somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখাটি ১৮+, অপ্রাপ্তবয়স্কদের পড়া নিষেধ

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিস তাহসিনা তাসনিম খান কাজ করেন নাম করা এক ব্যাংকে। 'মিস' বলছি, কারণ কিছুদিন আগে তিনি 'মিসেস' ছিলেন। সেখান থেকে আবার মিস হয়ে গিয়েছেন। থাকেন লালমাটিয়া। অফিস মতিঝিলে। 'উচ্চমধ্যবিত্ত' বললে তাকে ভুল বলা হবেনা।

তাহসিনার আই.কিউ লেভেল বাংলাদেশের আর দশটা মানুষের থেকে গড়পড়তায় একটু বেশিই হবে। এই কথাটার অর্থ হলো, তিনি স্মার্ট। এই ত্রিশ বছরের জীবনে সাত ঘাটের জল খেয়ে এতদূর এসেছেন। ঢাকা শহরে টিকে থাকতে হলে কিভাবে মানুষ চড়িয়ে খেতে হয় সেটা না জানলে চলে? চেহারা তার অ্যাভারেজ। যদিও শরীরচর্চাটা তাহসিনা নিয়মিতই করেন। এ কারণেই হয়তো তার মনে মডেলিং করার অদম্য বাসনাটাকে কোনভাবেই দমিয়ে রাখতে পারেননা। নিয়মিতই ফেসবুকে মডেলিংয়ের ছবি পোস্ট করেন। বন্ধুবান্ধবের প্রশংসা পেতে কার না ভালো লাগে? আর শরীরের বাঁকগুলো যখন হায়েনার দল দেখে, তাহসিনার শরীরে যেন শিহরণ বয়ে যায়।

ব্যাংকের এই কাজটা তাহসিনা ম্যানেজ করেছিলেন এই ব্যাংকেরই এক সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্টকে ধরে। 'ধরাধরি' শুনতে খারাপ লাগে। তারপরেও এই যুগে রেফারেন্স আর খুঁটির জোর না থাকলে কপালে চাকুরী জোটার সম্ভাবনা নিতান্তই কম। সম্পর্কের কারণেই হোক কিংবা 'আণ্ডার দ্য টেবিল' ক্রিয়াকলাপের জন্যেই হোক, তাহসিনার চাকুরীটা হয়েছিল। চাকুরী হওয়াটাই বড় কথা। কিভাবে হলো, সেটা কে দেখতে এসেছে?

প্রতিদিন লালমাটিয়া থেকে মতিঝিল আসাটা আসলেই একটা ঝক্কির ব্যাপার। তারপরেও তাহসিনা আসেন। প্রতিদিনই লেট হয়। লেটের খাতায় লাল দাগ পড়ে। সাড়ে তিন বছরের এই চাকুরীতে লেট করতে করতে এখন এটাই যেন তার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মাঝে ভাবেন, "ধুর, শালা। চাকুরীর পশ্চাতদেশে লাথি মারি।" পরক্ষণেই ভাবেন, "এই পোস্টে পাঁচ বছরের বণ্ড সাইন করতে হয়েছে। কেবল সাড়ে তিনবছর হয়েছে। এখন এভাবেতো ছাড়া যাবেনা। কাজেই নিয়মিত লেট করে আসি, সমস্যা কই?" হিউম্যান রিসোর্সের কুকুরগুলো চিৎকার করে। করুক না। সমস্যা নেই। কারণ তাহসিনার বড় স্যার টু হান্ড্রেড পার্সেন্ট একটা 'ভেড়া'। মেয়ে মানুষ দেখলে বড় স্যারের মাথা ঠিক থাকেনা। এই ভেড়াটাকে 'ম্যানেজ' করে চলতে পারলে দুনিয়া ঠিক। পৃথিবী উল্টে গেলেও এইখানে চাকুরী যাবেনা কোনদিন। হিউম্যান রিসোর্স থেকে শুধু দুই একটা শো'কজ লেটার মাঝে মাঝে খাওয়াটা ব্যাপার না। খুব বেশি কি-ই বা আর হবে?

