somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেরা

১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুনের দায়ে সুমনকে জেলে নিয়ে গেল। নবজাতককে তার মামা বাড়ি নিয়ে গেল। সুমন কােন কথা বলল না। ও বলতে চেয়েছিল, সুলেখা তার ছেলের নাম সুখেন রাখবে। কিন্তু কেউতো আর তার কথা শুনবে না।

সুলেখার ইচ্ছে ছিল তার ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। এ ইচ্ছের কথা একদিন তার দাদাকে বলেছিল। সুখময়ের সে কথা এখনও মনে আছে। শুধু ভাবছে, সুমনের সাথেতো সুলেখার এমন সম্পর্ক ছিল না যে একেবারে খুনই করে ফেলবে। ওদের সম্পর্ক ছিল মৌ-মধুর মত। তবে কি এই ভালোবাসাই ওদের কাল হয়ে দাঁড়াল?
আদালত সুমনকে জাবৎ-জীবন কারাদণ্ড দিল। সুমন শুধু বিচারকের দিকে তাকিয়ে রইল। একটা কথাও বলল না। শুধু সুখময়কে বলল, “দাদা, ওকে আপনি দেইখেন।”
সুমনের জেলখানা একেবারে খারাপ লাগছিল না। কারণ, সুলেখাকে ছাড়া তার জন্য এটাই যথেষ্ট। ওর চােখ দিয়ে কেবল নীরব অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছিল। ওর সাজানো স্বপ্নগুলো মুহুর্তে ভেঙ্গে চূরমার হয়ে গেল। আর সে স্বপ্নের বাগানে কােনদিনও ফুল ফুটবে না। কােন দিনও না। কােন দিন কেউ বলবে না, আমি তােমার পাশে আছি। সােনা, ময়না, টিয়ের চেয়েও কেউ যদি বলে আমি তােমার পাশে আছি সেইতো সত্যিকারে ভালোবাসা। যে পাশে থাকে সেই তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। মনে থাকা আর পাশে থাকা ভালোবাসার রূপ আলাদা।
সুমনের বয়স ভাঁটির দিকে চলছে। কাজ করার ক্ষমতা প্রায় নেই-ই। শরীর ভরে গেছে অসুখে।
জেলখানায় একজন বড় ডাক্তার সুমনকে দেখতে এসেছে। একজন হাতে ধরে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসছে। সুমনের সুলেখার কথা মনে পড়ল, আমাদের ছেলে অনেক বড় ডাক্তার হবে। চােখের জল গড়িয়ে গেল।
“আপনি কাঁদছেন ক্যানো?”
“আমার একটা কথা শুনবেন?”
“হ্যাঁ বলুন।”
“সবাইকে চলে যেতে বলুন।”
সবাই চলে গেল।
“ডাক্তার সাহেব, আমি হয়তো বেশি দিন বাঁচবো না। তাই আপনার কাছে একটা সত্য কথা বলতে চাই। তা না হলে সত্য মরে যাবে।
আমি ঘুমে আছি। আমার স্ত্রীর আর্তচিৎকারে আমি জেগে উঠলাম। সে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মই দিয়ে উপরে উঠতে পড়ে গেছে। আমি তড়িঘড়ি করে বিছানায় উঠালাম। ফাঁকা বাড়ি। আশে পাশে কাউকে খুঁজে পেলাম না। এসে দেখি আমার স্ত্রী মারা গেছে। আমি সব ভালোবাসা ভুলে বিবাহ বার্ষিকীর কেক কাটা ছুরি দিয়ে ওর পেট কেটে ফেললাম। ছেলেটা তখনও বেঁচে ছিল। তাকে আমি বিপদ মুক্ত করলাম।
তারপর দেখলাম কােথা থেকে যেন লােকজন বাড়তে লাগল। খুনের দায়ে আমার জেল হলো। কাউকে এ কথা বলিনি যে, সুলেখাকে যখন হারিয়েছি তখন আর সত্য বলে লাভ নেই। তাছাড়া ছুরিতেতো আমার হাতের ছাপই ছিল।”
“আপনি এতো সাহস কিভাবে পেলেন?”
“যখন দেখলাম আমার চােখের সামনে আমার সাজানো বাগান ভেসে যাচ্ছে তখন এই দুঃর্সাহসিকতা বেছে নিলাম।”
“আমি যদি আপনাকে মুক্ত করে দেই খুশি হবেন?”
“আমার জীবনের সমস্ত স্বপ্ন এই চার দেয়ালের মাঝে নষ্ট হয়ে গেছে। আমি এর মাঝেই মুক্তি চাই।”

