somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি , গল্প

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি ।। গল্প
***********
সাগর আর মিলির প্রেমের বিয়ে । মিলির সাথে সম্পর্কটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলনা সাগরের বাবা ছমিরউল্লা , তাই পালিয়ে বিয়ে । একটা ছুট খাট বাসা বাড়া নিয়ে ওরা শহরেই থাকে । সাগর বিয়ে পাশ করে একটা এঞ্জিও তে কাজ করে আর মিলি দুচারটা ছাত্র পড়ায় , ভালই কাটছে ওদের দিন ।
এক বছরের মাথায় ওদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় তাদের সন্তান । নাম রাখে সজীব ।
সজীবের মা শুনছ
আরে কি হল , আমি তো রান্না ঘরে ।
তোমার ছেলে আমার পাঞ্জাবিটা শীষ দিয়ে নস্ট করে ফেলল যে ।
কি বললে ছেলে শুধু আমার তোমার নয় , আজ থেকে সব কিছুর অংশিদার তুমি , আজ শিষ দিল কাল গায়ে ইয়ে করবে ।
আচ্ছা সোনা এবার আমায় মুক্তি দাও , আমাকে আবার এক্ষুনি বেরুতে হবে ।
কোথায় যাবে শুনি , তোমার তো আর মনে থাকেনা । আগামী শুক্রবার আমাদের বাবুর প্রথম জন্মবার্ষিকী , ঘটা করে অনুষ্ঠান করব ।
তাই তো আমার একদম মনেই ছিলনা ।
ও হা বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম , আগামীকাল আমাকে একটু চিটাগাং যেতে হবে , রাতের ট্রেনেই ফিরব , ওখান থেকে ফিরে বাবুর জন্মদিনের ব্যাপারটা
দেখব ।
তুমি বিয়ের পর কেমন হয়ে গেছ শুধু কাজ নিয়ে পড়ে থাক , আমি বলি কি শুন , তোমার সাথে আমাকে চিটাগাং বেড়াতে নিয়ে যাবে । দূর পাগলী আগে অফিসের কাজ সেরে নেই , সময় করে সে আশাও আর অপূর্ণ থাকবেনা ।
সাগর চিটাগাং এর উদ্দেশ্য রওয়ানা দিল তার সাথে ছিল আরও দুতিন জন ।
অল্পের জন্য ট্রেন মিস করে বাসে চড়ে ওরা রওয়ানা দিল । চিটাগাং মুল শহর পেরিয়ে পাহাড়ি চড়াই উত্রাই রাস্তা , যে কোন মুহূর্তে মনে হয় এই বুঝি বাস উল্টে একদম খাদে ।
কয়েকবার এমন হল যে বাসের সবাই একদম রিতিমত আতংকে । ব্যাগ থেকে পত্রিকাটা বের করে পড়ার মনোযোগ দিল সাগর , প্রথম পাতায় শিরোনাম , নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বাস উল্টে খাদে , নিহত ৭ / আহত ৪০ । সাগর এর মনে ভয় জাগল , মুহূর্তে মিলি এবং বাবুর মুখটা বারবার চোখের পর্দায় ভেসে উটল । নিয়তি যা থাকে কপালে তাই ঘটে , এখানেও ব্যাতিক্রম নয় । কিছুদুর যাওয়ার পর বাসটি সত্যি সত্যি নিয়ন্ত্রন হারাল এবং পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে এক্কেবারে খাদে এসে পড়ল ।
ভয়াল চিৎকার হুরুহুরি আর আতংকে বাস টি যেন এখন একটি মৃত্যু পুরী । এখানে ওখানে দলিত মলিত রক্তস্নাত লাছ । অসংখ্য লাছের ভিড়ে সাগর এর
ভোতা স্মৃতি লোভ পেল ।

