"হ্যালো বেবি, ঘুমাচ্ছো?"
রোদেলার ফোনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
চোখে ঘুম নিয়ে আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বললাম, "সারারাত অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করে চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছিলাম বেবি। কিন্তু অ্যাসাইনমেন্টের কাজ এখনও শেষ করতে পারিনি।"
"হয়ে যাবে। টেনশন নিওনা।" এই দু'টো লাইন বলে রোদেলা বেগম যেন আকাশে কবুতর উড়িয়ে দেয়ার মতো করে আমার সব টেনশন উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করলো।
"শোন, ভালো কথা। তোমাকে জানানো হয়নি। গতকাল রাতে তোমার ক্রেডিট কার্ডটা ইউজ করে অনলাইনে মাইকেল কোরস এর ব্যাগটা না কিনেই ফেললাম।" রোদেলার কথায় এবার সত্যিই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
"ব্যাগ?" আমি একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলাম।
"আরে, হ্যাাঁ রে বাবা। ওই যে, কয়েকদিন আগে তুমি বললেনা যে, অনেক সুন্দর ব্যাগটা? আমাকে অনেক মানাবে? আর তুমি পরে কিনে দিতে চাইলেনা?
ওইটা সেল এই ছিল। কাল রাতেই সেল শেষ হয়ে যেত। আর তাছাড়া আমার বার্থডেতে ওটা কিনে দিলে তুমি নিজেও হ্যাপি হতে অনেক, তাইনা? বেশি না, ট্যাক্সসহ মাত্র সাড়ে তিনশ' ডলার পড়েছে।"
"কি হলো, চুপ করে আছো কেন?" রোদেলার আওয়াজে সম্বিত ফিরে পেলাম। মাথার মধ্যে যে চিন্তাটা প্রথম এলো, আমাকে নিজেকে বিক্রি করলে কি এই মুহূর্তে সাড়ে তিনশ' ডলার পাবো?
হাসি হাসি মুখ করে রোদেলা বেগমকে বললাম, "ইয়ে মানে, খুব ভালো করেছ। আচ্ছা বেবি, একটা রিকোয়েস্ট। তুমি আমার অ্যাসাইনমেন্টের বাকী কাজগুলো প্লিজ একটু শেষ করে দেবে?"
"আই উইশ আই কুড"। কিন্তু তুমিতো জানোই, ইউনিভার্সিটির একজনের অ্যাসাইনমেন্টের কাজ আর একজন করে দিলে সেটা ক্রাইমের পর্যায়ে পড়ে? আর আমি তোমার মতো ভালো স্টুডেন্ট হলে ভালো কিছু করে দিতে পারতাম হয়তো। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা, এই অ্যাসাইনমেন্টে তোমার নিজের স্কিলটাও তো বাড়ছে, তাইনা?"
মাঝে মাঝে মন মেজাজ ভয়ঙ্কর খারাপ হলেও মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। মাথা ঠাণ্ডা রাখার জন্যে আমি আমার ব্রেইনের হার্ডডিস্ক থেকে খুব সুন্দর কোন স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করি। এই মুহূর্তে প্রাণপণ সেই চেষ্টা করতে শুরু করলাম।
"আচ্ছা, তাহলে তুমি কাজ করো, আমি রাখছি।" ফোনটা বিছানায় স্পিকারে রাখা ছিল। সেখান থেকে রোদেলার আওয়াজ ভেসে এলো।
"রাখার আগে তাড়াতাড়ি বলে দাও, আমি তোমার কি হই?" রোদেলা'র এই আহ্বালাদি আমার অজানা নয়।
"উমমম.... তুমি আমার জান পাখি হও।"
"আর?"
"আমার বেইবি হও।"
"আর?"
"আমার হার্টের লেফট চেম্বার হও।"
"আর?"
"মাদ্রাসার ছাত্র হও।"
"মাদ্রাসার ছাত্র? ইয়াক! এইটা আবার কি? রোদেলা ছ্যা ছ্যা করে উঠলো।
তাহলে তোমাকে একটা গল্প বলি। এক মাদ্রাসার হুজুর তার ছাত্রকে বললেন, "ওই ডাব গাছে উঠে আমার জন্যে একটা ডাব পেড়ে নিয়ে আয়।" ছাত্র বললো, "হুজুর, নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক। এত বড় বেয়াদবি আমি করতে পারবোনা। আমি গাছে উঠলে আমার পা আপনার মাথার উপরে থাকবে। এত বড় অপরাধ আমাকে দিয়ে করাবেননা হুজুর।
কি আর করা। হুজুর নিজেই গাছে উঠে ডাব পাড়লেন। তারপর ডাব ছিলে পানি খেতে যাবেন এই সময় ছাত্র দৌড়ে এসে হুজুরের হাত থেকে ডাব কেড়ে নিয়ে ডাবের পুরো পানি খেয়ে শেষ করে দিল।
ছাত্রের এহেন আচরন দেখে হুজুর অবাক হয়ে গেলেন।
ছাত্র বললো, "হুজুর, এর আগে ডাব গাছে উঠে বেয়াদবি করি নাই। আর এইবার আপনি নিজ হাতে কষ্ট করে ডাব কাটলেন, সেই ডাব না খেয়ে আমি কিভাবে বেয়াদবি করি?"
ফোনের ওইপাশ থেকে নিরবতা। বুঝলাম, আমার হুজুর জোকস রোদেলা বেগমের মনে ধরে নাই। তাই তিনি ফোন রেখে দিয়েছেন। যাক বাবা, আগামী কয়েকদিন পেইন নিতে হবেনা কোন।
কম্বল মুড়ি দিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। গুল্লি মারি অ্যাসাইনমেন্ট আর গার্লফ্রেন্ড। ঘুমের উপ্রে কিছু আছে নাকি?
https://www.facebook.com/mahee.chowdhury.75
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ১:৩২