somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈ-সা-বি (Boi-Sa-Bi) বা বৈসাবি, বাংলাদেশে বসবাসরত উপজাতীয়দের বাংলা নববর্ষ বা ১লা বৈশাখ।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ত্রিপুরা বালিকা নৃত্যের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে

বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ বা ১লা বৈশাখই হচ্ছে একমাত্র অসাম্প্রদায়িক জাতীয় উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরীব নির্বিশেষে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এইদিন প্রাণের উদ্দীপনায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনন্দে মেতে উঠে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে। পুরাতন বছরের সমস্ত জীর্ণতা ও ব্যর্থতাকে প্রাণের উচ্ছাসে ভাসিয়ে দিয়ে বাঙালী এইদিন নতুন বছরকে বরণ করে নেয় নতুন করে বাঁচার অঙ্গীকারে। দিন যতই যাচ্ছে বাঙালীর বর্ষবরণ ততই নতুন আঙ্গিকতায় প্রকাশ পাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে দূরবর্তী জনপদেও আজকাল ১লা বৈশাখ পালিত হয় বাঙালীর চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায়।


ত্রিপুরা শিশু

তবে বাঙালীর এই চিরায়ত সংস্কৃতির মধ্যেও ভিন্নতা দেখা যায়। তার কারণ, বাংলাদেশে রয়েছে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর বাস। এরা সবাই নিজস্ব ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ১লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ পালন করে থাকে। কিন্তু প্রাণের উচ্ছাস বা উদ্দীপনা সব ক্ষেত্রে এক, ভিন্নতা কেবল আনুষ্ঠানিকতায়।


ট্রাডিশনাল ড্রেসে ত্রিপুরা কিশোরী

বাংলা নববর্ষ পালনের এমনই এক অন্যরকম আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে বৈ-সা-বি বা বৈসাবি অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে বসবাসরত তিন উপজাতীয় স¤প্রদায় অর্থাৎ ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমাদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি বৈ-সা-বি বা বৈসাবি নামে পরিচিত। ১লা বৈশাখের দিনে এই তিন আধিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা একসাথে বৈ-সা-বি উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে থাকে। তবে এই তিন সম্প্রদায়ের লোকেরা পৃথক পৃথক ভাবে বর্ষবরণের জন্য যে উৎসব পালন করে থাকে সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন


ট্রাডিশনাল পোশাকে এক ত্রিপুরা দম্পতি


মারমাদের জলনৃত্য

ত্রিপুরা আধিবাসীদের বৈশাখ উৎসবের নাম বৈশুখ (Boisuk)
মারমাদের বৈশাখ উৎসবের নাম সাংগ্রাই (Sangrai) ও
চাকমাদের বৈশাখ উৎসবরে নাম বিজু (Biju or Bizu) ।


মারমাদের বাড়ি

ত্রিপুরাদের বৈশাখ উৎসব বৈশুখ প্রধানত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হিন্দু সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আদলে সাজানো। হিন্দু স¤প্রদায়ের নববর্ষ উৎসবের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠানের প্রতিফলন দেখা যায় ত্রিপুরাদের নববর্ষ পালনের অনুষ্ঠানে।


মারমা নারী


মারমাদের বাংলা বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাই এর মূল আকর্ষণ হচ্ছে জল উৎসব বা ওয়াটার ফেষ্টিভল (Water Festival)। আমরা প্রায়ই টেলিভিশনে উপজাতীয়দের এই জল উৎসব দেখে থাকি।

চাকমাদের বৈশাখী উৎসবকে বলা হয় বিজু, যার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে বিজু নৃত্য। চৈত্রের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিনে এই বিজু নৃত্য শুরু হয়ে চলে তিনদিন পর্যন্ত। তিনদিনের এই নৃত্যানুষ্ঠানকে তিনটি নামে ডাকা হয়।

প্রথম দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিনের নাম পুল বিজু (Phool Bizu)। এই দিন ঘরের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সবকিছু ধোয়া-মোছা করা হয় এবং ঘরবাড়ি নানারকম ফুল ও লতাপাতা দিয়ে সাজানো হয়। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১লা বৈশাখের দিনকে বলা হয় মুল বিজু (Mul Bizu)। মুল বিজুর দিন চাকমারা নতুন কাপড় চোপড় পরে বিভিন্ন বাড়িতে বেড়াতে যায়। এদিন চাকমাদের ঘরে বিভিন্ন প্রকার সব্জি রান্না করা হয়। আমাদের চিরাচরিত নিয়মের মতো মেলা ও বিভিন্ন প্রকার দেশীয় খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় দিনকে বলা হয় গজ্জিপজ্জি (Gojjipojji)। এইদিন চাকমারা বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতা পালনের মাধ্যমে বৈ-সা-বি উৎসবের সমাপ্তি ঘটায়।


চাকমাদের হস্তশিল্প মেলা।

তবে যেভাবেই পালন করা হোক না কেন ১লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বাঙালীর চিরায়ত আবেগ ও উদ্দীপনার স্থানটি দখল করে আছে বহুদিন ধরে। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এই স্থানটিতে আমরা বরাবরই আপসহীন। যতই বাধা-বিপত্তি এসেছে ততই যেন গতিময়তা পেয়েছে বাঙালীর জাতিগত সংস্কৃতির মূল শেকড় প্রোতিত এই উৎসবটি। কিন্তু একটি জায়গায় আমরা পারিনা এই উৎসবের প্রবাহমান ধারাকে ধরে রাখতে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলা নববর্ষ পালনের মূল উৎসব আমাদের জন্য শ্রেণীগত বৈষম্যের উর্ধ্বে উঠে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ চলার শিক্ষা দেয়। আমরা এক দিনের জন্য সেপথে পথ চললেও বাকী দিনগুলোতে ভুলে যাই সেই শিক্ষাকে। ব্যক্তিগত স্বার্থে মেতে নানা দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ি আমরা। ১লা বৈশাখের একদিনের শিক্ষাকে আমরা যদি সারা বছর ধরে রাখতে পারি আমাদের দৈনন্দিন জীবনাচারে তাহলেই কেবল বাংলা নববর্ষ বা ১লা বৈশাখ পালনের মূল আনুষ্ঠানিকতা সার্থক হতে পারে বলে আমি মনে করি।




সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৩৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×