somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকাই , গল্প

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টুকাই
*********
হাবলু রাতের অন্ধকারে ঘর ছাড়ে , মনের সাথে যুদ্ধ করে সে এখন কঠিন সিদ্ধান্তের দ্বারপ্রান্তে । আর কত এভাবে নিজ পরিবারের অত্যাচার অনাচার সহ্য করে টিকে থাকবে । একমাত্র অবলম্ভন ছিল বড় ভাবি , যে তাঁকে ছোট কাল থেকে কুলে পিটে করে মানুষ করেছে । মায়ের মৃত্যুর পর ৬ মাস থেকে বড় ভাবি
মায়ের অভাব পূরণ করে তার মাধ্যমেই বেড়ে ঊটা । বাবা স্কুল শিক্ষক সেই
মায়ের পেটে রেখেই ইহজগত ত্যাগ করে । বড় এবং মেজু ভাই এর আচরন এমন যে মনে হয় ওরা তার সৎ ভাই ।
ভাবির স্নেহ আদর তার শৈশব জীবনে মা বাবার অভাব বুঝতে দেয়নি । সন্তানের
মত প্রতিটি অভাব পূরণ করেছে তার মাতৃত্তের মমতা দিয়ে । সেই মা সমতুল্য ভাবির সাথে তাকে মিথ্যা বদনাম রটিয়ে মেজু ভাবি কি কাণ্ডটাই না করল । তা শুনে বড় ও মেজু দুভাই তাকে ধরে আচ্ছামত পিটাল । রিতিমত তিন মাস তাকে বিছানায় পড়ে থাকতে হল ।
রাতের অন্ধকারে ভাবি আসে হাব্লুর জন্য খাবার লয়ে । হাব্লু হাবলু উট খাবার
কটি খেয়ে নে নইলে শরীর আরও খারাপ হবে যে , ইশ মুখটি কেমন শুকিয়ে
আমসি হয়ে গেছে ।
____ ভাবি আমি খাবনা তুমি আর আমার ঘরে আসবানা । যে আপন মায়ের পেটের ভাই তার রক্তকে অস্বীকার করে সেখানে তুমি কেন? আমার জন্য কষ্ট সইবে , মিথ্যা অপবাদ সইবে ।
___ হাবলু ভাই আমার তুই আমার সামনে একথাটি বলতে পারলি , সেই ছুট কাল থেকে তুকে আমি কত মায়ামমতায় বড় করেছি , আমি আমার নিজের সন্তানদের এত আদর করিনি যে টুকু তুঁই পেয়েছিস । হাবলু রে আইজ বুঝি আমার পরান ডা জইলা পুইরা খাক হইয়া গেল । বড় ভাবির দুচোখ বেয়ে হু হু করে পানি বেরুয় ।
---------- কেদনা ভাবি এই কান ধরে বলছি আমার ভাইয়েরা আমাকে কাটুক মারুক তবুও তোমাকে আমি কখনও হারাতে চাইনা । আজও তুমি খানা মুখে তুলে না দিলে আমি খেতে পারিনা ।
-------ভাবি ভাত তরকারি মেখে খানা মুখের সামনে তুলে ধরে , নে ভাই খেয়ে নে আর যেন দুষ্টুমি না হয় ।
----------বদমেজাজি বড় ভাই বাব্লু ঘুম থেকে উটে ঘটনাটা দেখে চিৎকার করে রাতের ঘুম হারাম করে দেয় । মাগি আবার চুপি চুপি পিরিতি চলছে । আজ না হয় তুকে শেষ করে ছাড়ব । বড় ভাবির চুলের মুটি ধরে বেদম পেটায় বড় ভাই হাবলু । ভাবির বোবা কান্নায় বিছানায় পড়ে কাঁদে হাবলু । আড়াল থেকে তা দেখে খিল খিল করে হাসে মেজু ভাবি ফালানি ----শিক্ষা হয়েছে এক্কেবারে জনমের ।
সেই থেকে হাবলুর মাথায় চিন্তা কেমন করে বাড়ী থেকে পালানো যায় ।
রাতের অন্ধকারে হাবলু শেষবারের মত বড়ভাবির কক্ষে ডুকে , তার পদস্পর্শ করে , তারপর ছোট ব্যাগটি কাধে ঝুলিয়ে অজানা গন্তব্য হনহন করে ছুটে ।
তার আঁখির পাতায় বারবার ভেসে উটে মায়ের অভাব বুঝতে না দেওয়া মায়ের মমতাজুরা বড় ভাবির মুখ, যার
স্তন খেয়ে সে বেঁচে আছে এই ধুলির ধরায় । তার অজানা গন্তব্য চলার সাথি
একরাশ অখণ্ড নিরবতা আর বুকের হু হু বুবাকান্না ।

