somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক গল্পঃ রিপোস্টঃ হরিদাসের রমজান মাস ৩য় পর্বঃ

০৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





হিন্দু ম্যানেজাররা হরিদাসের কাছে কিছু বলতে সাহস করে না। কারন কার বাবা হরিদাস এর বাবার কাছ থেকে কি সাহায্য নিয়েছে হরিদাস তা জানে। হাঁটে হাড়ি ভাঙ্গার ভয়ে হরিকে কেউ খেপায় না। তবে আড়ালে এরা বলে বেড়ায়, অমুক জমির মালিকানা ঠিক নাই অথবা কমল বনিক ভারতে যাবার আগে তার জমি মন্দিরের জন্য বরাদ্ধ করেছিল, তা হরিদাসের খুরতুতো বোন ভোগ দখল করে খাচ্ছে। প্রশ্ন হল, তাতে তাদের কি সমস্যা? তাদের সমস্যা হল, তারা কিছু পাচ্ছে না। একবারে পাচ্ছে না, তা বলা যাবে না। এমপি আর বেপারীর ম্যানেজারের দরিদ্র আত্নীয়-স্বজনরা হরিদাসের জমি বর্গা চাষ করে। তাদের জমিতেই থাকে। হরি ঘর শূন্য করে তাদের সাহায্য করে, তা দেখেও তাদের হিংসা হয়। তারা বুঝতে চায় না, হরি সাহায্য না করলে এই দরিদ্ররা তাদেরই ঘাড়েই চাপত। এই হিন্দু ম্যানেজারদের কুপরামর্শে এমপি, চেয়ারম্যান, প্রভাবশালী নেতারা প্রায় হরিদাসের জমি জমার খোজ খবর নেয়। কোন জমির দাম কি রকম, কি ফসল ফলে, তার পিতারা কোন জমি বর্গা চাষ করত, এসব নিয়ে কথাবার্তা বলে। সেই সাথে হরিদাস কোন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে উদ্ধার করেছে, কোন স্কুলে কত টাকা দিয়েছে, কোন জমিটার ভাগের বর্গা ফসল স্কুলের নামে বরাদ্ধ করেছে, এসব নিয়ে প্রশংসাও করে। তবে হরিদাস ও তার ভাই মোহনদাস মনে করে, এদের শকুন চোখ বিশাল এই বাড়িটার চারদিকে প্রতিদিন ঘুরপাক খায়। হরিদাসের পরিবারে কোন আঘাত এলে গ্রামের সবাই যে ঝাটা নিয়ে বের হবে, এটা সবাই জানে। তাই কেউ ওদের পেছনে লাগতে আসে না। হরিদাসের পরিবার স্বল্প শিক্ষিত, তাদের বিদ্যা-বুদ্ধি তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া। তাদের তৃতীয় পূর্বপুরুষ ভগবান রায়, তাদের পিতাকে বলেছিলেন, সম্রাট আকবর সেনাপতি মানসিংহ, তার পুত্র- নাতীদের দিয়ে রাজ্য দখল করাতেন।

আগেই বলেছি, হরিদাস এর পূর্বপুরুষদের উপাধী ছিল ঘরামী, তাও তিন-সাড়ে তিনশ বছর আগের কথা। কোন এক নবাব বা বৃটিশরা নাকি তাদের কর্মগুণের কারণে এ উপাধী দান করে। সেই থেকে তারা রায় উপাধীই ব্যবহার করে। কততম পুর্বপুরুষ থেকে তারা এই উপাধী ব্যবহার করে, তা তারা জানে না। যাই হোক, এ পরিবার হিন্দু ম্যানেজারদের সম্রাট আকবরের সেনাপতির সাথে তুলনা করে, বলে, এরা মানসিংহ এর বংশধর। এই বিশাল সম্পত্তি নিয়ে হরির পরিবার বিচলিত, যদিও সম্পত্তির অধিকাংশ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে গ্রামের লোকজনই ভোগ করে। বিশ্বরোড হলে কি সমস্যা হতে পারে, তা নিয়ে তারা ভাবতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিন আগে এমপির ম্যানেজার যোগেশ পাল মোহনকে বলেছে, দাদা কিছু জমি এমপি সাবের কাছে বিক্রি করে দেন, নিরাপত্তা পাবেন। মোহন কোন উত্তর দেয়নি বলে যোগেশ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছে।

একদিন গ্রামের কিছু লোক, ভিন গায়ের কিছু মৌলবীদের হরিদাসের দোকানে নিয়ে আসে। বড় কালি মন্দিরে পাশে পুকুর, পুকুরের ঐ পারে জঙ্গলে ভরা একটা বাড়ি খালি পড়ে আছে। সেই বাড়িতে তারা মাদ্রাসা করতে চায়। হরিদাস হেসে বলে, হুজুর, আযান, উলোধ্বনি, শঙ্খধ্বনি সবই আমার কাছে একই মনে অয়, ভগবানকে খুশি করা। আমার খারাপ লাগবে না। কিন্তু মা কালীর পুজার আওয়াজ আপনাদের সমস্যা হবে না?

পাশের গ্রামের এক ছোকরা, মাদ্রাসা থেকে সদ্য মুফতি পাশ করেছে, বলে, না কোন সমস্যা হবে না। হরি বখতিয়ারের ছেলে ওমরকে চেনে, সবাই ওকে ‘সয়তানের সয়তান, বান্দরের বান্দর’ বলে জানে। গ্রামে হেন কোন খারাপ কাজ নাই যা সে করে না। তাই বাধ্য হয়ে তার মামারা তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়। শুরুতে মাদ্রাসা থেকে সে পালাত, হুজুররা এসে তাকে নিয়ে যেত। হরি তার দিকে তাকিয়ে বলে, বাবা, তুমি তো তোমার বাবাকে নিয়ে ঐ জায়গা দখল করে ভোগ করতে চাইছ, মাদ্রাসা করতে নয়। আপনেরা ঐ কবরের পাশে খালি জায়গায় মাদ্রাসা করুন। আপনাগো কোরান পড়ার শব্দ আর আযানের শব্দে মুর্দাগো সোয়াব অইবো। আমাগো জমি নিতে যদি সমস্যা না হয়, আমাগো দেওয়া টাকা নিতে নিশ্চয় সমস্যা হবে না।

ওমর চিৎকার করে বলে, আশতাকফিরুল্লাহ্, বিধর্মীর টাকায় মসজিদ-মাদ্রাসা ?
-তাহলে পুকুর পাড়ের জমিতে কিভাবে মাদ্রাসা হবে?
-পুকুর পাড়ের জমি তো আমার আব্বার অইত, যদি দাদাজান তারে দিয়া যাইত। আপনে তো ভাল লোক, কম দামে আমার আব্বারে এই জমি দিয়া দেন। আমরা মাদ্রাসা বানামু।
--ঠিক আছে, তোমার আব্বারে আমার কাছে পাঠাইয়া দিও, তার সাথেই কথা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×