কতদিন পর ঘুম থেকে জাগল সাগর সে ইয়ত্তা নেই , ঘুটঘুটে অন্ধকার ছাড়া হাতের লোম পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা । ঠাহর করতে পারছেনা এখন সে কোথায় আছে , আসলে তার কি হয়েছিল । হাত পা গুলু আড়ষ্ট , টাণ্ডায় জমে যাবার অবস্থা । হাত পা নড়াচড়া করার জন্য যেই চেষ্টা করা , বুঝা গেল তাও সম্ভব নয় , কারা যেন বেধে রেখেছে ।
অনেক কষ্টে আড়মোড়া ভেঙে বসার জন্য মন ছটপট করতে লাগল , দম যেন বন্ধ হয়ে আসতে চাইল , পৃথিবীর বাতাস নিঃশ্বাস নিতে এত ভারী লাগছে কেন । হটাৎ একটা খসখস আওয়াজ , এইতো কানের কাছেই । ভয় জাগল
এবার তার মনে পড়ল তার বাসটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল এবং সব যাত্রির সাথে স্বাভাবিক ভাবে সেও মারা যাওয়ার কথা ।
খসখস আওয়াজ টি আরও নিকটে মনে হচ্ছে , এমনও তো মনে হয় মৃত্যুর পরবর্তী জীবন শুরু হবে । কবরে ছয়াল জয়াব হবে ,মুঙ্কার নাকির ফেরেস্তা আসবে , ভাল আমলনামা হলে এখান থেকেই বেহেস্তি সুখ আর মন্দ আমলনামা হলে চিরজাহান্নাম ।
হিংস্র আওয়াজ টি এক্কেবারে মুখের উপর , তার গোল গোল চোখ দুটি যেন টর্চ লাইটের চাইতেই তিক্ষ , ভয়ে রক্ত হিম হয়ে এল । শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে সাগরের মুখ থেকে বের হল আরেকটি আওয়াজ বাঁচাও ।
সাগরের জ্ঞান ফিরল টাণ্ডা পানি যেন সারা শরীর ধুয়ে দিচ্ছে , কোথায় আছে
সে এখনও পরিস্কার নয় । কোন ভাবে উটে বসল , হাতের বাধন খুলল , বাধন তো নয় কাপড়ের গিট , উটে দাঁড়াবে চাঁদে মাথা টেকে গেল । এখনও দুচোখে রাজ্যর অন্ধকার , একটা ছিদ্র দিয়ে বাইরের কিছুটা আলো ভিতরে আসছে ।
ছিদ্র খুড়ে সাগর যখন মুক্ত আকাশের নিচে তখন সে আবিস্কার করল তার পরনে এবং সারা শরীরে সাদা কাফনের কাপড় দিয়ে ডাকা । এবার নিশ্চিত হল সাগর আসলেই এখন সে মৃত ।
একসময় আকাশে যে ক্ষিন আলোটা ছিল তাও এখন আর নাই আবার নিকষ কালো আধারে ছেয়ে গেল জঙ্গল এবং পাহাড়ি জায়গা । আকাশ ভেঙ্গে নামল
সপাৎ সপাৎ বিজলী আর প্রচণ্ড ভেগে ঝড় । হায়হায় এ আবার কোন কেয়ামত না পুলছিরাত মনে প্রশ্ন জাগে তার । ঝমঝম বৃষ্টি তে সে ভিজে একাকার ।
ক্ষিদেয় পেঠ জ্বলছে , রাতের আধার চলে যেতেই আবার মাঠির পৃথিবীতে ফিরে এল সাগর , আরে সূর্য উটেছে তাহলে আমি এখনও বেচে আছি ।
কাছেই ধুপ ধাপ শব্দ হল , সাগর থাকিয়ে দেখে দুই বালিকা কলসি জড়ায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে ।
এবার সাগর নিজেকে ধিক্কার দিল তার সর্বাঙ্গে পেছানো কাফনের কাপড় ।
তিন
পরের দিন স্থানীয় হাসপাতালে গেল চিকিৎসা নিতে । সাগর ডাক্তারের রুমে ডুকে যেই ডাক্তারের দিকে দৃষ্টিপাত করল ,অমনি ডাক্তার তাকে দেখেই চেয়ার থেকে ঢলে পড়ল । সে অজ্ঞান হওয়ার পরই সে অনুমান করল আসলেই
সে মানুষ নয় হয়ত মরে এখন ভুত । সে পালাল ।
ক্ষিদেয় পেঠ ছু ছু করছে , চুপি চুপি মুখটা ডেকে এক গ্রামের দিকে রওয়ানা দিল । দেখল পাশেই রাস্তার দ্বারে এক বাড়ীতে মিলাদ অনুষ্ঠান , মনে মনে সে খুশিই হল , ভাল মন্দ খাওয়া হবে পেঠের খিদেটাও এবার মেটানো যাবে ।
সবার সাথে অযু সহকারে মিলাদে অংশ নেয় সাগর , এবার দোয়ার জন্য সবাই হাত ঊটায় , ইমাম সাব তাকায় তার পানে , সাগর দেখে ইমাম সাব তার দিকে তাকিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল ।। এবার সাগর নিশ্চিত হল সে এখন আসলেই একটা ভুত ।
সে এখান থেকে পালিয়ে গেল বাজারে , খাবারের দোকান থেকে খাবার ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে পুলিশের হাতে । পুলিশ সাগরকে থানায় নিয়ে যায় । পুলিশের বড়কর্তা সাগর কে দেখে একদম ওদের মতই অজ্ঞান হয় ।।
সাংবাদিক রা নেমে পড়ে রহস্য উদ্ঘাটনে ।
সাগরের নিকট থেকে বিভিন্ন তথ্য ভিত্তিক সত্য প্রতিবেদন বেরিয়ে আসে সাংবাদিকের কলামে ।।
দুর্ঘটনার পর সবার সাথে মৃত জেনে সাগর কে জানাজা পরিয়ে কবরস্ত করা হয় । যারা জড়িত ছিলেন , সেই অজ্ঞান ডাক্তার যে কিনা সাগরের মৃত্যু নিশ্চিত করেছিত । সেই ইমাম যিনি সাগর কে জানাযা দিয়েছিলেন । সেই অছি যিনি সাগরের লাছের পোষ্ট মরডেম রিপোর্ট করেছিল ।



সুস্থ হয়ে যখন সাগর বাড়ী ফিরে তখন মিলি তা শুনে ভড়কে যায় ।
আর নিস্পাপ আদরের দুলাল কচি কোমল হাত দিয়ে আনন্দে ভরিয়ে দেয় তার বাবার শরীর ।




সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:১২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×