somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া-৩ (কালিমপং-লাভা ট্যুর, অক্টোবর, ২০১০)

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব-১

পর্ব-২

দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত কালিমপং বাসস্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ৮ টায় একটি মাত্র লোকাল বাস লাভা যায় যার নাম 'রেলী মুক্তি'। এই বাসের টিকেট পাওয়াটা একটু ভাগ্যের ব্যাপার। যাবার একদিন আগেই রিজার্ভ করে রাখতে হয়। এছাড়া জীপ রিজার্ভ করেও যাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে ১৫০০-২০০০ রুপি গুণতে হবে। যেদিন লাভা রওনা দিলাম, সেদিন সকাল ৬ টার দিকে গিয়ে সৌভাগ্যবশত: টিকেট পেয়ে গেলাম। সময় মতই বাস ছেড়ে দিল। রওনা দিলাম লাভার উদ্দেশ্যে।

লাভার রাস্তায় ছোট দু'টি কিউট বাবু

কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, বার বার আপনি কোথায় যেতে চান? উত্তর দিব: 'লাভা', যার তুলনা সে নিজেই। যাবার সময় পাহাড়ী আঁকা-বাঁকা রাস্তার বাম দিকে পাহাড়, আর ডান দিকে খাদ। যতই লাভার দিকে যাচ্ছি, ততই ঠাণ্ডা আস্তে আস্তে বাড়ছে। কারণটা হলো, লক্ষ করলাম ঠাণ্ডা মেঘ আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।

মেঘে ঢাকা অনিন্দ্য সুন্দরী লাভা

লাভার রূপ

লাভার পাহাড়ী রাস্তা

লাভার পাহাড়ী রাস্তা

সকাল ১০.৩০ এর দিকে লাভার ছোট মোটর স্ট্যাণ্ডে গিয়ে নামলাম। কালিমপং থেকেই প্রতি রাত ৭০০ রুপি দিয়ে হোটেল রুম বুক করে গিয়েছিলাম। কেননা, লাভা ছোট্ট একটি জায়গা যেখানে মোটামুটি ভালই ট্যুরিস্ট দেখলাম। অবশ্য বেশিরভাগ বাঙালী দাদারা যারা কলকাতা বা এর আশেপাশের জায়গা থেকে এসেছেন। এখানে একটি ছোট্ট ইনফরমেশন দিয়ে রাখছি: কালিমপং বা লাভাতে হোটেল ভাড়ার সাথে ১০% সার্ভিস চার্জ অতিরিক্ত দিতে হয়েছে আমাকে। আর যারা এর আগে এই এলাকাগুলোতে আসেননি, তাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখছি, যত বেশি মানুষ একসাথে ঘুরতে যাবেন, তত কম খরচ হবে। তবে মোটামুটি ভাল মানের হোটেলে থাকা এবং ভাল খাওয়াতে গড়ে প্রতিদিন আমার আনুমানিক ১০০০-১২০০ রুপি খরচ হয়েছে থাকা, খাওয়া এবং ঘোরা বাবদ (মার্কেটিং বাদে)। আরেকটি ব্যাপার, গোর্খা ল্যান্ড (দার্জিলিং, কালিমপং-এর ওসব এলাকায় নেপালী মানুষ-জন বেশি হলেও তারা বাংলা, ইংরেজি, হিন্দী এবং নেপালী - এই চারটি ভাষাতেই সমান পারদর্শী।

লাভার বৌদ্ধ মনেস্টারী

হোটেল রুমে চেক-ইন করে ক্ষুধার জ্বালায় যখন অস্থির, তখন নেপালী রুমবয় জানালো 'মম' ছাড়া আর কিছুই মিলবেনা। কেননা, এখানে নিয়ম হলো সকাল, দুপুর বা রাতে আপনি কি খাবেন, তা অগ্রিম জানাতে হবে। অগত্যা মম দিয়েই ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম পাহাড়ী পথের সৌন্দর্য দর্শনে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত লাভাকে যদি এককথায় প্রকাশ করতে হয়, তাহলে বলবো, সে এমন এক সুন্দরী রমণী যে ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ বদলায়। এই পুরো লাভা অন্ধকার হয়ে গেলো ছাই রঙা মেঘে, তো এই আবার সূর্যের আলোতে হেসে উঠলো। খুব কাছাকাছি রয়েছে বৌদ্ধদের একটি দর্শনীয় মনেস্টারী। এছাড়াও দেখার মতো জায়গা হলো নেওরা ভ্যালী ন্যশনাল পার্ক এবং 'ছঙ্গে ফল্স'। অবশ্য এ দুটি জায়গা দেখতে যেতে হলে জীপ ভাড়া করতে হবে মোটর স্ট্যাণ্ডের 'সিন্ডিকেট' থেকে যেখানে দর্শনীয় স্থান সমূহের গাড়ি ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। আপনি শুধু নির্ধারিত রুপি ওখানে দেবেন, দেখবেন, নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ীর ড্রাইভার নিজেই এসে আপনাকে খুঁজে নিচ্ছে হোটেল থেকে।

