অবশেষে আওয়ামীলীগ সরকার বিদায় নিল। বিদায় নেওয়ার পর তারা কে কোথায় যাবেন, তা ভাবছেন। কেউ কেউ আগেই সরে পড়েছে। যারা আওয়ামীলীগকে ধ্বংসের প্রান্তসীমায় নিয়ে আসলেন, তাদের কাউকেই এখন আর দেখা যায়না। তারা কি পৃথিবীতে না মঙ্গলে এটা কেউই জানেনা। অনেক দেশ থেকেই শেখ হাসিনা ভিসা চাচ্ছেন কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন। অবশেষে কোন খারাপ পরিস্থিতি আসার আগেই তিনি গৌরি দাসের শরনাপন্ন হলেন। উদ্দেশ্য দাদার দেশ। গৌরি'দা কহিলেন "আপনিতো মানি লোক, আপনাকে তো আমি নুর হোসেনের মতো পার করিতে পারিবোনা। মোদী'দার সাথে নেক্সট টার্মের শর্তহীন কন্টাক্টে যেতে পারেন। আমি একাজ পারিবোনা। "
তিনি চোখে অমাবস্যা দেখলেন। অবশেষে তিনিও গৌরি'দার পরামর্শ মতই পার হলেন। সবথেকে বড়ো কথা হলো চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। বাঙ্গালীর বিশ্বাস নেই, সুযোগ পেলে আবার বংশসুদ্ধ উপড়ে ফেলবে।
সমস্যা দেখা দিলো অন্য জায়গায়। ক্ষমতা ছাড়ার অাগে তার তাজা সব অপকর্মের দায়ভার কে নেবে? জনির বুকের ১৯ টি গুলির কি জবাব হতে পারে। ৫৪টি গুলিতে ঝাঁঝরা চার মৃতব্যক্তির হত্যার কি হবে? নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে ব্রাশফায়ারে নিহত ব্যাক্তির ফ্যামিলি কি ক্ষতিপূরণ চাইবে? সকল মিডিয়ায় নাম প্রচার হওয়ার পরেও জিশানকে কুমিল্লায় বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফনের প্রতিফল কে নেবে? কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ফাঁসির বদলা কার উপর দিয়ে যাবে?
আওয়ামীলীগ যে ক্ষোভ ও ঘৃণার আগুন জালিয়েছে তাতে তাদেরই পুড়ে যাবার সম্ভাবনা বেশী। কতকাল এই প্রতিহিংসার আগুন জাতি বয়ে বেড়াবে তা এ মুহুর্তে নির্ধারণ করা কঠিন।
সাধারণ ভাবনা থেকেই বলছি, নির্যাতিত মানুষ যখন নির্যাতনকারী শেখ হাসিনা, কামরুল, নাসিম, হানিফ, মখা, হাসান, বেনজির, শহীদুল, সিনহা, মানিক, মায়া এদেরকে খুঁজে না পাবে তখন সে পাড়ার কোন এক নিরীহ আওয়ামীলীগারকেই প্রতিশোধের জন্য বেচে নিবে। তখন এই পাড়ার পাতি নেতা আওয়ামীলীগকেই তাদের নেতাদের দায়ভার বহন করতে হবে। হয়তো ব্যক্তিগতভাবে সে একজন সার্পোটারই ছিলো মাত্র। নেতাদের অত্যাচার নির্যাতনের দায়ভার তাকেই তখন বয়ে বেড়াতে হবে। তৃণমুল আওয়ামীলীগের যা করনীয় ছিলো তা পালন না করার এবং সরকারকে বিদায়ের পূর্ব মুহুর্তের লোমহর্ষক গুম খুন থেকে বিরত রাখবারও দায়িত্ব ছিলো। তারা তা পালন না করার কারনেই তাদের উপর আপদ আসবে। সুতরাং সরকারকে পদত্যাগের পরামর্শ তৃণমুলের আওয়ামীলীগকেই দিতে হবে। মাঠের হাওয়া কোন দিকেই বইছে, এখনো নিরাপদ বিদায়ের পথ আছে কিনা? ব্রাশফায়ার, গুলি, গুম জেনেও মানুষ রাজপথে, এখবর শেখ হাসিনাকে তৃণমৃল থেকেই দিতে হবে। তাদের নিজেদের বাঁচানোর স্বার্থেই এটা করতে হবে। না হলে তৃণমুল আওয়ামীলীগই গিনিপিগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম। লেখা শেষের আগেও তার পদত্যাগের বিষয়ে কোন সুখবর নেই। গুলির বিরুদ্ধে জনতার গনজোয়ার শেখ হাসিনাকে পদত্যাগেই বাধ্য করবেই। শেখ হাসিনা যাবেন, তবে যাবার আগে তিনি ভূতে ধরা ছেলের মতো গাছের মগ ডালটি ভেঙ্গেই যাবেন ।বাঙ্গালীর /বাংলাদেশীর ব্যাপারে প্রচলিত সেই কৌতুকটি সত্য। (মরুভুমিতে দুই পিপাসার্ত বাঙ্গালী পানির খোজ করছে। তাদের খুব পানি প্রয়োজন। অনেক খোজাখুজির পর তারা এক পাত্র পানি জোগাড় করলো। কে আগে পান করবে , তা নিয়ে বাধলো বিপত্তি। যার পানির পাত্র সে আগে পান করতে চাইলো। যে পানি সংগ্রহ করেছে ,তার দাবী সে আগে পান করবে। ফলাফল যাই হওয়ার তাই হলো। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পানি পড়ে গেল মাটিতে। তপ্ত বালু শুষে নিল। এক দৈত্য বালুর মাঝ থেকে জেগে উঠলো। বললো , কি চাই মালিক। তাদের একজন দৈত্যের কাছে একটি বাড়ী ও কিছু নগদ টাকা চাইলো। অপরজন দৈত্যের কাছে দুটি বাড়ী এবং প্রথমজন থেকেও বেশী টাকা চাইলো। তাদের তর্কাতর্কিতে দৈত্য বিরক্ত হয়ে বললো - তোমাদের প্রথমজন যা চাইবে দ্বিতীয়জন তার দ্বিগুন পাবে। এবার প্রথমজন বললো- আমার এক চোখ অন্ধ করে দাও এবং একটি পা লেংড়া করে দাও। ফলাফল স্বরূপ দ্বিতীয়জন তার দ্বিগুন পেল। পাঠক অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন দ্বিতীয়জনের কি অবস্থা।) আমাদের বাঙ্গালীদের এই মহান আত্মত্যাগ নিজের একচোখ অন্ধ ও এক পা লেংড়া হলেও যদি অপরের দুটোই চলে যায় তাহলেই আমি খুশী । আমি নিজে যেহেতু খেতে পারবো না অন্যকে অবশ্যই খেতে দিবোনা, এটাই আমাদের মানসিকতা। শেখ হাসিনা চলে যাবেন কিন্তু তিনি দেশকে অন্ধ ও লেংড়া করে যাবেন। যাতে অন্যরা এর সুফল ভোগ করতে না পারেন।
সুঘ্রাণ কাদের