ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক আলোচনা সভায় সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে বললেন এক ব্যবসায়ী নেতা।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ আয়োজিত বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভায় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে নির্মিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোই দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
“ছয় বছর ধরে আমি এ ব্যবসার (ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন) সঙ্গে জড়িত। ব্যবসায়ীক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমি গবেষণা করে দেখেছি, যদি সরকার এসব প্রকল্প না করতো, তাহলে জিডিপিতে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতো।”
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এবং বিআইডিএসের গবেষক বিনায়ক সেন এ আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী এই ব্যবসায়ী নেতার সঙ্গে একমত পোষণ করে বক্তব্য দিলেও মঈন খান বলেছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়েছে।
ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের পক্ষে আলোচনায় অংশ নিয়ে আনিসুল হক বলেন, তেলনির্ভর ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল বলে অনেকে সমালোচনা করেন। কিন্তু এ উদ্যোগ না হলে কি হতো- তাও ভেবে দেখা প্রয়োজন।
বিদ্যুৎ খাতের তথ্য তুল ধরে আনিসুল হক বলেন, সাড়ে তিন বছর আগে বর্তমান সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন দেশে চালু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার ১৬৬ গোওয়াট থকলেও অর্ধেক কেন্দ্রই পুরনো হওয়ায় গড়ে ৩ হাজার ৮৭৪ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যেত।
এরপর সরকার ২০০৯ এর মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ৫৩টি প্রকল্প ও ৫১টি চুক্তির মাধ্যমে ৫ হাজার ৯০৬ গোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার যদি স্বল্পমেয়াদী ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন না করে শুধু দীর্ঘমেয়াদী ‘বেইজ লোড’ বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিত, তাহলে গ্যাস সঙ্কটের কারণে গত তিন বছরে কোনো নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হতো না বলে মনে করেন আনিসুল হক।
এই ব্যবসায়ী নেতার হিসাব অনুযায়ী, সেক্ষেত্রে গড়ে ৩ হাজার ১০০ বা ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। আর তাতে অর্থনীতির বিপুলে পরিমাণ ক্ষতি হতো।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হলে চাল, আলু, গম ও ভুট্টা উৎপাদনে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তো, তাতে ক্ষতি হতো ৯ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। রপ্তানি খাতে আয় কম হতো সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার।
দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক আনিসুল হক বলেন, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারকে প্রায় ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি গুণতে হয়েছে- এটা ঠিক। তবে এর বিনিময়ে অর্থনীতির যে সুফলগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তাও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।
তার দাবি, গত তিন বছরে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো স্থাপিত হওয়ায় বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। রপ্তানি বাড়ায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। কেবল রপ্তানি সংশ্লিষ্ট শিল্পেই সাত লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
এসব বিষয়ে একমত পোষণ করে অর্থমন্ত্রী বলে “অনেকে বলেন, রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার ভুল করেছে। এটা ঠিক না। রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। আমরা এখন বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে মনোযোগী হব।”
২০১৫ সালের মধ্যে সরকার রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ওপর নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসবে বলেও জানান তিনি।
অবশ্য বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের কারণে দেশের অর্থনীতির মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়েছে।
সরকারের এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ইআরএফের সভাপতি খাজা মাঈনউদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম হারমাছি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আলোচনা শেষে অতিথি আলোচকরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন।
Click This Link