somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামাজিক রহস্য উপন্যাস * প্রিয় মুখের ছায়া । ২য় খণ্ড ।

১৫ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামাজিক রহস্যউপন্যাস ।
প্রিয়মুখের ছায়া ।।
রচনা<> এম, জিল্লুর রহমান মাসুদ রানা ।
২য় খণ্ড ।
গ্রামীণ জীবনের এক রহস্যঘেরা পল্লী প্রকৃতির ছায়া অবলম্ভনে । এক নিঃশ্বাসে পড়ার উপযোগী ।

১১ ।
ভাগ্যর নির্মম পরিহাসে লেখাপড়া বাদ দিয়ে অনিদ আজ রাখাল ,তার পরনে তেল ছিট ছিটে জামা ।হাতে কাস্তে ও কাঁচা ,সোনা ঝরা রোদ টিকরে পড়ে সকালের শিশির ভেজা ঘাসে । তার প্রিয় লাল গাইটি কচি নরম
ঘাসে মুখ ডুবিয়ে চিবোয় আর বাছুর টি পাশেই তিরিং বিরিং লাফায় ।এই নতুন অথিতি বিচিত্র পৃথিবীর রূপে ক্ষনিকের আনন্দে বিভোর । হটাৎ দিক বিদিক দৌড় শুরু করে । আবার ধান খেতে নয়ত ক্ষেতের আইলে ধাক্কা খায় , গন্ধ শোকে । অবাক তাকিয়ে থাকে আবার ফিরে আসে মায়ের নিকট । নীল আকাশে ঝাকে ঝাকে পাখির ডানায় রুদ্র
ছায়ার খেলা । গুনগুন সুরে গান গেয়ে ঘাস কাটে সে ।
নিরবতা ভেদ করে একটা কণ্ঠ ভেসে আসে তার কানে , চমকে উটে অনিদ ।
কে আমার ক্ষেতে ঘাস কাটিস এত বড় সাহস।
,এবার গাড় গুড়িয়ে বলল , জি চাচা ঘাস ত হগলেই কাটে,তাই আমিও ।
চুপ এই জমি এহন আমার । এইহানে আর কেউ ঘাস কাট তে পারবেনা বুঝলে । যা এক্ষনি জায়গা ছাইরা চইলা যা ।
হটাৎ অনিদ হাতটা ছেপে ধরে রাগে গজ গজ করতে করতে বাড়ীর দিকে ছুটে সে । উঠানে খেলা করছিল ছোট বোন ।ওকে দেখে দৌড়ে আসে, ভাইয়া তোমার হাতে লাল রঙ কেন ।উঃ ওটা রঙ নয় রক্ত কেটে গেছে বুঝলে । ইস মা মা দেখ না ভাইয়ার হাত কেটে ফেলেছে ।
মা হালিমা বেঘম রান্না ঘর থেকে ছুটে আসে কই দেহি,তরে বেবাক সময় কই সাবধান থাকতে তুই হুনস না তুই কি অহন ছুডু । শিলা কাচা নরম দূর্বা ঘাস খুজে আনে । মুখে পুড়ে বেশ নরম করে হাতে লাগায় ,মা ন্যাকড়া দিয়ে বেধে দেয় । মা আর পারছিনা যে দিকেই যাই সেখানেই লালচান চাচা সামনে এসে একটা না একটা বাধা হয়ে দ্বারায় । বজ্জাত লোকটার জন্য কি আমি কিছু করতে পারবনা । কেন কি হয়েছে আবার খোকা । গেছিলাম গাভীর জন্য ঘাস কাটতে আর লোকটা আমাকে ধমকে ক্ষেত থেকে তুলে দিল । বলল জমিটা নাকি তার বাপ দাদার । ঈশরে বললেই হল বারানীর ঘরে কেরানী আর কি । আমরাই দেখেছি তার বাপ ঘোড়া দিয়ে ধান আনানেওয়া করত বিনিময়ে মানুষ যে যত দিত তাই দিয়ে সংসার চালাত । এখন বিলের মালিক ।পয়সা ওয়ালা জমিওয়ালা । যাক লোকটির দ্বারে কাছেও যাবিনা । সময় আসলে ওর পাপের পতন একদিন হবেই ।

১২

নদীর নাম খালিজানা । তীরে দাঁড়িয়ে অনিদ । দুপুরের রোদ টিকরে পড়ে গাঁয়ে ।কত স্মৃতি মনে
জাগে ।ইয়ার বন্ধুদের লয়ে মাছ ধরা সাতার কাঁটা গাছের ডালে বসে আপন মনে বাঁশি বাজানো ,শশির সাথে মাটির পুতুল নিয়ে খেলা আরও কত কি , এখন মরা নদী ।

অনিদ খেয়াল রাখে কখন পাহারাদার আসে, তার সমবয়সী ছোট বড় অনেকেই একসাথে নদীতে মাছ ধরতে নামে । হুররে হুররে চেচামেচিতে কানে তালা লাগে
অনেকেই মাছ ধরে , কাদা সরিয়ে উবু হয়ে পানি ঠানে ফলে গর্তে প্রচুর টেংরা পুঁটি ও ছোট মাছ জমা হয় । হাতের মুট ভরে ভরে যারযার ছোকড়ায় মাছ তুলে । কে যেন সংকেত দেয় , হইরল হইরল সাবধান কণ্ঠ শুনে সবে ত্বরা করে নদী থেকে উটে পড়ে । যে যে দিকে পারে দেয় দৌড় , অনিদের ভাগ্য মন্দ। হইরল চান্দু এসেই ওর ছোকড়া জালি আটক করে , এই নবাবের পুত গাং কি তোর বাপ দাদার । অনিদের কণ্ঠে ঝাঁজ , হু আমার বাপ দাদারই দে আমার ঢেক জালি দে । পাহারাদার তেজ দেখিয়ে বলল , না দিমুনা ।
অনিদের রাগ চরমে উটে , সে একটা ডিল ছুড়ে পাহারাদারের কপালে , ডিল টা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে ডলে পড়ে যায় পাহারাদার নদীর কিনারে । হতভম্ব হয়ে অনিদ ভয়ে কাপতে কাপতে বাড়ীর দিকে ছুটে ।
মা ছালেহা বেঘম অনিদের দিকে তাকিয়ে চমকে উটে , তর এই হালত কেন ? মাছ কিছু পাইছস ,
না মা তয় এক কাম করছি বিলের পাহারাদার আমার জালি , ডেগ খাইড়া নিবার চাইছিল
হেরে এক ঘায় মাটিতে _ । সর্বনাশ তুই কেনে এইকাম করতে গেলি অহন আমরার কি অইবরে বাজান ।
উটানে গলা সাধে লালচান ভাবিছাব ,কি আর অইব ভাতিজা যে কাজ কইরা আইল তার
নির্ঘাত জেল অইব । অনিদের মায়ের কণ্ঠে আহাজারি , হায় আল্লাহু এহন উপায় , আমি যে কিছুই ভাবতে পারছিনা । পুলিশের তারা আর জেলের ভাত খাইতে না চাইলে অনিদ কে এক্ষনি বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দিতে অইব । হু যা ভালা অয় তাই কর ভাই আমি আর কিচ্ছু বুঝিনা ।
অনিদের মা , এ বিষয়ে কোন চিন্তা কইরনা , আমার পরিচিত লোক আছে চাঁদ পুরে ঐখানেই গিয়া থাকুক
ভেজাল শেষ অইলে পরে নিয়া আইমুনে কেমন । কিন্তু যাওয়ার খরছ সাথে ত একটা পয়সাও নাই । তা আমি দেখছি । মুখ ভার করে অনিদ বোবা কান্নায় ভেংগে পড়ে , তার সাথে কাঁদে মা আর বোন শিলা ।
বাড়ী থেকে বের হয় সে একটা ঝাপসা স্মৃতি ভেসে উটে তার মনে ।সে রওয়ানা হয় অজানার পথে ,মাঠে লাল গাই ও তার বকনা বাছুর
তাকে দেখে হাম্বা হাম্বা ডাকে। দূরে গাছের ছায়ায় দেখে শশি দাড়িয়ে আছে মুখে তার সেই মিষ্টি
ভরা দুষ্টুমি ছবি । গাড়ির হুইসেলে ঘুর কাটে ওর । গাড়ীর ঝাকুনিতে তার মনে হয় এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে তার জীবনের অজানা কোন সুত্র । সে কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছেনা । কি থেকে যে কি হয়ে গেল । তার মনে একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে । যদি পাহারাদার লোকটি মরে যায় তাহলে তো ,না আর ভাবতে পারছেনা ।, সর্বপ্রথম তাকে যে ঘৃণা করবে সে আর কেউ নয় তারই ভালবাসার মানুষ । চিৎকার করে বলবে তুমি তুমি একটা খুনি তুমি একটা খুনি । আমি তোমাকে ঘৃণা করি ঘৃণা করি । আজ ভাগ্য বিরম্ভনায় সে ছুটে যায় কোন অজানার উদ্দেশ্য সে নিজেই জানেনা ।
১৩
ধূর্ত লালচানের মুখে কুটিল হাসি । এইত সময় এবার অনিদ মিছামিছি ফেরারি হয়ে পালিয়ে বেড়াবে আর এই সুযোগে অনিদের বাড়িটাও ছলচাতুরী করে দখল নেওয়া যাবে । হায়রে মোহ , তার নিকট সব সত্য নিস্প্রভ । যার মনে একবার এ মোহের আবির্ভাব ঘটে তখন তার নিকট পাওয়ার যে আখাংকা প্রবল হয় । তখন সে অন্ধ হয়ে যায় । বহুদিন যাবত এই বাড়ীটির উপর তার লোভ ছিল আজ কাজে লাগাবে তার ধূর্তামি ।
উটানে দাড়িয়ে ডাকে , ভাবি আপাতত তোমার ছেলে মুক্ত তাকে নিরাপদে ঢাকায় পাটিয়ে দিয়েছি । এবার থানা সামলাতে হবে । যতটুকু জেনেছি নদীর পাহারাদার এখনও মরেনি তবে বাঁচবে কিনা সন্দেহ । আমি তাদের সাথে আলাপ করেছি ওরা ক্যাইছ করতে চায় । আমি গোপনে ওদের সাথে দেখা করে একটা পয়ছালা করে এসেছি ।
এবার হালিমা খাতুন মুখ তুলে তাকায় কি পয়ছালা ভাই । আমি আর কিছু বুঝিনা এ বিপথ থেকে যদি একমাত্র আল্লাহ রক্ষা করে । লালচান বলল এই নিয়া টেনশন লইওনা ভাবিছাব আমি আছিনা ।
পয়ছালা করেই এসেছি , ওরা চিকিৎসা বাবদ বেশ কিছু টাকা চায় । কত টাকা লাগবে ভাই । এই ধর লাখ দুই লাখ তো লাগবেই । এবার হালিমা বেগমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে । এত টাকা আমি কোথায় পাব । কেন ছেলের মায়া কি তোমার নাই । তোমার ছেলে কে সারাজীবন জেল হাজত থেকে বাচাতে প্রয়োজনে টাকা আমি দেব । তুমি দেবে কিন্তু টাকা শোধ করে দেওয়ার সাধ্য যে আমার নাই ।
একদিকে তোমার বাড়ী টা দলিল করে দেবে আর অন্যদিকে ছেলের মুক্তির টাকাও পেয়ে যাবে । ছালেহা বেঘম এবার পায়চারী করে । ভাই আমি যাব ওদের সাথে কথা বলতে । আরে কি কও ভাবি তোমারে দেইখ্যা ওরা আবার মার্ডার ক্যাইচ করে বসতে পারে । ক্ষেইপা গিয়া অন্যকিছু কইরা বসতে পারে , যা হিতে বিপরিত হবে । আমি মাত্র বার ঘণ্টার সময় নিয়ে এসেছি ।
কিয়ংক্ষন ভেবে সালেহা বেঘম ছেলের মঙ্গলের কথা ভেবে চোখের জল নির্গত করলেন । টিক আছে ভাই তুমিই এখন আমার একমাত্র দুর্দিনের সহায় ।
লালচান এবার পাঞ্জাবির পকেট হাতড়ে একটা কাগজ বের করল । এই যে কাগজ এখানে একটা সই কর , ভাবি আমি বাড়ী বন্ধক বাবদ টাকা দিয়ে দিচ্ছি । কোনদিন ছেলে কামাই রোজগার করে যদি টাকা ফেরত দেয় তাহলে তোমাদের বাড়ী আবার তোমরা ফেরত পাবে ।
সেই কবে অক্ষর শিখেছিলাম দস্তখত মনে নেই । টিক আছে ভাবি টিপসহি দিলেই চলবে । লালচান ভাই আমার বাড়ীটা ছেড়ে দিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছিনা ।
ভাবিছাব ভয় নেই আপাতত কয়েকদিন এখানেই থাক পরে একটা না একটা উপায় হবেই । এই যে ভাবি পুকুর সহ ৬০ শতাংশ বাড়ীর দাম ১লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ।
ছালেহা বেঘম টাকা টা নিয়ে দুহাত আঁকড়ে ডুকরে কেঁদে উটে । দাও টাকা গুলু দাও এখন আর মায়াকান্নার সময় নেই । টাকা সময় মত পৌঁছে না দিলে আবার কি থেকে যে কি করে বসে ওরা ।
