জসিম উদ্দিন ১৮৯৩- ১৯৫৩ একক অবদানে বাংলা কাব্য কে বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ করেছেন ।
তিনি একাধারে পল্লী কবি নামে খ্যাতি লাভ করেছেন ।
ময়মন সিংহ গীতিকা এবং অপরাপর লক সাহিত্যর সঙ্গে তার কাব্য দর্শের নিবিড় এক্য পরিলক্ষিত হয় ।
গ্রাম বাংলার জীবনালেখ্য তার কাব্য সহজ সরল ভাবে ফুটে উটে ।
নকশী কাঁথার মাঠ , রাখলি , বালুচর , ধানক্ষেত ,সুজন বাধিয়ার ঘাট ,
মাটির কান্না , হাসু , রঙ্গিলা নায়ের মাঝি ,এক পয়সার বাঁশি , রূপবতী ,
গাঙ্গের পাড় , সকিনা , মা যে জননী কান্দে , সুচনয়ি , প্রভৃতি তার
কাব্য ।
তিনি নাটক এবং অসংখ্য গানের স্রষ্টা , যা যুগযুগ ধরে বাংলা
সাহিত্যর রত্নভাণ্ডার ।
তার সৃষ্টি ও তার কবিত্ব সাধনা সার্থক বাংলার সাহিত্য ফসল ।
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
তার অমর সৃষ্টিতে আমার লেখা কাব্য টি তার জন্ম বার্ষিকীতে
অনন্ত শ্রদ্ধার সহিত উৎসর্গ করলুম ।
৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳৳
গ্রামীণ কাব্য কথা
ধান শালিকের মন
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
রচনা এম ,জি, আর মাসুদ রানা , কবি ও সাহিত্যিক গবেষক ।
************************
এক
দুচোখ জুড়ায় শ্যামল ছায়ায় এমন গাঁয়ের ছবি
সবুজ মাঠে তরুছায়া মুগ্ধ লাগে সবি
মেটু পথের ডানে বায়ে দুলে বনলতা
জড়াজড়ি করে হেন কহে মনের কথা
বাঁশবন বেতবন মিশে রয় হেথা আপন করে
সাজে পাতা পত্তর কোমল ও বাহারে
বুনু ফুলে মৌ মৌ গন্ধে কত আকুলতা মনে
ভ্রমর অলি প্রজাপতি মধু লোভে ওড়ে গুঞ্জনে ।
গাছের শাখায় পাখ পাখালি গায় মধুর গান
মাঠে রাখালিয়া বাজায় বাঁশি তুলে সুরের তান
পাড়ায় পাড়ায় অপরূপ সাজ পার্শে রয় ছুট বিল
জলের আরশিতে সূর্য কিরণ করে ঝিল্মিল
মাঠের বুকে চিত্র আঁকে শস্য ও ফসলের মেলা
নিত্য নতুন চমক আনে সাজে সবুজ ঢালা ।
ছোট্ট নদী নিরবধি বয়ে যায় সুদুরে
গাঁয়ের নামটি সৈয়দপুর জাগে নিত্য ভোরে
এই গাঁ খানি চাঁদনী রাতে জোছনা কত মাখে
কৃষাণ জেলে সবাই মিলে সেথা কত স্বপ্ন আঁকে । ।
দুই
এই গাঁয়ের কিশোর মনাই কাঁচা সোনা মুখ
ঝাঁকড়া চুলে রূপের ছটা দেখলে জুড়ায় বুক।
দুচোখে তার স্বপ্ন ছায়া মায়া ভরা টান
মুখে সদাই হাসির ঝলক দেখলে জুড়ায় প্রান ।
রাখালিয়া বাঁশির মত কণ্ঠে যে তার ঝরে মধুর লয়
নিমিষেই সব মানুষের মন করিত জয় ।
সাহস কত চওড়া বুকে চিবুক পড়ত নজরে
সঙ্গি সাথি লয়ে খেলায় মজত সাড়া টি প্রহরে ।
কভু কারও ফল বাগানে সুযোগ একটু বুঝে
মগ ডালে বসে পাকা ফল পুড়ত মুখে তাই মজাসে ।
ভারি খেয়াল চাপত যখন না শুনিত মানা
গাছের শাখায় খুজে ফিরত শালিক ময়নার ছানা ।
দল বেধে নদীর জলে অবাধে কাটত গিয়ে সাতার
কভু মাছের সাড়া পেলে ফেলে বড়শি করত তাই শিকার ।
কভু গাঁয়ের বিশ্রিত মাটে ওড়াইত ঘুড়ি
দূর আকাশের সাথে মিতালি আঁকত লাটাই সুতু ছাড়ি ।
মাঠের যত রাখাল বালক মান্য করত তারে
সাড়া গা খানি রাখত সরব তার চঞ্চল নজরে ।
তিন
পায়ে চলা পথ যে গেছে বহু দূর গাঁয়
গঞ্জ হাটে মাটে বাটে পথিকের আনাগোনা তায়
এই পথেরই বায়ে জাগে বনেদি বাড়ী মোড়ল পাড়া
সানাই বাধা পুকুর আর ফুলের বাগান শোভায় নজর খাঁড়া ।
