somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ফুটবলবেলা

০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাদা মাখা শৈশব
আমার ফুটবলের পায়ে খড়ি হয়েছিল গ্রামের আট-দশটা শিশুর মত। গ্রামের দুরন্ত শিশু-কিশোরদের কাদা মা্খানো গোলাকার বস্তু নিয়ে ছোটাছুটি দেখে ভীষণ ইচ্ছে করত সেইটায় একটু পা লাগাতে । একটা লাথি না মারতে পারলে জীবনটাই যেন বৃথা হয়ে যায়। একবার তীব্র উত্তেজনা আর আনন্দের কাছে হার মানল শহুরে পোশাকে দাড়িয়ে থাকা ইতস্ততঃ শৈশব। 'খেলবা?- অচেনা এক কিশোরের শরীরে কাদা মাখানোর সেই ডাক ছিল আসলে জীবন রাঙানোর ডাক। সত্যিই! এই দাগ থেকে দারুন কিছুই তো হয়েছিল। সেই চাকচিক্যহীন নোংরা বলের উপর কয়েকজন একসাথে ঝাপিয়ে পড়ার যে উত্তেজনা তার সাথে কি ব্রাজিল বেলজিয়াম অথবা ফ্রান্স আর্জেন্টিনা ম্যাচের তুলনা হয়?

বিশ্বকাপ
১৯৮৬ সাল। বাসায় তখনও টিভি আসেনি। ক্লাসের বন্ধুদের কাছে ম্যারাডোনার জাদুকরী পায়ের গল্প(এবং হাত!) শুনে নিজেকে বড়ই হতভাগা লাগতে লাগল। আমার বড়ভাইকে দেখতাম খেলা দেখতে বন্ধুর বাসায় চলে যেত। জার্মানীর সাথে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠল। যত রাতই হোক আমার খেলাটা দেখতেই হবে। ভাইয়ার কাছে আবদার জানিয়ে রাখলাম আমাকে তার সাথে নিতে। ভাইয়ার হাত ধরে মাঝরাতে গেলাম খেলা দেখতে। ঘরভর্তি দর্শক। তুমুল উত্তেজনা। রুগেরি,বুরুচাগা,রুমেনিগে,ম্যারাডোনা নামগুলো স্মতির মণিকোঠায় অটুট এখনও। ৮৬ তে বেশি ছোট ছিলাম। ফুটবল ক্রেজ বুঝলাম ৯০ তে এসে। রজার মিলা,গয়কোচিয়া আর বিশেষ করে ম্যারাডোনার ওরা আমাকে এত মারে কেন লেখা ভিউকার্ড। আছে ম্যারাডোনা,লোথার ম্যাথিউসের বা ব্রাজিল দলের ভিউকার্ড। সাদাকালো টিভিতে দেখা তাদের সেই অনন্য পাসিং ফুটবলেই জন্ম নিল কোন খেলার প্রতি আমার প্রথম প্রেম। আর ব্রাজিলের প্রেমে পড়া তো অবশ্যম্ভাবী ছিল যখন বিটিভিতে ৮২ বা ৮৬ র ব্রাজিলের।

এই ফুটবল প্রেমিক ছেলের জন্য আমার বাবা একবার একটা ৩ নম্বরী ফুটবল কিনে আনলেন যা কিনা একটু বেশি পাম্প দিলেই ডিমের মত হয়ে যেত।সমবয়সীরা ততদিনে যেখানে ৪ নম্বর ফুটবল দিয়ে খেলছে তখন একসাইজ ছোট ডিম্ব-ফুটবল লইয়া আমি কি করিব।আমার সেকি মন খারাপ। ওটা দিয়েই খেলতে শুরু করলাম। দিনে খেলতাম আর রাতে স্বপ্ন দেখতাম। বিশ্বকাপে সাব্বির,কায়সার হামিদ,আসলামদের সাথে নিয়ে পেলে ম্যারাডোনার মত ৪/৫ জনকে কাটিয়ে গোল দিয়ে দিচ্ছি। স্টেডিয়াম ভর্তি লাল সবুজের পতাকা! বিশ্বকাপটা পেয়েছিলাম কিনা তা অবশ্য মনে নেই।

৮ ইঞ্চি শীল্ড

রুয়েটের বিশাল মাঠটা ফুটবলের দখলেই থাকত বিশ্বকাপ এর সময়। সেখানে ছোট-বড় বা বুড়ো নির্বিশেষে ৪/৫ টা দলের খেলা চলত একসাথে। মাঝে মাঝে এ পাড়া বনাম ওপাড়ার মধ্যে খেলা চলত। কারো সাথে খেলা দেয়ার পূর্বশর্ত ছিল কমপক্ষে ৬ ইঞ্চির একটা শীল্ড। খেলার আগে কত ইঞ্চি বা কয়টা শীলের (তখন শাপলার ছাপ বসানো কালো 'শীল্ড' যাকে আমরা ছোটরা শীল বলতাম) খেলা হবে বা খেলায় ফাউল থাকবে কিনা ইত্যাদি বিষয় কনফার্ম করে রাখা হতো যেন পরে ঝামেলা না হয়। একেকটা ম্যাচের জন্য চাঁদা তুলে কিনতাম সবচেয়ে ছোট ৬ বা ৮ ইঞ্চি শীল্ড । কোন টীম আমাদের মত গরীব হলে আবার দাম ভাগাভাগি করে একটা শীল্ডেই খেলা হত। হলুদ , আকাশী জার্সি এখনকার মত এত সহজলভ্য ছিলনা বা সেগুলো কেনার সামর্থও আমাদের সামর্থ্যও আমাদের ছিল না। তখন বাড়ি বাড়ি লেইস ফিতাওয়ালা আসত। একবার এক এরকম ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কয়েক গজ হলুদ ফিতা কিনলাম। জার্সি নাইতো কি? গায়ে হলুদ জার্সির বদলে সবার মাথায় হলুদ ব্যান্ড । আমার অভিনব এই আইডিয়াতে সঙ্গিরা চমৎকৃত হয়ে গেল। পরে একজন বুদ্ধি দিল খেলার সময় যেহেতু পায়ের দিকে বেশি চোখ থাকবে তাই এই ফিতা হাফপ্যান্টের নীচে হাটুর কাছে বাঁধা ভাল হবে। দলের জন্য সেরা গোল দাতার জন্য আছে পিতলের/তামার মেডেল। সারা শরীর কাদায়-ধুলোয় ডুবিয়ে কখনও সেই 'শীল' হাতে আবার কখনও শুন্যহাতে বিফল মনোরথে বাড়ি ফিরতাম। শীলগুলো হারিয়ে গেছে। দু'একটা মেডেল এখনও আছে। কখনো কখনো মনে হয় এই শীল বা মেডেলই আমার বিশ্বকাপ, এ অর্জন ম্যারাডোনা,রোমারিও বা লোথার ম্যাথিয়াসের হাতের সেই বিশ্বজয়ের চেয়ে কোন অংশে কম না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৬
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×