লালচান টাকার থলেটা কুমরে পেছিয়ে দ্রস্তে ঘর থেকে বের হয় । ছালেহা বেঘম পুত্রের কল্যানে তার শেষ সম্ভল শ্বশুরের ভিটামাটি বিক্রি করে দেয় । হায় কি দুর্ভাগ্য নিজের বাড়ী বিক্রির টাকা নিজে ভাল করে গুনেও দেখার সুযোগ পায়নি । অবশ্য সে সময় টুকু পর্যন্ত তাকে দেয়নি কুট কুশলী লালচান ।
*** ১৪ ।
অনিদ ট্রেন থেকে নামে । হাজার হাজার লোকের কলরব চিৎকার । জীবনে এই প্রথম তার ঢাকায় আসা । চারিদিকে শুধু দালান আর দালান । স্টেশান থেকে নেমে বামের একটা রাস্তা দেখা যায় সেদিকেই তার চালায় পা । গাড়ীর হর্ন রিক্সার টুংটাং আওয়াজ ছাপিয়ে হটাৎ শুনা যায় একটা মেয়েলি কণ্ঠ ,ছিনতাই আমার ব্যাগ ছিনতাই আমার ব্যাগ । অনিদ ঘাড় বাকিয়ে দেখে এক ছিনতাইকারি ভদ্রমহিলার ব্যানিটি ব্যাগ ছিনতাই করে পালাচ্ছে । নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেনি সে দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলল ছিনতাই কারিকে । আশেপাশের লোকজন জরু হল । উভয়েই মারামারি করছে । ভদ্রমহিলা এসে লোকদের বলল আপনারা দাড়িয়ে দেখছেন কি , এই লোক টা ছিনতাই কারি। বলার সাথে সাথে ছিনতাই কারির উপর ঝাপিয়ে পড়ল জনতা , সে কি উত্তম মধ্যম । আর এই যেন ভদ্রলোক আপনি না থাকলে তো আমার ব্যানিটি ব্যাগের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সহ সব এতক্ষনে গায়েব হয়ে যেত ।
ধন্যবাদ আপনাকে । অনিদ এবার চোখ তুলে চাইল । খুব সুন্দরি একটি মেয়ে দেখলে যে কারও মাথা ঘুরে যাবে । এবার কিশোরী এগিয়ে আসে , ধন্যবাদ সাহেব আপনি না থাকলে কি যে হত । আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব । অনিদ মৃদু হাসি মুখে বলল না না এটা আমার কর্তব্য ছিল । মেয়েটির পরনে নীল পেরে টাঙ্গাইল শাড়ী । হাতে দামি রুলিং । কানে সোনার দুল । গলায় মুক্তার মালা ।
এবার কিশোরী জিজ্ঞাসে সাহেব আপনি কি ঢাকায় থাকেন । না , মানে আমি আজকেই এসেছি এবং এই প্রথম আমার ঢাকায় আসা । তাই নাকি । হু । তা আপনি কোথায় যাবেন । তাতো জানিনা তবে আমার পকেটে একটা ঠিকানা আছে । এখনও খুজ করিনি । দেন তো দেখি আপনার কিছুটা উপকার যদি আমার দ্বারা হয় । অনিদ পকেট থেকে একটা কাগজ বের করল ।
তাতে লেখা ঢাকা ঝিঞ্জিরা সুত্রাপুর । কিশোরী কাগজটি কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করল তারপর বলল এটা কখনও ঢাকার ঠিকানা নয় ।যে আপনাকে এই ঠিকানায় আসার কথা বলেছে সে ভুল ঠিকানা দিয়েছে । অনিদের আগেই সন্দেহ হয়েছিল । লালচান কাকা লোকটি এমনিতেই মন্দ টাইপের কিন্তু এখন তার মাথায় যেন বাজ পড়ল । তার আর বাড়ী ফেরার রাস্তা নেই ।না জানি পাহারাদার লোকটি এতক্ষনে মরে গেছে কিনা ।
কিশোরীর কণ্ঠে কথা ফুটে । তাহলে আপনি এখন কোথায় উটবেন সাহেব । অনিদ মাথা দুলিয়ে বলল কিছুই বুঝতে পারছিনা । এদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে ঢাকার লোকালয়ে । কিশোরী বলল অনিদ সাহেব চলেন তাহলে আমাদের বাসায় ।
পরে না হয় ভেবে চিন্তে টিক করবেন গন্তব্যর ঠিকানা ।
আমি যাব আপনাদের বাসায় । সে তো প্রশ্নই আসেনা আর একে তো অপরিচিত । এবার কিশোরী অনিদের হাত ধরে বলল আপনি আমার এতবড় উপকার করেছেন আর আমি আপনার সামান্য উপকারে আসবনা সেতো হয়না । চলেন ।
এবার অনিদ আর কোন কথা বলার মওকা পেলনা । দুজন একটা রিক্সায় চাপল । আচ্ছা ম্যাম আমার নাম যে অনিদ সেটা আপনি কিভাবে জানলেন । ওহা তাই তো । হয়ত আপনার অজান্তেই আপনার মুখ ফসকে নামটা শুনে ফেলি । অনিদের মনে আবারও প্রিয়তার ছবি ভেসে উটে । মনে সন্দেহ জাগে । মনে পড়ে গুরুজির বানী , কারও উপকার করা ভাল কিন্ত্ উপকারের প্রতিদান নিয়ে নিজেকে ছোট করা মুর্খামি ।
অনিদ একসময় রিক্সাওয়ালাকে বলল ভাই থামত আমি নামব । এবার কিশোরী হেসে বলল আমার নাম বিথি । আমি যা করি ভেবে চিন্তেই করি । সারাদিন ঘুরে ফিরে যেখানেই যাবেন সামনে এই আমাকেই পানেন । আর মিছে চিন্তা ভাবনা করে কোন লাভ নেই । আমাকে আপনি এখনও হেফাজত করতে পারেন নি । আপনার উচিৎ আমাকে অন্তত আমাদের বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসা । অনিদ এবার কিছুটা লজ্জিত হল । একসময় একটা বিরাট সুন্দর কারুকার্যমণ্ডিত বাড়ীর সামনে রিক্সা থামল ।
১৫
মধু স্রস্তে ছুটে আসে চাচি চাচি ও চাচি । এতক্ষন ছালেহা বেঘম ছেলের জন্য চোখের জল নির্গত করছিল । ছালেহা বেঘম মধুকে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল , বাবা মধু এখন আমাদের কি হবে । কেন চাচি এমন কি আবার হল যার জন্য চোখের জল আর নাখের জল এক করে । আমার অনিদ যে কি করেছে তা তুই শুনিস নি । অনিদ আবার কি করল চাচি । আর সে এখন কোথায় । বাবা , অনিদ গিয়েছিল মাছ ধরতে পাহারাদারের সাথে ঝগড়া করে পাহারাদারের মাথা নাকি গুড়িয়ে দিয়েছে ।লালচান বলল সে আর বাচবেনা আমাদের অনিদ কে নাকি পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে ।
চাচি তোমাকে এসব কে বলেছে আমিই তো অনিদের সাথে ছিলাম । পাহারাদার কে আঘাত করার পর পাহারাদার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল কিছুক্ষন পর তার জ্ঞান ফিরে আসে , দেখলাম সে তো এখন পুরাপুরি সুস্থ ।
এবার ছালেহা বেঘম হাওমাও করে কাদে লালচান আমার এতবড় সর্বনাশ ক্যান করলি । তার কান্নার আওয়াজে আশেপাশের বাড়ীর সবাই ছুটে আসে । কেহ বলছে বুবাই কি হইল কেহ বলছে ভাবি , চাচি ,ফুফু নানাজনের নানা জিজ্ঞাসা । এবার ছালেহা বেঘম সবিস্তারে অনিদ কে ব্যাবহার করে বাড়ী দলিল পর্যন্ত ওদের শুনায় এবং শেষ তক টাকা নিয়ে উধাও ও চাতুরীর বিষয়টি সবাইকে জানায় ।
গ্রামের লোক শুনে লালচানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে । এ পর্যন্ত প্রকাশ্য কেহ তার বিরুদ্ধে কিচ্ছু বলেনা কারন কয়েক গ্রামের মধ্য তার মত ধূর্ত ইজারাদার এলাকায় আর একটিও নেই । আশপাশের যত বড় বড় বিল সব তার দখলে /যখন যে দল ক্ষমতায় যায় তখন সে সেই দলেরই ছাইমছা হয় । এলাকার মানুষ একদিন অতিষ্ঠ হয়ে একসাথে বিল দখলের পায়তারা করেছিল । সে দলের সর্দার ছিল অনিদের বাবা আরজ আলী । লালচান গংরা ঐ দিন টাকা পয়সা খরচ করে বন্ধুক ধারি লাটিয়াল বাহিনী ভাড়া করে । পরেরদিন এলাকাবাসী বিলের পাড়ে একত্রিত হয় । আরজ আলীর নেতৃত্বে লোকজন জালি পল সহ জলমহালে নামলে এদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় লালচান ইজারাদারদের ভাড়াটে গুণ্ডারা ।মাটিয়ান বেশ কয়েকজন জেলে আহত হয় । আরজ আলীদের অবস্থা বেহাল । তিনি খুবই সাহসি ছিলেন । একাই কুচ দিয়ে গা লাগিয়ে কয়েকজন ভাড়াটে গুণ্ডাকে আহত করেছিলেন এবং বিল দখল নিয়ে সাধারন জেলেদের রুজি রোজগারের ব্যাবস্থা করেছিলেন ।
২ বছর পর হটাৎ করে আরজ আলী উদাও হয়ে যায় , আজ থেকে এক যুগ হয় তাকে আর খুজে পাওয়া যায়নি । লালচান এখন এই এলাকার একচ্ছন্ন প্রভু । লোকে তাকে যতটা না ভয় পায় তার চাইতে ভয় পায় কখন কোথায় তার হাতে নাজেহাল হতে হয় । তার বিবাহযোগ্য একটি ছেলে তাও হাবাগুবা ।
শিলা মায়ের কান্না দেখে মায়ের সাথে সেও জুড়ে সুরে কাঁদতে থাকে । মধু এবার পায়চারী করে চাচী চিন্তা করনা আমি লালচান কাকার বিরুদ্ধে শালিশ ঢাকব । মধুর কথায় সবাই সমর্থন জুগায় হু হু এর একটা বিহিত করতেই অইব । মধুর মুখ থেকে উচ্ছারন হয় হায়রে লোভ শেষতক এই লোভ যেমনি অন্যকে গিলে নিচ্ছ রাগব বোয়াল হয়ে , একদিন সেই নিজেকেই তুমি লোভের ফাঁদে আটক দেখতে পাবে ।
১৬।
বিশাল বাড়ীর চাকচিক্যময় অবস্থা দেখে রিতিমত অবাক হয় অনিদ । এর আগে এতবড় এত সুন্দর বাড়ী আর সে দেখেনি । কি সুন্দর চলন্ত লিফট , টায় দাড়িয়ে থাকলেই যে কোন সময় উপড়ে উটা যায় আবার নিচেও নামা যায় । প্রত্যকটা কক্ষে সুন্দর সুন্দর মখমলের বিছানা , দামী আসবাবপত্র । দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায় ।
একটা কক্ষে এসে থামল মেয়েটি । কক্ষে শুধু দামী যন্ত্রপাতি । এবার কৌতূহল বসত অনিদ বলল ম্যাম এসব কি । এটা আবার গবেষণাগার । আর৪ তুমি আমাকে ম্যাম ডাকবেনা বুঝলে । তাহলে কি বলে ডাকব । বিথি নামে ডাকবে । আচ্ছা ম্যাম ।
বিথি

হা হা করে হেসে ফেলল । তুমি আবারও আমাকে ম্যাম ডাকলে যে । ও হা ম্যাম আর ভুল হবেনা । তা ম্যাম বাড়ীতে আর কাউকে দেখছিনা যে । আপনি কি তাহলে একাই থাকেন নাকি । না আমার সাথে কাজের লোক সহ আরও অনেকেই থাকে । অনিদ সাহেব পরে না হয় বসে গল্প করা যাবে এই যে বাথরুম আগে ফ্রেস হয়ে নাও । অনিদ কিশোরীর আচরনে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেনা একে তো গাঁয়ের ছেলে তারপর মেয়েটির অদ্ভুদ সৌজন্যতা থাকে অনেকটা হত বিহবল করে দিল ।
