আমার শৈশবের ঈদের গল্প অন্য একটি পোস্টে করেছি, যে গল্পটা ব্লগার বন্ধু জাফরুল মবীনের শৈশবের ঈদ সংকলনে স্থান পেয়েছে। কিন্তু আমার ঈদ নিয়ে ব্যক্তিগত আর একটা গল্প করা হয়নি, সেটাই এখানে করছি। গল্পটা শৈশবের নয়, তাই ওখানে স্থান পায়নি। গল্পটা আমার বড় বেলার, অর্থাৎ বিয়ের পরের।
একটা সময় ছিল নতুন জামা-কাপড় না পেলে ঈদ অসম্পূর্ণ মনে হতো। নিজকে কেমন যেন ফকিরি ফকিরি লাগত। সেই সময়টা পেরিয়ে যখন সংসারে ঢুকলাম, ঈদ বা অন্য যে কোন পালা-পার্বনে নিজের জন্য নতুন জামা-কাপড় কেনার পূর্বে অন্যের জন্য কেনার কথা ভাবতে হয়, তখন দেখলাম এই মনোভাব পাল্টে গেছে। তখন নতুন জামা-কাপড় নেয়ার চেয়ে অন্যকে দেয়ার মধ্যেই বেশী আনন্দের সন্ধান পেলাম।
সেই সময় আমিই নিয়মটা চালু করলাম। আমার হাজব্যান্ডকে বললাম প্রতি ঈদে আমাকে খুব ভালো একটি করে বই কিনে দিতে হবে। এখানে বলে রাখি ছোটকাল থেকে বই পড়ার নেশা আমার প্রচন্ড, যে নেশা আজও আছে। কিন্তু তখন বই কিনে দেয়ার কথা কাউকে বলতে পারতাম না। কারণ, একে তো পড়ার ক্ষতির কথা ভাববে সবাই। তার উপর নতুন জামা-কাপড়ের মোহ তখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
যাই হোক, আমার হাজব্যান্ডকে এই প্রস্তাব দেয়ায় তিনি অত্যন্ত খুশী হলেন। প্রতি ঈদে এবং আমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে একটি করে ভাল বই পেতে লাগলাম আমি। তাই বলে এই বিশেষ দিনগুলোতে আমাকে নতুন কাপড় দেয়া থেকে বিরত থাকেননি আমার হাজব্যান্ড। এভাবে আমার বই এর কালেকশান বাড়তে লাগল। সাধারণত আমি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই ও জীবনীগ্রন্থ পড়তে খুব ভালবাসি। অন্য আরও পছন্দের বইও আমি কিনে পড়ে থাকি। মোটামুটি এভাবে আমার একটি ছোটখাট লাইব্রেরী গড়ে উঠল।
পরবর্তীতে আমার লেখা বই এসে যোগ হলো আমার লাইব্রেরীতে। এখন আমার লাইব্রেরীকে অনেক সমৃদ্ধ মনে হয়। কিন্তু আমি সব সময় অত্যন্ত গর্বের সাথে বলে থাকি যে আমার লাইব্রেরীর েগাড়াপত্তন ঈদে আমার হাজব্যান্ডের নিকট থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বই এর মাধ্যমে।
ঈদের দিনে বই উপহার নেয়া--- ব্যাপারটা নিয়ে আমার ও আমার হাজব্যান্ড এর চারপাশের অনেকের বিরূপ মন্তব্য করত তখন। অনেকে আমাকে ব্যাকডেটেড বলতেও ছাড়তনা। কারণ, তখনকার দিনে নাকি স্বামীরা স্ত্রীদেরকে বই উপহার দিত বিভিন্ন উৎসবে। কিন্তু আমি জানি ঐসব কথা তখন গায়ে মাখিনি বলে আজ আমি একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরীর গর্বিত মালিক। কয়জন পারে এমন একটা সম্পদের মালিক হতে ?
আজকাল ঈদ কেন, এমনিতেই তো বই কেনার পরিমাণ কমে এসেছে। বিভন্ন ওয়েবসাইটে ঢু মারলেই পাওয়া যায় যে কোন বই। তারপরও বলব, ঝকঝকে ছাপার একটি নতুন বইয়ের পাতা উল্টাতে যে আনন্দ তা পাওয়া যায়না ওয়েবসাইটে বই পড়ে। শুয়ে-বসে যেভাবে ইচ্ছে বই এর পাতা উল্টানোর মজাই আলাদ। সেই আনন্দ বা মজা, যা-ই বলিনা কেন, তা আমাদেরকে দিতে পারে একমাত্র কাগজে ছাপানো বই। বই পড়ে আনন্দ উপভোেগর সবটুকু পাওয়া যায় এখান থেকে। তাই বলব, আমরা কি পারিনা আমাদের বই কেনার অভ্যাসটা ধরে রাখতে ও নতুন করে এই অভ্যাস গড়ে তুলতে ?
ঈদে বা অন্যান্য উৎসবে নতুন জামাকাপড়সহ আনুষংিগক সামগ্রী তো থাকলই, সেই সাথে একটা ভাল বই কেনা কি খুব বেশী ব্যয়বহুল ? প্রযোজনে ঈদের বাজেটটা না হয় একটু খাটছাট করলাম। তাতে কি এমন ক্ষতি ?
সবার মাঝে বই কিনে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠুক-- ঈদের দিনে এই বিশেষ কামনা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:১৮