নেতা আসবেন। অনেক দিন ধরে এই নিয়ে এলাকা সরগরম হয়ে আছে। একটা উৎসব উৎসব আমেজ সর্বত্র।
অবশেষে নেতা এলেন। এলাকাবাসীর মনে ঝিমিয়ে পড়া আশার প্রদীপটা আবার জেগে উঠল। এবার তাদের ভাগ্য বদল হবে। নেতা এলেই নাকি এলাকার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে !
যথাযোগ্য মর্যাদায় নেতাকে বরণ করা হলো। বক্তৃতায় মঞ্চে অনেকে কথার ফোয়ারা বইয়ে দিল। যারা কিছু বলার সুযোগ পেলনা তারা মনে মনে আফসোস করল।
নেতাও অনেক কথা বললেন। এলাকায় অনেক কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। সামনে খোলা জায়গায় বসা মানুষগুলো সেই বক্তৃতা হা করে গিলল। কিছু বুঝল, কিছু বুঝলনা। যতটুকু বুঝল তাতেই খুশীতে আটকানা হয়ে গেল।
সবশেষে নেতার আসল কাজ। উদ্বোধন করবেন কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের। ডিজিটাল উদ্বোধন হবে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সব ক'টি প্রকল্পের ফিতা কাটবেন তিনি।
মঞ্চ থেকে সেই অবধি হেঁটে যাবেন নেতা। তার যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য প্রশস্ত রাস্তা তৈরী করা হয়েছে এলাকাবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তোলে।
ঝকঝকে মসৃণ রাস্তা। নেতা তার স্বাভাবসুলভ গাম্ভীর্য বজায় রেখে মঞ্চ থেকে নামলেন। তাকে বেষ্টন করে সাথে সাথে হাঁটছে অসংখ্য চেলা-চামুন্ডা।
সবাই হাঁটছে। কিন্তু নেতা তাদের সাথে তাল মেলাতে পারছেন না। অবাক হয় সবাই। অত সুন্দর রাস্তা। তবু কেন হাঁটতে পারছেননা স্যার ? কেন বারবার দাঁড়িয়ে পড়ছেন তিনি ?।
কি অসুবিধা ? কি হয়েছে নেতার ? শরীর ঠিক আছে তো নেতার ? কি করা যায় এখন স্যারের জন্য ? এটুকু তো মাত্র পথ !
ব্যস্ত হয়ে পড়ে কেউ কেউ।
নেতা তবু এগোতে চেষ্টা করেন। সাবধানে পা ফেলেন যেন রাস্তার গর্ত দেখে দেখে হাঁটছেন তিনি।
কি হয়েছে স্যার ? অমন করে হাঁটছেন কেন ? আপনার জন্য অত সুন্দর রাস্তা বানালাম !
কোথায় অত সুন্দর রাস্তা ? আমার পা বারবার কাদায় আটকে যাচ্ছে। এটাকে আপনারা সুন্দর রাস্তা বলছেন ?
নিজের অনিচ্ছায় নেতার স্বর একটু উঁচু শুনায়। অমনি নেতার কানে আসে,
"কাদা বলছেন কেন স্যার ? আমরা মানুষ। আমাদের পোড়া দগদগে শরীরের উপর দিয়ে আপনি হাঁটছেন তো তাই অমন মনে হচ্ছে। যান স্যার, এগিয়ে যান। আপনার পা পুরোটা কাদায় ডুববে না। আপনার লাগানো আগুনে আমাদের শরীরের মাংস পুড়ে কাদার মতো হয়ে গেলেও হাড়গুলো এখনও রয়ে গেছে। ওগুলোর উপর দিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে হেঁটে যান। "
না, না, -----বলে দু'হাতে দু'কান চেপে ধরে নেতা উল্টোদিকে দৌড়াতে শুরু করেন। সবাই নেতার দিকে হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকে।
৩১-০১-২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