খাবার টেবিলে গিয়ে হতবাক সে এমন কোন ফল বাকি নেই যা সেথা পরিবেশন না আছে । এটা খাও ওটা খাও । কোনটা রেখে কোনটা খাবে অনিদ । আচ্ছা অনিদ সাহেব আমার একটা প্রশ্নের উত্তর চাই । কেন আপনি বাড়ী থেকে বের হলেন আর ভুল ঠিকানাই বা আপনাকে কে দিল । অনিদ কিয়ংক্ষন নিরব রইলে কিশোরী বলল বেশি গোপন কিছু হলে আমার নিকট না বলাই ভাল ।
অনিদের গায়ের ঘটনা চোখের সামনে সব কিছু ছবির মত ভাসে , না মানে আমি আর আমার মা আর একটি আদরের বোন আছে । বেশ ভালই কাটছিল আমাদের দিন । মায়ের কথায় গেলাম নদীতে মাছ ধরতে অমনি পাহারাদার হটাৎ কলিং বেল বেজে উটল । কিশোরী ছুটে গেল দরজায় । এক লোক ছালাম দিল ,ম্যাম এই আপনার নকশা । ধন্যবাদ ব্যরিয়েল । ব্যারিয়েল লোকটি মাথা কুর্ণিশ করে চলে গেল ।
আচ্ছা অনিদ সাহেব আপনি যে ঢাকায় এখানে না কোথায় আছেন তা আপনার মা বোন জানবে কি করে । আপনার কাছে তো কোন মোবাইল নেট সুবিধা কিছুই নেই ।
হা তাই তো । ভাল কথা মনে করেছেন বলুন তো কি করা যায় । না চিঠি লিখে জানব । কিশোরী এবার মাথা দুলিয়ে বলল চিন্তার কোন কারন নেই অনিদ সাহেব আমার কাছে একটা ম্যাজিক মেশিন আছে যা অল্প কিছুক্ষনেই আপনার সব সমস্যার সমাধান দেবে । অনিদ কথা শুনে আবারও বোকার মত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ।
আবারও রহস্যর গন্ধ পেল অনিদ । তিন তালায় গেল ওরা একটা কক্ষে বিরাট এক ঈগল পাখি যেন এক্ষনি ছোঁ দেবে ওদের । পাখা দুটি বিস্তার করে যেন মাত্র আকাশে উড়াল দেবে । পাখিটার নখরে যেন লাল টকটকে রক্ত লেগে আছে । অনিদ কিছুটা ভড়কে গেল । কিশোরী মুখ খুলল ভয় পেয়না তুমি । কিশোরীর একটা হাত ঈগলের চোখে চলে গেল । ঈগল শো শো করে অনেক উপড়ে উটে স্থির হয়ে রইল । অনিদ দেখল ঈগলের পেট টা ফেটে একটা ইজি চেয়ার দুলনার মত ঝুলছে । কিশোরী বলল এই হল আমার ম্যাজিক ম্যাশিন । এই চেয়ারে উটে বস । অনিদ কিশোরীর কথামত চেয়ারে উটে বসল । ধিরে ধিরে চেয়ারটি ঘুরপাক খাচ্ছে তাকে নিয়ে একটা কাঁচের ভেতরে নিজেকে দেখতে পেল অনিদ । অনিদের চোখে একসময় নেমে এল রাজ্যর ঘুম । অনিদ এবার যা দেখতে পেল । এইতো তাদের গ্রাম ।মা রান্না করছে আর শিলা রান্নাবান্নায় মাকে সাহায্য করছে । তার বাল্যবন্ধু মধুকেও দেখতে পায় ।এইতো সেই বটবৃক্ষের ছায়ায় বসে বাঁশি বাজাচ্ছে । আর যার কথা সব সময় তার হৃদয়ে আঁকা থাকে সেই শশি , এই তো পুকুর পাড়ে একা একা দাড়িয়ে ,হায় তার জন্য যেন গুনছে অপেক্ষার প্রহর ।
১৭
লালচান এক সপ্তাহ কোথাও লুকিয়ে ছিল । আবার বাড়ী আসে । সংবাদ পেয়ে ছালেহা বেঘম গ্রামের সব মানুষ কে জরু করে । ভরা শালিশে মুখ ভেংচায় লালচান কি অনিদের মা , আমি করলুম তোমাদের উপকার আর সেই তোমরাই আমার বিরুদ্ধে লোক জরু করে তাদের কানে কানে কি সব মিছামিছি বলে বেড়াচ্ছ ।
ছালেহা বেগম এবার গর্জে উটে বেঈমান তুই মিছামিছি পুলিশের ভয় দেখিয়ে আমার নিকট থেকে প্রায় ২ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হসনি । লালচান এবার নাকি সুরে বলল তওবা তওবা আমি টাকা নেব কেন । টাকা উল্টা অনিদের মা আমার কাছ থেকে নিয়েছে তাও বাড়ী বিক্রি করে । এই যে বাড়ীর দলিল ।
এবার গ্রামের এক বৃদ্ধ জানতে চাইল , আচ্ছা তোমরা আমাদের ডেকে এনে ঝগড়া করছ । আমরা আসলে এর আগামাথা কিছুই জানিনা , ছালেহা বেগম এর নিকট থেকে বিষয়টা জানতে চাই । সবিস্তারে বর্ণনা কর তো । ছালেহা বেঘম অনিদ পাহারাদার এর সাথে ভেজাল করা থেকে শুরু করে পরবর্তী লালচানের ভুমিকা পর্যন্ত সব বলল ।
এবার বৃদ্ধ লালচান কে প্রশ্ন করল ছালেহা বেঘম যা বলল সব সত্য কিনা । লালচান বলল না চাচা এতক্ষন অনিদের মা যা বলল সবি মিথ্যা । মধু অন্যদ্র দারিয়ে ছিল । রাগে চিৎকার করে বলল বেটা জুচ্ছুর চাচি কখনও মিথ্যা কথা বলতে পারেনা আপনি একটা মিথ্যাবাদি । পাহারাদার অনিদের ডিল খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় সত্য কিন্তু কিছুক্ষন পরই ইয়াত জ্ঞান ফিরে । আর এদিকে লালচান কাকু এসে
চাচিকে মরার খবর দেয় এবং চাচিকে মিথ্যা বুঝিয়ে চাচির নিকট থেকে বাড়ী বন্ধক বাবদ প্রায় ২ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় । আর অনিদ কে ভয় দেখিয়ে কোথায় যে পাটিয়ে দিল এখনও আমরা তার হদিস খুজে পাচ্ছিনা ।
রাগে লালচানের চোখ দুটু রক্তঝবার মত লাল হয়ে যায় । ফকিন্নির পুত মধু তোরা আমার বিরুদ্ধে দল পাকিয়েছিস না । আমিও দেখে নেব , আমি দরবার মানিনা । এবার গ্রামের ম্যাম্বার লতিফ শাহ গর্জে উটে যা যা বেটা গর্দভ জাহান্নামে যা । এত বড় জুচ্ছুরি ,। চুরের মায়ের আবার বড় গলা ।
লালচান এবার রিতিমত চেচায় , তোমরা জেনে রাখ ছালেহা বেঘম আমার কাছে বাড়ী বিক্রি করেছে । আমার নিকট তার বৈধ দলিল আছে । বাড়ী আজ থেকে আইনত আমার । আজকেই বাড়ী আমি দখল নেব । গজরাতে গজরাতে লালচান দরবার থেকে বিদায় হয় ।
এবার ছালেহা বেঘম হাওমাও করে কেঁদে ফেলে । চাচাজান এখন আমাদের কি হবে । অসহায় মেয়েটিকে লয়ে কোথায় যাব ।কার কাছে যাব । আমি যে আর কোন পথ খুজে পাচ্ছিনা । এবার বৃদ্ধ সরকার মশাই ছালেহার মাথায় হাত বুলায় । চিন্তা করিস্ না মা এই বৃদ্ধ সরকার মশায় যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তোমরা আমার বাড়ীতেই থাকবে ।
গাঁয়ের লোকেরা সরকার মশাইয়ের কথায় খুবই প্রিত হলেন । ছালেহা বেঘম শেষবারের মত বাড়ীর মায়া ছেড়ে শিলা কে লয়ে সরকার বাড়ীতে পাড়ি জমালেন ।
১৮ ।
ধূর্ত লালচান তার সাঙ্গোপাঙ্গদের গোপনে ডাকল । এমন কোন কাজ নেই যা এরা করতে পারেনা । জগতে টাকা থাকলে অপার্থিব লোকের অভাব হয়না । বিশ্বস্ত লোক মগাই আর লাটু মাথা উঁচু করে সামনে দ্বারায় , উস্তাদ বহুদিন পর আমাদের ডাকলেন নতুন কিছু করতে অইব । কি করমু তারাতারি কইয়া ফালান কাম সাইরা আহি । লালচান পায়চারি করতে ছিল এবার পায়চারি বন্ধ করে হাল্কা একটা ধমক দিল । আগে শুন মেম্বার ছালেহা বেগমের সাথে মিলে আমাকে দরবারে অপমান করেছে । এটা একটা কথা অইল আপনি খালি হুকুম দেন দেখেন ওর কথা বলার সাধ জনমের মত মিটাইয়া দেই । এবার লালচান বলল আমি খুন খাবাবির ঝামেলায় জড়াতে চাইনা । শুন মগাই আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে । ওই মেম্বারের একটা মাইয়া আছেনা , নাম জানি কি । লাটু বলল ওস্তাদ শশি । হা শশি । শুন । ওরা ঝুকে পড়ে লালচানের সলাপরামর্শে । মগাই চিৎকার করে উটে আপনার বুদ্ধির তারিফ করতে অয় ।
হাবলু লালচানের একমাত্র ছেলে তাও হাবাগুবা । সারাদিন ঘুরে বেড়ায় । যে যাই বলে তাই করে বসে । কেহ যদি বলে ঐ যে রাস্তা দিয়ে লোকটি যাচ্ছে তাকে কাধে করে পানিতে ফেলে দিতে হবে ।ও তাই করে বসে । কত জায়গায় পাত্রি দেখেছে কিন্তু হাবাগুবা জেনে কেউ তার কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে চায়না । আজ ধূর্ত লালচানের সে আশাও যেন পুরন হবে ।তবে কিভাবে হবে কেমনে হবে তাই তারা গোপনে শলাপরামর্শ করে ।
মধুর বাবা মুদি দোকানদার । গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে তার একটি ঘর আছে । প্রতিদিন কাচামাল কিনে বিক্রি করে যা আয় হয় তাই দিয়ে চাল ডাল কিনে বাড়ী ফেরে । সে ঐ পথ দিয়ে বাড়ী ফিরছিল । লালচানদের বাড়ীর অবস্থান দেখে নেয় । সবে মাত্র সন্ধ্যা ।
বৈঠক ঘরের কাছে এসে উঁকি দেয় ছলিম ব্যাপারি । জানালার ভিতর দিয়ে দেখে সেখানে কয়েকজন লোক ফিসফিস করে কি যেন শলাপরামর্শ করছে । আর লালচান পায়চারি করছে । ছলিম ব্যাপারির বুকটা ধড়পড় করে । নিশ্চই লালচান এবং তার লোকেরা নতুন কোন ফন্দি ফিকিরে ব্যাস্ত । হায় এই লোকটা যার উপড়েই ঞ্জর দেয় তার আর নিস্তার নাই । বিষধর সাপের মত সে সব সময় ফনা বিস্তার করে থাকে । সময় হলেই ছোবল দেয় । কয়টা ভাঙ্গাভাঙ্গা কথা সে হৃদয়ঙ্গম করে । মেম্বার আর তার মেয়ে শশি র নামটি ওদের মুখে বারবার শুনতে পায় । লালচান এবার আদেশ করে আচ্ছা আজকের মত তাহলে তোরা যা । কথামত যেন টিক টিক ভাবে কাজ হয় । ওরা মাথা দুলিয়ে বলে জি বস সময় মত সব হবে , এমন ভাবে আমরা কাজ সারব যেন কাকপক্ষীও টের না পায় । মগাই আর লাটু পেছনের এক গুপ্ত দরজা দিয়ে বের হয়ে যায় । ছলিম ব্যাপারি ধিরে ধিরে পা চালায় ।
ও ব্যাপারি দারাও । পেছনে লালচানের গলার আওয়াজ শুনে তার কলজেটা ছেত করে উটে । জি মানে আমি বাড়ী যাচ্ছি । রান্নাবান্না করতে অইব , সারাদিন কিছু খাইনি । তা তো বুঝলাম ব্যাপারি , বউটাকে তো অল্প দিনেই মেরে ফেলেছ এখন বুঝ
নিজে রান্নাবান্না করে খাওয়ার কি সাধ । দেখেন লালচান মশাই আমার বউয়ের কালাঝর হয়েছিল ।কবিরাজ ডাক্তার তো কম দেখাইনি । আমি আবার মারতে যাব কোন দুঃখে । আচ্ছা সেকথা না হয় থাক কিন্তু যে জন্য ডেকেছি সেটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই ।আমার চোখ কে ফাঁকি দেয় এমন মানুষ এখনও জগতে খুব কম আছে । আরে মশাই আমি আপনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছিনা । এবার লালচান এগিয়ে গিয়ে ছলিম ব্যাপারির সার্টের কলারে ধরে । তুমি একটা বোকা । আমরা এতক্ষন বৈঠক ঘরে কি কি শলাপরামর্শ করেছি তুমি সব শুনেছ । না মশাই আমি এর কিছুই জানিনা । জাননা বললেই হল । আমি জানালা দিয়ে স্পষ্ট দেখেছি তুমি কান পেতে আছ । বল কি শুনেছ । জি আমি আসলেই কিচ্ছু জানিনা । জাননা বেশ ভাল কথা আর তোমার ছেলে মধু আছেনা সে আস্ত একটা বেয়াদব আমার বিরুদ্ধে দরবার করে । মিথ্যা সাক্ষি দেয় । তুই তোর ছেলের বিচার করবি বুঝলে । আরেকটি কথা আরেকবার যদি তোর ছেলে আমার বিরুদ্ধে কোন বাড়াবাড়ি করে তাহলে বাপবেটা দুজন কেই জাহান্নামে পাটিয়ে দেব বুঝলি । জি আমাদের আর কোন ভুল হবেনা । আচ্ছা যা কথা কয়টা মনে থাকে যেন ।
১৯
মধু নিরিবিলি গ্রামের পশ্চিম কোনে নদীর তীর ঘেঁষা একটা বটছায়ে বসে আছে । মন খারাপ হলেই ওখানে চলে আসে । বাচ্ছারা নদীতে জল কেলি করে ,ঝাপ দেয় আর ও দেখে । মাঝে মাঝে শিখরে হেলান দিয়ে বাঁশী বাজায় । প্রায়ই দুবন্ধু
সে আর অনিদ এখানে মিলিত হত । তারপর মজা করত ,গল্প করত । নদীতে মাছ ধরত । আজ তার কোন হদিশ খুজে পাচ্ছেনা । তার হাতে নেই কোন মোবাইল । কোথায় গিয়ে উটেছে নাই তার কোন ঠিকানা । এখন কোথায় গিয়ে তাকে খুজবে নাকি লালচান গং রা তাকে ____ আর ভাবতে পারছেনা । হটাৎ কে জানি চোখ টেঁসে ধরল । বুঝতে পেড়েছি তুমি আর কেউ নও একমাত্র শিলা । একমাত্র শিলা মানে , শিলা নামে কি আর কেউ আছে নাকি । না সে কথা নয় বন্ধু । কি সব উল্টাপাল্টা বকছ আমাকে আবার কোনদিন থেকে এ নামে ডাকতে শুরু করেছ । হা তাই ত সরি জান শিলা আমি এখন সব সময় অনিদ কে মিস করে সব এমন হয়ে যাচ্ছে । এবার শিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আচ্ছা মধ । ভাইয়াটা না একটা পাষাণ । সে কি করে আমাদের এমন অসহায় অবস্থার মধ্য ফেলে দূরে পালিয়ে গেছে ।
পালিয়ে যায়নি শিলা আমার মন বলছে তোমার ভাইয়ার অন্তর্ধানের পেছনে ধূর্ত লালচান কাকার হাত আছে । কিন্তু কি দুরভিসন্ধি সেটাই এখন আমাদের কৌশলে জানতে হবে । শিলা মাথা চুলকায় কিভাবে । মধু বলল কেন চল আজ হয়ত লালচান কাকা বাড়ী নেই । ঐ গাদা হাবলুকে যদি বাড়ীতে একা পাই তাহলে আমরা তার বাড়ীর ভিতর সার্চ করে একটা না একটা প্রমান পেয়ে যেতেই পারি । শিলা বলল সুন্দর বুজ্ঝি চল তাহলে হাবলুদের বাড়ীর দিকে এগিয়ে যাওয়া যাক । ওরা গ্রামের ভিতর দিয়ে এগিয়ে আসে হাব্লুদের বাড়ীতে ।
হাবলু হাবলু দুস্ত আমার বাড়ী আছনি । ঘর থেকে ভাতের থালা লয়ে বের হয় হাবলু । কি মধু ভাই কিরাম কিরাম করে আলা , ভাত খাবানি । না বাবপু তুমি খাও । তা তোমার আব্বা নিশ্চই বাড়ীতে । দূর বাড়ীতে থাকবে কেন । গেছে লালটুর সাথে বাজারে । আমার না বিয়া । আমি একটা বউ বিয়া করুম আর বউ আমারে বিয়া করব কি মজা না । বুঝলাম তা তুমি যে বিয়া করবা বউরে জানাইতে অইবনা । বউরে না জানাইলে বউ ঘুসা কইররা আর আইবনা । বউরে কি জানামু । বউরে জানাইতে অইব হাব্লু বউ এর জামাই । তা কেডায় জানাইব । আমি জানামু । তো তোমার একটা কাজ করতে অইব । কি কাজ । তোমাগ ঘরে যে আলমারি আছে তার চাবিটা দাও । তার ভিতর তোমার বউয়ের চিঠি । হাছা কথা আমি এক্ষনি আইনা দিতাছি । হাবলু মধুর হাতে আলমারির চাবি তুলে দেয় ।
হাবলু আলমারি তল্লাশি করে বিশেষ কিছু দেখতে পায়না । হটাৎ তার হাতে উটে আসে সদ্য নতুন একটা দলিল । সেটা সে পড়ে আরে এই তো অনিদ দের বাড়ীর দলিল ।
এবার সেটা পকেটে ভরে মধু । তোমার বউকে তোমার কথা এক্ষনি জানিয়ে আসি । আমি যে তোমাদের বাড়ীতে এসেছিলাম সেটা কাউকে বলবেনা বুঝলে । জি আচ্ছা মধু ভাই । আমি বিয়া করমু কি মজা কি মজা ।
এতক্ষন শলা বাড়ীর পেছনে দাঁড়িয়েছিল দেখেই বলল মধু কিছু পেয়েছ কি ।
মধু বলল অনিদের ব্যাপারে কিছু না ফেলেও মহামুল্যবান একটা জিনিস উদ্ধার করেছি যা সরকার মশাইকে দেখালেই পরিস্কার হয়ে যাবে । শিলা বাড়ীর দলিলটা হাতে নেয় , তার দুচোখে দেখা দেয় অশ্রু । মধু শিলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল চল আমাদের বহু কাজ পড়ে আছে ।
২০
এত ভোগ বিলাস সুখের মাঝেও কোন কিছুই ভাল লাগেনা অনিদের । সব সময় বসে বসে কি যে ভাবে আর চিন্তা করে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে । সে না পারছে বাড়ী যেতে আবার না পারছে বিস্তারিত কিছু খুলে বলতে । একটা কোমল হাতের ছোঁয়া অনুভব করে সে , গাড় ফিরিয়ে দেখে কিশোরী । কিশোরী প্রশ্ন করে , কি ভাবছ অনিদ । নিশ্চই বাড়ীর জন্য মন খারাপ । নাকি প্রেমিকার জন্য মন খারাপ । কিয়ংক্ষনের জন্য হৃদয়ে ভেসে উটে শশির প্রিয়মুখ । হাল্কা গড়ন , কাজল কাল নীল চোখ । ঘনকাল মেঘের মত লম্বা চুল । আর চঞ্চলা হরিণীর মত তার ছুটে চলা । প্রতিদিন কলসি লয়ে সে অপেক্ষার প্রহর গুনত নদীর দ্বারে কদম তলায় তার জন্য । তার বিঝলি রাঙ্গা হাসি যেন পূর্ণিমার চাঁদকেও হার মানায় । একদিন তাঁকে না দেখলে জগত যেন মনে হত অন্ধকার । এইভাবে কত দিন কত ক্ষনের কত স্মৃতি জরিয়ে আছে তার সনে ।
কি অনিদ আমার কথার উত্তর দিচ্ছনা যে । চল কোথাও যাই বেড়িয়ে আসি দেখবে নিশ্চই মন ভাল হয়ে গেছে । অনিদ কে এক পর্যায়ে টেনে গাড়ীতে উটায় মিথিলা , যেন তাদের মধ্য জন্ম জন্ম ধরে কত চেনা জানা । গাড়ী চলতে থাকে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে কোন অজানায় ।
শহরের অলি গলি ছাড়িয়ে এক নির্জন বন্যএলাকায় এক সময় গাড়ী থামে । সুন্দর নির্জন এক মনোরম পরিবেশ । যেদিকে তাকানো যায় সবুজের হাতছানি । বৃক্ষ শাখে নানা পাখ পাখালির শ্রুতিমধুর কলতান । অনিদ এই বাপ দাদার আমাদের জমিদারি ষ্টেট । ঐ যে কাচারি ঘর আর ঐখানে বৈঠক খানা । আর ঐ যে ঘরটা এটা দরবার হল । অনিদ লক্ষ্য করে এক একটা আকাশ ছুঁয়া প্রাসাদ যেন আদি ঐতিহ্য অঙ্গে ধারন করে নিরবে টায় দাড়িয়ে ।
বুঝলে অনিদ দাদা মশাইয়ের বাবা যিনি আমার বড় বাপ ঠাকুর জি শ্রী সত্যনন্দ মুখারজি এই বিরাট শ্যামসুন্দর এলাকা শাসন করত । তার জমিদারি এত বিশ্রিত ছিল যে , হাতি শালে হাতি ঘোড়া শালে ঘোড়া আর ছিল অজশ্র পাইক পেয়াদা । সারা অঞ্চলে তার উপড়ে টেক্কা দেয়ার লোক খুব কম ছিল ।
কিন্তু এত কিছু হলে কি হবে । মুখারজি মহাশয় ছিল প্রজাদের উপর খুবই প্রবল । খাজনা না দিলে ধরে এনে বাইশ মনি পাথর বুকে চাপা দিয়ে রাখত । আবার কেহ যদি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত । তার আর রক্ষে ছিলনা হাত পা কেটে মাথায় গুল ঢেলে রাস্তায় ফেলে রাখত । এমন অসংখ্য অমানবিক ঘটনা র পাদ দুষ্ট ছিল ঐ জমিদার । অনিদ বলল , বুঝলাম
তারা ছিল সম্পদের দাম্ভিকে অন্ধ কিন্তু এখনও কি মানুষের দ্বারা তা হচ্ছেনা । এই তো গতকাল দেখলাম এক বাসে পেত্রুল
বোমা মেরে দুই শিশু ও চার ব্যাক্তির শরীর ঝলসে দিল । এটা কি সেই আমলের পরিবর্তিত আধুনিক রুপ নয় । এবার মিথিলা
হাসল , হা সবটাই সত্য জমিদারি আমল বদলেছে কিন্তু সেই যুগের যে অত্যাচার অনাচার এখনও সমাজে বিদ্যমান । আচ্ছা চল অনিদ ভিতরে যাই । ওখানে কি কেউ থাকে । না । বাবা মারা যাওয়ার পর এক পুরনো লোক বাড়ীটি দেখাশুনা করত । বেশ কদিন হল সেও হটাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যায় । মিথিলার কথা শুনে অনিদের কেমন যেন গাঁ ছমছম করে । ওরা সিঁড়ি বেয়ে হাত ধ্রাধরি করে উপরে উটে । কংক্রিটের পুরনো দরজায় ধাক্কা দিতেই ওটা বিকট শব্দে খুলে যায় । ভিতরে স্বচ্ছ স্পটিকের আলোক দ্যুতি দেয়াল টিকরে বের হচ্ছে , সেই আলোয় সব কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় । এই যে ঘর এখানেই জমিদার মশাই প্রায়ই আড্ডা জমাতেন । নাচ গান আর সুরার পাত্র ছিল এদের উপভুগ্য বিষয় । অনিদ আচমকা থেমে যায় । দাড়াও মিথিলা তুমি বলছ ওখানে কেউ থাকেনা আর আমি শুনতে পাচ্ছি অনেক মানুষের কলরব , কোথাও যেন জলসা বসিয়েছে ওরা । মিথিলা কান পেতে শুনে , মনে হয় উপরের রুমে এসব হচ্ছে চল দেখে আসি । টুংটাং বাজনা আবার নাছের শব্দ আবার হাসি কিছুক্ষন নিরব থেকে আবার চলে পূর্বাপর । মিথিলা বলল কেউ আমাদের সাথে মস্করা করছে নাকি । ওরা সিঁড়ি বেয়ে দুতালায় উটে । জানালা খুলে অনিদের চক্ষু চড়ক গাছ । সামনে দেখতে পায় সেই রহস্যময়ি মেয়েটি নাছছে যাকে সে নদী পেরুতে গিয়ে বন পাহাড়ে আবিস্কার করেছিল । আর৫ তার সামনে বসে ধ্যান মগ্ন সেই পাহাড়িয়া সাধুবাবা ।
সে মেয়েটির নাম ধরে ডাকে প্রিয়তা , প্রিয়তা । কিন্তু তার মুখ থেকে কোন কথা ফুটেনা । এবার কিংকর্তব্য বিমুর হয়ে সে মিথিলাকে ডাকে । না সেও কোন সাঁরা দেয়না । একটা শিতল হাওয়া এসে তার শরীর ছুঁয়ে যায় । দুচোখে নেমে আসে রাজ্যর যত ঘুম । ধিরে ধিরে সব আলো নিভে যায় তার চোখ থেকে ।
২১
সরকার বাড়িতে মেম্বার বসে আছে আর বাতাস করছে ছালেহা একটা পাখা হাতে । ভাইজান দেখ তো দলিল টা এতে কি লেখা । শিলা একটা কাগজ এসে হাতে ধরিয়ে বলল কাকা দেখ এইটা একটা জাল দলিল এবং মূর্খ মাকে উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে বাড়িটা অবৈধ ভাবে দখল করে নিল ।
মেম্বার দলিলটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখে বলল হা এটা মিথ্যা এবং জাল একটা দলিল । ভাইজান আমার পোলার কথা এখনও সত্য করে কিছু কয়না কি করব ভাইজান ওরা কি আমার অনিদ রে মাই--- এই কথা বলনা অনিদের মা আমি এক্ষনি থানায় যাব একটা ডাইরি করতে । পুলিশ হারামি কুত্তা লালচান কে ধরে নিয়ে গিয়ে দু ঘা লাগালেই ওর মুখ থেকে সব বের হয়ে আসবে । বৃদ্ধ সরকার মশাই হুক্কা গড়গড় তুলে বলে এ বুজ্ঝি টাই কাজে লাগাও মেম্বার যাও আর দেরি করনা । ক্যাইচ লড়তে যত টাকা লাগে আমি দেব ।
জি আচ্ছা তাহলে আমি যাই । মেম্বার দলিলের কাগজটা পকেটে পুড়ে ঘর থেকে বের হয় । সবে মাত্র সন্ধ্যা । দুতিনজন পুলিশ এগিয়ে আসে । একজন বলে আপনিই তাহলে মকবুল মেম্বার । জি তা হটাতৎ আপনারা কি মনে করে । একজন পুলিশ বলল দেখুন মেম্বার সাব আপনি কি অনিদ নামে কাউকে চেনেন । হা সেত আমার ভাতিজা হয় । কেন তার সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া গেছে কিনা । আমি আবার এ সম্পর্কেই থানায় যাচ্ছিলাম ।
তথ্য আছে বলেই তো আপনার কাছে আসা চলেন হাঁটতে হাঁটতে সব বলা যাবে । মেম্বার বলল তাহলে আপনারা কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন আমি পাঞ্জাবিটা নিয়েই ফিরে আসব । সে সুযোগ আপনাকে দেওয়া যাবেনা মেম্বার সাব । চলেন । মেম্বার ওদের পিছু পিছু ছুটল । জঙ্গলের পথে রাস্তা তাও আবার সন্ধ্যার পর । এবার মেবার পুলিশদের মুখ দেখার চেষ্টা করে , কিন্তু পারেনা তার কাছে মনে হয় এদের প্রত্যেকের মুখ কাল কাপড় দিয়ে ঢাকা ।
এবার পুলিশ বেশ ধারি লোক কয়জনের ফন্দি ধরা পড়ে মেম্বারের কাছে ।
তোমরা আসলে কারা । আর আমার কাছে তোমাদের কি প্রয়োজন । গোয়ার গোছের লোকটা মেম্বারের বুকে ধারালো চুরি ধরে ।লড়বি তো মরবি । এই তোরা দাড়িয়ে দেখছিস কি যত তারাতারি সম্ভব শালা বেটার মুখে কাপড় গুযে দে । হাত পা বেধে ফেল ।
মেম্বার , না আমি কারও কোন ক্ষতি করিনি । আমাকে তোমরা দয়া করে ছেড়ে দাও । আর তোমাদের কি মতলব একটু খুলে বল । ছুপ শালা আর কোন কথা নয় সময় মত সব দেখতি পাবে । নেতার আদেশ পেয়ে বাদবাকি লোকেরা মেম্বার কে চোখ বেধে মুখে কাপড় দিয়ে টেনে হিঁচড়ে জঙ্গলের ওপাশে নিয়ে গেল ।
বৈঠকঘর সেটা কোথায় ঠাহর করতে পারছেনা মেম্বার । তবে অনেক লোকের চাপা গুঞ্জন তার কানে আসে । চোখ বাধা
অবস্থায় চিৎকার করে সে তোমরা যারাই হও আমার চোখের বাধন খুলে দাও । একটা মুক্ত হাসি এসে তার কানে ধাক্কা লাগে । আরে হাসছ যে তুমি লালচান । হাসছি এজন্য আজ তোমাকে আমি একটা স্পেশাল দাওয়াত দেব । দাওয়াত কিসের দাওয়াত তুমি কি আমার সাথে মস্করা করছ । আরে বেয়াই মস্করা করব কেন । একটু পরেই আমরা দুজন বেয়াই বনে যাব । কি সব উল্টাপালটা বকছ , লোভের কারনে মাথা মস্তক এখন তোমার টিক নাই । বেয়াই ইয়ে মানে বিয়েটা আগে হয়ে যাক তারপর না হয় আমরা । কার বিয়ে কিসের বিয়ে । কেন , আমার হাবলুর সাথে তোমার সুন্দরি মাইয়া শশির বিয়ে । না এ কখনও হতে পারেনা । দুনিয়া উল্টে গেলেও এ বিয়ে হবেনা । এই তোরা কে কোথায় বিয়ে না পরানো পর্যন্ত ওর মুখ আবার বন্ধ করে দে ।
২২
শিলা সন্ধার পর শশিদের বাড়ী আসে , শশিবু শশিবু কোথায় কথা বলছনা যে । অনেক্ষন ডাকাডাকির পর সারা না পেয়ে ঘরে ডুকে সে । না সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুজে ।না একটা টিকটিকির অস্তিত্ব নেই । কই গেল আবার , এখন কোথায় খুজে পাবে সে তাকে । বারান্দায় দেখে শশির একটা কানের দুল পড়ে আছে । ওটা নিয়ে সে অনেক্ষন তাকিয়ে থাকে হা শশি বুর কানেরই কিন্তু সেটা এখানে কেন নিশ্চই কোথাও গেছে আর এমনিতেই ওটা ভুলে রেখে গেছে । এদের বাড়ীটা একটু আলাদা । বাড়ীর পাশে পুকুর । পুকুর পাড় ঘেঁষা রাস্তা দিয়ে অন্যবাড়ীর পথ । দুই বাড়ীর পরের বাড়ীটাই সরকার বাড়ী । শিলা শশির নাম ধরে ডাকতে ডাকতে পুকুর পাঁড়ে চলে আসে । এবার সে অনেকটা আশ্চর্য হয় । শশির একপাটি জুতা পড়ে আছে পথের দ্বারে । শিলা আর দেরি করেনা । খবরটা জানাতে ছুটে যায় মধুদের বাড়ীতে । মধুর বাবা ছলিম ব্যাপারি শিলাকে দেখেই রাগে গজগজ করতে থাকে ,। এই ছেমড়ি মধুরে খুইতে আইচ্ছ । মধুর নিকট কি মধু টাঁসা যে বারবার আইতে মনে লয় । নিলজ্জ বেহায়া কোথাকার । বকা খেয়ে শিলার চোখে পানি চলে আসে । শিলা আর কোন কথা বলতে পারেনা , মাথা নিচু করে দৌড় দিয়ে চলে আসে বাড়ীতে ।
অভিমানে কিছুক্ষন শুয়ে থাকে গিয়ে বিছানাত তারপর সে ঘুমিয়ে পড়ে ।
মধু বটতলায় বসে ভাবছিল অনিদের বিষয়ে কিন্তু কোন সমাধান খুজে পাচ্ছিলনা । হটাৎ দেখল একদল লোক ডেক ডেস্কি ও রান্নাবান্নার সরঞ্জাম লয়ে পশ্চিমের পথ ধরে যাচ্ছে । তাদের দেখে কেন জানি মধুর মনে হল এদের দলে ভিড়লে মনে হয় তার প্রিয় বন্ধুর সন্ধান মিলেও যেতে পারে । দলটি কাছে এলে মধু জিজ্ঞাসে ভাইয়েরা আপনারা কি কোন বিয়ে সাদির অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন । হু । তা ভাই বহুদিন যাবৎ এই এলাকায় বিয়ে সাদি হয়না মজাও পাইনা আমি কি আপনাদের সঙ্গি হতে পারি । আমিনা আবার ভাল বাঁশী বাজাতে পারি এমনকি নাচতেও পারি ।
হেড বাবুর্চি বলল বাঁশী বাজাতে পার সেত ভাল কাজ । নাচতে পার তাও আমার পছন্দ কিন্তু আমাদের প্রয়োজন যে ভাল রান্না বান্নায় সাহায্য করতে পারে তাকে । ভাইজান কিচ্ছু মনে করবেন না , সত্য কথা কি আমি ভাল রান্নাও করতে পারি । গোপওয়ালা প্রধান বাবুর্চি মধুকে পিট চাপড়ায়ে বলল , বেশ তাহলে চল আমাদের সাথে ।
দীর্ঘ ৬/ ৭ মাইল হাঁটার পর একটা গভীর জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করল দলটি । একজায়গায় গিয়ে লাঠির মাথায় আগুন ধরাল ওরা । দল প্রধান বলল । কাপড় পড়ে নাও , সবার সাথে মধুও বাবুর্চিদের নতুন কাপড় পড়ে নিল । ওরা জঙ্গলের আরও গভীরে প্রবেশ করল । একটা পাহাড়ের মত টিভি , তার ওপাশে অনেকটা জায়গা আলোকিত মনে হয় । একটা সুড়ঙ্গ মুখের সামনে এসে ওরা দাঁড়ালে এক চাপা চিৎকার শুনা যায় । তোমরা যারাই হও আগে পরিচয় দাও । নেতা গোছের লোকটি বলল আমরা বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছি , এস টি সাহেবের লোক । এস টি সাহেবের লোক ও আচ্ছা তাহলে আপনারা ভিতরে যান । সবার সাথে মধু ভিতরে প্রবেশ করে ।সম্ভবত পাহাড় খুড়ে টিক তার নিচেই বানানো হয়েছে এদের বিলাসি গোপন আস্তানা ।
মধুর চোখ ধিরে ধিরে দেয়ালের অলি গলি ছাড়িয়ে আরও ভিতরে চলে যেতে চায় । নিশ্চই এ আস্তানার কোথাও তার প্রিয় বন্ধু আটক আছে । বৈঠক ঘরে উঁকি দেয় সে কাজী সাহেব বসে আছে চেয়ারে । আরও অপরিচিত কয়েকজন তার চারপাশ ঘিরে নিচু স্বরে কি যেন বলছে । বামের রুম থেকে বেরিয়ে আসে দুজন লোক । একজন ধূর্ত লালচান কাকা আর অন্যজন জামাই বেশি তার বোকা হাবলা ছেলে হাবলু । কলজেটা লাফিয়ে উটে মধুর ।
কাজী সাহেব তার বিয়ের রেজিত্রি খাতা খুলে বলল , লালচান সাহেব তাহলে মেয়ের এঝাজত এনেছেন । জি আলহামদুলিল্লাহ আপনি শুরু করতে পারেন । এক্তামেয়েলি চাপা কান্নার কণ্ঠ ভেসে আসে মধুর কানে । সবার অলক্ষ্য পা টিপে টিপে চলে যায় অন্দরে । এক লোক বসে পাহারা দিচ্ছিল লোকটি মধুকে দেখতে পেয়ে বলল তুমি কে বাপু এখানে আসা তো যে কারও জন্য নিষেধ । আরে ভাই আমি হলাম বাবুর্চি আমি জানতে এসেছি ভাবি এখন কি খাবে , বা কি কি খাবার নিয়ে আসব । এবার পাহারাদার লোকটি একটু নমনীয় হয় ভাই খিদের জালায় আমার নাড়ি ভুঁড়ি জলছে আমাকে কি কিছু খাবার এনে দেওয়া যাবে । অবশ্যই তবে বাহিরে যাবার কোন গুপ্ত দরজা থাকলে দেখিয়ে দেন আমি সেপথ দিয়েই খাবার সংগ্রহ করব নয়ত আপনি বুঝেন না । আচ্ছা টিক আছে আসুন আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি । লোকটি খাবারের লোভে গুপ্ত দরজা দেখিয়ে দিয়ে আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসে । মধু ডুকে পড়ে সেই রুমে যেখানে হবু বউ আছে । কাছে গিয়ে বিস্ময়ে বোবা বনে যায় আরে এযে শশি । তার হাত মুখ বাধা মুখে চাপা গোঙ্গানির শব্দ । তারাতারি সে শশির হাত পা এবং মুখের বাধন খুলে দেয় । শশি চমকে উটে তুমি । হা আমি । তা তুমি এখানে কেন । আমাকে ওরা ধরে নিয়ে এসেছে ,আমাকে এই ন্রক পুরি থেকে বাচাও মধু ভাই । চুপ এখন আর কোন মায়াকান্না নয় । আমাদের হাতে একদম সময় নেই চল । মধু আর শশি পাহারাদারের দেখানো গুপ্ত পথ দিয়ে গুপ্ত কুটুরি থেকে মুক্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে । জঙ্গলের পথ ধরে দ্রুত অন্ধকারে পালাতে থাকে তারা ।
২৩
ভাঙ্গা পুড়া বাড়ীতে অনেক মানুষের ঝটলা । একটা লোক অচেতন হয়ে পড়ে আছে । এই পথ দিয়ে যাচ্ছিল বাউলদের একটা দল । তারা এগিয়ে আসে ভিড় টেলে । বাউল প্রধান বলল আরে যে লোকটি এখানে পড়ে আছে তাকে তো আমার কেমন চেনা চেনা মনে হয় । কেউ একজন তার মাথায় পানি দাও নিশ্চই জ্ঞান ফিরবে । স্থানীয় এক মহিলা কলসি লয়ে আসে এবং মাথায় পানি ঢালে । কিছুক্ষন পর চোখ মেলে তাকায় যুবক ,উটে বসে এবং উপস্থিত সবাইকে জিজ্ঞাসে , আপনারা কারা আর আমিই বা এখানে কেন । এবার মহিলা বলল দেখ বাবা আমি এসেছিলাম এ পথ ধরে হটাৎ তোমাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পাই সাথে সাথে এ লোকগুলিও জরু হয় । তাহলে মিথিলা কোথায় । মিথিলা সে আবার কে বাবা । যে আমাকে গত রাতে এখানে নিয়ে এসেছিল । সে জমিদার বংশের মেয়ে ।
এবার বাউল সর্দার এগিয়ে আসে । বাবা তুমি ভুল করছ । আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর যাবত থেকে এ বাড়ীতে কেউ থাকেনা । তবে জমিদারের শেষ বংশদর একজন মেয়ে ছিল , আমরা যতদুর জানি সেও গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেছে ।
অনিদের কাছে এবার সব কিছু যেন রহস্যময় লাগে । অনিদ বাউলের মুখের দিকে তাকায় আরে চাচা আপনাকে তো আমার চেনাচেনা মনে হচ্ছে । হা ,আমি সুমন্ত বাউল মনে আছে গত তিন বছর আগে বৈশাখী মেলায় তোমাদের গা ভি তে আমরা গান করেছি । হুম চাচা । এখন আপনারা কোথায় যাবেন । যাব তোমাদের এলাকাতেই ঐ যে মহেস খলায় সাধুবাবার আস্তানায় । আমিও যাব ।
তাহলে চল বাবা । বাউলদের দলে চারজন । যতিন হারমোনিয়াম বাজায় করম বাজায় ডুল আর মনাই বাঁশীতে সুর তুলে
প্রধান বাউল একতারা হাতে চমৎকার গায় । গ্রাম গঞ্জে হাঁটে মাঠে ওরা মাঝে মাঝে থামে তুলে সুরের মূর্ছনা । মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনে বাউলদের আধ্যাতিক গান । ওরা চলছে তো চলছেই । ওরা একসময় সুনামগঞ্জ থেকে চলে আসে তাহের পুর তারপর বাজারে চা নাস্তা খেয়ে আসর জমায় । অনেক লোকের ভিড় সবাই তন্ময় হয়ে গান শুনে । পাশেই ছিল একটা কওমি মাদ্রাসা । আচমকা বলা নেই কওয়া নেই মাদ্রাসার ছাত্ররা বাউলদের উপর চড়াও হও । ডিল ছুরতে থাকে এদের উপর । গান নাকি এদের চোখে নাজায়েজ কাজ । আহত হয় প্রধান বাউল সুমন্ত সরকার আর আনিদ ফেরাতে গিয়ে মাথায় আঘাত খায় । পুলিশ এসে বাউলদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাস্পাতালে নিয়ে যায় । খবর শুনে উপজেলার চেয়ারম্যান , টি, , এন , ও সাব সহ অনেক লোক বাউলদের পাশে এগিয়ে আসে । সাংবাদিকেরা আসে , ওদের নিকট থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ।
পত্রিকায় পরের দিন ছাপা হয় সংবাদ । অনিদ পত্রিকায় বাউলদের সাথে নিজের ছবি দেখতে পায় ।
মাদ্রাসা ছাত্রদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে দুই বাউল আহত , পুলিশি অভিযানে তাদের ছাত্রাবাস তল্লাসি করে ১০ টি আগ্নেয়াশ্র ২০০ রাউন্ড গুলি সহ প্রচুর চুরি , বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার । এদের ধরিয়ে দিতে বিশেষ সহায়তা করেন বাউল সঙ্গী অনিদ ।
সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন বাউলদের গন সংবর্ধনার আয়োজন করেন ।
মঞ্চে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক ।
মজলিশে উপস্থিত সুধি , মাদ্রাসা , স্কুল , কলেজ এর ছাত্র ছাত্রী রা প্রতিস্থানে কেন আসে । শিক্ষার জন্য তাই না আর তারা শিক্ষিত হয়ে দেবে দেশ ও জাতীর সেবা । এখন আসেন তাদের হাতে শিক্ষার উপকরন বই কলমের পরিবর্তনে যদি তুলে দেওয়া হয় সমাজ ধংশের অশ্র তাহলে জাতী এদের নিকট থেকে কি আশা করবে । আসুন আমাদের সন্তানদের নিরাপদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার মত পরিবেশ গড়ে তুলি এবং সন্ত্রাস কে না বলি ।
সবাই ভাল থাকুন এবং এঁদের মত মুক্তমনা হওন । ধন্যবাদ ।
মঞ্চে বাউলেরা গান করেন ।
আল্লাহ্‌র সৃষ্টি দুনিয়ায়
খাটি মানুষ খুজ মানুষ ভজ মানুষ সাজ আপনায়
মিছে ফন্দি ফিকির ভ্রষ্ট
মুল্যবান সময় করলি নষ্ট
সাজরে ভাই কেন দুষ্ট
মইলে তোর কি হবে উপায় ঐ
মানুষ জনম সফল কর
খাঁটি মানুষের সঙ্গ ঘর
মিথ্যা মায়া মোহ ছাড়
খুজ রতন আসল শিক্ষায় ঐ
গুরু বলে ওরে মনা
খুজে লও আসল ঠিকানা
জীবেরে কষ্ট দিওনা
কাঁটা দাও শয়তানের রাস্তায় ঐ






২৪
শিলা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উটে , মুখে কথা ফুটেনা । মা ছালেহা বেঘম মেয়ের অদ্ভুদ আচরন দেখে মাথায় হাত বুলায় কি হয়েছে মা । চোখ বড় বড় করে বলে মা আমাদের শশি বুকে সারা গ্রামে কোথাও খুজে পাচ্ছিলাম না । গেলাম ওদের বাড়ীতে দেখলাম অর একটা কানের দুল দরজায় পড়ে আছে । আসলাম উটানে দেখলাম ওর জুতা জুড়া পড়ে আছে পথের দ্বারে । আমার মনে হয় হেরে জিন ভুতে ধইরা লইয়া গেছে । মা হালিমা বেঘম মেয়েকে ধাক্কা লাগায় খবরটা তুই আমাকে আগে বলবিনা ।
মেম্বার বাড়ীতে দল বেধে ছুটে যায় পাড়ার লোক । ঘরে ওদের দেখতে না পেয়ে রাতে হারকেন , কুপি আর লাটির আগায়
আগুন জ্বালায় তন্ন তন্ন করে খুজে ফিরে শশির নাম ধরে । খুজে খানাখন্দে ডুবায় , পুকুরে বাশাঝারে , বনে এমনকি গ্রামের প্রত্যাক টা বাড়ীর ঝোপঝাড়ে ।
পাড়ার মহিলারা ফিস্ফিস করে ।কেহ বলে সুন্দর মাইয়া , গায়ে কাচাহলুদ চামড়া । যেই সন্ধায় বের হয়েছে এমনিতেই পরি তারে খপ করে ধরে নিয়ে গেছে ।
সরকার মশাই গ্রামের লোকদের ডাকলেন , প্রিয় গ্রামবাসী আমার বয়স হয়েছে তোমরাই বল কি হল আসলে এই মেয়েটির । মধুর বাবা ছলিম ব্যাপারি গলা খ্যাকারি দেয় ,মাতবর ছাব আমি কালকে লালচান দের বাড়ীর ওপাশ দিয়ে আসছিলাম । বৈঠকঘরে ফিসফিস শব্দ শুনে জানালা দিয়ে উকি দেই দেখি কয়েকজন অপরিচিত লোক লালচানের সাথে কথা বলছে । এর মধ্য কয়েকবার এদের মুখে মা শশির নাম শুনতে পেয়েছি ।
এবার সবাই শায় দেয় , একজন বলেই ফেলে কাজটি নিশ্চিত লালচানেই করেছে , কারন গ্রামের সবাই আজ উপস্থিত ঐ ধূর্ত কুটকেই আজ শুধু দেখা যাচ্ছেনা । সরকার মশাই মাথা দুলিয়ে বলল , তাহলে তোমরা এখন কি করতে চাও । সবাই বলল আমরা শশিকে খুজে না পাওয়া পর্যন্ত অনুসন্ধান অব্যাহত রাখব । ছালেহা বেঘম বলল মেম্বার ভাইজান যে থানায় গেল তিনিও তো এখনো ফিরে আসছেনা । সরকার মশাই বলল টিকই বলছ মা দুএকজন কে থানায় পাটানো প্রয়োজন । ছালেহা বেঘম ছলিম ব্যাপারিকে বলল , আচ্ছা মধুর বাপ মধু কোথায় । ছলিম ব্যাপারি মাথা চুলকিয়ে বলল সে গিয়েছিল
মাঠে এখনও তার বাড়ী ফিরে আসার নাম নাই । গ্রামের কেতকী বুড়ী এতক্ষন আড়ালে দাড়িয়ে সব শুনছিল , এবার লোকের সামনে বেরিয়ে আসে মুখ ভেংচে বলে ঘটনা তাহলে লালচান ঘটায় নি , ঘটিয়েছে মধু । উরু বয়স তো সুযোগ বুঝে ওরা দুজনই পালিয়ে গেছে ।
অনেকেই সেটাই বিশ্বাস করল আবার অনেকেই নানা মন্তব্য করতে করতে যার যার বাড়ী চলে গেল । ছালেহা বেঘম আর সরকার মশাই মাথা হেট করে বসে রইল । শিলা এসে বলল কেতকি বুড়ীর কথা আমি বিশ্বাস করিনা মা কারন অনিদ ভাইয়ার সাথে শশি বুর সম্পর্কটা মধু ভাল করেই জানে । সব লালচান কাকার ষড়যন্ত্র । এক্ষনি চল আমরা থানায় যাই , একটা জিডি করে আসি ।
সরকার মশাই বলল , হা তাই করতে হবে চল তোমাদের সাথে আমিও যাব ।
২৫
বাবুর্চিরা মাংস পোলাও ফিরনী পায়েস মজাদার খাবার পাক করছে , দুচারজন মহিলা চলাফেরা করছে চুপি চুপি , নাই বাদ্যবাজনা সানাই এর সুর , তাও আবার রাতের আধার । এটাকে কি বিয়ে বাড়ী বলা যায় । প্রধান বাবুর্চির নিকট বিষয়টা অদ্ভুদ লাগে । যাক ভাবনার সময় নেই , টাকার বিনিময়ে কাজ সে রাত হোক আর দিন হোক । বাবুর্চি মোবাইলে একটা ম্যাসেজ পায় । ওরা সবাই সজাগ হয়ে উটে ।
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর জন্য প্রস্তুত হয় । আচ্ছা মশাই কনের পিতা মাতা কাউকে তো দেখছিনা । আর বিয়ের সাক্ষি লাগবে তারা কোথায় । লালচান এবার কাজী সাহেবের নিকটবর্তী হয় । দেখেন মেয়েটি আমারই দুঃসম্পর্কের ভাগ্নি । ওর পিতা মাতা কয়েকবছর আগেই বিদেশ চলে গেছে । সেই থেকে মেয়েটি আমার এখানেই মানুষ । মেয়ের বাবা মা আমার ছেলের নিকট বিয়ে দেওয়ার জন্য বার বার চাপ দেয় আমার আর সময় হয়ে উটেনি । কাজী সাহেব বললেন বুঝতে পেরেছি এখন সময় হয়েছে তা মেয়ের বয়স কত তার জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট নয়ত ভোটার আইডি নিয়ে আসুন । এবার