সুখেনের সারা রাত একটুও ঘুম এলো না। সকালে মামা বলল, “কিরে রাত্রে ঘুমসনি?”
“না, মামা।”
“একটা ঘটনায়। মানুষের জীবন কত বিচিত্র। কত ভাবে মানুষের স্বপ্ন ভাঙ্গে।”
“বল না আমাকে।”
“মামা, আজ একজন সেরা ডাক্তারের সাথে গল্প হলো। বাপরে, কি সাংঘাতিক। নিজের স্ত্রীর পেট কেটে ফেলল।”
“এ কথা ভুলে যা না। তাের বাপ না হয় একটা ভুল করেই ফেলেছিল।”
“কি কন মামা, আমার বাপ এ রকম একটা ভুল করেছিল। তুমিতো বলেছিলে এক্সিডেণ্টে আমার মা-বাবা মারা গেছে।”
“সেটা ভুল ছিল। তাের বাপ তাের মাকে খুন করছিল।”
“আর সেই খুনের দায়ে তার জেল হয়েছিল। মামা, একথা আমাকে আগে বলেননি ক্যান? যে আমার বাবা জেলে আছে। ভালো না বাসতে পারতাম অন্তত একটু ঘৃণা করতে পারতাম। সেও জানতো আমার একটা ছেলে আছে।”
“তবেতো, তাের মার স্বপ্ন ভেঙ্গে যেত।”
“মৃত মার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে জীবত বাবাকে পাশে নিয়ে অন্তত বাবার আদর পেতাম। চলো মামা, চলো। অনেক দেরী হয়ে গেছে।”
“কোথায়?”
“জেলখানায়। আমার বাবার কাছে।”

জেলখানায় এসে দেখল বৃদ্ধা চুপ করে কােণায় বসে রােদ পােহাচ্ছে। মামাকে বলল, “আমার বাবার মামলা খারিজ করার যাবতীয় ব্যবস্থা নেন। আমি আমার হেপাজতে দুই দিনের জন্য চিকিৎসার নামে নিয়ে আসি।”
সুখেন সুমনের পাশে এল। সুমন মাথা ঘুরিয়ে ডাক্তার বাবুর দিকে তাকাল।
“আর কােন গল্প মনে পড়ছে। আপনার গল্প আমার দারুণ লাগছে। আপনি যদি কােন দিন শােনেন আপনার ছেলে অনেক বড় ডাক্তার হয়েছে। সে আপনাকে নিয়ে যেতে চায় যাবে না তার সাথে?”
“ডাক্তার সাহেব কেবলিতো স্বপ্ন বপন করেছি আর তা কেবল ভেঙ্গেছে। আমার জন্য আর সে স্বপ্ন অপেক্ষা করবে না। তবে একটু জানতে ইচ্ছে হয় সে কি এখনও বেঁচে আছে? যদি না থাকে তবে আমার এ মিথ্যে জেল খাটার কােন স্বার্থকতা থাকবে না।”
“আমি আপনাকে একটা প্রণাম করি? আমার জীবনের একটা নতুন শব্দ উচ্চারণ করি?”
“তোমার নাম বুঝি সুখেন?”
“হ্যাঁ।”
“আমি এই হাত দিয়ে তােমার মাকে কেটেছিলাম। তাই আমার হাতের শক্তি ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল।”
“বাবা, তােমাকে কেউ বােঝেনি। আমাকে একটু বােঝার সময় দাও। আমি এতো দিন জানিনি আমার বাবা বেঁচে আছে এবং আমার বাবা এমন মহান। আমি তােমাকে পেয়ে ধন্য হয়েছি।”
সামন্য পাওয়ার জন্য বিরাট ত্যাগ করেই মানুষ মহান হয়। জীবন কিসে ধন্য হয় মানুষ তা জানে না। জানলে জীবনকে ধন্য করতো।
০৯.০১.২০১৭ইং
কানাই বাগচীর বাড়ি, পুইশুর,
কাশিয়ানী, গােপালগঞ্জ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:২১
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×