ঢাকার সেরা স্কুলগুলোর মধ্যে মনিপুর হাই স্কুল একটি। ১৯৬৯ এ প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটির মূল ক্যাম্পাস ও দুটি শাখায় বর্তমানে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। শিক্ষার্থী সংখ্যায় সম্ভবত এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্কুল । ঢাকার মীরপুরের অন্যতম জনবহুল এলাকার এই স্কুলটিতে মূলত নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই পড়াশোনা করে।
স্কুলটি আজকের এই শীর্ষ পর্যায়ে আসার পিছনে সাবেক প্রধান শিক্ষক শেখ সবদার আলীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। মূলত তার যোগ্য নেতৃত্বে স্কুলটি দুই দশকের মধ্যে ঢাকার সেরা স্কুলের কাতারে চলে আসে। ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত আমরা বেড়ার ঘরে ক্লাস করেছি। এরপর ধীরে ধীরে সুবিশাল বহুতল ভবন তৈরি হয়। বর্তমানে এর কয়েকটি নিজস্ব বহুতল ভবন রয়েছে।
আমাদের সময় পর্যন্ত (এসএসসি ৯৫ ব্যাচ) স্কুলটি ছিল প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। সাবেক সচিব, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ অনেক উচ্চশিক্ষিত লোকজন ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য। পাঠদানের পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার প্রতিও সমান নজর দেয়া হত। যার ফলে স্কুলটি দিনে দিনে ঢাকার অন্যতম সেরা স্কুলে পরিণত হয়ে ওঠে।
৯৫ পর সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে স্কুলের পরিচালনায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অশুভ ছায়া পড়ে। বিশেষ করে এলাকার এক অশিক্ষিত ‘মোল্লা’ ও স্থানীয় সাংসদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের ফলে বিদ্যালয়ের পরিবেশ কলুষিত হয় এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে কোন্দল, মনমালিন্য ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ে। প্রধান শিক্ষক শেখ সবদারী আলী নিজেও এর মধ্যে জড়িয়ে পড়েন।
যার ফলে শিক্ষার মান কিছুটা নিম্নগামী হয়; ৯৮-২০০০ বছরে এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল আগের তুলনায় আশানুরূপ হয়নি।
এরপর আবারও সরকার পরিবর্তনে বিদ্যালয়টির পরিচালনায় পরিবর্তন আসে। শেখ সবদার আলীকে জোরপূর্বক সরিয়ে এক সিনিয়র শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এই পদে তিনি ছিলেন একেবারেই অযোগ্য। কিন্তু বিদ্যালয়ের সুনাম, অভিভাবকদের সচেতনতা, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সেরা শিক্ষার্থী ভর্তি এবং আগে থেকে চলে আসা চমৎকার একাডেমিক পরিকল্পনার কারণে স্কুলটি আবারও সেরাদের কাতারে চলে আসে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সাংসদ এবং সেই মোল্লার দৌরাত্ম্যে স্কুলের প্রশাসনিক পরিবেশ আরও খারাপ হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনাকাঙক্ষিত হস্তক্ষেপ, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ইত্যাদি অভিযোগ প্রায়ই দৈনিক পত্রিকায় আসে।
তবে এবারের অভিযোগটি আগের চেয়ে গুরুতর। আগেই বলেছি এই স্কুলটিতে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পড়াশোনা করে। আমরা পড়ার সময়ই জানতাম বিদ্যালয়ের ফান্ডে কোটি কোটি টাকা জমা আছে। বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকের বেতন আসে সরকারী কোষাগার থেকে। তারপরও প্রতিবছর ডোনেশনের মাধ্যমে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। গত বছর নতুন শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ফি ছিল ১০ হাজার টাকার মত। এবার নাকি সেটি একলাফে শ্রেণী ভেদে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে! এবং নতুন ভর্তির ক্ষেত্রে সেটা ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে, রাজধানীর স্কুলগুলোতে ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা রাখা যাবে।
যে বাবার মাসিক আয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা তার পক্ষে দুই সন্তানের ভর্তি বাবদ কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা যোগাড় করা কিভাবে সম্ভব? তার উপর রয়েছে নতুন বইপত্র, পোশাক ইত্যাদির খরচ।
শিক্ষার্থী প্রতি ২০ হাজার টাকা ভর্তি ফি হলে ১১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য সর্বমোট কত টাকা আদায় করা হচ্ছে ভাবলে অবাক লাগে!
এর প্রতিবাদে কয়েকদিন আগে অভিভাবকরা রাস্তায় নেমে আসেন।
এই জুলুমের শক্ত প্রতিবাদ করা উচিত। কার স্বার্থে এই জুলুম করা হচ্ছে সেটার পরিস্কার হওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
এই বিষয়ে আজকের দৈনিক যুগান্তরের লিড নিউজ
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৪৮