somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইস ব্রেকিং এবং নলেজ শেয়ারিং

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সময়টা ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস। কানাডা'র এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। বাংলাদেশে থাকতে পড়াশুনার পাট চুকিয়েছিলাম। কানাডায় এসে অনেকদিন পর আবার আমি ছাত্র। বৃদ্ধ বয়সেও পড়াশুনা করতে হচ্ছে এটা ভাবতেই বুকে কেমন যেন মোচড় দিল। তবে ভালো লাগছিল ভেবে যে, এখানকার এডুকেশন সিস্টেম সম্পর্কে জানতে পারবো এবং হয়তোবা আমার মতো বন্ধু পাগল মানুষের অনেকগুলো বন্ধু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন। ক্লাস শুরু হলো সকাল ১০ টায়। বিশাল এক হল রুমের ভেতরে আমি সহ আরও বেশ অনেকগুলো মানুষ। বুঝলাম, এরা সবাই ছাত্রছাত্রী। অসহায়ের মতো ঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছি আমি। কাউকেইতো এখানে চিনিনা। ভাবলাম, সামনে না এগিয়ে গিয়ে বরং পেছনের এই কোণাটাতেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দেখি কে কি করছে।

এদিক ওদিক দেখছি। হঠাৎ দেখি জনৈক ভদ্রমহিলা আমার দিকে হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। হাত বাড়িয়ে করমর্দন করে আমাকে বললেন, "তোমার নাম?" আমি আমার নামটা বলতেই তিনি বললেন, তিনি তাঁর নাম বললেন আর বললেন যে তিনি আমাদের বায়োস্ট্যাটিসটিকস বিষয়ের কোর্স কো-অর্ডিনেটর, অর্থাৎ আমাদের পড়াবেন তিনি।

এরপর একে একে সবার সাথেই তিনি পরিচিত হলেন এবং সবশেষে মাইক হাতে নিয়ে বললেন, "প্রিয় বন্ধুরা, আজকে আমাদের ক্লাসের প্রথমদিন। আমরা আজকে পড়াশুনা করবোনা। আমরা আজকে একটা খেলা খেলবো। তোমরা সবাই একটি বড় বৃত্তাকারে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়োতো!

সবাই তাঁর কথা শুনে বৃত্তাকারে গোল হয়ে দাঁড়ালাম। আমার বামদিকে এক মেয়ে আর ডান দিকে এক ছেলে। এরপর আবার ভদ্রমহিলার কথা শুরু হলো। "এবার বন্ধুরা তোমাদের সামনে একটি করে বড় পোস্টার সাইজ কাগজ রাখা আছে। আর আছে কিছু রং পেনসিল। তোমরা তোমাদের ডান দিকের যে মানুষটি আছে তার বাম হাতটির কনুইতো ধরো এবং তোমার হাত আর তার হাত একত্রিত করে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে দুইজন মিলে সামনের পোস্টারটিতে একটি ছবি আঁকো। দুইজন শুধুমাত্র একটি রং পেন্সিল এক বারে ব্যবহার করতে পারবে। অর্থাৎ দুইজনের দুই হাতে একটি মাত্র রং পেন্সিল থাকবে। কোন অবস্থাতেই হাত ছাড়া যাবেনা। যাদের ছবিটি ভালো হবে, তাদের জন্যে অনেক চকোলেট পুরষ্কার হিসেবে থাকছে। আর সময় কিন্তু দশ মিনিট সর্বোচ্চ!"

ভদ্রমহিলার কথা শেষ হবার সাথে সাথে হল ঘরটিতে একটা গুঞ্জন উঠলো। হঠাৎ চমকে গিয়ে দেখি আমার বামদিকের মেয়েটি আমার তার ডান হাতটি দিয়ে আমার বামহাতকে পেঁচিয়ে ধরেছে। আমি একটু কোঁ কোঁ শব্দ করলাম। মেয়েটি মিষ্টি হেসে আমাকে বললো, "এরকম ভালুকের মতো শব্দ না করে তাড়াতাড়ি হাত চালাও। চকোলেটগুলো কোন অবস্থাতেই হাতছাড়া করা যাবেনা!"