বড় স্যার মানে আকবর আলী স্যারের গোরিলা মার্কা চেহারাটা চিন্তা করে তাহসিনা ফিক করে হেসে দিলেন। "ভেড়া"। হা: হা:। আলুর দোষ কমবেশি সব পুরুষেরই আছে। বড় স্যারের একটু বেশি-ই। "আচ্ছা, বড় স্যারকে কি ভেড়া বলা ঠিক হলো? নাকি তাকে 'হিজড়া' বলাটা বেশি যৌক্তিক?" এটা ভাবতে ভাবতে ঘুম জড়ানো চোখে আজকে সকালেও তাহসিনা ঘড়ি ধরে পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেটে অফিসে ঢুকলেন।

নাহ! ডেস্কে যাবেননা। পাশের ডেস্কে যে মেয়েটা কাজ করে, সেইতো কাজ সামলাচ্ছে গত সাড়ে তিন বছর ধরে। আজকেও একটু সামলাক। হাজিরা খাতায় সাইন করে আগে পেট পূজো দিতে হবে। রফিককে ডাল পরোটা আনতে বলে দিয়ে ভাবলেন, "ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হই আগে।"

নাস্তা শেষে আস্তে ধীরে ডেস্কে এলেন তাহসিনা। পাশের ডেস্কে তাকিয়ে দেখেন কলিগ মেয়েটা হিমশিম খাচ্ছে। একটু খাক। লালমাটিয়া থেকে মতিঝিল অফিসে এসেছি, এই-তো অনেক। তারওপরে আজকে নিজের কতোগুলো কাজ জমেছে। আর এক মাস পরেই ঈদ আসছে। লাঞ্চের পর সাথে করে আনা বুটিকের নতুন কাপড়গুলো ব্রাঞ্চের ফিমেল কলিগদেরকে দেখাতে হবে। আশা করা যায় সবগুলোই সেল হয়ে যাবে। ঈদের আগে এটা একটা ভালো এক্সট্রা ইনকাম। আলাদা কোন কষ্ট নাই। দোকান দিতে হচ্ছেনা। কাজ ফাঁকি দিয়ে অফিসের ভেতরেই কাপড় সেল করার ব্যবস্থাটা মন্দ না।

এসব ভাবতে ভাবতেই পাশের ডেস্কের মেয়েটাকে গুডমর্নিং জানিয়ে টুকটাক কাজ শুরু করলেন। প্রতিদিনের মতো আজকেও চেষ্টা করবেন অফিস ছুটির ঘন্টাখানেক আগে বের হয়ে যেতে। পাশের ডেস্কের মেয়েটা ঠিকই সামলে নেবে। নিকনা একটু লোড। আমার কি? একটু কষ্ট করুক শালী। অফিসে এইসব বিষয় দেখারও কেউ নাই। বড় স্যারের কানে না গেলেই হলো। অবশ্য আকবর আলী হিজড়া ব্যাটার এত কিছু দেখার টাইম আছে? ডেস্ক, কাজ এগুলো ঠিক মতো চললেই সে ঠিক। আর মাঝে মাঝে তার রুমে ঢুকে হাসি দিয়ে হালকার উপর ঝাপসা একটু ন্যাকামী করলেই বুড়া ভামটা পুরা লাট্টু। সো, টেনশন কাভি লেনেকা নেহি, দেনেকা।

সায়মনের আজকে বার্থ ডে। ওর জন্য গিফট কিনতে হবে। ওর ওখানে আবার ককটেল পার্টি আছে। গুলশান ক্লাব থেকে বোতল তুলতে হবে। উফ আল্লাহ! কত্ত কাজ! রাতে আবার ইমরান থাকতে বলছে ওর বাসায়। রিদওয়ানকে এখন আর ভালো লাগছেনা। এক খেলনা দিয়ে কত আর খেলা যায়? ইমরান ইজ রিয়েলি আ কুল গাই! যতদিন যৌবন আছে, তাকে উপভোগ করে নেয়াটাই শ্রেয়। তাইনা?

ইমরানের কথা ভাবতে ভাবতেই তাহসিনার শরীরে কেমন যেন একটা ভালো লাগার ঢেউ খেলে গেল। কাজ করতে ভালো লাগছেনা আর। তাহসিনা ডেস্ক থেকে উঠে নামাজের রুমে গিয়ে বসলেন। চেয়ারে বসে চোখটা হালকা বন্ধ করতেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলেন। পাশে রাখা ফোনটাতে ডেস্কের মেয়েটা কল দিচ্ছে। দিক। তাহসিনা আবার চোখ বন্ধ করে কল্পনার জগতে ইমরানের বুকের মাঝে হারিয়ে গেলেন।

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:২২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×