লালচানের কপালে ভাজ পড়ে । মেয়ের বয়স বড়জুর ১৭ বছর হবে কিন্তু এই মুহূর্তে মেয়ের ভোটার আইডি কথেকে সংগ্রহ করবে । এবার জামাই বেশি হাবলু বলল , কাজী সাব আব্বাজান এতক্ষন যা বলল তার খানা কড়িও সত্যি নয় । লালচান ধমক দেয় চুপ গাদা বড়দের কথায় ছুটদের নাখ গলাতে নেই ।
লালচান হটাৎ কাজী সাহেবের ডান হাতটা চেপে ধরল । আরে করছ কি । হাত মেলে কাজী সাহেব সন্তুষ্টির হাসি হাসে । যা পেয়েছে আগামি কয়েকটা বিয়েতেও এমন দান মিলবে কিনা সন্দেহ । আচ্ছা সব টিক হয়ে যাবে লালচান মশাই এবার মেয়ের কবুল টা নিয়ে আসেন । ধূর্ত লালচান মেয়ের কবুল আনার জন্য নিজেই ছুটে গুহার অন্দরে ।
পাহারাদার জগাই ঘুমিয়ে পড়েছিল , লালচানের চিৎকারে জেগে উটে , দেখে লালচানের চোখ মুখ জবা ফুলের মত লাল । ভয়ংকর চেহারা । ভয়ে থরথর করে কাঁপে সে জি উস্তাদ কি করতে অইব বলেন । চুপ একদম চুপ সত্যি কইরা ক শশি কই নইলে তোরে আমি এক্ষনি খুন কইরা ফালামু । আপা তো এইখানেই আছিল , কেন কি হয়েছে । চুপ হারামজাদা ,তোকে এখানে রেখেছিলাম ঘোড়ার ঘাস কাটার জন্য , বল এর মধ্য এখানে কেউ এসেছিল কিনা । জি মানে বাবুর্চি এসেছিল আপা কিছু খাবে কিনা তা তালাশ করতে ।
যাও বাবুর্চিকে এক্ষুনি ডেকে নিয়ে এস । জি আচ্ছা । বাবুর্চি এলে তাকে জেরা শুরু করে লালচান । কি বাবু তোমরা আসলে কারা , বল শশিকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছ । প্রধান বাবুর্চি হতবাক হয় , কি সব জাতা বলছেন আপনি , আমরা এর কি জানি । তাহলে জগাই পাহারাদার যে বলল তুমি নাকি শশির খাবার দেয়ার খুজে তার কক্ষে গিয়েছিলে । মিথ্যা কথা আমি আপনার হুকুম ছাড়া ওখানে যাব কেন । আর আমরা তো অপরিচিত শশি যে কে তাকে তো আমরা চিনিইনা । হা তাই তো তাহলে সব জগাই এর চালাকি । পাশেই ছিল একটা কাঠের চেলা সেটাই তুলে নেয় লালচান । রাগে লাল হয়ে জগাই এর মাথায় বসিয়ে দেয় গা , মর বেঈমান ।এই তোরা দাড়িয়ে আছিস কেন এক্ষুনি খুজ লাগা । আমার মনে হয় গুপ্ত কুটুরি দিয়ে শশিকে ভাগিয়ে দিয়েছে ।
আস্তানার সবাই লাটির আগায় আগুন জ্বালিয়ে জঙ্গল চষে বেড়ায় শশির খুজে । প্রধান বাবুর্চির মনে একটু সন্দেহ জাগে । সবাই জঙ্গলের ভিতরে চলে গেলে সে চুপে চুপে গুহায় ডুকে । একটা চাঁপা শব্দ তার কানে আসে । শব্দ লক্ষ্য করে উকি দেয় অন্ধকার কক্ষে । দেখে এক লোক তার হাত পা খুঁটির সাথে বাধা । মুখে কাপড় গুজা । লোকটির কাছে গিয়ে দ্রুত হাত পায়ের বাধন খুলে দেয় । মুখ থেকে কাপড় খুলতেই লোকটি বাবুর্চিকে জড়িয়ে ধরে । তুমি কে বাবা আমার প্রাম বাচালে । আমি বাবুর্চি এসেছিলাম এক বিয়ের অনুষ্ঠানে কিন্তু এখানে সব কিছুই আমার নিকট অদ্ভুদ মনে হচ্ছে ।মেম্বার বলল হবেই তো যার বিয়েতে তোমরা এসেছ আসলে ওরা একটা প্রতারক চক্র । ওরা আমাকে কিডন্যাপ করে এনেছে আবার শুনলাম একটা মেয়েকেও কিডন্যাপ করে এনেছে তার হাবা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে ।
কাজী সাহেব এদের কথা শুনতে পেয়ে বলল , । তওবা তওবা একি শুনলাম । লালচানের হাবা ছেলে এসে দ্বারায় , জি আমার দুষ নাই সব দুষ ঐ আব্বাজানের । লালচানের সব কীর্তি কলাপ খুলে বলতে থাকে হাবলু । হাবলুর কথা শুনে বাবুর্চি অবাক হয় । লালচানের হাতে বাঁশের লাটি , রাগে দৌড়ে এসে নিজ ছেলের মাথায় মারে বাড়ী । হাবলুর সংজ্ঞাহীন দেহটা লুটিয়ে পড়ে মাটিতে । এবার মেম্বার কে জলজ্যান্ত দেখতে পেয়ে তার প্রতি তেরে যায় লালচান । আর সুযোগ পায়না লালচান । সাদা পোশাকের একদল পুলিশ ঘিরে ধরে লালচান গংদের । আকাশে একটা ডিল ছুড়লে সেটা যেমন দিগুন শক্তিতে উপরে উটে তার চাইতেই বেশি শক্তিতে আবার সেটা মাটির দিকে নেমে আসে । ধূর্ত লালচানের পাপ অত্যাচার , নিপীড়ন এলাকার সাধারন মানুষদের ভীতি সৃষ্টি করে কিন্তু কেহ ভয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু করতে যেতনা । যদি কেহ তার বিরুদ্ধে লাগত তাহলে লালচান গং দের হাতে অনেক লাঞ্চনা পেতে হত । দিন দিন মানুষের অভিশাপ আর অবৈধ টাকার অহংকার নিয়ে সে সমাজে মাথা তুলে চলছিল । আজ সত্যই নিজ কর্মের ফল ভোগ করতে লালচানের পাপের পতন হল । লালচান গং দের ধরে নিয়ে যায় থানায় । এবং চালান করে দেয় কোর্টে । তাদের বিরুদ্ধে , খুন সন্ত্রাস , রাহাজানি , ডাকাতি জালিয়াতি সহ নানা অভিযোগ । বাবুর্চি ছিল আসলে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের লোক । তারা মেম্বার কেও উদ্ধার করে বাড়ী পৌঁছে দেয় ।
২৬
মধু আর শশি আধারের পথ টেলে বন জঙ্গল মাড়িয়ে ওরা কোথায় আসে ঠাহর করতে পারেনা । একে তো বৈশাখ মাস আকাশে কালবৈশাখীর ঘন ঘটা । শশি বলল মধু ভাই আর পারছিনা কোথাও একটু জিরিয়ে নেই । হা তাত জিরানো যাবে কিন্তু কোথায় কদ্দুর এলাম কিছুই তো টাহর করতে পারছিনা । এরি মধ্য শুরু হল বাতাসের শো শো আওয়াজ । আকাশ ফেটে কড়কড় বাজ পড়ছে প্রচণ্ড শব্দে । ভয়ে ওরা আরও দৌড়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে । হটাৎ পা পিছলে পড়ে যায় শশি , একটা চিৎকার ভাসে আধার ফালা ফালা করে বাচাও । বিদ্যুতের আলোয় শশিকে খুজে মধু কিন্তু কোথাও তাকে দেখা যায়না । পাগলের মধু বনের গভিরে ছুটে । ঝরে
গাছের একটা ডাল ভেঙ্গে পড়ে ওর মাথায় । জ্ঞান হারায় মধু ।
শশি আসলে মধুকে ছেড়ে জঙ্গলের দার ঘেসা নদীর তীর থেকে ছিটকে পানিতে পড়ে যায় । নদীর শ্রুতে ভাসতে ভাসতে শশি কয়েক মাইল উজানে চলে আসে । ভোরের আযান হলে , আশ্রম থেকে বের হয় সাধু বাবা । প্রতিদিন সকালে সাধুবাবা
নদীর ঘাটে আসে অয্ূ বানাতে । যেই তিনি ঘাটে নামবে অমনি তার চোখে ভাসে একটা মেয়ের দেহ । মেয়েটির পরনে লাল শাড়ি । হাঁটু পানিতে নামে সাধুবাবা । মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে আশ্রমে । নারি পরিক্ষা করে দেখে এখনও সে জীবিত আছে । কিছুক্ষন পর জ্ঞান ফিরে বালিকার ,সাধুবাবা এবার ডাকল । মা তুমি কথেকে এলে আর তোমার এ অবস্থা কেন । বালিকা চোখ মেলে বলল মধু মধু । মধু কে । আচ্ছা মা আগে সুস্থ হয়ে নাও তারপর সব শুনব । এইখানে তোমার চাচিমার কাপড় আছে বদলে নাও ।
সাধুবাবা প্রাতকালিন মুনাজাত সেরে চুলায় রান্না বসিয়ে দিল । শশির মনে একটু শান্তি নেই কি থেকে যে কি হয়ে গেল , মাত্র এক রাতের ব্যাবদান । এই সময়ের মধ্যই অনেক কিছু ঘটে গেল । না জানি এখন মধু কোথায় আছে । তার বাবা তাকে ঘরে দেখতে না পেয়ে কি করছে ।
সাধুবাবা ঘরে ফিরে মা ভয় নেই এতদিন তোমার এতিম ছেলে বড় অসহায় ছিল আজ মনে হয় সে তার মাকে খুজে পেয়েছে । শশি এবার আশ্চস্ত হয় । আচ্ছা গুরুজি চাচিমা কে দেখছিনা যে । তোমার চাচিমা সেই কবেই আমাকে একা ফেলে স্বর্গবাসী হয়েছে , থাক সে কথা আরেকবার বপব এবার মা তোমার কথা বল ।
শশি তাকে কিডন্যাপ করা থেকে শুরু করে সাধুর সাথে পালিয়ে আসা এবং কিভাবে ঝড়ের কবলে নদীতে পড়ে যাওয়া সবিস্তারে বলে গেল । সাধুবাবা আফছুস করে বলল যাক যা হবার সে হল নিয়তি । যা বিধাতা তোমার কপালে দিনের জন্য ধার্য করে রেখেছে আসলে তাই ঘটবে এটাই আমাদের অন্তরে বিশ্বাস জন্মাতে হবে । এবার ধরয ধারন কর । নিশ্চই এ মহা পরিক্ষার পর অবশ্যই মহান আল্লাহ পাকের ভাল পুরকার তোমার জন্য হয়ত অপেক্ষা করছে ।
আপনার কথা যেন সত্য হয় গুরুজি । আরে আপনি রান্নাবান্না করতে গিয়ে হাত পুড়ে ফেললেন । পুড়া হাতে টাণ্ডা পানি ঢালে শশি । আপনি আপাতত বিশ্রাম নেন আজ থেকে ছেলেকে কথা মেনে চলতে হবে কিন্তু । বালিকার কথা শুনে গুরুজি
খুট খুট করে হাসে । এক হকার একটা পত্রিকা দিয়ে যায় গুরুজিকে । পত্রিকাটা লয়ে গুরুজি নাড়াচাড়া করে দেখে । প্রথম পাতা উল্টেই গুরুজির চোখ আটকে যায় । দেখে সংবাদের শিরোনামে পরিচিত একটা ছবি । গুরুজি এবার বালিকার দিকে চেয়ে পেওশ্ন করে আচ্ছা মা তমার গ্রামের নাম যেন কি । জি গাভী । দেখতো এই ছেলেটিকে তুমি চিন কিনা । শশি পত্রিকাটি হাতে নেয় এবং অবাক হয়ে চেয়ে থাকে আরে এ যে তারই অনিদের ছবি । শশি যেন বোবা বনে যায় । গুরুজি বলল বুঝলে মা সবই উপর ওয়ালার কর্ম চিন্তা করবানা ওরা সিগ্রির আমার আশ্রমে আসবে । এই যে অনিদ ছেলেটি এবং এই যে বাউল তারা আমার ভক্ত মানুষ । বাউল এদিকে আসলে আমার সাথে দেখা সে করবেই । গুরুজির কথায় শশির মুখটা অতিশয় উজ্জ্বল হয় ।
২৭
মধুকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঐ গ্রামের তালেব আলী মাস্টার । ঝড়ের পর বাগান দেখতে গিয়ে আম গাছের ডালের নিচে খুজে পায় তাকে । স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় তাকে । জ্ঞান ফিরে আসলে মধুর নিকট তার সকল বিষয় অবগত হয় । তারা শশির খুজে চারিদিকে লোক পাঁঠায় কিন্তু কোথাও তাকে খুজে না পেয়ে থানায় একটা জিডি করে । তালেব মাস্টার সরকার মশাইয়ের নিকট একটা তারবার্তা পাঠায় । তাদের মধ্য ছুটকাল থেকে একটা বন্ধুত্তের সম্পর্ক ছিল ।