দিনাজপুর থেকে পায়ে হেটে বহুদুর পথ অতিক্রম করে চলে আসে লঞ্চ ঘাটে । মালঞ্চে উটে পড়ে , লঞ্চ ছেড়ে দেয় । ভোরের আযান কানে আসে । ক্ষিদেয়
পেট ছু ছু করছে হাব্লুর । কিনে কিছু খাবে সঙে কানা কড়িও নেই ।
সকালে কত মেম ভদ্রলোক নাস্তা করছে মজাসে , দেখে দেখে জিভে পানি আনা ছাড়া তার আর কিছুই নাই । উপায় একটা আছে তা হল লঞ্চের চাপকল
থেকে পানি খাওয়া । হাত মুখ ধুয়ে চাপকল থেকে পেট পুড়ে পানি খায় সে এবং লঞ্চের ডেকে এসে শুয়ে পড়ে । ভোরের প্রকৃতি দেখে দেখে আর বিশুদ্ধ
বাতাস এর ঘ্রান লয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।
লঞ্চের কেরানির ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গে হাব্লুর । -------এই নবাবের বেটা কনে যাইবা ।
--- জি তা তো জানিনা ।
-------তার মানে ফাজলামো কর , সত্যি কইরা কও কনে যাইবা নইলে লঞ্চ থাইকা এখনই নামাইয়া দিমু ।
---- মাথা নিচু করে থাকে হাবলু , জি আমারে নামাইয়া দেন আমি চইলা যাই । -------- কোথেকে উটছ , শান্তা ফেরিঘাট থেকে ।
--------যাইবা কই ,
-----তাত জানিনা ।
--------আচ্ছা যেটুক এসেছ বাড়া হইল ৪০ টাকা ।
--- জি আমার কাছে কোন টাকা নাই ।
--------- টাকা নাই মানে মগের মুল্লুক পাইচ্ছ । টাকা বাইড় কর ।
------ জি আমার কাছে এই ব্যাগটা ছাড়া আর কিছুই নাই ।
কেরানি ফাত মুখ খিচিয়ে হাব্লুর ব্যাগটা দেখে , উৎসুক যাত্রীরা ঘটনাটা উপভোগ করে । ব্যাগ হাতিয়ে দেখে লাভের অংকের চাইতে ক্ষতি বেশি শুধুই অযথা সময় নষ্ট , কয়েকটা পুরনো ময়লা কাপড় ছাড়া সেথা আর কিছুই নাই । চিৎকার করে কেরানি এই তুই কাজ করতে জানিস ।
------- জি স্যার কি কাজ
----- এই ধর বাসন পাতি ধৌত করা , টেবিল খানা পরিস্কার ইত্যাদি ইত্যাদি । ------ জি স্যার , পারব ।
----- তাহলে আজই কাজে লেগে যা ।
হাবলু মনে মনে ভাবল ভালই হয়েছে ,কাজের বিনিময়ে লঞ্চ ভাড়া দিতে হবেনা এবং সেই সাথে কপালে খানাও জুটবে ।
সেই সকাল থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে হাবলু , এমন কি লঞ্চের ম্যানেজার সহ যারা লঞ্চের স্টাফ সবারই ফুট ফরমায়েশ করে । সবারই খানা দানার পর
যা কিছু অবশিষ্ট থাকে তাই জুটে তার ভাগ্য । রাতে থালাবাসন ধুয়ে ঘুমানোর
সময় হলে ম্যানেজার তাকে ডাকে ------ হাবলু হাবলু
---- জি স্যার
----------আমার মাথাটা টিপে দেত ।
মাথা টিপে হাবলু আর ঘুমে তার চোখ টুঁলুটুঁলু করে , একেকবার তার মনে হয় ম্যানেজারের টুটি চেপে ধরতে । মাঝেমধ্য বদমেজাজি ম্যানেজার রাগান্বিত হয়ে হাবলুর গায়ে হাত তুলে ,।
বেশ কদিন এভাবেই কাটিয়ে দেয় লঞ্চে হাবলু ।
একদিন সুযোগ বুঝে রাতের অন্ধকারে লঞ্চ ত্যাগ করে সে । হাটে সম্মুখ দিকে তার মনে মধ্য ভেসে উটে কৈশোরের উদ্দাম দিনগুলির কথা ।

চলবে ------



সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×