somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: আম,আদমী আর বাঘের প্রথম গর্জন

১৭ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আম, আদমী আর ক্রিকেট!

রুয়েটের বিশাল মাঠের সবুজ ঘাসগুলোর পূর্বপুরুষেরা(!) সবাই চেনে আমাদের মানে আমাকে আর আমার ক্রিকেট খেলার সাথীদের। স্কুল আর কলেজ জীবনের কত সোনালি সময়ের সাক্ষি যে মাঠের সেই ঘাসগুলো,বাস্কেটবল গ্রাউন্ডটা, চারপাশের ইউক্যালিপ্টাস অথবা দেবদারু গাছের সারি আর বিশাল মাঠের মাঝে বুক চিতিয়ে দাড়িয়ে থাকা ৬ টা আমগাছ। আমের মুকুল আসার সময় আশপাশে খেলা নিষেধ ছিল তবে আম একটু বড় হয়ে গেলে সেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়ে যেত। যেন জাটকা আর ইলিশ ধরার মত ব্যাপার। স্কুলের মাঠেও খেলতাম। খেলা শুরু হলে আমাদের স্কুলের দারোয়ান চাচা আমগাছের দায়িত্ব আমাদের দিয়ে চলে যেতেন। খেলায় একটা সিক্রেট রুল ছিল, ব্যাটসম্যান বল মেরে আম ফেলতে পারলে ডাবল ছক্কা অর্থাৎ ১২ হবে তবে দারোয়ান চাচা দেখে ফেললে আউট। শুধু তাই না তখন বেচারা ব্যাটসম্যানকেই সরি বলে আমটাও দিয়ে আসতে হত। আমগুলা বড় হলে আবার স্কুলের সবাইকে ভাগ দেয়া হত। আমরা কখনও কয়েকটা বেশিও পেতাম। তখন ছেলেমেয়েদেরা ঈর্ষা দেখে স্যার বলতেন,ওরা সারাদিন ক্রিকেট খেলে গাছ পাহারা না দিলে তোরা কি এই আমও পেতিস!

বাঘের প্রথম গর্জন আর রঙ ছড়ানো দিন:
সাল ১৯৯৭। মালয়েশিয়ার কিলাত কিলাব মাঠে আইসিসি ট্রফি তে স্কটল্যান্ডকে হারানোর পর যখন চৌধুরি জাফরুল্লাহ শরাফত ঝাপিয়ে পড়লেন তার কথার ঝুড়ি নিয়ে "বাংলাদেশ বিশ্বকাপে চলে গেলওওওওওওওওওওওওওও....সাথে সাথে দেশের মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছিল অভূতপূর্ব এক আনন্দযজ্ঞে। ১৬ ডিসেম্বর '৭১ এর পর সম্ভবত এত আনন্দময় দিন বাঙালীর জীবনে আর আসেনি কখনো্। পাড়ার ছেলেরা সমগ্র জাতিকে রং মাখিয়ে রঙিন করার দায়িত্ব নিয়েছিল সেদিন । বাইরে আসা আবালবৃদ্ধবনিতা প্রায় সবারই রং মাখা অদ্ভূতুরে চেহারা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। আমাদের এক স্কুল শিক্ষিকার রাগী চেহারাটাও হাসিমুখে রঙিন হয়েছিল সেদিন। সাথে থাকা পিচ্চিটা বায়না ধরল, আম্মু, আমি অনেক রং লাগাবো। মায়ের মৌন সম্মতি পেয়ে পিচ্চিটাকে রঙের বালতিতে চুবিয়ে আনা হলো। সবার ভাব ছিল এমন যেন রং থেকে যদি ভাল কিছু হয়, হোকনা। ঘরে সার্ফ এক্সেল আছে কি নাই হু কেয়ারস!

"রং ছড়িয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা" শিরোনামে আমার সেদিনের সেই অভিজ্ঞতার গল্প ছাপা হয়েছিল একটা খেলার পত্রিকায়। সম্মানী হিসেবে ২০০ টাকা প্রাপ্তি লেখালেখি থেকে আমার প্রথম আয়। এর কদিন পর সৌদি আরব থেকে শুভেচ্ছা উপহারসহ এক প্রবাসী বাঙালীর অনেক আবেগ আর ভালবাসা মোড়ানো একটা চিঠি পেলাম। সেই লেখার জন্য আমাকে প্রশংসায় ভাসানো এবং পাশাপাশি ওই দিন দেশে থাকতে না পারার দুঃখে দীর্ঘশ্বাস মেশানো চিঠি। দেশের বাইরে বেশ কিছুদিন থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝি প্রিয়জন ফেলে রেখে যাওয়া এসব বাংলাদেশীরা তাদের বুকের মাঝে কি ভীষণ মমতা লালন করেন প্রিয় দেশের জন্য!

আমার এক চায়নীজ-আমেরিকান কলমবন্ধু ছিল। তাকেও চিঠিতে সেই রঙিন দিনের গল্প বললাম। চিঠি পড়ে তারও নাকি ভীষণ ইচ্ছা হয়েছিল রঙ মাখার আর বাংলাদেশে এসে এরকম একটা দিন দেখার। পরের চিঠির সাথে তাই একটু রং কিনে পাঠিয়ে দিলাম । গালে রং লাগানো মেয়েকে মা যখন জিজ্ঞেস করেছিলেন হোয়াট ইজ দিস ফর?...শী রিপ্লাইড.... দিস ইজ ফর বাংলাদেশ উইনস ওয়ার্লল্ড কাপ.... ;) ;)


আমি অপার হয়ে বসে আছি...ওহে দয়াময়....আসুক আবার ফিরে সেই রং ছড়ানো, রং মাখানোর দিন। সুদীর্ঘ দুঃসময়ে ক্লান্ত জাতির জন্য 'তিনটা' জয় নিদেনপক্ষে একটা-দু'টা জয় ভীষণ দরকার! ভীষণ!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×