খোকার মুখের বুঝতে না পারা প্রথম বুলি
একটি বাংলা শব্দ
খোকা শুনে এসেছে কতকথা জন্মের পূর্বে
মাতৃগর্ভে গুটিসুটি হয়ে বসে ছিলো
তারও বেশ ইচ্ছে হয়েছিলো কিছু বলার
সেই ইচ্ছেটুকু ছিলো বাংলাভাষা।
সে কানপেতে ছিলো-
বৃদ্ধ, যুবক যুবতী, কিশোর কিশোরীর গালগপ্পে!
তারও বেশ স্বাদ জেগেছিলো কিছু গপ্প করার
সেই স্বাদটুকু ছিল বাংলাভাষা।
মায়ের থলেতে এদিক ওদিক চষে বেড়ায় সে
পাখ পাখালীর কিচিরমিচির শোনে
পাতা ঝরার মরমর শব্দ শোনে
বাতাসের সোঁ-সোঁ আওয়াজ শোনে
হাঁস, মোরগের ডাক শোনে
কুকুরের ঘেউ ঘেউ চিৎকার শোনে
পাশের বাড়ির যুদ্ধাহত নুরু পাগলের প্রলাপ শুনে
ছেলেমেয়েদের দলবেঁধে স্কুলে যাওয়ার গল্প শোনে
পুশকুনির ঘাটে জলমগ্ন বউদের সাংসারিক গল্প শোনে...
এভাবে সে মায়ের থলে বড় করতে থাকে
তার ওজন ঢের হয়
হাত পাও বেড়েছে ঢের
এই বেড়ে উঠা বাংলাভাষা ।
যে রক্ত চুষে সে বেড়ে ওঠে
তার মধ্যে ডুবে থাকে মায়ের শঙ্কিত মুখ
এই শঙ্কিত মুখ বাংলাভাষা ।
বাবা যখন মায়ের পেটের উপর তার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে
কেমন আছো তুমি? কবে আসবে তুমি? তর সইছে না যে !
এসব বলে তার বাবা পেটের উপরে তার কপালে চুমো খায়।
এই চুমো বাংলাভাষা।
তার বাবার এইসব পাগলামো দেখে তার মা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে
তখন বাবাও হেসে ওঠে,
থলের মধ্যে খুনসুটিতে সেও হেসে ওঠে!
এই হাসিগুলো বাংলাভাষা।
একদিন তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর ছড়ায় চারদিকে
প্রিয়জন সবার চিন্তিত মুখ
সে আসবে তো পূর্ণাঙ্গ কান্না নিয়ে?
এই চিন্তিত মুখগুলো বাংলাভাষা ।
সে জন্ম নিয়ে কেঁদেকেটে সবাইকে হাসিতে ভাসালো
এই কান্না ছিল তার পুষে রাখা বাংলার প্রথম ধ্বনি
এভাবে সে বাংলায় খেয়ে পরে বেড়ে ওঠে
মায়ের আঁচলের আড়ালে সে কোমল স্তনবোটায়-
চুক চুক শব্দে শুষে নেয় তার বেড়ে ওঠা
সেই চুক চুক শব্দ বাংলাভাষা।
এভাবে একদিন হঠাৎ স্পষ্ট করে সে বলে উঠে- 'মা'
চারপাশের সবাই খানিকের জন্য থমকে দাঁড়ায়
তারা যেন এই বাংলার প্রথম জন্ম দেখলো!
বাংলাভাষা যেন সদ্য ভূমিষ্ঠ হলো!
সবার মুখে বাঁধনহারা প্রশান্তি খেলে যায়
এ যেন তাদের আওয়াজ, এ যেন সবার আওয়াজ
এ যেন পুরো বাংলার আওয়াজ...
ছবি বন্ধু- গুগল ছবিঘর ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৪০