বিধ্বস্ত হৃদয়ে নীলিমা রাতের আকাশের সান্নিধ্যে আর্জি রেখেছে, দাও মোরে কিছু শান্তনা, পুড়ে পুড়ে হয়েছি আমি আঙ্গার ।স্বচ্ছ চোক্ষের ভেতরে লুকিয়ে আছে বিদগ্ধ লাভা । সূচনার লগ্নে অবধারিত কান্না অপেক্ষা করে, আমি কী তাকে ডেকেছিলাম ? নেবো অগ্নি ঝরনা তা তো ছিলো না জানা, হয়েছে তাই আপন। প্রকৃতিচ্ছলে বয়ে চলা নীলিমার এই দুঃখভারাক্রান্ত আচরণ নীরবের যেন এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড । বেঁচে থাকার ভোর নিয়ে তার কেন এতো রহস্যময় অভিযোগ ? মহাশূন্য হচ্ছে বিব্রত । ভুলের সূচনা হয়েছে কবে থেকে ! অজস্র বছরের নিয়মতান্ত্রিক সাম্রাজ্য আমার ! নীলিমার দুঃখে দুঃখিত চন্দ্র, দুঃখিত নক্ষত্র । আরও দুঃখিত হয়েছে স্থল সমুদ্র, তার বুকে নীলিমা নাকি ছড়ায় না আগের মত নীল ! হেঁয়ালির ফাঁদে পড়ে গেল মহাশূন্য । মহাধরণি স্তব্ধ হয়ে আছে, চন্দ্র জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে না, মেঘ বৃষ্টি দিচ্ছে না, তারকারা নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে, ব্ল্যাকহোল করছে হেঁয়ালি সময় জ্ঞানে- দিবারাত্রির সংমিশ্রণে এলোমেলো হিসেব নিকেশ ! আর সূর্য রয়েছে অযাচিত বিরহে- নীলিমার দুঃখের কারণ যে সে তাকে ভাবছে, তাই লাভা এর সাথে কমেছে তার প্রেম । পৃথিবী ভুগছে নীরব যন্ত্রণায়, অথচ নেই নিয়মে পৃথিবীকে এভাবে নিঃসঙ্গ করে দেয়া, তবুও হচ্ছে অনাকাংখিত নিয়ম ভঙ্গ।
বাষ্প কাগজে সিল দিয়ে শূন্যের মহা গোলটেবিলে ডাকা হলো জরুরী তলব, আলো-আঁধারহীন নিরপেক্ষ এক ক্ষণে। একে একে উপস্থিত হলো সকলে। অবধি পৃথিবীর দায়িত্ব অর্পিত হলো অমাবস্যার হাতে, ঘুমন্ত পৃথিবীর সময়ের কাছে । শীতল ধূসর মশাল জ্বালিয়ে দেয়া হলো টেবিলের চারপাশে । শূন্য সাদৃশ ভাসমান মসৃণ চেয়ারে এসে বসলো মহাশূন্যের সকল মহাজাগতিক আত্মা । গোলাপি রঙের তিন কোণ বিশিষ্ট খাবারের শুভেচ্ছা আয়োজন করা হলো, আঁশহীন নিশ্চল ধবধবে জল রাখা হলো প্রবাহমান সচ্ছ জগে । আষ্টেপৃষ্টে প্রশান্তি নির্গত মিহি বাতাসের সুর। আগত সকল মেহমান মাথা নিচু করে বসে রইলো, উচ্ছ্বাসহীন সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, তারা, নক্ষত্র, নীলিমা, মেঘ, ব্ল্যাকহোল! এমন নিঃসঙ্গ বিগত অজস্র সময়ের পরিক্রমায় কখনো দেখা যায় নি। মহাশূন্য শূন্যের স্বচ্ছ টেবিলে হাত দিয়ে আঘাত করলো, সবকিছু উঠলো কেঁপে, পৃথিবী ঘুমের মাঝে শুধু একটু হাই তুললো ! মহাশূন্য বললো, কী হয়েছে তোমাদের ? তোমরা এতো দুঃখী কেনো ? মহাশূন্য সবার পেঁছনে হাঁটতে লাগলো, সবাই চুপ হয়ে আছে ।
মহাশূন্য হাঁটতে হাঁটতে নীলিমার নিকটে দাঁড়ালো । কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো- তুমি, সকল সর্বনাশের নাম তুমি । তোমাকে বলতে হবে কারণ কী । নীলিমা চুপ হয়ে আছে তখনো । মহাশূন্য চিৎকার করে বললো- বলছো না কেন ? মহাশূন্যের চিৎকারে পৃথিবীর সমুদ্র কেঁপে উঠলো, জলের ঢেউ ধনুকের ন্যায় উপরে উঠে পড়ে গেলো । নীলিমা ঠোঁট কাঁপাতে কাঁপাতে উত্তর দিলো, সেইই.. সেইদিন প্রথম আমাকে নিয়ে পৃথিবীর এক কবি কবিতা লিখেছে..। তাতে কী হয়েছে ! মহাশূন্য আবার চিৎকার করে উঠলো । নীলিমার চোখে পানি চলে এলো ভয়ে, সে আরো কাঁপতে কাঁপতে বললো- কবিতায় লিখেছে সে আমার প্রেমে পড়েছে ! মহাশূন্য হলো হতাশ । সে বললো- কতবার বলেছি তোমাদের, মানব প্রেমে পড়ো না, ওরা উন্মাদ, বদ্ধ পাগল । যাবে না থাকা আমাদের মধ্যে প্রেমের কোন অস্তিত্ব, আমাদের অবস্থান প্রেম, আবেগ এসব কিছুর বাইরে। সবাই চুপ করে রইলো।
মহাশূন্য আবার বললো, নীলমার কমে গেছে প্রেম বিরুদ্ধ জল, তাই সে হয়েছে নিজের মধ্যে নিজে বন্দি । কিন্তু হয়েছে তোমারদের কী ? সবাই একসাথে উত্তর করলো, নীলিমা আমাদের কাছে তার দুঃখ বিলিয়েছে । মহাশূন্য আবারও হতাশ হলো । সে বললো, তোমাদের অবস্থা তো আরও হতাশাজনক । তোমাদের মধ্যে শুধু একে অপরকে আলো বিলানোর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, এছাড়া আর কোন প্রকার সুখ, দুঃখ, আবেগ, প্রেম, ভালোবাসা বিলানোর কোন অনমতি দেয়া হয় নি । তারপরও কীভাবে করলে তোমরা এই ভুল ! সবাই আছে মাথা নত করে। মহাশূন্য হাঁটতে হাঁটতে বহমান স্বচ্ছ জগের কাছে গিয়ে অনুভূতি বিরুদ্ধ জলের মুখগুলো ভুলে যাওয়া ইতিহাস ভেঙ্গে আবারও খুলে দিলো । মুখগুলো দিয়ে আঁশহীন ধবধবে জল বের হয়ে সকলের মুখ দিয়ে প্রবেশ করতে লাগলো । কিছুক্ষণপর মহাশূন্য বন্ধ করে দিলো মুখগুলো । সবাই হয়ে উঠলো বিশুদ্ধ , তারা গেলো ভুলে তাদের অতীত, হারিয়ে গেলো তাদের ভেতর সৃষ্টি হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত মানবপ্রেম। তারা মহাশূন্যকে বললো- আমাদের কী হয়েছিলো, আমাদেরকে ডেকেছেন কেন ! মহাশূন্য কোন উত্তর করলো না, সবাইকে যার যার অবস্থানে ফিরে যেতে বললো । চেয়ার থেকে অজস্র গতির ধনুকের ন্যায় যার যার অবস্থানে সবাই করলো প্রস্থান ।
মহাশূন্য পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, আজব একটা গ্রহ আমার, তার থেকে আজব সেখানে বাস করা প্রাণীগুলো ! তাদের এতো প্রেম কীভাবে সৃষ্টি হয় যে এই মহা সাম্রাজ্যকেও করে দেয় নড়বড় ! এসব ভাবতে ভাবতে মহাশূন্য নিজেও যায় স্থির হয় সক্রিয় অবস্থানে...
**একটি 'কল্পনাপ্রধান' পাঠ রচনা !
ছবি কৃতজ্ঞতা- নেট ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৪৯