somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিচ্যুত মহাধরনি !

০৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিধ্বস্ত হৃদয়ে নীলিমা রাতের আকাশের সান্নিধ্যে আর্জি রেখেছে, দাও মোরে কিছু শান্তনা, পুড়ে পুড়ে হয়েছি আমি আঙ্গার ।স্বচ্ছ চোক্ষের ভেতরে লুকিয়ে আছে বিদগ্ধ লাভা । সূচনার লগ্নে অবধারিত কান্না অপেক্ষা করে, আমি কী তাকে ডেকেছিলাম ? নেবো অগ্নি ঝরনা তা তো ছিলো না জানা, হয়েছে তাই আপন। প্রকৃতিচ্ছলে বয়ে চলা নীলিমার এই দুঃখভারাক্রান্ত আচরণ নীরবের যেন এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড । বেঁচে থাকার ভোর নিয়ে তার কেন এতো রহস্যময় অভিযোগ ? মহাশূন্য হচ্ছে বিব্রত । ভুলের সূচনা হয়েছে কবে থেকে ! অজস্র বছরের নিয়মতান্ত্রিক সাম্রাজ্য আমার ! নীলিমার দুঃখে দুঃখিত চন্দ্র, দুঃখিত নক্ষত্র । আরও দুঃখিত হয়েছে স্থল সমুদ্র, তার বুকে নীলিমা নাকি ছড়ায় না আগের মত নীল ! হেঁয়ালির ফাঁদে পড়ে গেল মহাশূন্য । মহাধরণি স্তব্ধ হয়ে আছে, চন্দ্র জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে না, মেঘ বৃষ্টি দিচ্ছে না, তারকারা নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে, ব্ল্যাকহোল করছে হেঁয়ালি সময় জ্ঞানে- দিবারাত্রির সংমিশ্রণে এলোমেলো হিসেব নিকেশ ! আর সূর্য রয়েছে অযাচিত বিরহে- নীলিমার দুঃখের কারণ যে সে তাকে ভাবছে, তাই লাভা এর সাথে কমেছে তার প্রেম । পৃথিবী ভুগছে নীরব যন্ত্রণায়, অথচ নেই নিয়মে পৃথিবীকে এভাবে নিঃসঙ্গ করে দেয়া, তবুও হচ্ছে অনাকাংখিত নিয়ম ভঙ্গ।

বাষ্প কাগজে সিল দিয়ে শূন্যের মহা গোলটেবিলে ডাকা হলো জরুরী তলব, আলো-আঁধারহীন নিরপেক্ষ এক ক্ষণে। একে একে উপস্থিত হলো সকলে। অবধি পৃথিবীর দায়িত্ব অর্পিত হলো অমাবস্যার হাতে, ঘুমন্ত পৃথিবীর সময়ের কাছে । শীতল ধূসর মশাল জ্বালিয়ে দেয়া হলো টেবিলের চারপাশে । শূন্য সাদৃশ ভাসমান মসৃণ চেয়ারে এসে বসলো মহাশূন্যের সকল মহাজাগতিক আত্মা । গোলাপি রঙের তিন কোণ বিশিষ্ট খাবারের শুভেচ্ছা আয়োজন করা হলো, আঁশহীন নিশ্চল ধবধবে জল রাখা হলো প্রবাহমান সচ্ছ জগে । আষ্টেপৃষ্টে প্রশান্তি নির্গত মিহি বাতাসের সুর। আগত সকল মেহমান মাথা নিচু করে বসে রইলো, উচ্ছ্বাসহীন সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, তারা, নক্ষত্র, নীলিমা, মেঘ, ব্ল্যাকহোল! এমন নিঃসঙ্গ বিগত অজস্র সময়ের পরিক্রমায় কখনো দেখা যায় নি। মহাশূন্য শূন্যের স্বচ্ছ টেবিলে হাত দিয়ে আঘাত করলো, সবকিছু উঠলো কেঁপে, পৃথিবী ঘুমের মাঝে শুধু একটু হাই তুললো ! মহাশূন্য বললো, কী হয়েছে তোমাদের ? তোমরা এতো দুঃখী কেনো ? মহাশূন্য সবার পেঁছনে হাঁটতে লাগলো, সবাই চুপ হয়ে আছে ।

মহাশূন্য হাঁটতে হাঁটতে নীলিমার নিকটে দাঁড়ালো । কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো- তুমি, সকল সর্বনাশের নাম তুমি । তোমাকে বলতে হবে কারণ কী । নীলিমা চুপ হয়ে আছে তখনো । মহাশূন্য চিৎকার করে বললো- বলছো না কেন ? মহাশূন্যের চিৎকারে পৃথিবীর সমুদ্র কেঁপে উঠলো, জলের ঢেউ ধনুকের ন্যায় উপরে উঠে পড়ে গেলো । নীলিমা ঠোঁট কাঁপাতে কাঁপাতে উত্তর দিলো, সেইই.. সেইদিন প্রথম আমাকে নিয়ে পৃথিবীর এক কবি কবিতা লিখেছে..। তাতে কী হয়েছে ! মহাশূন্য আবার চিৎকার করে উঠলো । নীলিমার চোখে পানি চলে এলো ভয়ে, সে আরো কাঁপতে কাঁপতে বললো- কবিতায় লিখেছে সে আমার প্রেমে পড়েছে ! মহাশূন্য হলো হতাশ । সে বললো- কতবার বলেছি তোমাদের, মানব প্রেমে পড়ো না, ওরা উন্মাদ, বদ্ধ পাগল । যাবে না থাকা আমাদের মধ্যে প্রেমের কোন অস্তিত্ব, আমাদের অবস্থান প্রেম, আবেগ এসব কিছুর বাইরে। সবাই চুপ করে রইলো।

মহাশূন্য আবার বললো, নীলমার কমে গেছে প্রেম বিরুদ্ধ জল, তাই সে হয়েছে নিজের মধ্যে নিজে বন্দি । কিন্তু হয়েছে তোমারদের কী ? সবাই একসাথে উত্তর করলো, নীলিমা আমাদের কাছে তার দুঃখ বিলিয়েছে । মহাশূন্য আবারও হতাশ হলো । সে বললো, তোমাদের অবস্থা তো আরও হতাশাজনক । তোমাদের মধ্যে শুধু একে অপরকে আলো বিলানোর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, এছাড়া আর কোন প্রকার সুখ, দুঃখ, আবেগ, প্রেম, ভালোবাসা বিলানোর কোন অনমতি দেয়া হয় নি । তারপরও কীভাবে করলে তোমরা এই ভুল ! সবাই আছে মাথা নত করে। মহাশূন্য হাঁটতে হাঁটতে বহমান স্বচ্ছ জগের কাছে গিয়ে অনুভূতি বিরুদ্ধ জলের মুখগুলো ভুলে যাওয়া ইতিহাস ভেঙ্গে আবারও খুলে দিলো । মুখগুলো দিয়ে আঁশহীন ধবধবে জল বের হয়ে সকলের মুখ দিয়ে প্রবেশ করতে লাগলো । কিছুক্ষণপর মহাশূন্য বন্ধ করে দিলো মুখগুলো । সবাই হয়ে উঠলো বিশুদ্ধ , তারা গেলো ভুলে তাদের অতীত, হারিয়ে গেলো তাদের ভেতর সৃষ্টি হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত মানবপ্রেম। তারা মহাশূন্যকে বললো- আমাদের কী হয়েছিলো, আমাদেরকে ডেকেছেন কেন ! মহাশূন্য কোন উত্তর করলো না, সবাইকে যার যার অবস্থানে ফিরে যেতে বললো । চেয়ার থেকে অজস্র গতির ধনুকের ন্যায় যার যার অবস্থানে সবাই করলো প্রস্থান ।

মহাশূন্য পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, আজব একটা গ্রহ আমার, তার থেকে আজব সেখানে বাস করা প্রাণীগুলো ! তাদের এতো প্রেম কীভাবে সৃষ্টি হয় যে এই মহা সাম্রাজ্যকেও করে দেয় নড়বড় ! এসব ভাবতে ভাবতে মহাশূন্য নিজেও যায় স্থির হয় সক্রিয় অবস্থানে...


**একটি 'কল্পনাপ্রধান' পাঠ রচনা !

ছবি কৃতজ্ঞতা- নেট ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৪৯
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×