একাকী জীবন [ গল্প ]
************ এম , জি, আর মাসুদ রানা
নিঝুম রাত । নীলাভ আকাশ জুড়ে তারাদের মিটিমিটি হাসি । মানিকের চোখে ঘুম নেই । ইটের বালিশ । ছেড়া একটা চাদর বিছিয়ে সেথায় শুয়ে থাকে স্কুল ঘরের বারান্দায় । পাশে রাতের নির্জনতা ভেদ করে ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করে কুকুরের দল । পাশেই বড় রাস্তাটা । হর্ন বাজিয়ে চলে নানা পন্য বুঝাই ট্রাক বা নানা রঙের দামি গাড়ী । অদুরে বাজে সিকিউরিটি সীস বা বাঁশী , সাবধান । এসব তার নিত্যদিনের রুটিন । প্রথম প্রথম অসুবিধা হলেও এখন যেন আর তার খারাপ লাগেনা । দীর্ঘ বার বছর হল জীবনের সাথে তার এই যুদ্ধ । একলা চলা জীবন । কেউ দান করলে খায় নয়ত আধ পেটা
উপোষ ভাবেই কাটিয়ে দেয় দিনের পর দিন । অথচ তার মুখের হাসিটা যেন লেগেই থাকে অন্যর চোখে । যখন হাসে আকাশের তারাদের মতই তাকে অনেক সুখি মনে হয় ।
লেখকের সাথে একদিন মানিকের দেখা ।
লেখক , আচ্ছা আপনার জীবনের গল্প কি একটু জানা যাবে ।
মানিক , অবশ্যই জানবেন । বসেন মানিক তার গাঁয়ের চাদরটা বিছিয়ে দিল দূর্বাঘাসের উপর ।
লেখক ------ আরে দূর্বাঘাসেই তো আরাম আবার চাদর কেন ।
মানিক --- না এখানেই বসেন আপনারা হলেন জাতীর আলোকবর্তিকা , জ্ঞানের ভাণ্ডার ঝরে আপনাদের লেখনীতে । আপনারা হলেন সমাজের পথ প্রদর্শক ।
লেখক ---- বা সুন্দর কথা জানেন তো , তা আপনার লেখাপড়া কতদুর ।
মানিক --- ৮২ এ আমি মিরপুর গভমেন্ট স্কুল থেকে ফাস্ট ক্লাশ পেয়ে মেট্রিক এবং ৮৪ এ মিরপুর কলেজ থেকে আই এ পাশ করি । আমার আব্বা মিরপুর টি এন টি অফিসে সামান্য বেতনে ক্লার্কের কাজ করত । আমরা এক ভাই এক বোন । বোনকে ছুট বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন আমাদের পরিবার আমি এতে রাগান্নিত হয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম । ২ বছর
ছিলাম চত্রগ্রাম শিপে । রোজগার ভালই ছিল । কিছু পয়সা জমিয়ে বাড়ী চলে আসি ।
বাড়ী আসার কতেকদিনের মধ্যই আমার আদরের বোনটি বাচ্ছা প্রসব করতে গিয়ে মারা যায় । এই শোকে আমার মায়ের
অবস্থা প্রায় পাগল প্রায় । মাকে উন্নত চিকিৎসা করাই , ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসায় আমার মায়ের সুস্থতা ফিরে আসে । এবার মায়ের আবদার আমাকে বিয়ে করতে হবে ।
যথাবিহিত শুরু হল বউ পছন্দের উটকো ঝামেলা । অনেক বাচাইয়ের পর আমাদের পাঁশের গ্রামের মেয়ে নাম ছবি । তার সাথে আমার দেখা হয় । প্রথম দেখাতেই সে আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে । আমরা কাছাকাছি হই । মাস ছয়েক চলে আমাদের হৃদয় বিনিময় । এবার বিয়ে টা শুধু বাকি । আমি একদিন জানতে পারি ছবি নাকি এর আগেও আরেক খানে বিয়ে হয়েছিল কিন্তু তিনদিনের বেশি সময় গড়ায়নি বিয়েটা ওরা ভেঙ্গে দেয় যাই হোক সব কিছু জেনেও ছবির সাথে আমার
