।
৫) চন্দ্রদ্বীপ – বঙ্গের দক্ষিণ অংশ সুন্দরবন অঞ্চলের একাংশ চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। বাখরগঞ্জ জেলার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ব্যাপী চন্দ্রদ্বীপ জমিদারি বিস্তৃত ছিল।
৬) বঙ্গাল – বর্তমান বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বঙ্গাল নামে পরিচিত ছিল। বঙ্গের দক্ষিণ দিকের একটি অংশ হিসেবে বঙ্গালকে মনে করা হয়।
৭) পৌন্ড্র – উত্তরবঙ্গ প্রাচীনকালে পৌন্ড্র নামে পরিচিত ছিল। দক্ষিণে পদ্মা, পশ্চিমে গঙ্গা এবং পূর্বে হয় করতোয়া অথবা যমুনা দ্বারা পরিবেষ্টিত পুন্ড্র, পুন্ড্রবর্ধন বা পৌন্ড্রবর্ধন নামে আখ্যায়িত অঞ্চলটি বাংলাদেশের রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর (ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের অন্তর্গত) এবং প্রাচীন বরেন্দ্র নিয়ে গঠিত ছিল।
৮) বরেন্দ্রী – পৌন্ড্র এবং বরেন্দ্রীর আঞ্চলিক সীমানা মোটামুটিভাবে নিকটবর্তী। উত্তরবঙ্গের নির্দিষ্ট অঞ্চলকে পৌন্ড্র ও বরেন্দ্রী উভয় নামেই অভিহিত করা হয়েছে।
৯) রাঢ় – রাঢ় নিশ্চিতভাবে দক্ষিণ পশ্চিমবঙ্গকে বোঝাত। বরেন্দ্রভূমি বা পৌন্ড্রের দক্ষিণ অংশের নাম রাঢ়। উত্তর রাঢ় ও দক্ষিণ রাঢ় নাম দুটিও এই বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের দুটি অংশকে আলাদা করে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
১০) তাম্রলিপ্ত – মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত বন্দর ইতিহাস প্রসিদ্ধ এবং বন্দরকেন্দ্রিক উপকূল অঞ্চল তাম্রলিপ্ত এলাকা নামে পরিচিত ছিল।
মানচিত্র - Click This Link
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×