লাভাতে প্রথম দিনটা পাহাড়ী রাস্তাতেই হেঁটে কাটালাম। ক্যামেরা যেখানেই তাক করি, সেটাই মোহনীয় ছবি হয়ে যাচ্ছে। কাছাকাছি একটা স্কুল ছুটি হলো বিকালে। দেখলাম একঝাঁক 'কিউট' নেপালী শিশুরা দল বেধে হেঁটে যাচ্ছে নিজেদের বাড়ির দিকে। সন্ধ্যার দিকে ঠাণ্ডাটা আরও বেড়ে গেলো। পরের দিন 'রিশাপ' যাবার প্ল্যান করলাম যেখান থেকে 'কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ' সরাসরি দেখা যায় খুব কাছ থেকে। রিশাপ রিজার্ভ 'আপ-ডাউনের' জন্য ৬০০ রুপি দিতে হলো সিন্ডিকেটে। অবশ্য ট্র্যাকিং করেও যাওয়া যায় ওখানে। সেক্ষেত্রে গাইড জনপ্রতি ১৫০ রুপি করে নেয়। কিন্তু ট্র্যাকিং এর জন্যে ভোর ৪ টায় রওনা দেয়াটা বাঞ্ছনীয়, তা নাহলে সূর্য উঠে গেলে মেঘের স্তর উপরে উঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ ঢেকে দেয়।

কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ

পরদিন ভোর ৪.৩০ এ রওনা করলাম রিশাপ। পাহাড়ের দুর্গম রাস্তা দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে জীপ চালিয়ে নিয়ে ১ ঘন্টায় আমাকে রিশাপ পৌঁছে দিল ড্রাইভার বুদ্ধা। সূর্য ওঠার আগের কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ দেখলাম। তারপর ধীরে ধীরে সূর্য উঠলো। আমার সামনে এক অনিন্দ্যসুন্দর, অবর্ণনীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ দেখলাম, যেন কেউ সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছে তাকে। প্রায় সকাল ৭ টা পর্যন্ত ছিলাম রিশাপ-এ। তারপর আবার সেই দুর্গম পথ পেরিয়ে লাভা ফিরে এসে ব্রেকফাস্ট সেরেই 'লোলেগাঁও' এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। এবার সাথে রয়েছে আরেক নেপালী ড্রাইভার 'আসিপ্ত'। লোলেগাঁও যাবার রাস্তাটা একটু খারাপ। তবে পাহাড়ের সেই চিরাচরিত আঁকা-বাঁকা রাস্তার দু'পাশে ঘন বন দেখে সত্যিই আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখছি, লোলেগাঁও' যাওয়া-আসা বাবদ রিজার্ভ মারুতি অমনি মাইক্রোবাসের ভাড়া নিল ৮৫০ রুপি। লোলেগাঁও'-তে শুরুতেই দেখলাম ফরেস্ট বোটানিক্যাল গার্ডেন, যেখানে রয়েছে একটি ঝুলন্ত ব্রীজ। তারপর গেলাম ভিউ-পয়েন্টে। বিকেলে ফিরে এলাম আবার লাভাতে। অবশ্য লোলেগাঁও-তে কেউ থাকতে চাইলে সেখানেও হোটেল/রিসোর্ট পাওয়া যাবে।

লোলেগাঁও-এর ঝুলন্ত ব্রিজ

লোলেগাঁও যাবার সময় তোলা ছবি

লাভা থেকে শিলিগুড়ি শহর পর্যন্ত একটি মাত্র বাস সরাসরি প্রতিদিন সকাল ৭ টায় ছাড়ে। যেদিন শিলিগুড়ি আসবো, তার আগের দিন ৮০ রুপি (জনপ্রতি) দিয়ে টিকিট কেটে নিয়েছিলাম, কেননা, প্রচণ্ড ভীড় থাকে। অবশ্য যারা কালিমপং যেতে চান, তাদের জন্যে সকাল ৮ টায় আরেকটি বাস ছাড়ে। আর নিজের রিজার্ভ করা গাড়ীতে যেতে চাইলে অতিরিক্ত রুপি গুণতে হবে।

লাভা

ছোট বাবুরা

লাভার পাহাড়ী রাস্তা
লাভার পাহাড়ী রাস্তা

লাভা মোটর স্ট্যাণ্ড

মেঘে ঢাকা লাভা

আমার অভিজ্ঞতা বলে, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর হলো সুন্দর সময় কালিমপং, লাভা, লোলেগাঁও ঘোরার জন্য। এ কথাটা দার্জিলিঙ-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে ভবিষ্যতে সময় ও সুযোগ হলে আমি আবার যাব লাভা-তে। কারণ লাভা সুন্দরীর প্রেমে আসলেই আমি আত্মহারা হয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×