ওর কথামতো হাঁটু গেড়ে বসে প্রাণান্তকর চেষ্টা শুরু করলাম ছবি আঁকার। কিন্তু কাজটা একেবারেই সহজ না। ও একদিকে যায় তো আমি আরেকদিকে। আমি আঁকতে চাই কাক পাখি (কারণ ছোট বেলায় এই একটা ছবি আঁকাই আমি শিখেছিলাম)। আর সে যে কি আঁকতে চায়, সে-ই ভালো জানে। এরকম হযবরল একটা অবস্থা যখন চলছিল, তখন সেই মেয়ে হঠাৎ আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, "শোন, আগে আমরা ঠিক করি কি আঁকতে চাই।" কয়েক সেকেণ্ড চিন্তা করে দুইজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম কি আঁকবো। এবং তারপর শুরু হলো আমাদের ছবি আঁকার প্রাণান্তকর চেষ্টা।

অবশেষে দশ মিনিটের মধ্যেই শেষ করলাম ছবির কাজ। আমি বললাম, "জঘন্য হয়েছে।" সেই মেয়েটা বললো, "মোটেই না, বরং আমরা খুব ভালো ছবি এঁকেছি। দেখে নিও আমরা পুরষ্কারটা পেতেও পারি।"

টিচার সবার ছবিগুলো নিয়ে নিলেন। তারপর দশ মিনিট পর ঘোষণা করলেন কোন ছবিটি সেরা হয়েছে। তিনি যখন ছবিটি দেখাচ্ছেন সবাইকে, আমার কেন যেন মনে হলো, আরে, এই ছবিটা না একটু আগেই আমি আর সেই মেয়েটি আঁকলাম?

কনুই দিয়ে পেটে একটা গুঁতা অনুভব করলাম। সেই মেয়ে আমাকে বললো, "দেখেছো? আগেই বলেছিলাম, আমাদের ছবিটাই সেরা হবে! চলো তাড়াতাড়ি চকোলেট গুলো নেই গিয়ে!" অনেকটা আমাকে টেনে ধরে নিয়েই সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মেয়েটা আমাকে নিয়ে। এরপর কড়তালির আওয়াজ। পুরষ্কার হাতে নিয়েই সে সমান দুই ভাগে ভাগ করে ফেললো। এক ভাগ আমাকে দিয়ে হাত বাড়িয়ে বললো, আমার নাম ফিওনা, ফিওনা ব্রুস। আর তুমি? আমি আমার নামটা বললাম। "আইস ব্রেক" হলো আমাদের দু'জনের মাঝে।

এর পর ক্লাসের অনেকের সাথেই অনেকভাবে ধীরে ধীরে "আইস ব্রেক" হলো। বন্ধুর সংখ্যা বাড়তে থাকলো আমার। এবং মজার বিষয় হলো এই ভালো বন্ধুগুলোই আমার শেয়ারিং এর অন্যতম মাধ্যম হলো। বায়োস্ট্যাটিসটিকস এর প্রোব্যাবিলিটির অংক পারিনা? কেভিন আছে হেল্প করার জন্যে। এপিডেমিওলজির কোন টু বাই টু টেবিল বুঝতে সমস্যা? ক্রিস্টিনার কাছে চলে যাও। কিংবা এসপিএসএস বা স্ট্যাটা সফটওয়্যার বুঝতে প্রবলেম? কোন চিন্তা নাই, মার্থা ওটাতে বিগ শট। শুধু শিখে নাও সময় মতো।

বন্ধুরা, আমরা কি এখন থেকে তাহলে দু'টি কাজকে অগ্রাধিকার দিতে পারি? আমরা কি নিজেদের ভেতরে আইসগুলো কে টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারি? আর আমরা যে কাজটি নিজে ভালো পারি, সেটি কি অন্যকেও শিখতে এবং শেখাতে উৎসাহ দিতে পারি?

সবাইকে শুভেচ্ছা।

Website Address: http://www.immigrationandsettlement.org/
Facebook: Click This Link
ইমেইল: [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:২২
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×