মাড়িয়ে এলাম অযত্নে রেখে আসা আপন ভুবন । উঠোনের পরতে পরতে লেগে আছে ভুলে যাওয়া শৈশব । নিষ্পাপ হাসি-কান্না, চঞ্চলতার গড়াগড়ি মেখে আছে ধুলোয় ধুলোয় । বিশালতার এক বুক নিয়ে এখনো আমায় পেয়ে হাহাকার করে, ইচ্ছে তো হয় করি কিছুক্ষণ মাখামাখি ! কিন্তু থ্যাঁতলে যাওয়া হৃদয় আজ বড্ড স্বার্থপর । পাখপাখালি, গাছগাছালি, টলটলে পুকুর ঠায় তাকিয়ে রয় নিঃস্ব চাহনিতে । পারি না তো চাইতে এই মায়াকে, সেই হৃদয় নেই যে আমার । তারা কখনো বলেনি ছেড়ে যাওয়া অপরাধ । তাই এখনো কিছুক্ষণ আবেগে কাঁদি, তাই এখনো তাদের বুকে নাড়ির সেই ওম খুঁজি । শৈশবের ঘরটা পেয়েছে বহুবার আধুনিকতার ছোঁয়া । কিন্তু আমি এখনো পাই সেই আদিমতার কায়া, হৃদয় ভোলানো ঘুমপাড়ানি শীতল মায়া, নীরবতার সূক্ষ্ম মধুর ছলনা । আর সেই সুখস্বপ্ন দুনিয়ায় লেপটে পড়া ঘুম, যে ঘুম ভাঙ্গে পত্র-পল্লবের শরীর মাড়িয়ে উঁকিঝুঁকি দেয়া স্নিগ্ধ ভোরের ফোঁটা ফোঁটা সোনা রৌদ্রের নরম ছোঁয়ায় । সেই স্বপ্ন কাহিনী শোনাতে বিছানা ছেড়ে যখন ছুটে যাই মায়ের কাছে তখন হঠাৎ মনে পড়ে আমি তো সেই ছোট্টটি নেই ! তাই সুখস্বপ্নগুলো অবলীলায় মুছে যায় হৃদয় মৃত্তিকায় । হায়, সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে আমি নিষ্ঠুর এক অদৃশ্য কাচে....
বড় হয়েছে দেহ মোর, বড় হয়েছে হৃদয়
বড় হয়েছে স্বপ্ন, বড় হয়েছে সম্পর্ক ।
বেড়েছে দায়িত্ব্ব- কর্তব্য, বেড়েছে অধিকার
বেড়েছে জিতে যাওয়া, বেড়েছে হেরে যাওয়া ।
বিশাল হয়েছে চাওয়া পাওয়া, বিশাল হয়েছে স্বার্থপরতা
বিশাল হয়েছে নিষ্ঠুরতা, বিশাল হয়েছে খুনি আত্মা ।
কিন্তু সেই নিষ্পাপ হয়নি তো বড়, বাড়েনি তো এইটুকু, হয়নি তো বিশা্ল- হারিয়ে গিয়েছে অজানায়.....
........আজ নিত্যি হেরে যাই আমি শৈশবের কাছে । এমনি করে সুখসমেত অমূল্য উপহার অযত্ন অবহেলায় মিলিয়ে গেছে বড় হওয়ার অযাচিত দোহাই দিয়ে । নিষ্পাপ কান্না এখন আসে না, যন্ত্রণায় হৃদয় ভরপুর । নিষ্পাপ স্নিগ্ধ হাসি আর আসে না, ছদ্মবেশে হৃদয় হাহাকার । তাই আজ এই পূর্ণতার রাজ্যেও গ্রাস হয়েছি বুকভরা শূণ্যতায়, একরাশ বিষণ্ণতা নিয়ে ফিরে এসেছি এই যন্ত্র নগরে ।
আমি এখন যন্ত্র নগরের....
ছবি কৃতজ্ঞতা- নেট ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪১