টুকিটাকি গৃহস্থালি
গৃহস্থালির টুকিটাকি অনেক কিছুই আমাদের জানার অন্তরালে। অথচ ছোটখাটো এ টিপসগুলো জানলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায় এবং অপচয় কমে নানা দ্রব্যের। দেখে নিই তেমন কিছু টিপস—
লেবু কেটে ফেললে শুকিয়ে যায়। কাটা লেবু ফ্রিজে রাখতে না চাইলে এর ওপর সামান্য নারকেল মাখিয়ে খোলা জায়গায় রাখুন।
হিং অনেক দিন তাজা থাকবে যদি এর সঙ্গে কয়েকটা কাঁচামরিচ রাখেন। দুধে ভিজিয়ে রাখলেও তাজা থাকবে।
কোল্ড ড্রিংকসের ঝাঁজ বের হয়ে গেছে, ফেলে দেবেন না। ঘরের মেঝে, তেলতেলে কিচেন কাউন্টার ইত্যাদি পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করুন।
আঠার টিউব যখন ব্যবহার করবেন না, তখন ফ্রিজে রাখুন। অনেক দিন চলবে, শুকাবে না।
সাবান ছোট টুকরা হয়ে গেলে ফেলে দেবেন না। পুরনো মোজায় ভরে ড্রয়ারে বা আলমারিতে রাখুন। ভ্যাপসা গন্ধ হবে না; ফ্রেশনারও লাগবে না।
মোমবাতি ফ্রিজে রাখবেন। তাড়াতাড়ি জ্বলে যাবে না।
জুতার কালি যদি বেশি দিন পরপর ব্যবহার করেন তাহলে তা শুকিয়ে যায়। এতে দুই ফোঁটা অলিভ অয়েল দিয়ে রাখবেন, অনেক দিন ভালো থাকবে।
দামি সেরাম শ্যাম্পু হাতের কাছে নেই। বাড়িতে বানিয়ে নিন সেরাম শ্যাম্পু। দুটো ডিমের সাদা অংশ বের করে নিয়ে এতে দুই টেবিল চামচ রেড়ির তেল মেশান। পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন ঘণ্টাখানেক। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন খুশকিমুক্ত ঝলমলে চুল।
বালতি বা প্লাস্টিকের কোনো জিনিসে মরচে দাগ পড়লে তারপিন তেলের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে ঘষুন, দাগ চলে যাবে।
লেবুর খোসা ফেলে দেবেন না। ছোট টুকরা করে ডিটারজেন্টের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। ডিটারজেন্টও কম লাগবে এবং কাপড়ও ঝলমলে হবে।
চামড়ার জুতায় ক্যাস্টর অয়েল আর সোলে বার্নিশ (ম্যাট) লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। বৃষ্টিতে ভিজলেও নষ্ট হবে না।
ছুরি বা কাঁচিতে মরচে দাগ তোলার জন্য ভিনেগার দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে আধা ঘণ্টা ফুটিয়ে নিন, দাগ চলে যাবে।
রুপার গহনা কালো হয়ে গেলে একটি পাত্রে রেখে পানি দিয়ে কয়েক টুকরো আলু দিন, ১০ মিনিট ফোটান। নামিয়ে ঠাণ্ডা হলে পানি থেকে তুলে নরম কাপড় দিয়ে ঘষে নিন, পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মোচা বা কচু কাটতে গিয়ে হাতে দাগ হয়ে যায়। কাটা শেষে আলুর ফালি আঙুলে ঘষে নিন, দাগ থাকবে না।
বেগুন পোড়ার পর এর খোসা তুলতে অনেক সময় কষ্ট হয়। তাই বেগুন পোড়ার পর তা পানিতে দুই মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর তুলে পানি ঝরিয়ে খোসা ছড়ান। সহজেই উঠে যাবে।
ফুলকপি অনেক সময় পরিষ্কার হতে চায় না। তাই কাটার পর ভিনেগার মেশানো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন কয়েক মিনিট। এরপর তুলে দেখবেন সব পোকা আর ময়লা বেরিয়ে গেছে।
দই কি খুব টক হয়ে গেছে? পাতলা কাপড়ে ঢেলে ঝুলিয়ে রাখুন। তবে দইয়ের পানিটা ফেলে দেবেন না। ময়দা মাখার সময় পানির পরিবর্তে ব্যবহার করুন। আর টক দই পরিবেশন বা রান্নার সময় একটু দুধ মিশিয়ে দেবেন।
রেফ্রিজারেটরে খাদ্য সংরক্ষণ
রেফ্রিজারেটর প্রতিটি পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ গৃহস্থালি পণ্য। সঠিক ব্যবহার জানা না থাকায় অনেককে রেফ্রিজারেটর নিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। তাই আজ রইল এর সঠিক ব্যবহার এবং কীভাবে এতে খাদ্য সংরক্ষণ করবেন তার নানা দিক...
ফল বা সবজি
ফল বা সবজি ভালো করে ধুয়ে রেফ্রিজারেটরে রাখুন। তবে আলু, পেঁয়াজ ও রসুন কখনই এতে রাখবেন না। আলাদা করে কাগজের ঠোঙায় ভরে রান্নাঘরের শুকনা স্থানে রাখুন।
কুচানো বা কাটা সবজি প্লাস্টিকের ব্যাগ বা বায়ুরোধক বাক্সে ভরে রেফ্রিজারেটরে রাখুন। খেয়াল রাখবেন, ব্যাগের মুখ যেন ভালোভাবে আটকানো থাকে। এতে সবজির আর্দ্রতা ও পুষ্টিগুণ ঠিক থাকবে।
কাঁচামরিচের বোঁটা ফেলে বায়ুরোধক ব্যাগে ভালো করে মুখ আটকে রাখুন। টমেটো একইভাবে রাখুন, নয়তো নষ্ট হয়ে যাবে।
ধনে পাতা, পেঁয়াজ পাতা, লেটুস পাতার গোড়ার অংশ কেটে প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখুন। শুকাবে না।
রেফ্রিজারেটরের ভেতর ফল বা সবজি একসঙ্গে না রেখে সবসময় আলাদা রাখুন। আপেল এবং অন্য ফল থেকে ইথানল গ্যাস বের হয়ে অন্য সবজি পাকিয়ে ফেলে। একই কারণে টমেটো বা শসাও একসঙ্গে রাখবেন না।
ফল বা তরকারি কখনই রেফ্রিজারেটরের ডিপ চেম্বারে রাখবেন না। স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
মাছ, মাংস ও ডিম
রেফ্রিজারেটরে ডিম সাজিয়ে রাখার সময় এর সূচালো দিকটা নিচের দিকে রাখুন। এতে বেশি দিন ভালো থাকবে।
মুরগি বা গরুর মাংসের কিমা রেফ্রিজারেটরে রাখার সময় বায়ুরোধক ব্যাগে রাখুন। বের করার পর দ্রুত স্বাভাবিক হবে।
খাবারটা যখন রান্না করা
ভাত রেফ্রিজারেটরে রাখার সময় একটা সেকা পাউরুটি ভাতের ওপর রাখুন। তাজা থাকবে।
অর্ধেক রান্না করা খাবার রেফ্রিজারেটরে রাখার সময় অবশ্যই জিপড ব্যাগ ব্যবহার করবেন না।
ডাল, তরকারি, মাছ ও মাংস যা-ই রেফ্রিজারেটরে রাখুন না কেন, ছড়ানো অবস্থায় বা বড় পাত্রে না রেখে ছোট বায়ুরোধক পাত্রে রাখুন। এতে খাবারে জীবাণুর আক্রমণ হবে না।
রান্না করা খাসির মাংস, মুরগি বা সামুদ্রিক খাবার বেশি সময়ের জন্য রেফ্রিজারেটরে রাখতে হলে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল বা বায়ুরোধক প্লাস্টিক বাক্সে রাখুন।
খাবার গরম অবস্থায় কখনই রেফ্রিজারেটরে রাখবেন না। ফ্যানের নিচে রেখে তাপমাত্রা স্বাভাবিক করে তবেই রেফ্রিজারেটরে রাখুন।
রেফ্রিজারেটরের ওপরের তাকে রান্না করা খাবার রাখুন। কখনই ডিপ চেম্বারে রাখবেন না।
কয়েক টুকরো আপেল কেটে কেকের বাক্সের ওপর রেখে রেফ্রিজারেটরের সাধারণ তাপমাত্রায় কেক রাখুন, নরম হবে না। টুকরো আপেল বাড়তি আর্দ্রতা শুষে নেবে।
বাড়িতে তৈরি ডেজার্ট ও সালাদ রেফ্রিজারেটরের ডিপ চেম্বারের তাপমাত্রা একটু কমিয়ে স্টোর করুন।
তেল, আটার রুটি ও সিরিয়াল রেফ্রিজারেটরে কখনই রাখবেন না।
খাবার নামানোর পরে
রেফ্রিজারেটরে জমে থাকা খাবার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের চুলায় বা ওভেনে দেবেন না।
জমে থাকা খাবার রেফ্রিজারেটর থেকে বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। একটা জিপলক ব্যাগে ভরে পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। তবে প্র্রতি আধা ঘণ্টা পর ব্যাগে জমে ওঠা বরফ গলা পানি বদলে দিন।
মাইক্রোওভেনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় গিয়ে খাবার গরম করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মাইক্রোওয়েভ প্রুফ পাত্রটা ওভেনের গা থেকে অন্তত ২ ইঞ্চি দূরে রাখুন, যাতে হিট সার্কুলেশন ভালো হয়।
রক্ষণাবেক্ষণ
যেসব রেফ্রিজারেটরে অটোমেটিক ডিফ্রস্টিং সিস্টেম নেই, সেখানে চার ভাগের ১ ইঞ্চি বরফ জমলে সঙ্গে সঙ্গে ডিফ্রস্ট করুন।
সপ্তাহে এক দিন রেফ্রিজারেটরের ভেতর পরিষ্কার করুন। যেদিন রেফ্রিজারেটরে অল্প খাবার থাকবে সেদিনটাই বেছে নিন।
ক্লিনিং লিকুইড স্প্রে ও শুকনো স্পঞ্জ দিয়ে রেফ্রিজারেটরের ভেতরটা মুছে নিন।
মাসে একবার রেফ্রিজারেটরের দরজার সিল পরীক্ষা করুন। নিয়মিত সিল পরিষ্কার করুন। যদি কোথাও চির দেখা দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে মেকানিক ডাকুন।
বছরে একবার ইলেকট্রিক কানেকশন অফ করে রেফ্রিজারেটরের পেছনে বা নিচে থাকা কয়েল পরীক্ষা করুন। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা নরম ঝাড়ু দিয়ে কয়েলে লেগে থাকা ধুলা-ময়লা পরিষ্কার করুন।
অনেক সময় কার্টনে ভরা দুধ, ডেইরি প্রডাক্ট বা অন্যান্য খাবার প্যাকেটের গায়ে স্টোর তাপমাত্রা লেখা থাকে। সেই তাপমাত্রা অনুযায়ী খাবার ডিপ ফ্রিজার বা রেফ্রিজারেটরের অন্য অংশে রাখুন।
পাওয়ার কাটের সময় যতটা কম পারেন রেফ্রিজারেটরের দরজা খুলুন। ৬ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুত্ না থাকলে মাছ, মাংস, দুধ (যা সহজে নষ্ট হয়) ব্যবহার করে ফেলুন।