স্বাধীনতা লাভের দ্বারপ্রান্তে স্কটল্যান্ড
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। আগামী ১৮ই সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গণভোট। স্কটল্যান্ড কী যুক্তরাজ্যের সাথে অঙ্গীভূত থাকবে না আলাদা রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত হবে? নানা জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে গত কয়েকদিনে। ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে দুই পক্ষেই নানা সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। একদিকে বিশ্বের অন্যতম একটি শীর্ষ ধনী দেশের সাথে অংশীভূত থেকে নিজেদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখা। অন্যপক্ষে নিজেদের স্বাধীন সত্তাকে সারা বিশ্বে তুলে ধরে স্বতন্ত্র জাতি হিসাবে নিজেদের পরিচয় নিশ্চিত করা।
এতদিন মনে করা হত প্রায় তিনশত বছরের ইউনিয়ন না ভেঙ্গে স্কটিশ জনগণ যুক্তরাজ্যের সাথেই থাকবেন। যেহেতু যুক্তরাজ্যের সাথে থাকলে সহজেই মিলছে সবক্ষেত্রে সমান সুবিধা। কিছু সামাজিক সুবিধা বেশ লোভনীয়। যেমন, বেকার ও বয়স্ক ভাতা, গরীবদের জন্য বাসস্থান ভাতা তথা ফ্রি ফ্ল্যাট, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ সামগ্রী, প্রতিবন্ধী ও শিশ্ত ভাতা, বিনামূল্যে শিক্ষাসেবা সর্বোপরি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের আনুষঙ্গিক সবকিছু সমতার ভিত্তিতে বন্টন। যুক্তরাজ্যের চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায় যেটা বিশ্বের অন্য কোথাও সমমানের নয়।এতকিছুর কারণে যুক্তরাজ্যের সরকারের ধারণা ছিল স্কটল্যান্ড তাদের সাথেই থাকবে। তাদের প্রচারণাও ছিল এতদিন দায়সারা গোছের।
অন্যপক্ষে যারা স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা চান তাদের যুক্তি হচ্ছে স্বাধীন হলে তাদের নিজস্ব জাতিসত্ত্বা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারবেন। সারাবিশ্বে তাদের নিজস্ব দূতাবাস থাকবে। স্কটল্যান্ডের নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার করে তারা যাবতীয় প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে পারবেন। স্কটল্যান্ডে যে পরিমান প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ও খনিজ সম্পদের মজুদ রয়েছে সারা ইউরোপে আর কোথাও তা নেই। সুতরাং নিজস্ব সম্পদের সঠিক ব্যবহার করলে তারা বিশ্বের শীর্ষ বিশটি ধনী দেশের তালিকায় থাকবেন। এ তালিকায় তারা এমনকি ইটালী, ফ্রান্স, জাপান ও যুক্তরাজ্যেরও উপরে থাকবেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
একমাস আগেও মনে করা হত 'না' ভোট অর্থাৎ যারা যুক্তরাজ্যের সাথে থাকতে চান তারাই জিতবেন। এ কারণে তারা অনেকটাই হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন। কিন্তু স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাকামীরা নিরলস প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। মাত্র একমাসের পরিশ্রমে তারা ব্যবধানই শুধু কমাননি, জরিপে এগিয়ে গেছেন। এখন মনে করা হচ্ছে স্বাধীনতা লাভ করতে যাচ্ছে স্কটল্যান্ড। স্বাধীনতার সুখের কাছে দুনিয়ার কোন লোভনীয় অফারই যে বড় নয় তা প্রমান করতে যাচ্ছেন স্কটিশরা।
এতদিন যুক্তরাজ্যের সাথে থাকলেও স্কটল্যান্ডের ছিল নিজস্ব মুদ্রা। সেটা পাউন্ডের সাথে একই বিনিময় মূল্যের। স্কটল্যান্ডে তাদের নিজস্ব মুদ্রার সাথে বৃটিশ পাউন্ডও চলে দেদারসে। কিন্তু লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের অন্য যেকোন জায়গায় গেলে কেউ স্কটিশ পাউন্ড নিতে চায় না। এ কারণে নিজ দেশেই তারা পরিগনিত হন পরদেশী হিসাবে। এটা সত্যিই অপমানজনক। যদিও যুক্তরাজ্যের আইনে সব জায়গায় স্কটিশ মুদ্রা রাখার বিধান রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে সেটার প্রয়োগ নেই। স্কটল্যান্ডবাসী এই একটি কারণেই অনেকটা ক্ষ্যাপা। এখন অনেকেই হয়তো এই অপমানের বদলা নেবার সুযোগ পাবেন।
পথেঘাটে শহরে বন্দরে কিংবা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এখন চলছে ব্যাপক প্রচারণা। এখন পর্যন্ত হাঁ ভোটের পক্ষেই বেশি প্রচারণা পরিলক্ষিত হচ্ছে। রাস্তাঘাটে বিলবোর্ডে সন্তানকোলে মায়ের ছবিসহ লেখা হয়েছে আগামী প্রজন্মের সিদ্বান্ত আজকেই নিন। স্কটিশদের ভাগ্য নির্ধারন করুক তারাই। আর মাত্র তিন দিন বাকি। এর পরেই জানা যাবে স্কটিশদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!
একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪
চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন
আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?
ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম
যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।