এই বাড়ীরই মোড়ল জালু মিয়া দেশ কেশে তার নাম
অভাব নাহি ছিল তার তবু হল বিঁধি বাম
পুত্র লাভের আশে তব সংসার পাতে দুই খানি
অবশেষে এক কন্যার মুখ দেখে জুড়ায় নয়ন মনি
সেই আদরের দুলালী কন্যার নাম টি চমৎকার
শশি বলে ডাকে তারে কত রূপের বাহার ।
কাল ভ্রমর আখির পাতায় দেখতে নজর খাড়া
শ্যমল বরন চিবুক তাহার বধন মায়া ভরা ।
সখিদের লয়ে সারাটা দিন বাগান বাড়ী এসে
খেলত খেলা পুতুল বিয়ে তায় আনন্দে ভেসে
পুতুল বরের লাগি সাজায়ে রাখত গেথে ফুলের মালা
কনের বাড়ী দিত উপহার লতা পাতায় খাস্য পানের ঢালা ।
আয়েশ করে তামেদারির কত খোরমা পুলাও রাধে
কনে বিদায় করে তারা মিছামিছি রোধন করে কাঁদে ।
চার
লোকে বলত দস্যি মেয়ে দুসটমিতে জুড়ী মেলা ভার
তবুও তারে সব মানুষে করত স্নেহে আদর
পাড়ার রসুই বুড়ির অসুখ হলে করত গিয়ে সেবা
ঔষধ খাবার দিয়ে আসত ভাবত দুকুলে রয় তার কেবা ।
বুড়ি তারে করত দোয়া চিবুক খানি তুলে
রাজ পুত্রের মত জুটুক বর চান মুখি কপালে
শশি কহে ওহে বুড়ি নাই কি মনে ভয়
এমন কথার ছিরি আজও যমের ব্যারাম হয় ।
মোড়ল বাড়িএসে পড়ায় এক পণ্ডিত মশায়
জ্বেলে দিত অক্ষর জ্ঞান ছেলেমেয়েদের মাথায়
একত্রে শশি তুলি মধু , বেলি , মনাই আরও যত সাথি
বাঁশের কঞ্চি মাটির স্লেটে লিখত অক্ষর করে মাতামাতি ।
একটু বেজায় শিক্ষণীয় এদিক অদিক হলে
পণ্ডিত মশায় গর্জে গিয়ে দিত বেখাপ্পা কান মলে ।
কাকের টেং বকের টেং যাদের হত লেখা
তাই নিয়ে তামাশা কত হতো মজাসে পাঠ শেখা ।
পাঁচ
হেয়ালি মনাই করে কামাই বিদ্যালয়ে গমন
মারবেল খেলায় মন মজায় দাবিয়ে চৈত্র লগন
অনেক গুটি হেঁড়ে জিদ চাপে গাঁড়ে
আবার ছুটে বাড়ী করে চাল চুরি জিততে হবেই এবারে ।
এদিক অদিক চোখ মেলে পাকা দেখে ঘর
গামছায় লুকায় সের খানি চাল ভয়ে চকিত হয় অধর
অজান্তেই লেগে গায়ে ঢাকনা বাজে ঝন ঝন
আঁচ পেয়ে মামি সুধায় কি হলরে বাচাধন
কিসের শব্দ হল রে বাঁচা অলুক্ষনে ঘরে
মনাই কয় ওগো মামি বিড়াল ইঁদুর ধরে ।
ও তাই আমি ভাবলুম না জানি হয় কিবা
তা বাছাধন এ রুদ্দুরে ঘর ছাড়া না হইবা
মিথ্যা কহে মনাই মামি কে আসব আর যাব এ বেলায়
ফাঁকি দিয়ে এই যে ছুটে আর তারে কে পায় ।
ছয়
কিনে কতক খেলার গুটি সোনা গাজির দোকান থেকে
খেলা জমায় গাছের তলায় ধুলু বালি মেখে
সাগর সামসু টগর বকুল সবাইকে হারিয়ে
জুলা ভরে মনের সুখে কতক শক্তি দেখায়ে
না জিতিয়া ধূর্ত নুরু মনাইয়ের গুটি খাঁড়ি
এক ছুটে ত্রিসিমানা জমায় দৌড়ে পাড়ি ।
সাথিদের শাসায় যা ধরে আন মনাই রোষে গর্জে উটে
সঙ্গীরা তারে আনে বেধে তক্ষনি সে দুঘা বেত লাগায় পিটে ।
পাঠশালারই ঘণ্টা বাজে শশিরা আসে সে ক্ষনে
মনাই হয় অতি নিরব চেয়ে সখির পানে
শশি কহে অহে মনাই দিলি কেন স্কুল ফাকি
বলে দেব স্যার কে কেমন এ চালাকি
লক্ষ্মীটি ধরি কানে তবুও বলিস না কাউরে
মেলা থেকে লালা ফিতা কিনে দেব তোরে
শশি এবার নিকটে ভিড়ে ফিক করে হাসে
সেই হাসিটা লুটায়ে পড়ে মন পবনে মিশে ।
গাছের ফাকে সূর্যের আলো ঘোমটা কভু মেলে
ধান শালিকের মাঠে মাঠে স্বপ্ন ছায়া খেলে ।
সংক্ষেপিত ।
বাকি অংশ পরে প্রকাশ করা হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০