এই গাভী গ্রামেই তাদের বাড়ীতেই জায়গীর থাকত তালেব আলী মাস্টার । বাদশাগঞ্জ হাইস্কুলে তারা একসাথে লেখাপড়া করত । একসাথে আইয়ুব বিরুধি আন্দোলনে মিছিল মিটিং এ যেত । আবার টংক আন্দোলন , কৃষক সংগ্রাম আন্দোলনেও তারা ছিল অগ্রপথিক ।
সাধারন মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে তারা সদা সর্বদা ছিল প্রতিবাদ মুখর । ইজারাদার দের নিকট জেলেরা জিম্মি থাকত । জেলেদের মাছ ধরার অধিকার নিয়ে ওরা কথা বলত । এই নিয়ে ইজারাদার দের নিকট ওরা বেশ কয়েকবার লাঞ্চিত হয়েছে এমনকি জেল হাজতেও করতে হয়েছে দিন যাপন । মধু তালেব আলী মাস্টারের নিকট তার অতিত স্মৃতিচারন শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয় ।
হাসপাতালে তাদের পাশের সিটে এক ভদ্রলোক পত্রিকা পড়ছিল । মধু পত্রিকার উপর চোখ রেখে আঁতকে উটে আরে অনিদ অনিদ । তালেব মাস্টার বলল অনিদ কে , তাকে আবার কোথায় দেখলে । কাকা অনিদ তো এই পত্রিকায় । সে আমার বন্ধু মানুষ । ছুটবেলা থেকে শশির সাথে যার বিয়ে টিক হয়ে আছে । আজ থেকে কয়েক সপ্তাহ হল তাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা । কিন্তু এই যে পত্রিকায় তার পটু দেখত্রে পাচ্ছি । তালেব মাস্টার ভদ্রলোকের নিকট থেকে পত্রিকাটা নিয়ে ভাল করে দেখল । আচ্ছা মধু আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছিনা । এবার মধু তালেব আলী মাস্টার কে অনিদের বিষয়টি সবিস্তারে বর্ণনা করে । আচ্ছা মধু অনিদের বাবার নাম জানি কি । জি , মোঃ নওয়াব আলী । ও নওয়াব আলীর ছেলে অনিদ । সে খুব ভাল মানুষ ছিল । অনিদের দাদা ছিল এলাকার মাতবর । তার বিচার শক্তি ছিল খুব সুক্ষ , তিনি যা রায় দিতেন দশ গ্রামের মানুষ তা মেনে চলত । একবার এক চুর ধরা পড়ল , শালিশ বসল , হাজারও মানুষের ভিড় একেকজন একেক রায় দিল । কেহ বলল মাথা নেড়া করে ছেড়ে দেওয়া হোক । কেহ বলল বেধম প্রহার করা হোক । কেহ বলল পুলিশে দিয়ে দিন লেটা চুকে যাক । তিনি বলল সে সিদ্ধান্ত তার উপরই ছেড়ে দেব দেখি সে কি বলে । সবাই চুপ হয়ে গেল । চুর কে ডেকে বলল আচ্ছা মশাই এই যে আপনি সরকার বাড়ী সিদ কাটলেন তারপর ধরা ও পড়লেন । এবার আপনিই বলেন আমরা আপনার জন্য কি করতে পারি । চুর কাচুমাচু হয়ে মাতবর সাহেবের পা ছেপে ধরল , হুজুর আমি আর চুরি করবনা । আমাকে এবারের মত মাফ করে দিন । আপনি যে আর চুরি করবেন না সেটা আমরা কিভাবে বিশ্বাস করব । চুর এবার নিরব থেকে বলল আপনি একজন গন্যমান্য ব্যাক্তি । একটা দাও না হয় একটা চুরা দেন যে হাতে আমি চুরি করেছি সে হাত টাই আমি কেটে ফেলে দেব । চুরের কথা শুনে মাতবর সাব বলল তোমরা কি বল বেটার কথা কি বিশ্বাস করা যায় । কেউ বলল একটা চুরি হাতে দিয়েই দেখা যাকনা । মাতবর সাব বলল চুপ কোন কথা নয় সে সবার সামনে ভাল হওয়ার ওয়াদা করেছে আমরা তাকে সুযোগ দেব দ্বিতীয় বার যদি চুরি করে ধরা পড়ে তাহলে তার আর ক্ষমা চাওয়ার কোন সুযোগ থাকবেনা । বাস্তবে ঐ চুর একজন ভাল মানুষ হয়ে গিয়েছিল এমনকি সে পাচ ওয়াক্ত নামায কালাম করত । অনিদের বাবাও খাঁটি কথা বলত । যার কারনে এলাকার দুষ্ট প্রকৃতির লোকেরা বেশি মন্দ কাজ করতে পারতনা । মানুষটা একদিন হটাৎ করেই গায়েব হয়ে গেল । আর তাকে খুজে পাওয়া যায়নি । আর একটি কথা ৭১ রে যুদ্ধের সময়ে নওয়াব আলী ছিল একজন সফল মুক্তিযুদ্ধা । মধু চমকে উটে , কি কন চাচাজি অনিদের বাবা মুক্তিযুদ্ধা আছিল সত্য কথাটি আজ আমি প্রথম আপনার মুখ থেকে শুনলাম ।
২৮
গুরুজির আশ্রমে আসে বাউলের ছোট দলটি । দলে এবার যোগ হয় অনিদ । গুরুজিকে ছালাম করে বাউল কুশলাদি জিজ্ঞাসে । কেমন আছেন গুরুজি । খোদার অসীম রহমতে ভাল আছি বাবারা । তা তোমাদের আসার খবর আমি আগেই পেয়েছি । প্রধান বাউল বলল , আপনি হলেন গুরুজি আপনার তো সে ক্ষমতা আছেই । ভুল বাবাজি আমার কোন ক্ষমতা নাই ক্ষমতা সব উপর ওয়ালার । দিনের সুচি অনুযায়ী যার ভাগ্য তিনি যতটুকু কলম ঘুরিয়েছেন এর বেশি কিছু আশা করা পাপ । গতকাল হকার একটা পত্রিকা দিয়ে যায় এতে দেখি তোমাদের ছবি । তোমাদের জন্যই তো জঙ্গি বোমাবাজরা ধরা পড়ল । অনিদ এগিয়ে আসে জি গুরুজি তাই সত্য । আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন । চিনবনা কেন বৎস্ । বিধাতার লিলা খেলা বড়ই ক্ষুদ্রতের তিনি কারে কখন যে কোন অছিলায় উদ্ধার করেন বুঝা বড় দায় । টিক আছে তোমরা হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা পানি খাও , বিশ্রাম কর আমি একটু আসছি ।
অনিদ দেখে বটবৃক্ষতলার ছোট আশ্রম ঘর থেকে বের হচ্ছে প্রচুর ঘুয়া । মনে তার সন্দেহ জাগে ঘরে তো রান্নাবান্না করার মত গুরুজির দ্বিতীয় আর কেহ থাকার কথা নয় তাহলে ওখানে কে । অনিদ কৌতূহল নিভৃতে ঘরে উকি দেয় । দেখে এক কিশোরী রান্না বান্নায় ব্যাস্ত । গুরুজির আদেশ অমান্য করা তার উচিৎ নয় কি মনে করে সে ঘরের দরজা থেকে ফিরে আসে । কিশোরীর ডাকে বিস্মিত হয় অনিদ । ফিরে তাকায় । চারচোখের মিলন হয় । দুজনই হতবাক, কারও মুখে কোন কথা ফুটেনা । অনেকক্ষণ পর অনিদের মুখ থেকে শুধু বের হয় শশি তুমি ।
গুরুজির মুখে মৃদু হাসি , মা সবই বিধাতার ইচ্ছা । এসব আসলে বান্ধার প্রতি তারই পরিক্ষা । এজন্য সদা সর্বদা মহান আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস রাখতে হয় । অনিদ বাবা তুমি তোমার হারানো মানিক আবার কুড়িয়ে ফেলে এজন্য তোমার মহান আল্লাহর দরবারে শূক্রিয়া আদায় করে নাও । আমি খবর পেয়েছি রুপ পুরের মাস্টার মশাই আমার এখানে আসছে
বাউলের দলেরাও আছে আগামী কাল পর্যন্ত তোমরা আমার এখানে অথিতি হিসাবে থাক । তারপর সবাই মিলে তোমাদের গ্রামে যাব ।
অনিদ মাথা নাড়িয়ে সায় দিল , গুরুজি আপনার ইচ্ছাই সফল হোক ।
প্রতিবছর গুরুজির আশ্রমে বৈশাখের প্রারম্ভেই মেলা হয় , গানের আসর বসে । নানা এলাকা থেকে অসংখ্য লোক আসে মেলায় কেনাকাটা করতে ।
গুরুজি একজন সাধক পুরুষ , তিনি গান রচনা করেন । আধ্যাত্মিক গান । তার ভক্তকুল ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন অঞ্চলে । টিক এইসময় সবাই চলে আসে গুরুজির পদদক্ষিনা লয়ায় জন্য ।
আজ ও গুরুজি গুনগুন করে গান বানায় আর প্রধান বাউল সুর করে
ও তুই চিনলিনা তারে
অপরূপে রুপ মিশাইয়া বিরাজ করে দিলের ঘরে ঐ
সেযে করে খেলা সারাবেলা
এক নাম তার হয় রঙিলা
ভাসাইয়া প্রেমের ভেলা রয় মানুষের ও অন্তপুরে ঐ
সে যে রিঝিক দানে করায় আহার
সুখে দুখে পাতায় সংসার
করিছে ক্ষুত্রতি বিচার গুরুজি কয় দেখনারে সন্ধান করে ঐ ।
অনিদ ও শশি গান শুনে চোখের জল বিসর্জন দেয় । অনিদ চলনা ঐ নদীর ওপাশ থেকে একটু ঘুরে আসি দেখবে মন ভাল হয়ে গেছে । হা মন ভাল হওয়ার ঔষধ সেটা নয় । তাহলে কি । কাছে এস । এলাম , ঘোমটা দিয়ে দ্বারায় শশি । আচমকা শশিকে ধরে কুলে তুলে নেয় অনিদ । আরে করছ কি কেউ দেখে ফেলবে তো । দেখুক আর ভয় নেই আজ বাদে কাল তো তুমি আমারি । আমি আবার অন্যর কবে ছিলাম । ও হা তাই তো । ওরা হাসে ওদের হাসি বাতাসে ছড়ায় দূর হতে দূরে ।
উপসংহার
**********
পরেরদিন মাস্টার সাহেব এবং মধু গুরুজির আশ্রমে আসে এবং সবাই একসাথে গ্রামের বাড়ী ফিরে । অনিদের গ্রামে ফিরে আসার আনন্দে এবং ধূর্ত লালচান গংদের থানায় ধরা পড়ার কারনে এলাকাবাসী আনন্দ আয়োজন করে । এই আনন্দ আয়োজনে অনিদ ও শশির মহাধুমধামে বিয়ে হয়ে যায় ।
বাসর রাতে অনিদ দেখে ঘোমটা পড়া অবস্থায় কে যেন দাড়িয়ে । শশি মনে করে কাছে গিয়ে ঘোমটা উম্মুচন করতেই অনিদ চমকে উটে , আরে প্রিয়তা তুমি । হা আমি । আমি আসলে কে সেই পরিচয় তোমায় জানাতে চাই । আর বলছিলাম না যেদিন আমার সত্যিকার পরিচয় পাবে সেদিনই হবে তোমার কাছ থেকে আমার চির বিদায় । আমি ভিনগ্রহের এক ললনা
আমি এসেছিলাম পৃথিবীর মানুষদের নিয়ে গবেষণা করতে । আমার সময় আসলে শেষ । আগামীকালই আমরা পৃথিবী থেকে আমাদের মিশন নিয়ে বিদায় হবো । ওহা ঢাকায় গিয়ে যখন তুমি বিপদে পড়েছিলে সেখান থেকেও তোমাকে ছায়া দিয়েছিলাম এই আমি । আর গুরুজি সেও ছিল আমার এক ভাল শিক্ষক , পদ প্রদর্শক । আমরা তোমাদের জীবন থেকে অনেক শিক্ষা অর্জন করেছি যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য থাকবে এক যুগান্তকারী দিক নির্দেশ । আমি চললাম , ভাল থাক প্রিয় বন্ধু তোমরা সুখি হও ।
অনিদ দেখল প্রিয়তার ছবি বাতাসে মুহূর্তে যেতে মিলিয়ে । তার চোখে ছিল নিরেট ভালোবাসার অশ্রুগঙ্গা ।









০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×