বিয়ে হয় মহা ধুমধামেই । এদিকে আব্বা চাকুরিকালিন মেয়াদ শেষ করে একটা দোকান খুলে বসেন । আব্বার পেনসনের টাকা পেয়ে আমি সিদ্ধান্ত নেই বিদেশ পাড়ি দেওয়ার । আমার বউ বসে নেই সেও তার বাবার নিকট থেকে টাকা এনে পাড়ি জমায় কাতার ।
ভাগ্যর নির্মম পরিহাস । আমরা ১২০ জন বাঙালি গিয়ে নামলাম সৌদি এয়ারওয়েজে , সেখান থেকেই আমাদের ফিরিয়ে দিল সৌদি কাস্টম কারন আমাদের ভিসা ছিল জাল কোম্পানি ছিল নকল । ধরা খেয়ে আমি একেবারেই পথের ফকির ।
আব্বা এসব শুনে হার্ডফিল করলেন , এই যে তিনি বিছানায় পড়লেন আর উটলেন না ।
কথাগুলু বলে দম নিলেন মানিক , একটানা কথা বলায় মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসল লালা । বাম হাত দিয়ে লালা মুছে পকেট
থেকে একটা বিড়ি বের করে ধরালেন । ----- স্যার কিছু মনে করবেন না , এটা মাঝে মধ্য খাই ।
লেখক ----- আচ্ছা , তারপর ।
মানিক -------- আমাদের তিন সন্তান ২ ছেলে এক মেয়ে । আমি ওদের স্কুলে ভর্তি করে দেই । সংসারে বড় টানাটানি , নাই চাকরি , বউ বিদেশ । বড় কষ্টে করছিলাম দিনযাপন । আমার এহেন ধন্য দশা দেখে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাকে পিয়নের চাকুরীটা করতে বলেন । আমি যেন মাটি পেলাম । বেশ কয়েক বছর কেটে গেল আম্মাও জান্নাত বাসী হলেন ।
একদিন স্কুলের ঘড়িটা চুরি হল । সবাই সন্দেহ করে বসলেন আমাকে ।
আসলে কি নতুন এক পিয়ন স্কুলে ডুকতে চায় । আমাকে ফাঁসানোর জন্য ঘড়িটা আমার রুমে ওরা রেখে আসে । পরদিন পুলিশ ঘড়ি সহ আমাকে গ্রেফতার করে । সহজেই আমার চাকুরীটা চলে যায় । কি আর করা রিক্সা চালিয়ে কোন ভাবে বাচ্ছাদের ভাত কাপড়ের ব্যাবস্থা করি ।
লেখক ----- আপনার বউ কি টাকা পয়সা পাটায়নি ।
মানিক ------ না , ছবি দেশে ফিরে আসে কিন্তু আমাদের মধ্য বনিবনা হয়নি ।
লেখক ----- তাহলে ছেলে মেয়েরা কার মধ্য আছে
মানিক ---- ছেলে মেয়েরা তার মায়ের সাথেই আছে আর আমি হয়ে গেলাম একা ।
লেখক ------ কেন ? এখনও তো সময় আছে দুজনাতে মিল হয়ে যান , দেখবেন আপনারা কত সুখি ।
মানিক – সে চেষ্টা করা হয়েছে বারবার কিন্তু কোন ফল আসেনি ।
লেখক ------------ ছবি কি অন্য কোথাও ।
মানিক ----- না না সেকথা বলবেন না ছবি খুবই অনেস্টি ।
রাতের আধার ফালফালা করে একটা নিশাচর পাখি উড়ে গেল নীল দিগন্তে ।
লেখক দেখল মানিক চলে গেছে আগুনের ধুয়ার নিকট । প্রতিদিন এভাবেই কাগজ পুড়িয়ে ধুয়া বানায় আর চেয়ে থাকে
আকাশের তারাদের পানে ।
[
আলোচিত ব্লগ
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন